ভেষজ উদ্ভিদ

পুদিনা পাতা এবং সবুজ শাক, বাজারে প্রচলিত রান্নাবান্নার ভেষজ উদ্ভিদ।

ভেষজ উদ্ভিদ (ইংরেজি: Herb) হচ্ছে এমন গাছ যা সাধারণত খাদ্য, স্বাদবৃদ্ধি, ঔষধ অথবা সুগন্ধের জন্য ব্যবহৃত হয়। রান্না করতে এইসব ভেষজ উদ্ভিদ থেকে মশলা উৎপাদন করা হয়। সাধারণত গাছের সতেজ অথবা শুকনো পাতা আর ফুলেল অংশ এই কাজে ব্যবহার করা হয়। আর গাছের বীজ, ফল, বাকল, গোঁটা এবং শিকড় থেকে মশলা তৈরি হয়। 


ব্যবহার:ভেষজ উদ্ভিদ নানা কাজে লাগে যেমন- রান্নায়, ঔষধ তৈরিতে, এবং কখন কখন ধর্মীয় আচার-আচরণ পালনে। ঔষধ তৈরিতে ব্যবহৃত উদ্ভিদগুলোকে ভেষজ উদ্ভিদ বলা হয়। যেক্ষেত্রে যাই বলা হোক না কেন ওই উদ্ভিদের নাম দ্বারা তার পাতা, ফুল, ফল, শিকড়, বীজ, ছাল-বাকল, কষ, ফলের খোসা সবকিছুকেই নির্দেশ করা হয়। 

ইতিহাস

[সম্পাদনা]

যতদূর জানা যায় খ্রিস্টপূর্ব ৫০০০ অব্দে সুমেরীয়রা ভেষজ উদ্ভিদ ব্যবহার করত।[] প্রাচীন মিশরীয়রা মিষ্টি সজ, ধনে সজ এবং থাইম ব্যবহার করত ১৫৫৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দে।[] প্রাচীন গ্রিসে ১৬২ খ্রিষ্টাব্দে গালেন নামের একজন চিকিৎসক ছিলেন যিনি প্রায় ১০০ ভেষজ উদ্ভিদ ব্যবহার করে বানানো এক জটিল ভেষজ ঔষধ আবিষ্কারের জন্য সুপরিচিত ছিলেন।[]

রান্নায় ব্যবহৃত ভেষজ উদ্ভিদ

[সম্পাদনা]
একগুচ্ছ সুগন্ধ পত্রযুক্ত লতা।

রান্নায় ব্যবহৃত ভেষজ উদ্ভিদ সবজি থেকে আলাদা, এরা সামান্য মাত্রায় ব্যবহৃত হয় কিছুটা মশলার মত। এইসব উদ্ভিদ খাবারে আলাদা স্বাদ ও গন্ধ ছড়িয়ে দেয়।

ভেষজ উদ্ভিদ বহুবর্ষজীবী হতে পারে যেমন থাইম বা ল্যাভেন্ডার, দ্বিবর্ষজীবী হতে পারে যেমন পার্সলে, ধনেপাতা অথবা একবর্ষজীবীও হতে পারে যেমন তুলসী। বহুবর্ষজীবী ভেষজ উদ্ভিদ গুল্মও হতে পারে যেমন রোজমেরি আবার বৃক্ষও হতে পারে যেমন তেজপাতা, দারুচিনি। এদের মধ্যে কোন কোনটি মশলা এবং ভেষজ উদ্ভিদ দুই ভাবেই ব্যবহার করা হয়। যেমন ধনে গাছের পাতা এবং নরম কাণ্ড ভেষজ উদ্ভিদ হিসেবে ব্যবহৃত হয় আবার এর বীজ ব্যবহার করা হয় মশলা হিসেবে। মিন্ট পরিবারের কিছু গাছ আছে যাদের ব্যবহার রান্নাতেও হয় আবার ভেষজ চিকিৎসাতেও হয়, যেমন- তুলসী, পুদিনা ইত্যাদি। 

ঔষধি ভেষজ উদ্ভিদ

[সম্পাদনা]

কিছু উদ্ভিদে ফাইটোকেমিকাল থাকে যা শরীরে কিছু বিশেষ প্রভাব ফেলে। মশলাও আমাদের দেহে নানা রকম প্রভাব ফেলে। অনেক উদ্ভিদ বিষাক্তও হয়ে থাকে। যেমন ধুতরা (Datura metel ) গাছের ফুল এবং ফল পরিমাণমত ব্যবহারে ওষুধের ন্যায় কাজ করে কিন্তু অতিরিক্ত ব্যবহারে বিষক্রিয়া ঘটায়। এরকম আরও অনেক গাছ আছে যা ভেষজ উদ্ভিদ হলেও অতিরিক্ত ব্যবহারে তা নানা রকম শারীরিক জটিলতা এবং কখনও কখনও বিষক্রিয়া ঘটায়।[চিকিৎসাবিদ্যার তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

বাগানে ভেষজ উদ্ভিদের চাষ

অনেক দিন যাবৎ চীনদেশে চিকিৎসাক্ষেত্রে ভেষজ উদ্ভিদ ব্যবহৃত হয়ে আসছে।[] ভারতের আয়ুর্বেদিক চিকিৎসার ভিত্তি এইসব ভেষজ উদ্ভিদ। পশ্চিমা দেশে এই ভেষজ চিকিৎসার সূচনা হয়েছিল গ্রিক হিপ্পোক্র্যাটিক চিকিৎসাশাস্ত্রের মাধ্যমে। বিখ্যাত ভেষজ চিকিৎসকদের মধ্যে অন্যতম হলেন ইবনে সিনা (পারসীয়), গ্যালেন (রোমান), প্যারাসেলসাস (জার্মান সুইস), কালপেপার (ইংরেজ) এবং ১৯ শতক এবং ২০ শতকের প্রথমভাগের  উদ্ভিদবিজ্ঞানে পারদর্শী জন মিল্টন স্কাডার, হার্ভে উইক্স ফেল্টার, জন উরি লয়েড প্রমুখ। যদিও আধুনিককালে ভেষজ চিকিৎসার প্রচলন নেই বললেই চলে তবু এখনও চিকিৎসাক্ষেত্রে অনেক ওষুধ ভেষজ উদ্ভিদ থেকে প্রস্তুত করা হয়। 

কিছু কিছু ভেষজ উদ্ভিদে নেশার উপাদানও থাকে। হলোসেনা যুগ থেকে এগুলো ধর্মীয় এবং মানসিক চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বিশেষত গাঁজা এবং কোকো গাছ। উত্তর পেরুভিয়ান সমাজের লোকেরা ৮০০০ বছর আগের থেকে কোকো গাছের পাতা ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করছে, অন্যদিকে গাঁজা গাছের ব্যবহার হত এর নেশা ধরানোর গুণের জন্য ১ম শতাব্দীতে চীনে এবং উত্তর আফ্রিকায়। বাংলাও এর ব্যবহার দেখা যায়। এছাড়া তামাক পাতাও একই কাজে ব্যবহৃত হত।[] 

অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীরা তাদের আশপাশের গাছগাছড়া ব্যবহার করে ভেষজ চিকিৎসার প্রভূত উন্নয়ন ঘটিয়েছিল। তাদের বিচ্ছিন্নতা প্রমাণ করে যে তাদের ঔষুধ অনেক কম মারাত্মক অসুখের জন্য বানানো হয়েছিল, পশ্চিমা রোগের সাথে তারা পরিচিত ছিল না। রিভার মিন্ট, ইউক্যালিপটাস এবং ওয়াটল এগুলো ব্যবহার করা হত সর্দি-কাশি, জ্বর, ডাইরিয়া এবং মাথাব্যাথার জন্য। 

পবিত্র ভেষজ উদ্ভিদ

[সম্পাদনা]

ভেষজ উদ্ভিদ বহু ধর্মের আচার পালনের একটি বড় উপাদান। যেমন- মির (Commiphora myrrha) এবং ফ্রাঙ্কিনসেন্স (Boswellia species) হেলেনিস্টিক ধর্মে, নিম (Azadirachta indica) পাতা, বেল (Aegele marmelos), পাতা, তুলসী (Ocimum tenuiflorum), হলুদ (Curcuma longa), গাঁজা সেইজ উইকা (পাগান) এ পবিত্র গাছ হিসেবে বিবেচিত হয়। রাস্তাফারিদের মধ্যেও গাঁজাকে পবিত্র মনে করা হয়।  

সাইবেরীয় শামানরাও ধর্মীয় কাজে গাছগাছড়া ব্যবহার করে। চেরোকি গোত্রের আদিবাসী আমেরিকানরা ধর্মীয় আচার প্রথা পালনে হোয়াইট সেইজ এবং চেডার ব্যবহা

প্রাকৃতিক প্রসাধনী 

[সম্পাদনা]

প্রাকৃতিক প্রসাধনী ব্যবহার শুরু হয় ৬ শতাব্দী আগে ইউরোপীয় ও এশীয় দেশে। নানা ধরনের মিশ্রণ এবং বাঁটা প্রায়ই মুখে লাগানো হয়। ১৯৪০ সালে এই প্রাকৃতিক প্রসাধনীর মধ্যে নতুন সংযোজন হিসেবে যুক্ত হয় লিপস্টিক। এখন প্রাকৃতিক প্রসাধনীর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ক্রিম, স্ক্রাবার, তেল, লিপস্টিক এবং সুগন্ধি।

আরও দেখুন 

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Wrensch, Ruth D. (১৯৯২)। The Essence of Herbs। University Press of Mississippi। পৃষ্ঠা 9 
  2. "Herbs in History"। Plant Natural Research Center। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৪-০২ 
  3. Tapsell, L. C., Hemphill, I., Cobiac, L., Sullivan, D. R., Fenech, M., Patch, C. S., Roodenrys, S., Keogh, J. B., Clifton, P. M., Williams, P. G., Fazio, V. A. & Inge, K. E. (২০০৬)। "Health benefits of herbs and spices: The past, the present, the future"Medical Journal of Australia185 (4): S1–S24। 
  4. "Chinese Herbal Medicine"। ২০১৪-০৮-২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-১২-১৯ 
  5. Ernest Abel, Marijuana, The First 12,000 years (Plenum Press, New York 1980) [১]

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]