মণিপুরী সংকীর্তন হল ভারতের মণিপুর রাজ্যের মন্দির এবং ব্যক্তিগত স্থানের আচার-অনুষ্ঠানে গান গাওয়া, ঢোল বাজানো ও নাচের সাথে জড়িত একটি শিল্পকলা। অতুলনীয় ধর্মীয় নিষ্ঠা এবং শক্তি প্রদর্শন করে এমন পরিবেশনার মাধ্যমে অভিনয়শিল্পীরা কৃষ্ণের বিভিন্ন গল্প বর্ণনা করেন যা দর্শকদের প্রায়শই অশ্রুসিক্ত করে। [১] এটি মূলত মণিপুরের বৈষ্ণব সম্প্রদায় এবং পার্শ্ববর্তী রাজ্য ত্রিপুরা ও আসামে বসবাসকারী বৈষ্ণব মণিপুরী সম্প্রদায়ের মাঝে অনুশীলন করা হয়। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে আজারবাইজানের বাকুতে ইউনেস্কোর আন্তঃরাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের বৈঠকের অষ্টম অধিবেশনে এটিকে "সংকীর্তন: মণিপুরের শাস্ত্রীয় গান, ঢোল বাদন এবং নাচ" শিরোনামে ইউনেস্কোর মানবতার বিমূৰ্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতিনিধিত্বকারী তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। [২]
সঙ্গীত নাটক অকাদেমি দ্বারা প্রস্তুত মানবতার বিমূৰ্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতিনিধি তালিকায় অন্তৰ্ভুক্তিকরণের জন্য মনোনয়নের নথিতে এই পরিবেশনা শিল্পটির বর্ণনা দেওয়া হয়েছে এইভাবে:
"মণিপুরের মন্দিরে গান ও নাচের সাথে জড়িত রীতি অনুসারে মণিপুর সমভূমিতে বসবাসকারী বৈষ্ণবদের জীবনে ধর্মীয় নিহিতার্থ ও মঞ্চ অনুষ্ঠান উপলক্ষে বাড়িতে ও রাস্তায় একসাথে সংকীর্তন চারুকলা পরিবেশিত হয়। কৃষ্ণর ধর্মতত্ত্ব এবং শিক্ষা এই প্ৰদৰ্শনের কেন্দ্ৰীয় বিষয়বস্তু। তবে তারা মণিপুরের প্রাক-বৈষ্ণব অতীতের সংগীত এবং নৃত্য থেকে বহন করা আনুষ্ঠানিক বৈশিষ্ট্য ও রীতির সাথে এটিকে অন্তৰ্ভুক্ত করেছে। সংকীর্তন অনুশীলনের মূল অংশটি দেখতে পাওয়া যায় মন্দিরে, সেখানে তারা গানের মাধ্যমে প্রভুর জীবন ও কর্মকে বর্ণনা করে এবং নৃত্যের মাধ্যমে তা প্রদর্শিত করে। এগুলো সাধারণত ভক্তদের সামনে মন্দিরের সাথে সংযুক্ত একটি হল বা মন্ডপে উপস্থাপিত হয়। প্রধান প্ৰদৰ্শনীটি নাট্য পালা নিয়ে গঠিত হয়, যা মণিপুর উপত্যকার সর্বত্র পরিবেশিত হয়। মন্দির কেন্দ্রিক অরিবা পালা এবং মনোহর সাই পালা বর্তমানে খুব কম দেখতে পাওয়া যায়। প্রভুর রথ উৎসব বলে চিহ্নিত করে বর্ষার সময় মন্দিরের মধ্যে খুবাক এসেই পালন করা হয়। নতুন ঘর উদ্বোধন এবং সকল জীবনচক্র অনুষ্ঠানে যেমন- কান ছিদ্র করার অনুষ্ঠান (শৈশবে পুরুষ এবং স্ত্রী উভয়ের জন্য), উপনয়ন (কিশোর বয়সী পুরুষদের জন্য), বিবাহ ও মৃত্যুশয্যার অনুষ্ঠানে সংকীর্তনের প্ৰচলন রয়েছে। এভাবেই মণিপুরী বৈষ্ণবদেরর জীবনে সংকীর্তনকে ঈশ্বরের দৃশ্যমান প্রকাশ হিসাবে বিবেচনা করা হয়।" [৩]