মরিস ব্যুকাই | |
---|---|
![]() | |
জন্ম | ১৯ জুলাই ১৯২০ |
মৃত্যু | ১৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৮ | (বয়স ৭৭)
জাতীয়তা | ফরাসি |
পেশা |
|
পরিচিতির কারণ | বাইবেল কোরআন ও বিজ্ঞান নামক গ্রন্থ রচনা |
মরিস ব্যুকাই (জন্ম: ১৯ জুলাই ১৯২০, Pont-l'Évêque, মৃত্যু: ১৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৮[১]), একজন ফরাসি চিকিৎসাবিদ। একই সাথেই ছিলেন মিশরতত্ত্ব এর ফরাসি সোসাইটির সদস্য এবং একজন লেখক। তিনি ফেরাউনের মমির উপর ফরাসি অধ্যয়নের সিনিয়র সার্জন ছিলেন।[২] ব্যুকাই ১৯৪৫ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত মেডিসিন চর্চা করেন এবং গ্যাস্ট্রোএন্টারলজির উপর একজন বিশেষজ্ঞ ছিলেন । ১৯৭৩ সালে, ব্যুকাই সৌদি আরবের বাদশাহ ফয়সালের পরিবারের চিকিৎসক হিসেবে নিযুক্ত হন। একই সাথে মিশরের তৎকালীন প্রেজিডেন্ট আনোয়ার সাদাতের পরিবারের সদস্যরা তার রোগী ছিল।[৩][৪] তিনি বাইবেল কোরআন ও বিজ্ঞান বইটির জন্য বিখ্যাত হয়েছেন।[৫] এই বইটিতে তিনি দাবি করেন যে কোরআন বিজ্ঞানের অনেক বিষয়ে সঠিক তথ্য প্রদান করে যা নবী মুহাম্মাদের সময়ে জানা সম্ভব ছিল না, মৃত্যুর কিছু বছর আগে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন ।[৬]
মরিস বুকাইলি ১৯ জুলাই, ১৯২০ সালে ফ্রান্সের পন্ট-ল'এভোক শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি তার বাবা-মায়ের তিন সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয় ছিলেন। তার বাবা মারি জেমস বুকাইলি একজন চিকিৎসক ছিলেন এবং তার মা এলিজাবেথ মারিয়া বুকাইলি একজন গৃহিণী ছিলেন।
বুকাইলি ১৯৩৮ সালে প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চিকিৎসাবিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ১৯৪২ সালে প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিতে ডিপ্লোমা লাভ করেন।
বুকাইলি ১৯৪৫ সালে একজন চিকিৎসক হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি প্রথমে প্যারিসের একটি হাসপাতালে কাজ করেন। ১৯৫৪ সালে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান এবং নিউ ইয়র্কের একটি হাসপাতালে কাজ করেন। ১৯৫৮ সালে তিনি ফ্রান্সে ফিরে আসেন এবং প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা অনুষদে গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজির একজন অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন।
বুকাইলি একজন সফল চিকিৎসক ছিলেন। তিনি গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজির ক্ষেত্রে অনেক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তিনি একটি নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছিলেন যা গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্র্যাক্টের ছবি তোলার জন্য ব্যবহৃত হয়। তিনি গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্র্যাক্টের রোগের চিকিৎসার জন্যও নতুন ওষুধ এবং পদ্ধতি তৈরি করেছিলেন।
১৯৭৩ সালে বুকাইলি সৌদি আরবের বাদশাহ ফয়সালের পরিবারের চিকিৎসক হিসেবে নিযুক্ত হন। এই পদে থাকাকালীন তিনি মিশরের রাজধানী কায়রোর একটি মিশরতত্ত্বের জাদুঘরে কাজ করার সুযোগ পান। তিনি মিশরের ফারাও রামসেস দ্বিতীয়ের মমি পরীক্ষা করার জন্য একটি দলের নেতৃত্ব দেন।
বুকাইলি তার মমি পরীক্ষার সময় রামসেস দ্বিতীয়ের মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নতুন তথ্য আবিষ্কার করেন। তিনি আবিষ্কার করেন যে রামসেস দ্বিতীয় একটি জটিল রোগের কারণে মারা গিয়েছিলেন যা তার দেহে বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন ঘটিয়েছিল।
বুকাইলি তার মিশরতত্ত্ব গবেষণার ফলাফল একটি বইতে প্রকাশ করেন। এই বইটি দ্য ফারাওস: দ্য লিভিং দেড (১৯৭৫) নামে পরিচিত। এই বইটি মিশরের ইতিহাস এবং সংস্কৃতি সম্পর্কে একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান হিসেবে বিবেচিত হয়।
মরিস বুকাইলি তার সর্বাধিক বিখ্যাত বই বাইবেল কোরআন ও বিজ্ঞান-এ দাবি করেন যে কোরআন বিজ্ঞানের অনেক বিষয়ে সঠিক তথ্য প্রদান করে যা নবী মুহাম্মদের সময়ে জানা সম্ভব ছিল না। তিনি কোরআনের বিভিন্ন আয়াত থেকে তথ্য তুলে ধরেন যা তার দাবির সমর্থনে প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করেন।
বুকাইলি যে বিষয়গুলিকে কোরআনের বৈজ্ঞানিক সঠিকতা হিসেবে দাবি করেন তার মধ্যে রয়েছে:
বুকাইলি তার দাবির সমর্থনে অনেক বিজ্ঞানীর কাছ থেকে সমর্থন পেয়েছেন। তবে, অনেক বিজ্ঞানীও তার দাবিগুলির সমালোচনা করেছেন। তারা যুক্তি দেন যে বুকাইলি কোরআনের আয়াতগুলিকে অতিরঞ্জিতভাবে ব্যাখ্যা করছেন এবং যে কোরআন বিজ্ঞানের অনেক বিষয়ে ভুল তথ্য প্রদান করে।
ধর্ম, বিশেষত ইসলামের সাথে আধুনিক বিজ্ঞানের সম্পর্ক বিষয়ক একটি আন্দোলন বা মতবাদ হলো বুকাইলিজম বা বুকাইলিবাদ।[৭] "বাইবেল, কুরআন ও বিজ্ঞান" বইটি প্রকাশের পর থেকে বুকাইলবাদীরা কুরআনকে একটি ঐশ্বরিক গ্রন্থ বল প্রচার করেছিলো এবং যুক্তি দিয়েছিলো যে এতে বৈজ্ঞানিকভাবে সঠিক তথ্য রয়েছে।[৮][৯]
দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের মতে, বুকাইলিজম হলো "কিছু উপায়ে খ্রিস্টান সৃষ্টিবাদের মুসলিম অংশীদার" যদিও সৃষ্টিবাদ আধুনিক বিজ্ঞানের অনেক কিছুই প্রত্যাখ্যান করে কিন্তু বুকাইলিজম একে গ্রহণ করে।[১০]
মরিস বুকাইলি ১৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৮ সালে প্যারিসে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি ৭৭ বছর বয়সী ছিলেন। বুকাইলির মৃত্যুর পরও তার কাজ এবং আদর্শগুলি আজও অনেক মুসলমানের কাছে অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করে।
মরিস বুকাইলি একজন সফল চিকিৎসক, মিশরতত্ত্ববিদ এবং লেখক ছিলেন। তিনি গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজির ক্ষেত্রে অনেক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তিনি মিশরের ইতিহাস এবং সংস্কৃতি সম্পর্কেও একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।
বুকাইলি তার বই বাইবেল কোরআন ও বিজ্ঞান-এর মাধ্যমে ইসলাম এবং বিজ্ঞানের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের জন্য একটি নতুন আন্দোলন শুরু করেছিলেন। এই আন্দোলন বিশ্বব্যাপী অনেক মুসলমানদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
বুকাইলি একজন প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব ছিলেন যিনি ইসলামী বিশ্বকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছেন। তার কাজ এবং আদর্শগুলি আজও অনেক মুসলমানের কাছে অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করে।
সাহিত্য সমালোচক সমীর রহিম দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফে লিখেছেন যে বুকাইলের কিছু "দাবি বিজ্ঞানী এবং অত্যাধুনিক ধর্মতত্ত্ববিদরা উপহাস করেছেন।"[১১]
মরিস বুকাইলির কাজ এবং আদর্শগুলি অনেক সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছে। অনেক বিজ্ঞানী যুক্তি দেন যে বুকাইলি কোরআনের আয়াতগুলিকে অতিরঞ্জিতভাবে ব্যাখ্যা করছেন এবং যে কোরআন বিজ্ঞানের অনেক বিষয়ে ভুল তথ্য প্রদান করে।
বুকাইলির সমালোচকরা আরও যুক্তি দেন যে তার কাজটি ইসলামকে একটি বৈজ্ঞানিক ধর্ম হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করে, যা ইসলামের প্রকৃতি সম্পর্কে একটি ভুল ধারণা তৈরি করে। তারা যুক্তি দেন যে ইসলাম একটি ধর্ম, এবং ধর্মের মূল উদ্দেশ্য হল নৈতিকতা এবং আধ্যাত্মিকতা প্রচার করা, বিজ্ঞানের বিবরণ প্রদান করা নয়।
বুকাইলির সমালোচনাগুলির মধ্যে রয়েছে:
বুকাইলির সমালোচনাগুলি সত্যিই কি তাই? এটি একটি জটিল প্রশ্ন যার কোন সহজ উত্তর নেই। কিছু সমালোচনার ভিত্তি আছে, যেমন কোরআনের আয়াতগুলিকে অতিরঞ্জিতভাবে ব্যাখ্যা করা। অন্য সমালোচনাগুলি আরও বিতর্কিত, যেমন কোরআনের ভুল তথ্য প্রদান করা।
যাইহোক, বুকাইলির সমালোচনাগুলি তার কাজ এবং আদর্শগুলির গুরুত্বকে কমিয়ে দেয় না। তার বই বাইবেল কোরআন ও বিজ্ঞান বিশ্বব্যাপী অনেক মুসলমানের কাছে অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে। এটি ইসলাম এবং বিজ্ঞানের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল।
বুকাইলির উত্তরাধিকারটি সময়ের সাথে সাথে স্পষ্ট হবে। তবে, তার কাজ এবং আদর্শগুলি ইসলামী বিশ্বকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে এবং তা আগামী বছরগুলিতেও অব্যাহত থাকবে বলে মনে হয়।
বাইবেল কোরআন ও বিজ্ঞান জাকির নায়েক
|সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য)