মস্তিষ্কের টিউমার | |
---|---|
বিশেষত্ব | ক্যান্সারবিজ্ঞান, স্নায়ুশল্যচিকিৎসা, স্নায়ুচিকিৎসাবিজ্ঞান |
মস্তিষ্কের টিউমার বা ব্রেইন টিউমার (ইংরেজি: brain tumor) বা ইন্ট্রাক্রানিয়াল নিওপ্লাজম (ইংরেজি: intracranial neoplasm) হচ্ছে এমন একটি অবস্থা যখন মানুষের মস্তিষ্কে অস্বাভাবিক কোষ তৈরি হয়।[১] এই টিউমার দুই প্রকারের হয় যার একটি হচ্ছে ম্যালিগ্যান্ট বা ক্যান্সার সৃষ্টিকারী টিউমার এবং অপরটি হচ্ছে বেনাইন টিউমার।[১] ক্যান্সার সৃষ্টিকারী টিউমার প্রাথমিক বা প্রাইমারি টিউমার ও মেটাস্ট্যাসিস বা সেকেন্ডারি টিউমার — এই দুই ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। এদের মধ্যে প্রাথমিক টিউমারের শুরুটি হয় মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে, অপরদিকে মাধ্যমিক টিউমার শরীরের অপর কোনো অংশ থেকে বিস্তৃত হয়ে মস্তিষ্কে আসে যা চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় ব্রেইন মেটাস্টাসিস টিউমার নামে পরিচিত।[২] এই নিবন্ধে মূলত মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে যে টিউমারের উৎপত্তি তা নিয়েই লিখিত। মস্তিষ্কের সকল প্রকারের টিউমারের লক্ষণ মস্তিষ্কের টিউমারের অবস্থান অনুসারে ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে।[১] লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে মাথা ব্যাথা, খিচুনি, দৃষ্টির সমস্যা বা দৃষ্টিবিভ্রম, বমি করা, এবং বিভিন্ন প্রকার মানসিক পরিবর্তন।[২][৩] মাথা ব্যাথাটি সাধারণত সকাল বেলা তীব্রভাবে অনুভূত হয় যা বমি করার মাধ্যমে শেষ হয়। এছাড়াও নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে হাঁটাচলা ও কথা বলাসহ অনুভূতি পাওয়ায় সমস্যা দেখা দিতে পারে।[২][৪] রোগের তীব্রতা বাড়ার সাথে সাথে জ্ঞান হারানোর মতো ব্যাপারও ঘটতে পারে।[৪]
মস্তিষ্কের বেশিরভাগ টিউমারের কারণ এখনও অজানা।[১] যেসকল কারণে এই টিউমারের ঝুঁকি বাড়ে তার মধ্যে কিছু কিছু ক্ষেত্রে কতোগুলো ইনহেরিটেড অবস্থার সংশ্লিষ্টটা রয়েছে যা নিউরোফাইব্রোমেটোসিস নামে পরিচিত। এছাড়াও রাসায়নিক বিভিন্ন পদার্থ, যেমন: ভিনাইল ক্লোরাইড, এপস্টাইন-বার ভাইরাস, এবং আয়োনিত তেজষ্ক্রিয়তার সংস্পর্শও এই টিউমারের কারণ হতে পারে।[১][২][৪] মোবাইল ফোন ব্যবহারের সাথে মস্তিষ্কের ক্যান্সারের ঝুঁকি নিয়ে উদ্বেগ থাকলেও এর কোনো পরিষ্কার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।[৪] প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে প্রাথমিক টিউমারের যে দুটি প্রকারের প্রকোপ সবচেয়ে বেশি তার মধ্যে রয়েছে মেনিনজিওমা (সাধারণত বেনাইন) এবং অ্যাস্ট্রোসাইটোমা, যেমন: গ্লিওবাস্টোমা।[২] শিশুদের মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত প্রকারটি হচ্ছে মেডুলোব্লাস্টোমা।[৪] চিকিৎসক দ্বারা মস্তিষ্কের টিউমার নির্ণয়ে যেসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়ে তার মধ্যে রয়েছে কম্পিউটেড টমোগ্রাফি বা সিটি স্ক্যান, অথবা ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং বা এমআরআই। পরবর্তীতে বায়োপসির মাধ্যমে তা নিশ্চিত করা হয়।[১] এসকল পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলাফল অনুসারে টিউমারের মারাত্মকতার মাত্রা নির্ধারণ করা হয়।[২]
শল্যচিকিৎসা, রেডিয়েশন থেরাপি এবং কেমোথেরাপির সমন্বয়ে টিউমারের চিকিৎসা হতে পারে।[২] খিচুনির ক্ষেত্রে খিচুনি প্রতিরোধোক অ্যান্টিকনভালস্যান্ট ওষুধের প্রয়োজন পড়তে পারে।[২] ডেক্সামিথাসোন ও ফিউরোসেমাইড ধরনের ওষুধ টিউমারের পাশে পানি জমা ঠেকাতে ব্যবহৃত হতে পারে।[২] কিছু টিউমার ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায় যা শুধুমাত্র নিয়মিত মনিটরিংয়ের প্রয়োজন এবং বাড়তি আর কিছু করার প্রয়োজন পড়ে না।[২] এছাড়াও চিকিৎসার ক্ষেত্রে রোগীর রোগপ্রতিরোধ তন্ত্র সম্পর্কে গবেষণা করা প্রয়োজন।[২] চিকিৎসার ফলাফল টিউমারের প্রকার ও বিস্তৃতির ওপর উল্লেখযোগ্যভাবে নির্ভর করে।[৪] সাধারণত গ্লিওবাস্টোমার ক্ষেত্রে চিকিৎসায় খুব ভালো ফলাফল পাওয়া যায় না, কিন্তু মেনিনজিওমার ক্ষেত্রে এই ফলাফল ভালো।[৪] মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মস্তিষ্কের ক্যান্সারের পাঁচ বছর মেয়াদী বেঁচে থাকার হার গড়ে ৩৩%। [৫]
প্রাথমিক মস্তিষ্কের টিউমারের তুলনায় মেটাস্ট্যাসিস টিউমারের প্রকোপ তুলনামূলকভাবে বেশি।[১] মেটাস্ট্যাসিস টিউমারের মধ্যে প্রায় অর্ধের টিউমারের সংক্রমণ হয় ফুসফুসের ক্যান্সারের মাধ্যমে। সারা বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় আড়াই লক্ষ মানুষ মস্তিষ্কের প্রাথমিক টিউমারে আক্রান্ত হয়।[১] ক্যান্সার সৃষ্টির কারণ বিবেচনা করলে এই পরিমাণ সারা বিশ্বে শতকরা ২ ভাগেরও কম।[৪] ১৫ বছরের কমবয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে ক্যান্সারের কারণ হিসেবে মস্তিষ্কের টিউমারে অবস্থান দ্বিতীয়।[৬] মস্তিষ্কের টিউমার ও পরবর্তীকালে এ সংক্রান্ত ক্যান্সারের চিকিৎসা যথেষ্ট ব্যয়বহুল। উদাহরণস্বরূপ অস্ট্রেলিয়ায়ায় একটি মস্তিষ্কের ক্যন্সারে আক্রান্ত একজন রোগীর চিকিৎসায় প্রায় ১৯ লক্ষ ডলার ব্যয় হয় যা সকল প্রকার ক্যান্সারের চিকিৎসার মধ্যে সর্বোচ্চ।[৭]