মহা কর্পূর | |
---|---|
![]() | |
নিউ সাউথ ওয়েলসের ওয়াগা ওয়াগা উদ্ভিদ উদ্যানে মহা কর্পূর গাছ | |
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস ![]() | |
জগৎ/রাজ্য: | প্লান্টি (Plante) |
গোষ্ঠী: | ট্র্যাকিওফাইট (Tracheophytes) |
ক্লেড: | সপুষ্পক উদ্ভিদ (অ্যাঞ্জিওস্পার্মস) |
ক্লেড: | ইউডিকটস |
গোষ্ঠী: | রোসিদস |
বর্গ: | Myrtales |
পরিবার: | Myrtaceae |
গণ: | Corymbia (হুকার) কেডি হিল ও এলএএস জনসন[১] |
প্রজাতি: | C. citriodora |
দ্বিপদী নাম | |
Corymbia citriodora (হুকার) কেডি হিল ও এলএএস জনসন[১] | |
প্রতিশব্দ[১] | |
synonyms
|
মহা কর্পূর, লেবুগন্ধী গঁদ বা দাগী গঁদ (বৈজ্ঞানিক নাম: Corymbia citriodora)[২] উত্তর-পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার একটি লম্বা এন্ডেমিক উদ্ভিদ প্রজাতি। এর মসৃণ বাকল সাদা থেকে কিছুটা গোলাপি আভাযুক্ত। এর পাতা লেন্স আকৃতি থেকে কিছুটা বাকানো। উদ্ভিদের ফুল সাদা, তিনটি করে গুচ্ছ আকারে জন্মে। ফল ঘটি বা পিপা আকৃতির।
মহা কর্পূর গাছ সাধারণত ২৫–৪০ মিটার (৮২–১৩১ ফুট) পর্যন্ত লম্বা হয়। তবে কখনো কখনো লম্বায় ৫০ মিটার (১৬০ ফুট) পর্যন্ত হতে পারে এবং তখন কাণ্ডের নিচের দিকে লিগনোটিউবার নামক কন্দ বা স্ফীত অংশ গঠন করে। এর বাঁকল মসৃণ, ফ্যাকাসে, গোলাপি আভাযুক্ত সাদা বা তামাটে, সমসত্ত্ব রঙিন বা হালকা ভিন্ন রঙের ছাপযুক্ত, যা পাতলা আঁইশের মতো উঠে আসে। কচি উদ্ভিদ বা কাণ্ড থেকে গজানো নতুন গুল্মাকারের উদ্ভিদে ডিম্বাকৃতির বা লেন্স আকৃতির পাতা থাকে, যা সাধারণত ৮০–২১০ মিলিমিটার (৩.১–৮.৩ ইঞ্চি) লম্বা ও ৩২–৮০ মিলিমিটার (১.৩–৩.১ ইঞ্চি) চওড়া হয়। ১০০–২৩০ মিলিমিটার (৩.৯–৯.১ ইঞ্চি) লম্বা ও ৬–২৮ মিলিমিটার (০.২৪–১.১০ ইঞ্চি) প্রশস্ত পূর্ণবয়স্ক পাতা বাঁকানো লম্বা লেন্স আকৃতির এবং উভয় দিকে একই রকম সবুজ রঙ বিশিষ্ট। পাতা থেকে লেবুর মতো গন্ধ বের হয়। পাতা ১০–২৫ মিলিমিটার (০.৩৯–০.৯৮ ইঞ্চি) লম্বা পত্রবৃন্তের দিকে কিছুটা চওড়া। পত্রকক্ষে ৩–১০ মিলিমিটার (০.১২–০.৩৯ ইঞ্চি) লম্বা পুষ্পদণ্ডবিশিষ্ট পুষ্পমঞ্জরি জন্মায়। প্রতিটি ১–৬ মিলিমিটার (০.০৩৯–০.২৩৬ ইঞ্চি) লম্বা পুষ্পবৃন্তে তিনটি করে ফুল থাকে। পূর্ণ কুঁড়ি ডিম্বাকৃতি বা নাশপাতি আকৃতির। ৬–১০ মিলিমিটার (০.২৪–০.৩৯ ইঞ্চি) লম্বা ও ৫–৭ মিলিমিটার (০.২০–০.২৮ ইঞ্চি) চওড়া ফুলে গোলাকার, শঙ্কু আকার বা পাখির ঠোঁটের মতো ঢাকনা থাকে। সাদা রঙের ফুল প্রায় সারা বছরই ফোঁটে। লম্বায় ৮–১৫ মিলিমিটার (০.৩১–০.৫৯ ইঞ্চি) ও চওড়ায় ৭–১২ মিলিমিটার (০.২৮–০.৪৭ ইঞ্চি) বিশিষ্ট ঘটি বা পিপা আকৃতির ক্যাপসিউল ফল ধরে।[২][৩][৪][৫][৬]
১৮৪৮ সালে টমাস মিশেলের জার্নাল অব অ্যান এক্সপেডিশন ইনটু দ্য ইন্টেরিওর অব ট্রপিক্যাল অস্ট্রেলিয়া (Journal of an Expedition into the Interior of Tropical Australia) জার্নালে উইলিয়াম জ্যাকসন হুকার সর্বপ্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে মহা কর্পূর গাছের বর্ণনা দেন।[৭][৮] ১৯৯৫ সালে কেন হিল ও লরি জনসন উদ্ভিদের বৈজ্ঞানিক নাম পরিবর্তন করে Corymbia citriodora নাম রাখেন।[৩][৯] প্রজাতিক পদ citriodora (সাইট্রিওডোরা) ল্যাটিন citriodorus শব্দ থেকে আগত, যার অর্থ "লেবুর গন্ধযুক্ত"।[২]
Corymbia maculata ও C. henryi উদ্ভিদ দুইটি মহা কর্পূরের কাছাকাছি বৈশিষ্ট্যযুক্ত।[২]
মহা কর্পূর কুইন্সল্যান্ড ও নিউ সাউথ ওয়েলসের দক্ষিণে কফস হার্বার পর্যন্ত জঙ্গল ও বনভূমিতে বিচ্ছিন্নভাবে জন্মে থাকে। মহা কর্পূর কুইন্সল্যান্ডের উত্তরে লেকল্যান্ড ডাউনস ও কুকটাউন থেকে মূল ভূখণ্ডের দিকে হিউয়েনডেন ও চিনচিলা, কুইন্সল্যান্ড পর্যন্ত বিস্তৃত।[২][৪]
মহা কর্পূর পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার মুনডারিংয়ের নিকট ডার্লিং রেঞ্জে এবং নিউ সাউথ ওয়েলস, দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়া ও ভিক্টোরিয়ার শহরতলীতে অভিযোজিত উদ্ভিদ হিসেবে রোপন করা হয়েছে। এটি হালকা ও মৃদু অম্লীয় দোঁআশ মাটিতে ভালো জন্মে। পার্বত্য এলাকার স্ক্লেরোফিল জাতীয় জঙ্গল ও বনভূমিতে এদের দেখা যায়।
পার্থের কিংস পার্কে কয়েক বছর আগে এক সারি মহা কর্পূর গাছ লাগানো হয়। কিন্তু ক্রমে এটি বিস্তৃত হওয়ায় গুরুতর আগাছা হিসেবে একে চিহ্নিত করা হয়েছে।[১০]
নির্মাণ কাঠ ও মধু উৎপাদনের জন্য মহা কর্পূর গুরুত্বপূর্ণ বনজ উদ্ভিদ। অস্ট্রেলিয়া ও অন্যান্য দেশে উদ্যান উদ্ভিদ হিসেবেও জনপ্রিয়।
অনেক প্রকৃতিবিদ ও সংরক্ষণবিদ কোরাইম্বিয়া (Corymbiab) গণকে স্বীকৃতি না দিয়ে মহা কর্পূরকে ইউক্যালিপটাস (Eucalyptus) গণের অন্তর্ভুক্ত করেন।[১১] ১৯৯০ দশকের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত ১১৩ প্রজাতির কোরাইম্বিয়া গণটি ইউক্যালিপটাস গণেরই অন্তর্ভুক্ত ছিল। রক্তকাঠ, গোস্ট গাম ও দাগী গাম এই গণের অন্তর্ভুক্ত। রক্তকাঠ বলে পরিচিত উদ্ভিদগুলো ১৮৬৭ সাল থেকে ইউক্যালিপটাস গণের অন্তর্ভুক্ত বৃহৎ ও বৈচিত্র্যপূর্ণ গোষ্ঠী হিসেবে পরিচিত ছিল। ১৯৯০ এর দশকে আণবিক গবেষণায় দেখা যায় এরা ইউক্যালিপটাস-এর চেয়ে অ্যাঙ্গোফোরা (Angophora) গণের সাথে অধিক সদৃশ। এ কারণে এদের আলাদা গণ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। অ্যাঙ্গোফোরা, কোরাইম্বিয়া ও ইউক্যালিপটাস গণ তিনটি খুবই নিকটসম্পর্কিত হওয়ায় এবং সহজে আলাদা করা না যাওয়ায় কখনো কখনো এদের একত্রে "ইউক্যালিপ্ট" হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।
ব্রাজিল ও চীনে ব্যাপকভাবে মহা কর্পূর থেকে উদ্বায়ী তেল আহরণ করা হয়।[১২] মহা কর্পূরের উদ্বায়ী তেলে প্রধানত সাইট্রোনেলাল (৮০%) থাকে।[১৩] মহা কর্পূরের অপরিশোধিত তেল সুগন্ধী উৎপাদনে এবং পরিশোধিত তেল পতঙ্গ দমনকারী হিসেবে, বিশেষত মশার তাড়ানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। পরিশোধিত তেলের সাইট্রোনেলাল পি-মিথেন-৩,৮-ডাইঅলের (পিএমডি) সিস ও ট্রান্স সমাণুতে পরিবর্তিত হয়। ইউক্যালিপটাসের বয়স্ক পাতায় এই প্রক্রিয়াটি প্রাকৃতিকভাবেই সম্পন্ন হয়। মহা কর্পূর থেকে নিষ্কাশিত পরিশোধিত তেল এর নিবন্ধিত বাণিজ্যিক নাম "সিট্রেপেল" বা "সিট্রিওডাইঅল" নামে সাধারণভাবে পরিচিত হলেও, স্থানভেদে বিভিন্ন উদ্ভূত নামেও পরিচিত। যেমন: যুক্তরাষ্ট্রে "ওএলই" (OLE - oil of lemon eucalyptus), ইউরোপে "পিএমডিআরবিও" (PMDRBO - PMD rich botanic oil), কানাডায় "পিএমডি ও সম্পর্কিত লেবুগন্ধী ইউক্যালিপটাসের তেল", অস্ট্রেলিয়ায় "লেবুগন্ধী ইউক্যালিপটাসের নির্যাস" ইত্যাদি। সংশ্লেষিত সিট্রোনেলাল থেকে বাণিজ্যিকভাবে বিশুদ্ধ পিএমডি প্রস্তুত করা হয়। মহা কর্পূরের পাতা থেকে নিষ্কাশিত উদ্বায়ী তেলে ৯৮% পর্যন্ত সাইট্রোনেলাল থাকতে পারে। অবস্থাভেদে উদ্বায়ী তেলের গন্ধ ভিন্ন হতে পারে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে সাইট্রোনেলা তেলের সাথে সম্পর্কিত ও হালকা লেবুর আভাসযুক্ত গন্ধ পাওয়া যায়।
মশা তাড়ানোর ওষুধের ওপর এক গবেষণায় দেখা যায়, মানুষের শরীর থেকে মশাকে দূরে রাখতে মহা কর্পূরের নির্যাসিত তেল অধিক কার্যকর।[১৪]