চিরায়ত বলবিদ্যায়, কোন স্থানের মহাকর্ষীয় বিভব হল একটি নির্দিষ্ট প্রসঙ্গ (রেফারেন্স) স্থান থেকে, ওই অবস্থানটিতে, একক ভরের একটি বস্তুকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য যে কাজ (শক্তি স্থানান্তর) করার প্রয়োজন হবে, তার সমান। এটি তড়িৎ বিভবের সদৃশ, যেখানে চার্জ ভরের ভূমিকা পালন করে। প্রসঙ্গ অবস্থানটি, যেখানে বিভব শূন্য, রীতি অনুযায়ী সেটি কোনও ভর থেকে অসীম দূরত্বে আছে। সেই হিসেবে সসীম দূরত্বে থাকা বিভব ঋণাত্মক হয়।
গণিতের ক্ষেত্রে, মহাকর্ষীয় বিভবটি নিউটনীয় বিভব নামেও পরিচিত এবং বিভব তত্ত্বের গবেষণায় এটি একটি মৌলিক বিষয়বস্তু। এটি অভিন্ন আধানযুক্ত বা মেরুকৃত উপবৃত্তাকার বস্তুগুলির দ্বারা উৎপাদিত তড়িৎক্ষেত্র এবং চৌম্বকীয় ক্ষেত্রগুলি সমাধান করার জন্যও ব্যবহার করা যেতে পারে।[১]
কোন স্থানে মহাকর্ষীয় বিভব (V) হল একক ভরে সেই স্থানের মহাকর্ষীয় বিভব শক্তি (U):
যেখানে m হল বস্তুর ভর। বিভব শক্তি হল কোন বস্তুকে মহাশূন্যের অসীম থেকে তার প্রদত্ত অবস্থানে নিয়ে যেতে মহাকর্ষীয় ক্ষেত্র যে কাজ করে তার সমান (মান হিসেবে সমান কিন্তু ঋণাত্মক)। যদি বস্তুর ভর থাকে ১ কিলোগ্রাম হয়, তখন সেই বস্তুর নির্ধারিত বিভব শক্তি মহাকর্ষীয় বিভবের সমান। সুতরাং বিভবকে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে এই ভাবে যে, অসীম থেকে এক একক ভরকে সরাতে মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রকে যে কাজ করতে হয় তার ঋণাত্মক মান।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে, সমীকরণগুলি সরল করা যায় এমন একটি ক্ষেত্র ধরে, যে ক্ষেত্রটি তার অবস্থানের ওপর নির্ভরশীল নয়। উদাহরণস্বরূপ, পৃথিবীর পৃষ্ঠের কাছাকাছি কোন অঞ্চলে, অভিকর্ষজ ত্বরণ, gকে, ধ্রুবক হিসাবে বিবেচনা করা যেতে পারে। সেই ক্ষেত্রে, এক উচ্চতা থেকে অন্য উচ্চতায় বিভব শক্তির পার্থক্য,- উচ্চতার পার্থক্যের সাথে সমানুপাতিকভাবে সম্পর্কিত, এটি ধরে নেওয়া যায়:
M ভরযুক্ত একটি বিন্দু কণা থেকে x দূরত্বে মহাকর্ষীয় বিভব Vকে সংজ্ঞায়িত করা যেতে পারে,- বাহ্যিক কোন শক্তি দ্বারা একটি একক ভরকে অসীম দূরত্ব থেকে সেই বিন্দুতে আনতে যে কাজ W করতে হবে তাই দিয়ে:[২][৩][৪][৫]
যেখানে G হল মহাকর্ষ ধ্রুবক, এবং F মহাকর্ষজ শক্তি। গুণফল GM হল মানক মহাকর্ষীয় স্থিতিমাপ এবং এটি আলাদা করে G বা M এর মানের থেকে উচ্চতর নির্ভুলতার জন্য পরিচিত। বিভবের একক হল ভর প্রতি শক্তি, যেমন, এমকেএস পদ্ধতিতে জুল/কেজি। প্রথা অনুযায়ী, যখন এর সংজ্ঞা দেওয়া হয় এটি সর্বদা ঋণাত্মক, এবং যেহেতু x এর প্রবণতা অসীমের দিকে, এর অভিমুখ হয় শূন্যের দিকে।
মাধ্যাকর্ষণ ক্ষেত্র, এবং এইভাবে বৃহদায়তন বস্তুর চারপাশে একটি ছোট বস্তুর ত্বরণ, হল মহাকর্ষীয় বিভবের ঋণাত্মক গ্র্যাডিয়েন্ট। সুতরাং একটি ঋণাত্মক গ্র্যাডিয়েন্টের ঋণাত্মক মান একটি বৃহদায়তন বস্তুর দিকে ধনাত্মক ত্বরণ উৎপন্ন করে। যেহেতু বিভবের কোনও কৌনিক উপাদান নেই, এর গ্র্যাডিয়েন্ট হল
যেখানে x হল x দৈর্ঘের ভেক্টর যার অভিমুখ বিন্দু কণা থেকে ছোট বস্তুর দিকে এবং হল একটি একক ভেক্টর যার অভিমুখ বিন্দু কণা থেকে ছোট বস্তুর দিকে। অতএব ত্বরণের মাত্রা একটি ব্যস্ত বর্গ সূত্র অনুসরণ করে:
স্থানিক ভর বিন্যাসের সাথে সম্পর্কিত বিভব হল কণা ভরগুলির বিভবের উপরিপাত (সুপারপোজিশন)। ভর বিন্যাস যদি কণা ভরের সসীম সংগ্রহ হয়, এবং যদি কণা ভরগুলি x1, ..., xn বিন্দুতে অবস্থিত হয় এবং তাদের ভর হয় যথাক্রমে m1, ..., mn, তাহলে x বিন্দুতে বিন্যাসের বিভব হল
যদি ভর বিন্যাস একটি ভর পরিমাপ dm হিসাবে ত্রিমাত্রিক ইউক্লিডীয় স্থান R৩ এ রাখা হয়, তখন বিভবটি হল −G/|r| এর সঙ্গে dm এর সংবর্তন। [৬] বহু ক্ষেত্রে
যেখানে |x − r| হল x এবং r এর মধ্যে দূরত্ব। যদি সেখানে অপেক্ষক ρ(r), r বিন্দুতে বিন্যাস ঘনত্ব উপস্থাপন করে, যাতে dm(r)= ρ(r)dv(r), যেখানে dv(r) ইউক্লিডীয় আয়তন উপাদান, তাহলে মহাকর্ষীয় বিভব হল আয়তন সমাকলন
যদি V বিভব অপেক্ষক হয়, যেটি একটি অবিচ্ছিন্ন ভর বিন্যাস ρ(r) থেকে আসে, তাহলে ρ কে ল্যাপলাস চালক Δ ব্যবহার করে পুনরুদ্ধার করা যায়:
যেখানেই ρ অবিচ্ছিন্ন এবং একটি সীমানা কেতার বাইরে শূন্য হয়, সেখানেই এটিপয়েন্টওয়াইজ (বাছাইকারী) হয়। সাধারণভাবে, ভর পরিমাপ dm কে একইভাবে পুনরুদ্ধার করা যেতে পারে যদি ল্যাপলাস চালককে বিন্যাসের অর্থে নেওয়া হয়। এর ফলে, মহাকর্ষীয় বিভব পয়সনের সমীকরণ মেনে চলে। আরও দেখুন ত্রি-চলক ল্যাপলাস সমীকরণের জন্য গ্রিনের অপেক্ষক এবং নিউটনীয় বিভব।
প্রতিসম এবং অবক্ষয়িতগুলি সহ সমস্ত উপবৃত্তাকার আকারের জন্য জ্ঞাত অবীজ অপেক্ষকের ক্ষেত্রে সমাকলন প্রকাশ করা যেতে পারে।[৭] এর মধ্যে গোলক অন্তর্ভুক্ত, যেখানে তিনটি অর্দ্ধাক্ষ সমান; কমলাকার (দেখুন প্রসঙ্গ উপবৃত্তাকার) এবং প্রসারিত উপগোলক অন্তর্ভুক্ত, যেখানে দুটি অর্দ্ধাক্ষ সমান; অবক্ষয়িতগুলি হল যেখানে একটি অর্দ্ধাক্ষ অসীম (উপবৃত্তাকার এবং বৃত্তাকার চোঙ) এবং সীমাহীন পাত যেখানে দুটি অর্দ্ধাক্ষ অসীম। মহাকর্ষীয় বিভব সমাকলনের প্রয়োগে এই সমস্ত আকারগুলি তড়িচ্চুম্বকত্বতে (ধ্রুবক G ছাড়া, এবং 𝜌 ধ্রুবক আধান ঘনত্ব) বহুল ব্যবহৃত হয়।
একটি গোলকাকার প্রতিসম ভর বিন্যাস কোনও পর্যবেক্ষকের কাছে সম্পূর্ণ বিন্যাস অঞ্চলের বাইরের বলে মনে হয়, যেন সমস্ত ভর কেন্দ্রে কেন্দ্রীভূত এবং এইভাবে শেল উপপাদ্য দ্বারা কার্যকরভাবে যেন একটি বিন্দু কণা হিসাবে প্রতিভাত। পৃথিবী পৃষ্ঠে, ত্বরণকে ধরা হয়েছে মানক মাধ্যাকর্ষণ g, যার মান প্রায় ৯.৮ মি/সেকেন্ড২। যদিও এই মানটি অক্ষাংশ এবং উচ্চতার সাথে সামান্য পরিবর্তিত হয়: নিরক্ষীয় অঞ্চলের চেয়ে মেরুগুলিতে ত্বরণের মাত্রা কিছুটা বেশি কারণ পৃথিবী হল একটি কমলাকার গোলক।
একটি গোলকাকার প্রতিসম ভর বিন্যাসের মধ্যে, গোলকের স্থানাঙ্কে পয়সনের সমীকরণ সমাধান করা সম্ভব। একটি সুষম গোলকের মধ্যে, যার ব্যাসার্দ্ধ R, ঘনত্ব ρ, এবং ভর m, গোলকের অভ্যন্তরে অভিকর্ষজ শক্তি g কেন্দ্র থেকে দূরত্ব r এর সাথে রৈখিকভাবে পরিবর্তিত হয়, গোলকের অভ্যন্তরে মহাকর্ষীয় বিভব দাঁড়ায়[৮][৯]
যা স্বতন্ত্রভাবে গোলকের বাইরের অংশের জন্য বিভব অপেক্ষকের সাথে সংযোগ স্থাপন করে (শীর্ষের চিত্র দেখুন)।
সাধারণ আপেক্ষিকতায়, মহাকর্ষীয় বিভবটি মেট্রিক টেন্সর দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়। মহাকর্ষজ ক্ষেত্র যখন দুর্বল এবং উৎসগুলি আলোর গতির তুলনায় খুব ধীরে চলছে, সাধারণ আপেক্ষিকতা এসে দাঁড়ায় নিউটনীয় অভিকর্ষ মহাকর্ষীয় বিভবের নিরিখে মেট্রিক টেন্সর বাড়ানো যেতে পারে।[১০]