হিন্দুধর্ম |
---|
ধারাবাহিকের অংশ |
![]() |
তিব্বতী বৌদ্ধধর্ম |
---|
একটি সিরিজের অংশ |
![]() |
মহাকাল (ভৈরব) | |
---|---|
সময়, মায়া, সৃষ্টি, ধ্বংস এবং শক্তির দেবতা | |
![]() মহাকাল এবং সঙ্গীবৃন্দ | |
দেবনাগরী | महाकाल |
সংস্কৃত লিপ্যন্তর | Mahākāla |
অন্তর্ভুক্তি | শিব |
আবাস | শ্মশানভূমি (নানান চিত্রকল্পে ব্যতিক্রমও আছে) |
অস্ত্র | খড়্গ, ত্রিশূল মুগুর (জাপানী চিত্রকল্পে) |
সঙ্গী | কালী, মহাকালী |
মহাকাল (ল্যাটিন: Mahākāla, দেবনাগরী: महाकाल) হিন্দুদের সর্বোচ্চ দেবতা ভগবান শিবের অপর নাম। এছাড়াও বৌদ্ধধর্ম ও শিখধর্মের মানুষজন এনাকে বিশ্বাস করেন। হিন্দুধর্ম অনুযায়ী, তিনি সময়, যুগ ও কালের উর্দ্ধে; হিন্দু দেবী কালীর সঙ্গী এবং শাক্তধর্মের কালীকুল শাখার শীর্ষস্থানীয়দের অন্যতম।[১][২][৩]
এছাড়াও বজ্রযান বৌদ্ধধর্মে, বিশেষত তিব্বতী ঐতিহ্যবাহী টাংমি (পূর্ব-এশীয় গুহ্য বৌদ্ধধর্ম) এবং সিংগনে (জাপানি গুহ্য বৌদ্ধধর্ম) ধর্ম্মপাল নামক সংরক্ষক দেবতা হিসাবেও আবির্ভূত হতে দেখা যায়। তিনি চীনে দ্যহেইতিয়ান (Dàhēitiān, 大黑天) এবং জাপানে দ্যইকোকুতেন (Daikokuten, 大黒天) নামে পরিচিত। শিখধর্মে, মহাকালকে মায়ার অধীশ্বর কাল হিসাবে উল্লেখ করা হয়।
"মহাকাল" হল সংস্কৃত মহা (महत्; "great") এবং কাল-এর (काल; "time/death") একটি বহুব্রীহি, যার অর্থ "সময়ের অতীত" বা মৃত্যু।[৪] আক্ষরিক তিব্বতি অনুবাদটি হল "নাগপো চেনপো" (Nagpo Chenpo), যদিও এই দেবতাকে উল্লেখের সময় তিব্বতিরা "গনপো" (Gönpo།, ওয়াইলি: mgon po) শব্দটি ব্যবহার করেন।
শক্তিসঙ্গমতন্ত্র অনুসারে, কালীর এই দাম্পত্যসঙ্গী অত্যন্ত ভয়-উদ্রেককারী। মহাকাল চতুর্ভূজ, ত্রিনেত্রযুক্ত এবং ১ কোটি কৃষ্ণবর্ণ অগ্নির বিগঠনের দীপ্তিসম্পন্ন; আটটি শ্মশানভূমির মধ্যস্থলে তিনি বাস করেন। তিনি আটটি মাথার খুলি দ্বারা ভূষিত, পাঁচটি মানুষের শবের উপর আসীন, হাতে একটি ত্রিশূল, একটি পাত্র, একটি তলোয়ার এবং একটি খড়্গ ধরে থাকেন। তিনি শ্মশানভূমির ভস্ম দ্বারা শোভিত এবং বেশকিছু সংখ্যক উচ্চৈঃস্বরে তীক্ষ্ণ চিৎকাররত শকুন ও শিয়াল দ্বারা পরিবেষ্টিত। এদের মধ্যে, তাঁর পাশে তাঁর সঙ্গিনী কালী অধিষ্ঠিতা এবং তাঁরা উভয়ে মিলে সময়ের প্রবাহকে প্রকাশ করেন।
মহাকাল ও কালী/মহাকালী উভয়েই ব্রহ্মের অন্তিম বিধ্বংসী শক্তিকে প্রকাশ করেন এবং তাঁরা কোনো নিয়মনীতির দ্বারা আবদ্ধ নন। এমনকি, সময় ও মহাশূন্যকে নিজেদের মধ্যে দ্রবীভূত করার শক্তি তাঁদের আছে এবং ব্রহ্মাণ্ডের বিচূর্ণীভবনের সময় তারা শূন্যাবস্থায় বর্তমান থাকেন। তারা কল্পের অবসানে ব্রহ্মাণ্ডের বিগঠনের জন্য দায়ী। তারা মহা অশুভ ও মহা অসুরদেরও বিলোপসাধন করেন, যখন অন্যান্য দেবতাগণ এমনকি ত্রিমূর্তিও তা করতে ব্যর্থ হন। মহাকাল এবং কালী পুরুষ, নারী, শিশু, জীবজন্তু, বিশ্বচরাচর ও সম্পূর্ণ ব্রহ্মাণ্ডকে কোনোরকম অনুকম্পা ছাড়াই পূর্ণধ্বংস করেন, কারণ তারা হলেন মূর্তিমান কাল বা সময়, আর সময় কোনোকিছুর দ্বারা আবদ্ধ নয় এবং সময় কোনোকিছু বা কারোর জন্য অনুকম্পা, প্রতীক্ষা প্রদর্শন করে না।[৫]
হিন্দুধর্ম অনুযায়ী, মহাকাল ব্রহ্মাণ্ডের চূড়ান্ত সংহারকর্তা শিব বা পরমশিবের বিধ্বংসী রূপ। তিনি হলেন মূর্তিমান কাল বা সময়, এমনকি "সময়ের অতীত" বা মৃত্যু; বিশ্বচরাচর ও সম্পূর্ণ ব্রহ্মাণ্ডের ভৌত-উপাদানকে কোনোরকম অনুকম্পা ছাড়াই পূর্ণধ্বংস করেন।[৬]
ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড ও ডুয়ার্সের (উত্তরবঙ্গের অন্তর্ভুক্ত) কোনও কোনও জায়গায়, বন্য হাতিদের মহাকাল হিসাবে আরাধনা করা হয়।[২] [৩][৭]