মহাকাশ বর্জ্য[১] বলতে মহাকাশে, বিশেষ করে পৃথিবীর চারিদিকে কক্ষপথে, অবস্থিত বিভিন্ন অকার্যকর কৃত্রিম বস্তুকে বোঝায়। যার মধ্যে অকার্যকর মহাকাশযান, উৎক্ষেপণ যানের অকার্যকর পর্যায়, কোনো মহাকাশ অভিযানে অংশগ্রহণকারী মহাকাশযান ও নভোচারীদের ফেলে আসা বিভিন্নরকম বর্জ্য অন্তর্গত।[১] কক্ষপথে ফেলে আসা অকার্যকর কৃত্রিম বস্তু ছাড়াও ক্ষয়ীভবন ও জারণের ফলে উৎপন্ন টুকরো, মহাকাশযান থেকে বহিষ্কার করা কঠিন হয়ে যাওয়া তরল পদার্থ, সলিড রকেট মোটর থেকে জ্বলনমুক্ত কণিকা, এমনকি রঙের টুকরোও মহাকাশ বর্জ্যের অন্তর্গত হতে পারে। মহাকাশ বর্জ্য মহাকাশযানের অন্যতম বিপদ।[২]
মহাকাশ বর্জ্যের জন্য বহু মানব ও মানবহীন মহাকাশযান ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে। মহাকাশ শিল্পের কিছু অংশগ্রহণকারী মহাকাশ বর্জ্যের ব্যবস্থাপনা, বিপর্যয় হ্রাস ও সম্ভাব্য অপসারণ নিয়ে চর্চা করছে।[৩]
নভেম্বর ২০২২-এর হিসাব অনুযায়ী[হালনাগাদ], ইউএস স্পেস সার্ভিলেন্স নেটওয়ার্ক পৃথিবীর চারিদিকে ২৫,৮৫৭টি কৃত্রিম বস্তু নথিবদ্ধ করেছে,[৪] যার মধ্যে ৫,৪৬৫টি সক্রিয় কৃত্রিম উপগ্রহ রয়েছে।[৫] কিন্তু এই কৃত্রিম বস্তুগুলো ট্র্যাকিং করার মতো যথেষ্ট বড় এবং ট্র্যাকিং করা যায় এমন কক্ষপথে এই বস্তুগুলো রয়েছে। মলনিয়া কক্ষপথে অবস্থিত মহাকাশ বর্জ্য (যেমন কসমস ওকো উপগ্রহ) উত্তর গোলার্ধ থেকে ট্র্যাকিং করার পক্ষে অত্যন্ত উঁচু।[৬] জানুয়ারি ২০১৯-এর হিসাব অনুযায়ী[হালনাগাদ], পৃথিবীর চারিদিকে ১ সেন্টিমিটার (০.৪ ইঞ্চি) আকারের চেয়ে ছোট এমন ১২ কোটি ৮০ লাখের বেশি বর্জ্য, ১–১০ সেমির মধ্যে রয়েছে এমন প্রায় ৯ লাখ বর্জ্য এবং ১০ সেন্টিমিটার (৩.৯ ইঞ্চি) আকারের চেয়ে বড় এমন ৩৪,০০০টি বর্জ্য রয়েছে বলে অনুমান করা হয়েছে।[৩] বিভিন্ন মহাকাশ সংস্থা অনেকসময় সবচেয়ে ছোট মহাকাশ বর্জ্য (যেমন রঙের টুকরো, সলিড রকেটের কণিকা) ও ক্ষুদ্র উল্কাপিণ্ডকে একত্রে MMOD (ইংরেজি Micrometeoroid and Orbital Debris কথার সংক্ষিপ্ত রূপ) বলে অভিহিত করে।
বর্জ্যের সাথে সংঘাত মহাকাশযানের অন্যতম বিপদে পরিণত হয়েছে। মহাকাশ বর্জ্যের সবচেয়ে ছোট টুকরো মহাকাশযানের, বিশেষ করে সৌর প্যানেল ও দূরবীক্ষণ যন্ত্রের ক্ষতি করতে পারে এবং এগুলোকে ব্যালেস্টিক শিল্ড দিয়ে সুরক্ষিত করা সম্ভব নয়।[৭]
২,০০০ কিলোমিটার (১,২০০ মাইল)-এর নিম্ন কক্ষপথে বর্জ্যের টুকরোর ঘনত্ব ক্ষুদ্র উল্কাপিণ্ডের চেয়ে বেশি। এর বেশিরভাগই সলিড রকেট মোটরের ধূলিকণা, ক্ষয়ীভবনের ফলে উৎপন্ন বর্জ্য (যেমন রঙের টুকরো) ও সোভিয়েত নিউক্লীয় উপগ্রহের জমাটবদ্ধ কুল্যান্ট।[৮][৯][১০]আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (আইএসএস) ৩০০–৪০০ কিলোমিটার (১৯০–২৫০ মাইল) কক্ষপথের মধ্যে আবর্তন করে এবং দুটি সবচেয়ে সাম্প্রতিক বড় মহাকাশ বর্জ্য ঘটনা (২০০৭ সালে চীনের অ্যান্টিস্যাটেলাইট অস্ত্র পরীক্ষা এবং ২০০৯ সালে দুই কৃত্রিম উপগ্রহের মধ্যে সংঘর্ষ) ৮০০ থেকে ৯০০ কিলোমিটার (৫০০ থেকে ৫৬০ মাইল) উচ্চতায় ঘটেছে।[১১] আইএসএস-কে MMOD-এর হাত থেকে রক্ষা করার জন্য হুইপল শিল্ডিং ব্যবহার করা হয়। তবে মহাকাশ স্টেশনের স্থান পরিবর্তনের মাধ্যমে জানা মহাকাশ বর্জ্যের সাথে সংঘর্ষের ১/১০,০০০ সম্ভাবনা এড়ানো সম্ভব।
Hoots, Felix; Schumacher, Paul Jr.; Glover, Robert A. (২০০৪)। "History of Analytical Orbit Modeling in the U.S. Space Surveillance System"। Journal of Guidance, Control, and Dynamics। 27 (2): 174–185। ডিওআই:10.2514/1.9161। বিবকোড:2004JGCD...27..174H।
Khatchadourian, Raffi, "The Trash Nebula: Millions of man-made artifacts are circling Earth. Will one of them cause a disaster?", 28 September 2020, pp. 44–52, 54–55. "By one estimate, there are a hundred million bits of debris that are a millimetre in size, a hundred million as small as a micron. We live in a corona of trash. [T]he problem, if ignored, could destroy all the satellites that orbit near the Earth – a loss that would be more acutely felt as humanity increasingly relied on space." (p. 47.)