মহাকাশযান বহনকারী বিমান | |
---|---|
নাসার মহাকাশযান বহনকারী বিমান ৯০৫ (সামনে) এবং ৯১১ (পেছনে) | |
ভূমিকা | আউটসাইজ কার্গো ফ্রেইট এয়ারক্রাফট |
নির্মাতা | বোয়িং |
প্রবর্তন | ১৯৭৭ |
অবসর | ২০১২ |
অবস্থা | অবসরপ্রাপ্ত |
মুখ্য ব্যবহারকারী | নাসা বোয়িং |
নির্মিত সংখ্যা | ২ |
যা হতে উদ্ভূত | বোয়িং ৭৪৭-১০০ |
মহাকাশযান বহনকারী বিমান হল বোয়িং ৭৪৭ মডেলের ব্যাপকভাবে উন্নয়নকৃত দুইটি বিমান, যেগুলো মহাকাশযান বহনের কাজে ব্যবহৃত হত। এদের একটি ৭৪৭-১০০ মডেলের এবং আরেকটি হল ৭৪৭-১০০এসআর মডেলের।
মহাকাশযান বহনকারী বিমানগুলো মহাকাশযানগুলোকে কেনেডি স্পেস সেন্টারের শাটল ল্যান্ডিং ফ্যাসিলিটি থেকে বহন করে উৎক্ষেপণ স্থলে নিয়ে যেত। মহাকাশযানগুলো মহাকাশযান বহনকারী বিমানের ওপরে মেট-ডিমেট ডিভাইসের সাহায্যে বসানো হত। মেট ডিমেট ডিভাইস হল গ্যান্ট্রির মত একটি স্থাপনা যা মহাকাশযানগুলোকে ভূপৃষ্ঠের উপরে উঠিয়ে মহাকাশযান বহনকারী বিমানকে মহাকাশ পরিবহনে সহায়তা করত।
মহাকাশযান বহনকারী বিমান ১৯৭৭ সালে প্রথমবারের মত মহাকাশযান বহন করে। এর মাধ্যমে উৎক্ষেপণকারী প্রথম মহাকাশযানের নাম হল স্পেস শাটল এন্টারপ্রাইজ।[১]
লকহিড সি-৫ গ্যালাক্সিকে নাসা মহাকাশযান বহন করার কাজে ব্যবহার করার জন্য চিন্তাভাবনা করলেও তারা বোয়িং ৭৪৭ কে মহাকাশযান বহনের কাজে বিবেচনা করে। এর কারণ হল, বোয়িং ৭৪৭ এর পাখা সি-৫ এর পাখা থেকে নিচু এবং মার্কিন বিমানবাহিনী পুনরায় সি-৫ ব্যবহার করার সম্ভবনা ছিল আর অন্যদিকে নাসা খুব সহজেই বোয়িং ৭৪৭ ব্যবহার করতে পারত।
প্রথম বিমান বোয়িং ৭৪৭-৯২৩ এন৯০৫এ নামে নিবন্ধিত হয়, যেটি তৈরি করা হয়েছিল মার্কিন এয়ারলাইন্সের জন্য। সত্তরের দশকে "এন্টারপ্রাইজ" নিয়ে পরীক্ষা চালানোর সময়ে এর গায়ে ছিল মার্কিন এয়ারলাইন্সের লেবাস। এটি ১৯৭৪ সালে অধিগত হয় এবং শুরুর দিকে ঘূর্ণি বাতাস নিয়ে গবেষণার কাজে নাসার ড্রাইডেন উড্ডয়ন গবেষণা কেন্দ্রে ব্যবহৃত হত। এছাড়া, এটি এফ-১০৪ এর একটি পরীক্ষামূলক উড্ডয়নেও ব্যবহৃত হয়েছিল।
১৯৭৬ সালে বিমানটি নাসার জন্য বিশেষভাবে তৈরি করে বোয়িং।[২] এর প্রথম শ্রেণীর আসনগুলো নাসার যাত্রীদের জন্য রাখা হলেও এর মূল ও ভিতরের আসনগুলো বসার জন্য রাখা হয়েছিল না।[৩] অধিরোহী ভাররক্ষাকারী অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল ও বিমানদেহ শক্তিশালী করা হয়েছিল। উল্লম্ব স্থিররক্ষাকারী লেজের দিকে দেওয়া হয়েছিল যা মহাকাশযান বহনে সহায়ক ভূমিকা পালন করত। এর বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ও ইঞ্জিনের আধুনিকায়ন করা হয়েছিল এবং প্রথম দিককার বোয়িং ৭৪৭ এর মত জরুরি অবস্থার জন্য গোপন সুরঙ্গ যোগ করা হয়েছিল। পরবর্তীতে পরীক্ষামূলক উড্ডয়নের পর এটি বাদ দেওয়া হয় কেননা, এটি পুরোপুরিভাবে নিরাপদ ছিল না বলে গণ্য হয়েছিল।
প্রতিবন্ধক নিয়ে উড্ডয়ন এবং মহাকাশযানের ভরের দরুন অতিরিক্ত জ্বালানি ব্যবহার করা ছাড়াও ক্ষতির সম্মুখীন হতে হত। এর যাত্রাকালীন পথ কমিয়ে ১,০০০ নটিক্যাল মাইল (১,২০০ মা; ১,৯০০ কিমি) আনা হয়, যার ৫,৫০০ নটিক্যাল মাইল (৬,৩০০ মা; ১০,২০০ কিমি) পথ ছিল ভারমুক্ত যাত্রা এবং আন্তঃমহাদেশীয় যাত্রার সময় জ্বালানি নেবার জন্য মহাকাশযান বহনকারী বিমানকে কয়েকবার থামতে হত।[৪] মহাকাশযান ছাড়াও এর ভারকেন্দ্র ঠিক রাখার জন্য একে বোঝা বহম করতে হত।[৩] মহাকাশযান বহনকারী বিমানের ছাদের উচ্চতা ১৫,০০০ ফুট (৪,৬০০ মি) ও মহাকাশযান যোগ করা হলে শব্দের ৬০% বেগে যাত্রা করার সক্ষমতা অর্জন করত।[৪] ১৭০ জনের একদল ক্রু মহাকাশযান ও মহাকাশযান বহনকারী বিমানটিকে উড্ডয়নের জন্য প্রস্তুত করে তোলে।[৫]
উড্ডয়নকালীন সময়ে মহাকাশযান বহনকারী বিমানে জ্বালানি সরবরাহ নিয়ে গবেষণা করা হয়। তখন, বোয়িং ই-৪ (বোয়িং ৭৪৭-২০০ এর উন্নত রূপ) ও ইরানি বিমানবাহিনীর জন্য তৈরি বোয়িং ৭৪৭ ট্যাংকার পরিবহন তৈরি করা হয়েছিল। ট্যাংকার এয়ারক্রাফট নিয়ে উড্ডয়নের পর জ্বালানি সরবরাহের সময় মহাকাশযান বহনকারী বিমানের পিছনের দিকে কিছু ফাটলের সৃষ্টি হয়। এই ঘটনা ঘটার পর গবেষকগণ অপ্রয়োজনীয় ঝুঁকি না নেবার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। উড্ডয়নকালীন সময়ে জ্বালানি সরবরাজ নিয়ে তাড়া না থাকায় এই পরীক্ষা বাতিল করা হয়।
১৯৮৩ সালের পর মহাকাশযান বহনকারী বিমান মার্কিন এয়ারলাইন্সের তিন রঙের লেবাস ধারণ করে নি। নাসা মহাকাশযান বহনকারী বিমানে নিজেদের লেবাস দেয় যার কাঠামো দেয় যাতে সাদা রঙের কাঠামোর সাথে নীল রঙের দাগ দেওয়া হয়।[৬] সে বছর মহাকাশযান বহনকারী বিমান "এন্টারপ্রাইজ" মহাকাশযান নিয়ে ইউরোপ গমন করে এবং কানাডার গুজ বে, আইসল্যান্ডের কেফ্লাভিক, যুক্তরাজ্য ও পশ্চিম জার্মানিতে জ্বালানি নেবার জন্য থামে। এটি তখন প্যারিস এয়ার শোতে অংশ নিয়েছিল।[৭]
১৯৮৮ সালে "চ্যালেঞ্জার দুর্ঘটনা"র পর নাসা জাপান এয়ারলাইন্সের নিকট থেকে একটি অতিরিক্ত ৭৪৭এসআর-৪৬ গ্রহণ করে। এটি এন৯১১এনএ ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে নামে নিবন্ধিত হয় এবং এন৯০৫এনএর মত উন্নয়ন করার পর এটি ১৯৯০ সালে নাসায় প্রবেশ করে। এটি প্রথমবারের মত ব্যবহৃত হয় "এনডেভার নভোখেয়াযান পরিবহনের ক্ষেত্রে। এটি ক্যালিফোর্নিয়ার পামডেল থেকে কেনেডি স্পেস সেন্টারে নভোখেয়াযানটিকে বহন করে এনেছিল।
ক্যালিফোর্নিয়ার এডওয়ার্ডস বিমানঘাঁটির[৩] অধীন ড্রাইডেন উড্ডয়ন গবেষণা কেন্দ্রে উন্নয়ন ঘটলেও এই দুইটি বিমানকে আলাদা করা যায়। এন৯১১এনএতে দুপাশে পাটাতনের উপরে পাঁচটি করে জানালা থাকল্র এন৯০৫এনএতে দেখা যায় দুটি করে। দুইটি বিমানের পিছন দিকের উঁচু স্থানে হাস্যরসাত্মকভাবে "এখানে মহাকাশযান সংযুক্ত করতে" বা "এখানে মহাকাশ যান রাখতে" বলা হলেও "কালো অংশ নিচে রাখুন" নির্দেশিকা দেখে আলাদা করা যায়।[৮][৯]
যুক্তরাজ্য, স্পেন ও ফ্রান্সের ক্ষেত্রে মহাকাশযান বহনের ক্ষেত্রে অন্য মহাকাশযান অবতরণ স্থলের ক্ষেত্র পরিচালনা করা যায়। মহাকাশযান বহনকারীর উড্ডয়ন সীমা কমে আসার দরুন ভর কমানোর জন্য অতিরিক্ত প্রস্তুতি (যেমন মহাকাশযান থেকে অতিরিক্ত ভর কমানো) গ্রহণ করা হতে পারে।[১০]
বোয়িং বিশেষ মহাকাশযান বহনকারী বিমানের সাহায্যে এর ফ্যান্টম রে বিমান (মনুষ্যবিহীন আকাশযান) মিসৌরির সেন্ট লুইস থেকে এডওয়ার্ডস বিমানঘাঁটিতে বহন করে আনে ২০১০ সালের ১১ ডিসেম্বরে।[১১]
মহাকাশযান বহন করে হওয়া উড্ডয়নগুলো সাধারণত এডওয়ার্ডস বিমানঘাঁটি (মহাকাশযানের অতিরিক্ত অবতরণ স্থল) থেকে কেনেডি স্পেস সেন্টারের আকাশযান অবতরণ স্থল পর্যন্ত সংঘটিত হত, যেখানে মহাকাশযান তৈরি হত। শুরুর দিকে মহাকাশযান উড্ডয়নের ক্ষেত্রে এটা স্বাভাবিক ছিল যখন আকাশযান অবতরণ স্থলের আবহাওয়া উড্ডয়নের জন্য প্রতিকূল ছিল। কিছু যাত্রা ক্যালিফোর্নিয়ার পামডেলের রকওয়েল ইন্টারন্যাশনাল থেকে নাসায় মহাকাশযান পৌঁছানোর পর ড্রাইডেন উড্ডয়ন গবেষণা কেন্দ্র থেকে সংঘটিত হত।[১২]
মহাকাশযান উড্ডয়ন শেষ হবার পর মহাকাশযান বহনকারী বিমান অবসরপ্রাপ্ত মহাকাশযানগুলোকে কেনেডি মহাকাশ কেন্দ্র থেকে যাদুঘরে স্থানান্তর করত। ২০১২ সালের ১৯ এপ্রিল ওয়াশিংটন ডিসির অদূরে ভার্জিনিয়ার চ্যান্টিলির স্মিথসোনিয়ান ইন্সটিটিউশনের জাতীয় আকাশ ও মহাকাশ যাদুঘরের উডভার-হ্যাজি কেন্দ্রে "ডিসকাভারি" স্থানান্তরিত হয়েছিল। ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল ডিসকাভারি নাসা টি-৪৮ ট্যালন অনুসারী বিমানের সাহায্যে মহাকাশযান বহনকারী বিমানের উপরে অবস্থাব করে উড্ডয়ন করেছিল। এটি ছিল ডিসকাভারির শেষ উড্ডয়ন। মহাকাশযান বহনকারী বিমান ও ডিসকাভারি ওয়াশিংটন ডিসি থেকে সকাল দশটার দিকে যাত্রা শুরু করেছিল এবং সকাল এগারোটার দিকে ভার্জিনিয়ার ডালিসে পৌঁছেছিল। এই উড্ডয়ন ও অবতরণ গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার লাভ করে।
এর শেষ উড্ডয়নে এনডেভার নভোখেয়াযানকে কেনেডি মহাকাশ কেন্দ্র থেকে লস অ্যাঞ্জেলেসে নিয়ে যায়। এই উড্ডয়নে এলিংটন ক্ষেত্র ও এডওয়ার্ডস বিমানঘাঁটি ব্যবহৃত হয়েছিল। এডওয়ার্ডস ত্যাগ করার পর ক্যালিফোর্নিয়ার সাক্রামেন্টো থেকে সান ফ্রান্সিসকো বিমানপথ জুড়ে কম উচ্চতায় উড়ে শেষে পৌঁছেছিল লস অ্যাঞ্জেলেসে। "এনডেভার"কে লশ অ্যাঞ্জেলেস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আনা হয়। এরপর এটি লস অ্যাঞ্জেলেস ও ইংলেউডের সড়কপথের মাধ্যমে এটিকে এর সর্বশেষ গন্তব্য ক্যালিফোর্নিয়া বিজ্ঞান কেন্দ্রের প্রদর্শনী উদ্যানে স্থানান্তর করা হয়।
মহাকাশযান বহনকারী এন৯১১এনএ ২০১২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি এডওয়ার্ডস বিমানঘাঁটির ড্রাইডেন উড্ডয়ন গবেষণা কেন্দ্রে সর্বেশেষ কাজ সম্পাদন করার পর অবসর গ্রহণ করে। এটি স্ট্রাটোস্ফেরিক অবজারভেটরি ফর ইনফ্রারেড অ্যাস্ট্রোনমির বিমানের যন্ত্রাংশের উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল, যেটি ছিল বোয়িং ৭৪৭ এর একটি উন্নত সংস্করণ।[১৩] নাসার সাথে দীর্ঘমেয়াদী চুক্তির অংশ হিসেবে এন৯১১এনএ বর্তমানে ক্যালিফোর্নিয়ার পামডেলের জো ডেভিস হেরিটেজ এয়ারপার্কে সংরক্ষিত আছে এবং সেটি সেখানে প্রদর্শিত হচ্ছে।[১৪][১৫]
মহাকাশযান বহনকারী এন৯০৫এনএ অবসর গ্রহণকারী মহাকাশযানগুলো যাদুঘরে স্থানান্তর করার কাজে ব্যবহৃত হত। ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে লস অ্যাঞ্জেলেস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এনডেভার পরিবহন করে আনার পর এটি ড্রাইডেন উড্ডয়ন গবেষণা কেন্দ্রে ফিরে আসে। নাসা এটিকে এন৯০৫এনএর মত স্ট্রাটোস্ফেরিক অবজারভেটরি ফর ইনফ্রারেড অ্যাস্ট্রোনমির বিমানের যন্ত্রাংশ সরবরাহের জন্য বিবেচনা করে।[১৩][১৬] কিন্তু, নাসার প্রকৌশলীরা সমীক্ষা চালানোর পর বুঝতে পারলেন যে এর অল্পকিছু যন্ত্রাংশ স্ট্রাটোস্ফেরিক অবজারভেটরি ফর ইনফ্রারেড অ্যাস্ট্রোনমির বিমানে ব্যবহৃত করা যেতে পারে। ২০১৩ সালে এন৯০৫এনএকে হাউস্টন মহাকাশ কেন্দ্রে সংরক্ষণ ও নকল মহাকাশযান "ইন্ডিপেন্ডেন্স" এর সাথে পরিদর্শনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।[১৭] এন৯০৫এনএ ইলিংটন ক্ষেত্র অভিমুখে উড্ডয়ন করে। এখানে এর ইতি ঘটে ও সাত খণ্ডে বিভক্ত হয় (এ প্রক্রিয়া দ্য বিগ মুভ নামে পরিচিত। এরপর, সাত টুকরা জড় করা হয় ও ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে নকল মহাকাশযানের সাথে যুক্ত করা হয়।[১৮] এটি ২৩ জানুয়ারি ২০১৬ তে জনসাধারণের সামনে প্রদর্শনের জন্য উন্মুক্ত করা হয় এবং স্থানটির নাম দেওয়া হয় ইন্ডিপেন্ডেন্স প্লাজা।
বোয়িং ৭৪৭-১০০ এর বর্ণনা[১৯] জেনকিন্স ২০০০[৪] থেকে সংগৃহীত তথ্যগুলো হল:
সাধারণ বৈশিষ্ট্য
কর্মক্ষমতা