মহানগর এলাকা এমন একটি অঞ্চল যা একটি ঘনবসতিযুক্ত পৌরপিণ্ড ও তার পার্শ্ববর্তী তুলনামূলক কম জনবহুল অঞ্চলসমূহ নিয়ে গঠিত এবং এই অঞ্চলজুড়ে সাধারণ শিল্পাঞ্চল, বাণিজ্যিক এলাকা, পরিবহন ব্যবস্থা, পরিকাঠামো ও বাসস্থান রয়েছে।[১][২] মহানগর সাধারণত একাধিক শহর, পৌরসভা, এক্তিয়ার, পাড়া, টাউনশিপ, বরো, শহরতলি, এক্সার্ব, প্রদেশ, এমনকি একাধিক দেশ বা রাষ্ট্র জুড়ে বিস্তৃত হতে পারে। সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিবর্তনের দরুন মহানগর এলাকাগুলো অন্যতম অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক এলাকা হয়ে উঠেছে।[৩]
মহানগর এলাকায় উপগ্রহ শহর, নগর ও মফস্বল ধরনের গ্রামাঞ্চলগুলি অন্তর্ভুক্ত থাকে যা আর্থ-সামাজিকভাবে একটি শহরের প্রাণকেন্দ্রের সাথে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত।[৪] অধিকাংশ মহানগর এলাকা একটি বড় শহরের উপর স্থিতি রেখে গড়ে উঠে যেমন: প্যারিস মহানগর এলাকা (প্যারিস) বা নিউ ইয়র্ক মহানগর এলাকা (নিউ ইয়র্ক) । কিছু কিছু ক্ষেত্রে মহানগর এলাকায় সমান গুরুত্বের একাধিক কেন্দ্র থাকে যেমন ডালাস–ফোর্ট ওয়ার্থ মহানগর এলাকা (ডালাস এবং ফোর্ট ওয়ার্থ) এবং ইসলামাবাদ-রাওয়ালপিন্ডি মহানগর এলাকা (ইসলামাবাদ এবং রাওয়ালপিন্ডি)।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে "মহানগর পরিসংখ্যান অঞ্চল" ব্যবস্থাটি সুনাম অর্জন করেছে। মহানগর এলাকাসমূহ বৃহত্তর পৌর মহাপুঞ্জের অংশও হতে পারে। ২০০৬ সালে জার্মান অধ্যাপকগণ মহানগর এলাকার বহিঃস্থ নগর কেন্দ্রগুলির জন্য রিজিওপলি এবং রিজিওপলিটন এলাকা বা রিজিও তত্ত্বটি প্রবর্তন করেছিলেন, যেসব এলাকা বা স্থানগুলো একই মহানগর অঞ্চলে ক্ষুদ্রপর্যায়ে একই ধরনের গুরুত্ব উদ্ভূত করে। [৫] মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মাইক্রোপলিটন পরিসংখ্যান অঞ্চল তত্ত্বটি ব্যবহৃত হয়।
একটি মেট্রোপলিটন বা মহানগর অঞ্চল একটি নগর সমষ্টিকে (সংলগ্ন, অন্তর্নির্মিত অঞ্চল) এমন কিছু জোন বা স্থানের সাথে একীভূত করে যেগুলোর জীবনযাত্রা শহুরে হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়, তবে কর্মসংস্থান বা অন্যান্য ব্যবসা-বাণিজ্য দ্বারা শহরের কেন্দ্রের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত থাকে। এই বাহ্যিক অঞ্চলগুলি মাঝেমধ্যে কম্যুটার বেল্ট (শহর সংলগ্ন এমন অঞ্চল যেখান থেকে প্রতিদিন প্রচুর সংখ্যক লোক কাজের উদ্দেশ্যে ভ্রমণ করে) হিসাবে পরিগণিত হয় এবং এটি নগর অঞ্চল ছাড়িয়ে অন্যান্য রাজনৈতিক সত্তায়ও প্রসারিত হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ লং আইল্যান্ডের ইসলিপ শহরকে নিউ ইয়র্ক মহানগর এলাকার অংশ হিসাবে বিবেচনা করা হয় ।
প্রথানুযায়ী, মহানগর অঞ্চলের স্থিতিমাপ সরকারী এবং বেসরকারী ঊভয় ক্ষেত্রে ব্যবহারিক দিক থেকে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। কখনও কখনও তা শহুরে এলাকা থেকে কিছুটা আলাদা হয় এবং অন্য ক্ষেত্রে এটি এমন বিস্তৃত অঞ্চলগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করে যেগুলির সাথে একটি একক শহুরে জনবসতির সামান্যই সম্পর্ক রয়েছে; মহানগর অঞ্চলের তুলনামূলক পরিসংখ্যানসমূহের ক্ষেত্রে এ বিষয়টিকে বিবেচনায় নেওয়া উচিত। একটি মহানগর এলাকার জন্য নির্ধারিত জনসংখ্যা, কয়েক লক্ষাধিক লোকজন দ্বারা পরিবর্তনশীল।
১৯৫০ সালে মহানগর এলাকা ব্যবস্থা গৃহীত হওয়ার পর থেকে এর মৌলিক সংজ্ঞার কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়নি,[৬] যদিও সেসময়ে ভৌগোলিক বিন্যাসের ক্ষেত্রে এই সংজ্ঞার উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটেছে এবং আরও পরিবর্তন প্রত্যাশিত। [৭] "মেট্রোপলিটন স্ট্যাটিস্টিক্যাল এরিয়া" বা "মহানগর পরিসংখ্যান অঞ্চল" নামক পরিভাষাটির পরিবর্তনশীলতার কারণে, চলতি কথায় এটি প্রায়শই "মহানগর পরিষেবা অঞ্চল(metro service area)", "মহানগর অঞ্চল (metro area)" বা "এমএসএ (MSA)" হিসাবে ব্যবহৃত হয় যা দ্বারা কেবল একটি শহরকে না বুঝিয়ে বরং এর আশেপাশের শহরতলি, শহরের বহিঃস্থ অঞ্চল এবং কখনও কখনও সেসব গ্রামীণ অঞ্চলগুলিকেও বুঝানো হয়, যেগুলো এর দ্বারা প্রভাবিত বলে মনে করা হয়। একটি বহুকেন্দ্রিক মহানগর এলাকায় একাধিক নগর সমষ্টি থাকে যেগুলো ধারাবাহিক উন্নয়ন দ্বারা সংযুক্ত থাকে না। একটি মহানগর অঞ্চলকে সংজ্ঞায়িত করার ক্ষেত্রে এটিই যথেষ্ট যে এক বা একাধিক শহর দ্বারা গঠিত একটি কেন্দ্র যার সাথে পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের উচ্চ মাত্রার সংযুক্তি থাকে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরিসংখ্যান সংস্থা ইউরোস্ট্যাট লার্জার আরবান জোন (এলইউজেড, LUZ) নামে একটি ব্যবস্থা প্রণয়ন করেছে। এলইউজেড, মহানগর এলাকার একটি সমন্বিত সংজ্ঞা দ্বারা এমন একটি এলাকাকে সংজ্ঞায়িত করে যেখান থেকে বাসিন্দাদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ মূল শহরে যাতায়াত করে যা পরিচিত "কার্যকরী নগর অঞ্চল" বা "ফাংশনাল আর্বান রিজিয়ন (functional urban region)" হিসেবে।[৮]
জার্মান সংজ্ঞা অনুসারে, মহানগর এলাকা হল সংযুক্ত প্রজাতন্ত্রী জার্মানির এগারোটি সর্বাধিক ঘনবসতিযুক্ত অঞ্চল। এই মহানগর এলাকাসমূহ বৃহৎ জার্মান শহরগুলি এবং তার আশেপাশের অববাহিকা অঞ্চলগুলিকে সমন্বিত করে ও দেশের রাজনৈতিক, বাণিজ্যিক এবং সাংস্কৃতিক কেন্দ্র গঠন করে।
মহানগর এলাকার যেসব বহিঃস্থ নগর কেন্দ্রগুলি তাদের অঞ্চলে ক্ষুদ্রপর্যায়ে একই ধরনের গুরুত্ব উদ্ভূত করে তাদেরকে নির্দেশের জন্য ২০০৬ সালে জার্মান অধ্যাপকগণ রিজিওপলি এবং রিজিওপলিটন এলাকা বা রিজিও তত্ত্বটি প্রবর্তন করেছিলেন।
বৃহত্তর জোহানসবার্গ মহানগর এলাকা হলো দক্ষিণ আফ্রিকার বৃহত্তম মহানগর এলাকা। ২০১১ সালের দক্ষিণ আফ্রিকা আদমশুমারি অনুযায়ী এই মহানগর এলাকার পৌর এলাকার ৭৯ লাখ জনসংখ্যার বিপরীতে পুরো মহানগর এলাকার জনসংখ্যা ছিল ৯৬ লাখেরও বেশি। পক্ষান্তরে, দক্ষিণ আফ্রিকার মহানগর পৌরসভাগুলিকে একটি মহানগর এলাকার সাধারণ নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়। দক্ষিণ আফ্রিকার এরূপ বৃহত্তম জাতীয় মহানগর পৌর সরকারী সত্তাগুলো হল জোহানসবার্গ মহানগর পৌরসভা, যেখানে ২০১৬ সালের হিসাবে প্রায় ৫০ লাখ লোক বসবাস করছিল। তবে, বৃহত্তর জোহানসবার্গ মহানগর এলাকা এর মূল পৌর শহর জোহানসবার্গের তুলনায় মোটামুটিভাবে দশ গুণ বেশি জনসংখ্যা বিশিষ্ট, যেখানে ২০১১ সালের জনশুমারি অনুসারে ৯৫৭,৪৪১ জনসংখ্যা রয়েছে।
ফ্রান্সের জাতীয় পরিসংখ্যান ইনস্টিটিউট, আইএনএসইই (INSEE) একটি নগর কেন্দ্র এবং এর আশেপাশের যাতায়াতকারী নিত্যযাত্রীদের দ্বারা প্রভাবিত অঞ্চলকে আয়ার আরবাইন (দাপ্তরিক অনুবাদ: "আরবান এরিয়া"[৯],নগর অঞ্চল) হিসেবে অভিহিত করে। এই পরিসংখ্যানগত পদ্ধতিটি ছোট-বড় সব আকারের পৌরপুঞ্জের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, তবে আইএনএসইই কখনও কখনও ফ্রান্সের বৃহত্তম আয়ার আরবাইনসমূহকে নির্দেশ করার জন্যে আয়ার মেট্রোপলিটাইন(মহানগর এলাকা) শব্দটি ব্যবহার করে।
জাতীয় পরিসংখ্যান সম্পর্কিত যুক্তরাজ্য সরকারের কার্যালয় কোনো এলাকাকে "travel to work area (ট্রাভেল টু ওয়ার্ক এরিয়া)" বা "কর্মস্থলে ভ্রমণ এলাকা " আখ্যা দেয় এরূপে যে "কোনো এলাকার আবাসিক কর্মীদের কমপক্ষে ৭৫% ওই এলাকাতেই কাজ করে এবং কমপক্ষে ৭৫% লোক যারা এই এলাকায় কাজ করে তারা সেই এলাকায় বসবাসও করে "। [১০]
সুইডেন, কেন্দ্রীয় পৌরসভা ও পার্শ্ববর্তী পৌরসভাগুলির মধ্যে যাতায়াতের পরিসংখ্যান এবং দেশের তিনটি ভৌগোলিক অঞ্চলে বিদ্যমান পরিকল্পনার সহযোগিতা বিবেচনায় নেওয়ার ভিত্তিতে একটি মহানগর এলাকাকে পৌরসভাগুলির একটি সমষ্টি হিসাবে সংজ্ঞায়িত করে।[১১] ১৯৬৫ সালের দিকে এসব সংজ্ঞায়িত করা হয়েছিল। ২০০৫ সালে, সংজ্ঞায়িত অঞ্চলগুলিতে আরও কয়েকটি পৌরসভা যুক্ত করা হয়েছিল।
"স্ট্যাটিস্টিক্স কানাডা" একটি বৃহৎ নগর কেন্দ্রের আশেপাশে অবস্থিত এক বা একাধিক সংলগ্ন পৌরসভা সমন্বিত একটি অঞ্চল হিসেবে একটি সেন্সাস মেট্রোপলিটন অঞ্চল (সিএমএ) বা পরিসংখ্যান মহানগর এলাকাকে সংজ্ঞায়িত করে। সিএমএ গঠনের জন্য, মহানগর অঞ্চলের জনসংখ্যা কমপক্ষে ১০০,০০০ হতে হবে এবং নগরকেন্দ্রে অন্তত অর্ধেক জনসংখ্যা থাকতে হবে। সিএমএতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য, সংলগ্ন পৌরসভাগুলিকে কেন্দ্রের সাথে উচ্চমাত্রার সংযুক্তিসম্পন্ন হতে হবে, যেমনটি আদমশুমারির তথ্য থেকে প্রাপ্ত কম্যুটার ফ্লো বা নিত্যযাত্রী প্রবাহের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হয়। [১২]
ব্রাজিলে মহানগর এলাকাকে "মহানগর অঞ্চল" বলা হয়। প্রতিটি রাজ্য একটি মহানগর অঞ্চল গঠন, সংজ্ঞা এবং সংস্থার জন্য নিজস্ব আইন নির্দিষ্ট করে। মহানগর অঞ্চল গঠনের উদ্দেশ্য পরিসংখ্যানগত ব্যবহার নয়, যদিও ব্রাজিলের ভূগোল ও পরিসংখ্যান প্রতিষ্ঠান তাদের প্রতিবেদনে তা ব্যবহার করে। মহানগর অঞ্চলগুলির মূল উদ্দেশ্য হল সংশ্লিষ্ট সব শহরে জনসাধারণের কল্যাণের জন্য নীতিমালার উত্তম পরিচালনা করার অনুমোদন দেওয়া। তাদের কাছে রাজনৈতিক, নির্বাচনী বা বিচারব্যবস্থা সম্পর্কিত ক্ষমতা নেই, তাই মহানগর অঞ্চলের বসবাসকারী নাগরিকগণ এর প্রতিনিধি নির্বাচন করেন না।
২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ পর্যন্ত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অফিস অফ ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড বাজেট (ওএমবি) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পুয়ের্তো রিকোর মহানগর এলাকাসমূহের জন্য ১০৯৮টি পরিসংখ্যান অঞ্চলকে চিহ্নিত করেছে। [১৩] এই ১০৯৮টি পরিসংখ্যান অঞ্চলসমূহ আরো ৯২৯টি "Core-Based Statistical Areas (CBSAs)" বা কেন্দ্র-ভিত্তিক পরিসংখ্যান অঞ্চল"[১৪] এবং ১৬৯ টি "Combined Statistical Areas (CSAs)" বা "সম্মিলিত পরিসংখ্যান অঞ্চল" এ বিভক্ত।[১৫] ৯২৯টি কেন্দ্র-ভিত্তিক পরিসংখ্যান অঞ্চলগুলি ৩৮৮টি মহানগর পরিসংখ্যান অঞ্চলে (এমএসএগুলির মধ্যে ৩৮১টি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এবং সাতটি পুয়ের্তো রিকোর জন্য)[১৬] এবং ৫৪১টি মাইক্রোপলিটন পরিসংখ্যান অঞ্চলে ('μএসএ'সমূহ ৫৩৬টি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এবং পাঁচটি পুয়ের্তো রিকোর জন্য) বিভক্ত করা হয়েছে। [১৭] ১৬৯ টি সম্মিলিত পরিসংখ্যান অঞ্চলগুলোর (১৬৯টি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এবং তিনটি পুয়ের্তো রিকোর জন্য) প্রতিটিতে দুই বা ততোধিক সংলগ্ন কেন্দ্র-ভিত্তিক পরিসংখ্যান অঞ্চল রয়েছে।
অফিস অফ ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড বাজেট (ওএমবি), "কেন্দ্র-ভিত্তিক পরিসংখ্যান অঞ্চল (সিবিএসএ)"কে এক বা একাধিক সংযুক্ত "কাউন্টি" বা "কাউন্টির সমতুল্য" দ্বারা চিহ্নিত করে যেগুলোর কমপক্ষে একটি ৫০,০০০ জনসংখ্যা বিশিষ্ট নগর কেন্দ্র অঞ্চল রয়েছে এবং যার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলোর সাথে যাতায়াত বন্ধন দ্বারা মূল কেন্দ্রের উচ্চমাত্রার সামাজিক এবং অর্থনৈতিক সংযুক্তি রয়েছে। এরপর ওএমবি( OMB) সংযুক্ত পরিসংখ্যান অঞ্চলকে, সংলগ্ন মহানগর এবং মাইক্রোপলিটন পরিসংখ্যান অঞ্চলের বিভিন্ন ধরনের সংমিশ্রণের সমন্বিত নমুনা দ্বারা পরিমাপক অর্থনৈতিক সম্পর্কযুক্ত সমন্বিত অঞ্চল হিসাবে সংজ্ঞায়িত করে। অফিস অফ ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড বাজেট আরও একটি কেন্দ্র-ভিত্তিক পরিসংখ্যান অঞ্চলকে (সিবিএসএ) একটি ভৌগোলিক অঞ্চল হিসাবে সংজ্ঞায়িত করেছে যাতে কমপক্ষে ১০,০০০ লোকবিশিষ্ট নগর কেন্দ্রের ওপর স্থিতিশীল এক বা একাধিক কাউন্টি এবং পার্শ্ববর্তী সেসব কাউন্টি যেগুলো নগর কেন্দ্রের সাথে যাতায়াতের দ্বারা আর্থ-সামাজিকভাবে যুক্ত থাকে তাদের সমন্বয়ে গঠিত।
অস্ট্রেলিয়া পরিসংখ্যান ব্যুরো, "বৃহত্তর রাজধানী শহর পরিসংখ্যান অঞ্চলসমূহকে (GCCSAs,জিসিসিএসএ)" সাতটি রাজ্য রাজধানী এবং "অস্ট্রেলিয়া রাজধানী অঞ্চলটি"র কার্যক্ষমতার ক্ষেত্র হিসাবে সংজ্ঞা দিয়েছে। জিসিসিএসএ ২০১১ অবধি ব্যবহৃত "পরিসংখ্যান বিভাগ (Statistical Divisions)"কে প্রতিস্থাপন করেছে। [১৮]
২০১৯ সালের ১৯শে ফেব্রুয়ারি চীনের জাতীয় উন্নয়ন ও সংস্কার কমিশন, আধুনিক মহানগর এলাকাগুলির চাষাবাদ ও বিকাশের বিষয়ে নীতিমালা (关于培育发展现代化都市圈的指导意见) জারি না করা পর্যন্ত চীনা ভাষায়, "মহাপৌরপুঞ্জ"(城市群, নগর গুচ্ছ) এবং "মহানগর এলাকা" (都市圈) এর মধ্যে কোনও সুস্পষ্ট পার্থক্য ছিল না, যার মধ্যে মহানগর এলাকাকে "পৌরমহাপুঞ্জে অবস্থিত একটি শহুরে স্থানিক সত্তা হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয় যা (ক)মহাপৌরপুঞ্জ(-সমূহ) বা (খ)অতিমহানগরী(-সমূহ) দ্বারা প্রভাবিত বা শীর্ষস্থানীয় ভূমিকা পালন করা একটি বৃহৎ মহানগরী এবং ১-ঘণ্টা কম্যুট এরিয়ার (এমন একটি নিত্যযাত্রী অঞ্চল যেখান হতে মহানগরীতে যেতে ১ ঘণ্টা সময় লাগে) মূল সীমাতে অবস্থিত। " [১৯]
জাপানে, একটি মহানগর এলাকা (都市圏) হলো প্রশাসনিক অঞ্চল থেকে ভিন্ন ধরনের একটি বিভাগ যা "অভ্যন্তরীণ বিষয় ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের" পরিসংখ্যান ব্যুরো দ্বারা পরিচালিত আদমশুমারিতে ব্যবহৃত বিস্তৃত নগর অঞ্চলগুলি সংজ্ঞায়িত করার জন্য স্থাপন করা হয়েছে।
বৃহত্তর টোকিও অঞ্চলটি বিশ্বের সর্বাধিক জনবহুল মহানগর এলাকা।
কেন্দ্রীয় নগরীগুলি পাশাপাশি থাকলে, সেগুলো একটি বৃহৎ অঞ্চলে একীভূত হয়।
যদি কোনও পৌরসভা অন্য কোনো পার্শ্ববর্তী পৌরসভা দ্বারা বেষ্টিত থাকে তবে সেটি পার্শ্ববর্তী পৌরসভা বলে পরিগণিত হবে।
তুরস্কে "মহানগর" শব্দটি দ্বারা ইস্তাম্বুলের মতো বৃহৎ নগরীকে বুঝানো হয়ে থাকে যেক্ষেত্রে সে শহরটি অন্য শহরগুলোর উপর আর্থিক এবং সামাজিক, উভয়ভাবেই প্রভাবশালী হয়ে থাকে।[২০] প্রশাসনিক উদ্দেশ্যে তুরস্কে ৩০ টি সরকারীভাবে সংজ্ঞায়িত "প্রাদেশিক মহানগর অঞ্চল" রয়েছে। [২১]
২০১১ সালের বাংলাদেশ আদমশুমারি অনুযায়ী বাংলাদেশের রাজধানী শহর ঢাকা মহানগরীকে নগর কেন্দ্র হিসেবে ধরে গঠিত দেশের বৃহত্তম "ঢাকা মহানগর এলাকা"য় প্রায় ২ কোটি জনসংখ্যার বাস। যেখানে ঢাকা শহর এবং এর পার্শ্ববর্তী আরও দুটি মহানগর গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ, দুটি বড় শহর টঙ্গী ও সাভার এবং ৩টি ছোট শহর নরসিংদী, সিদ্ধিরগঞ্জ ও কেরানীগঞ্জ ইত্যাদি শহুরে অঞ্চল ছাড়াও পার্শ্ববর্তী নগর বহিঃস্থ অঞ্চল নিয়ে গঠিত হয়েছে। এসব শহুরে অঞ্চল ছাড়াও পরিসংখ্যান ব্যুরো, "Other Urban Area (OUA)" বা "অন্যান্য শহুরে অঞ্চল" হিসেবে পার্শ্ববর্তী কিছু উপজেলা সদর এবং ১৭টি থানাকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। এছাড়াও পরিসংখ্যান ব্যুরো আরও ৩টি মহানগর এলাকাকে "Statistical Metropolitan Area (SMA)" বা "পরিসংখ্যানগত মহানগর এলাকা" হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেছে। চট্টগ্রাম, খুলনা এবং রাজশাহী মহানগরসমূহকে নগর কেন্দ্র হিসেবে ঘিরে এদের পার্শ্ববর্তী কিছু অঞ্চলকে অন্তর্ভুক্ত করে যথাক্রমে "চট্টগ্রাম পরিসংখ্যান মহানগর এলাকা", "খুলনা পরিসংখ্যান মহানগর এলাকা" এবং "রাজশাহী পরিসংখ্যান মহানগর এলাকা" গঠন করা হয়েছে। এসব পরিসংখ্যানগত মহানগর এলাকার আওতাধীন অঞ্চল হিসেবে চট্টগ্রাম, খুলনা এবং রাজশাহী মহানগরী এবং তাদের পার্শ্ববর্তী কতিপয় পৌরশহর ছাড়াও "অন্যান্য শহুরে অঞ্চল" বা OUA হিসেবে উপজেলা শহর এবং কিছু সংরক্ষিত অঞ্চলকে (সেনানিবাস অঞ্চল) অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।[২২]
ভারতের সংবিধানের ভাগ ৯ক অনুচ্ছেদ ২৪৩ত অনুযায়ী:[২৩]
"মহানগর এলাকা" বলিতে, রাজ্যপাল কর্তৃক সরকারী প্রজ্ঞাপন দ্বারা [ভাগ ৯ক-এর] উদ্দেশ্যে মহানগর এলাকা বলিয়া বিনির্দিষ্ট, এক বা একাধিক জেলাসমূহের অন্তর্গত এবং দুই বা ততোধিক পৌরসংঘসমূহ বা পঞ্চায়েতসমূহ বা অন্য সন্নিহিত এলাকাসমূহ লইয়া গঠিত এরূপ কোন এলাকা বুঝায় যাহা দশ লক্ষ বা ততোধিক জনসংখ্যাবিশিষ্ট;
ভারতে ২০টির বেশি মহানগর এলাকা রয়েছে, যার মধ্যে জাতীয় রাজধানী অঞ্চল (এনসিআর), মুম্বই মহানগর অঞ্চল (এমএমআর) ও কলকাতা মহানগর অঞ্চল (কেএমএ) সবচেয়ে জনবহুল। জাতীয় রাজধানী অঞ্চলের জনসংখ্যা প্রায় ৪ কোটি ৬১ লাখ এবং এটি দিল্লি, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ ও রাজস্থান জুড়ে বিস্তৃত।