মহানটী | |
---|---|
পরিচালক | নাগ অশ্বিন |
প্রযোজক | সি অশ্বিনী দত্ত স্বপ্না দত্ত প্রিয়াঙ্কা দত্ত |
চিত্রনাট্যকার | নাগ অশ্বিন |
কাহিনিকার | নাগ অশ্বিন |
শ্রেষ্ঠাংশে | |
সুরকার | মিকি জে মেয়ার |
চিত্রগ্রাহক | দানি সানচেজ-লোপেজ |
সম্পাদক | কোটাগিরি ভেঙ্কটেশ্বর রাও |
প্রযোজনা কোম্পানি |
|
মুক্তি |
|
স্থিতিকাল | ১৭৩ মিনিট |
দেশ | ভারত |
ভাষা | তেলুগু |
নির্মাণব্যয় | ₹২৫ কোটি[১][২] |
আয় | ₹৮৩ কোটি[৩][৪] |
মহানটী (অনু. মহা অভিনেত্রী) হল নাগ আশ্বিন রচিত এবং পরিচালিত ২০১৮ সালের একটি ভারতীয় তেলুগু ভাষার জীবনীমূলক নাট্য চলচ্চিত্র। বৈজয়ন্তী মুভিজ এবং স্বপ্না সিনেমার অধীনে এটি প্রযোজনা করেছিলেন সি অশ্বিনী দত্ত, স্বপ্না দত্ত, এবং প্রিয়াঙ্কা দত্ত।[৫] ছবিটি ভারতীয় অভিনেত্রী সাবিত্রীর জীবন অবলম্বনে নির্মিত হয়েছিল, তাঁর ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন কীর্তি সুরেশ এবং জেমিনি গণেশন চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন তেলুগু ছবিতে নবাগত দুলকার সলমান।
এই ছবিতে সামান্থা আক্কিনেনি, বিজয় দেবরকোন্ডা, শালিনী পাণ্ডে, রাজেন্দ্র প্রসাদ, প্রকাশ রাজ এবং ভানুপ্রিয়া সহ অভিনেতা চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন, নাগা চৈতন্য এবং মোহন বাবু অতিথি শিল্পী হিসেবে অভিনয় করে ছিলেন। এটি সাবিত্রীর জীবন অনুসরণে তৈরি, দেখানো হয়েছে উল্কার গতিতে তাঁর খ্যাতির চূড়ায় ওঠা, গণেশনের সাথে বিবাহ, এবং পরবর্তীকালে আকর্ষণীয়তা থেকে পতন। এটি সামান্থা এবং দেবরকোন্ডা দ্বারা অভিনীত যথাক্রমে একজন সাংবাদিক এবং একজন চিত্রগ্রাহকের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখানো হয়েছে।
২০১৭ সালের ২৯শে মে হায়দ্রাবাদে এই ছবির মুখ্য চিত্রগ্রহণ শুরু হয়েছিল। ২০১৫ সালে ইয়েভাডে সুব্রাহ্মণিয়াম এর পরে এটি পরিচালক অশ্বিনের দ্বিতীয় ছবি। দানি সানচেজ-লোপেজ ছবির চিত্রগ্রহণ পরিচালনা করেছিলেন এবং কোটাগিরি ভেঙ্কটেশ্বর রাও চলচ্চিত্রটির সম্পাদনার দায়িত্বে ছিলেন। পোশাক পরিকল্পনা করেছিলেন গৌরাঙ্গ শাহ এবং নবীন সাঙ্গলি। চলচ্চিত্রটির সংগীত পরিচালনা করেছিলেন মিকি জে মেয়ার, সেটি ইতিবাচক পর্যালোচনা পেয়েছিল।[৬] ২০১৮ সালের ৯ই মে মহানটী প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছিল। ২০১৮ সালের ১১ই মে তামিল এবং মালয়ালম ভাষায় এই চলচ্চিত্রের ভাষান্তরিত সংস্করণগুলি মুক্তি পেয়েছিল। তামিল সংস্করণের শিরোনাম ছিল নাদিগইয়ার থিলাগম।[৭]
ছবিটি সমালোচনামূলক এবং বাণিজ্যিক সাফল্য পেয়েছিল, সাবিত্রীর চরিত্রে কীর্তির অভিনয় প্রশংসিত হয়েছিল। [৮][৯] চলচ্চিত্রটি ভারতের আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের মূলধারার অংশ ৪৯ তম আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়েছিল,[১০] এবং এটি সাংহাই আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবেও প্রদর্শিত হয়েছিল।[১১] এটি ২০১৮ সালে মেলবোর্নের ভারতীয় চলচ্চিত্র উৎসবে "ইকুইটি ইন সিনেমা পুরস্কার" অর্জন করেছিল।[১২] ২০১৯ সালে ৬৬তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে, ছবিটি তিনটি পুরস্কার জিতেছিল, এগুলি হল তেলুগু ভাষার সেরা পূর্ণ দৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র, সেরা অভিনেত্রী এবং অসামান্য পোশাক পরিকল্পনা।[১৩][১৪]
ফিল্মফেয়ার পুরস্কার দক্ষিণ,[১৫] এবং সাইমা সহ বেশ কয়েকটি মনোনয়নে কীর্তি সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার জিতেছিলেন।[১৬] তিনি নরওয়ে তামিল ফিল্ম ফেস্টিভাল পুরস্কার এবং এডিসন পুরস্কারের জন্য মনোনীত হন।[১৭] তিনি নরওয়ে তামিল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল অ্যাওয়ার্ডসে বিশেষ জুরি পুরস্কার পেয়েছিলেন।[১৮]
বেঙ্গালুরুতে জনপ্রিয় পুরোনো দিনের অভিনেত্রী সাবিত্রীকে অজ্ঞান অবস্থায় তাঁর ছোট ছেলে আবিষ্কার করে এবং হাসপাতালে ভর্তি করে, কোমা অবস্থায় এক বছর কাটে। ঘটনাটি গণমাধ্যমের তীব্র দৃষ্টি আকর্ষণ করে, কিন্তু সাবিত্রীর প্রাথমিক জীবন এবং ঠিকঠিকানা জনসাধারণের কাছে অজানা ছিল। এক সংবাদপত্রের সম্পাদক,- তোতলা সাংবাদিক মধুরবাণী এবং চিত্রগ্রাহক বিজয় অ্যান্টনিকে সাবিত্রীর জীবনী লেখার জন্য নিযুক্ত করে। মধুরবাণী সাবিত্রীর লেখা একটি চিঠি উদ্ধার করে, তাতে লেখা তিনি তাঁর পুত্রকে শঙ্করাইয়া নামে পরিচিত কারও কাছে নিয়ে যেতে চান। সম্পাদক জীবনী লেখার দায়িত্ব থেকে মুক্তি দেওয়ার পরেও মধুরবাণী তার গবেষণা চালিয়ে যায়। সে লুকিয়ে সাবিত্রির ঘরে ঢোকে এবং শুনতে পায় সাবিত্রীর কাকীমা তাঁর শৈশব সম্বন্ধে কথা বলছেন।
১৯৪২ সালে বিজয়ওয়াড়ায়, এক বিধবা সুভদ্রাম্মা এবং তাঁর মেয়ে সাবিত্রীকে সুভদ্রাম্মার বোন দুর্গাম্বা এবং তার স্বামী কে ভি চৌধুরী তাঁদের সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন, দ্বিতীয়জনের অসন্তোষ সত্ত্বেও। বক্তৃতা, চিন্তাভাবনা ও কর্মে উদার, সাবিত্রী এবং সুশীলা সেরা বন্ধু হয়ে ওঠে। সে একজন দক্ষ নৃত্যশিল্পী হয়ে ওঠে এবং পরে সুশীলার সাথে নাটকে অভিনয় করে চৌধুরীর জন্য উপার্জনও করে। এরকম একটি অনুষ্ঠানে তার অভিনয়ের জন্য সে হিন্দি চলচ্চিত্র অভিনেতা পৃথ্বীরাজ কাপুর দ্বারা প্রশংসিত হয়।
চলচ্চিত্রের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তার কারণে নাটকে দর্শক উপস্থিতি কমে যায় এবং চৌধুরী বিশাল ক্ষতির মুখে পড়েন। তিনি সাবিত্রীকে মাদ্রাজ কেন্দ্রিক চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা করেন, কিন্তু তার বয়স কম থাকায় এবং তামিল ভাষায় কথা বলতে না পারায় তার সম্ভাবনা বাধাপ্রাপ্ত হয়। সে অবশ্য অভিনেতা চয়ন বিভাগে কর্মরত রামসামী "জেমিনি" গণেশনের সাথে দেখা করতে সফল হয় এবং অভিনেতা চয়ন তালিকায় নিজের ছবি জমা দেয়। এক বছর পর, সেই তালিকাটি এক পরিচালকের হাতে আসে এবং তিনি সাবিত্রীকে চলচ্চিত্রে নিয়ে আসতে চান। কিন্তু সাবিত্রী সংলাপটি ভুল বলার ফলে তাঁকে বার করে দেওয়া হয়। তবে, তিনি চলচ্চিত্রের একটি গানে একটি ভূমিকা অর্জন করেন, এবং তাঁর বিশিষ্ট অভিনয় তাঁকে প্রধান ভূমিকার দিকে এগিয়ে যেতে সহায়তা করে।
সাবিত্রীকে গণেশনের বিপরীতে অভিনয় করার প্রস্তাব দেওয়া হয়, গণেশন তখন অভিনেতা। তিনি সাবিত্রীকে তামিল ভাষা শেখান। দুই অভিনেতা একসঙ্গে মহাতারকা হয়ে ওঠেন এবং সাবিত্রী বিবাহিত গণেশনের প্রেমে পড়েন। তাঁরা গোপনে বিবাহ করেছিলেন, তার ফলে সাবিত্রীর পরিবারে সংঘর্ষ শুরু হয়। বিয়ের পরে ছবিতে অভিনয় করতে নারাজ থাকলেও, চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং গণেশনের প্ররোচনায় সাবিত্রী অভিনয় জগতে ফিরে এসেছিলেন। চলচ্চিত্রগুলি সফল হতে দেখা যায়। সাবিত্রী দুটি সন্তান — একটি মেয়ে এবং একটি ছেলের জন্ম দেন। প্রাথমিকভাবে সাবিত্রীর কর্মজীবনকে সমর্থন করলেও, সাবিত্রীর খ্যাতির ছায়ায় গণেশন ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়েন, এবং মদ্যপান শুরু করেন। সাবিত্রী তাঁকে থামানোর চেষ্টা করেন, কিন্তু গণেশন থামার পরিবর্তে তাঁকেও মদ্যপানে আহ্বান করেন।
কয়েকজন মহিলা সাবিত্রীকে অনুরোধ করেছিলেন শুধুমাত্র মহিলা সমন্বিত একটি ছবি তৈরি করার। ছবির মুক্তির দিন, সাবিত্রী তাঁদের অতিথিভবনে অন্য মহিলার সাথে গণেশনকে দেখতে পান। প্রতারিত বোধ করে তিনি ক্রুদ্ধ হয়ে তাঁর সাথে কথা বলতে রাজি হন নি এবং তাঁকে তাঁদের বাড়ি থেকে বের করে দেন। সাবিত্রী মদ্যপ হয়ে ওঠেন, তাঁর ওজনও বেড়ে যায়। এর মধ্যে তাঁর মায়ের মৃত্যু হয়। দুর্বল আর্থিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ফলে তাঁর বাড়িতে আয়কর দপ্তর থেকে অভিযান হয়, যার ফলে তাঁর সম্পদ হ্রাস পায়। একদিন অতিরিক্ত মদ্যপান বিষয়ে সাবিত্রীর সঙ্গে তাঁর মেয়ের বিতণ্ডা হয়, তিনি অজ্ঞান হয়ে যান এবং দুর্ঘটনাক্রমে তাঁদের বাড়িতে আগুন ধরে যায়। তারা জানতে পারে যে সাবিত্রীর বহুমূত্ররোগ রয়েছে।
চৌধুরী সাবিত্রীকে দেখতে আসেন। সাবিত্রী নিজের মেয়ে এবং চৌধুরী উভয়ের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেন এবং মেয়ের বিবাহ দেন। সাবিত্রী মদ্যপান বন্ধ করেন এবং তাঁর ওজন হ্রাস হয়। তিনি ছেলের সাথে একটি ছোট্ট বাড়িতে বসবাস শুরু করেন এবং স্বল্প নির্মাণ ব্যয়ের ছবিতে অভিনয় শুরু করেন। তিনি পুনর্বাসন কেন্দ্র খোলার জন্য অর্থ সঞ্চয় করতে থাকেন কিন্তু আবিষ্কার করেন যে আয়কর দপ্তর তখনও তাঁর কাছে টাকা পায়। কিন্তু তিনি আর কোনও অর্থ দিতে অস্বীকার করেন। পরের দিন তিনি ছেলের সাথে বেঙ্গালুরু যান; কি করবেন না বুঝতে পেরে গণেশনকে ফোন করেন, কিন্তু কথা বলার আগেই লাইন কেটে দেন। নিজের প্রতি এবং তাঁর প্রতি ক্রোধে তিনি আবার মদ্যপান শুরু করেন, এরপরেই তিনি কোমায় চলে যান।
মধুরবাণী সাবিত্রী সম্পর্কে স্মৃতিকথাটি লেখে এবং কোমায় থাকা সাবিত্রীকে দেখতে যায়। সেখানে তাঁর বাবার একটি ছবি তাঁর হাতে রাখে। সেটি সে সংবাদপত্র সংরক্ষণাগার থেকে পেয়েছিল। ১৯৮১ সালের ডিসেম্বরে সাবিত্রীর মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে ছবিটি শেষ হয়।
শেষ কৃতিত্ব দৃশ্যে, শঙ্কররাইয়াকে একটি মূর্তি হিসাবে দেখানো হয়েছিল, যাকে সাবিত্রী তাঁর বাবা হিসাবে মনে করেন এবং 'নানা' বলে ডাকেন।