নারীদের ক্রিকেট দলগত ক্রীড়া হিসেবে পরিচিত ক্রিকেটের একধরনের পদ্ধতি। এতে শুধুমাত্র নারীরা খেলে থাকেন। রিডিং মার্কারি পত্রিকায় ২৬ জুলাই, ১৭৪৫ তারিখে প্রথম নারীদের ক্রিকেট খেলা সম্পর্কে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ব্রামলে ও হ্যাম্বলডনের এগারজন নারী সাদা পোশাক পরিধান করে খেলায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।[১] ১৮৮৭ সালে হোয়াইট হিদার ক্লাব নামে ইয়র্কশায়ারে প্রথম মহিলাদের ক্রিকেট ক্লাব সম্বন্ধে জানা যায়। তিন বছর পর অরিজিনাল ইংলিশ লেডি ক্রিকেটার্স দল ইংল্যান্ডে ভ্রমণ করে। ১৮৯৪ সালে অস্ট্রেলিয়ায় মহিলাদের ক্রিকেট লীগ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। দক্ষিণ আফ্রিকার পোর্ট এলিজাবেথে মহিলাদের ক্রিকেট দল পাইওনিয়ার্স ক্রিকেট ক্লাব গঠন করা হয়।[২] কানাডার ভিক্টোরিয়ায়ও নারীদের ক্রিকেট দল গঠন করা হয় যারা বিকন হিল পার্কে খেলেছিল।[৩]
১৯৫৮ সালে নারীদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল গঠন করা হয়। এর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল - বিশ্বের সকল মহিলাদের ক্রিকেট দলের মাঝে সম্বন্বয় সাধন করা। নারীদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল ইংরেজ নারী ক্রিকেট সংস্থার স্থলাভিষিক্ত হয়েছিল। এ সংস্থাটি ৩২ বছর পূর্ব থেকেই একই ধরনের কাজ করতো। ২০০৫ সালে নারীদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের সাথে একীভূত হয়। এরফলে মহিলাদের ক্রিকেট পরিচালনা ও উন্নয়ন আরও সহজতর হয়।
ডিসেম্বর, ১৯৩৪ সালে সর্বপ্রথম নারীদের টেস্ট ম্যাচ খেলা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার নারী ক্রিকেটারগণ অংশ নিয়েছিলেন। পরের বছর নিউজিল্যান্ড জাতীয় মহিলা ক্রিকেট দল যোগ দেয়। ২০০৭ সালে নেদারল্যান্ডসের নারী ক্রিকেটারগণ দশম মহিলাদের টেস্টভূক্ত দেশ হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অংশ নেয়। ১৯৭৩ সাল থেকে নারীদের একদিনের আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এরফলে দ্রুত মহিলাদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট পরিচিতি পেতে থাকে। নারীদের ওডিআইয়ের প্রচলনের পর টেস্ট ক্রিকেটের তুলনায় আট গুণ বেশি খেলা হয়। এ পর্যন্ত নয়বার মহিলাদের ক্রিকেট বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের মহিলা ক্রিকেট দল বিশ্বকাপের শিরোপাগুলো নিজেদের করে নিয়েছে। ২০০৪ সালে নতুন ধরনের ক্রিকেটের প্রচলন হলে, নারীদের টুয়েন্টি২০ ক্রিকেটেরও প্রচলন হয়। কিন্তু, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এ খেলাটি খুব কমই সাড়া ফেলতে সক্ষম হয়। ২০০৬ সালের শেষ ভাগ পর্যন্ত মাত্র চারটি খেলা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। পরের তিনবছর এটি দ্রুতলয়ে বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। ২০০৭ সালে ৬টি, ২০০৮ সালে ১০টি ও ২০০৯ সালে ত্রিশটি খেলা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও, ২০০৯ সালে নারীদের প্রথম বিশ্ব টুয়েন্টি২০ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
আইসিসি নারীদের র্যাঙ্কিং ১ অক্টোবর, ২০১৫ তারিখে প্রথমবারের মতো প্রকাশ করা হয়। টেস্ট, ওডিআই ও টুয়েন্টি২০ আন্তর্জাতিকের ফলাফলকে সমান মানদণ্ডে তুলে ধরে একটিমাত্র র্যাঙ্কিং ব্যবস্থায় তুলে ধরা হয়েছে। বিশিষ্ট পরিসংখ্যানবিদ ও আইসিসি ক্রিকেট কমিটির সদস্য ডেভিড কেনডিক্স এর রূপরেখা প্রণয়ন করেন যা পুরুষদের ক্রিকেট র্যাঙ্কিংয়ের সমতুল্য।[৪] প্রত্যেক দলের পয়েন্ট তাদের গত ৩-৪ বছরের ফলাফলের ভিত্তিতে প্রদান করা হয়েছে। সবগুলো খেলাই ১২-২৪ মাসের খেলার মাসের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছে যা অক্টোবরের প্রথম থেকে হবে ও এর পূর্বেকার ২৪ মাসের অর্ধেক যুক্ত হবে।[৪][৫] প্রত্যেক বছরের ১ অক্টোবর খেলা ও পয়েন্ট যুক্ত হলে ৩ এবং ৪ বছর আগেকার ফলাফল বাদ যাবে। ১ ও ২ বছর পূর্বেকার অর্জিত ১০০% থেকে ৫০%-এ রূপান্তর ঘটবে। উদাহরণস্বরূপ: ১ অক্টোবর, ২০১৪ তারিখে খেলা অনুষ্ঠিত হলে অক্টোবর, ২০১০ এবং অক্টোবর, ২০১১ সালের পয়েন্ট বাদ যাবে। এছাড়াও, অক্টোবর, ২০১২ এবং অক্টোবর, ২০১৩ সালের ফলাফল ৫০% যুক্ত হবে। ফলে, খেলায় অংশ না নিয়েও অবস্থান পরিবর্তিত হতে পারে।[৪]