মহেন্দ্র কাপুর | |
---|---|
![]() | |
জন্ম | |
মৃত্যু | ২৭ সেপ্টেম্বর ২০০৮ | (বয়স ৭৪)
সন্তান | রোহন কাপুর |
আত্মীয় | সিদ্ধান্ত কাপুর (নাতি) |
সঙ্গীত কর্মজীবন | |
ধরন | রফি স্বরমাধুর্য |
পেশা | নেপথ্য সঙ্গীতশিল্পী |
বাদ্যযন্ত্র | কণ্ঠশিল্পী |
কার্যকাল | ১৯৫৬–২০০২ |
মহেন্দ্র কাপুর (৯ জানুয়ারি ১৯৩৪ - ২৭ সেপ্টেম্বর ২০০৮) একজন ভারতীয় নেপথ্য সঙ্গীতশিল্পী ছিলেন। কয়েক দশকের দীর্ঘ কর্মজীবনে, তাঁর গানের ভাণ্ডারে চলো একবার ফির সে আজনবি বন যায়েঁ হাম দোনো (গুমরাহ) এবং নীলে গগন কে তলে (হামরাজ) এর মতো জনপ্রিয় গানগুলি অন্তর্ভুক্ত হয়ে আছে। তবে তাঁর নামটি মনোজ কুমারের উপকার চলচ্চিত্রে মেরে দেশ কি ধরতি -এর মতো দেশাত্মবোধক গানগুলির সাথে সবচেয়ে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। তিনি মোহাম্মদ রফিকে নিজের গুরু মনে করতেন। ১৯৭২ সালে, তিনি ভারত সরকার কর্তৃক পদ্মশ্রী উপাধিতে ভূষিত হন। তিনি বেশিরভাগ ছবিতে অভিনেতা মনোজ কুমারের হয়ে নিজের কণ্ঠ দিয়েছেন। পরিচালক-প্রযোজক বলদেব রাজ চোপড়ার সাথে তাঁর দীর্ঘকালের সম্পর্ক ছিল।[১]
মহেন্দ্র কাপুরের জন্ম ব্রিটিশ ভারতের অমৃতসরে, কিন্তু তাঁর পরিবার কিছুদিনের মধ্যেই বোম্বেতে চলে আসে। অল্প বয়সে, তিনি কিংবদন্তি গায়ক মোহাম্মদ রফির দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন এবং তাঁকে নিজের পরামর্শদাতা হিসাবে বিবেচনা করতেন। পণ্ডিত হুসেনলাল, পণ্ডিত জগন্নাথ বুয়া, ওস্তাদ নিয়াজ আহমেদ খান, ওস্তাদ আব্দুল রেহমান খান এবং পণ্ডিত তুলসীদাস শর্মার মতো শাস্ত্রীয় গায়কদের অধীনে তিনি শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শেখা শুরু করেন। মহেন্দ্র কাপুর মূলত রফির ছাঁচে নিজেকে ঢেলে নিয়ে নিজস্ব একটি গায়কী শৈলী তৈরি করেছিলেন এবং মেট্রো মারফি অল-ইন্ডিয়া গানের প্রতিযোগিতায় জিতেছিলেন।
১৯৫৮ সালে, তিনি ভি শান্তরামের নবরং চলচ্চিত্রে নেপথ্য সঙ্গীতশিল্পী হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেন। এখানে তিনি সি রামচন্দ্রের সঙ্গীত পরিচালনায় আধা হ্যায় চন্দ্রমা রাত আধি গান গেয়েছিলেন।[২]
মহেন্দ্র কাপুরের উল্লেখযোগ্য গানগুলি বি আর চোপড়া (ধুল কা ফুল, গুমরাহ, ওয়াক্ত, হামরাজ, ধুন্দ, নিকাহ এবং আওয়াম) ও মনোজ কুমারের (উপকার, পূরব অর পশ্চিম) ছবি এবং টিভি ধারাবাহিক মহাভারতের জন্য গাওয়া।
কাপুরের গায়কীর ব্যাপ্তি বিশাল ছিল এবং তিনি কখনও কখনও দ্য ভাইব্রেন্ট ভয়েস অফ ইন্ডিয়া (ভারতের প্রাণবন্ত কণ্ঠস্বর) নামে পরিচিত হতেন।[৩] তিনিই প্রথম ভারতীয় নেপথ্য সঙ্গীতশিল্পী যিনি ইংরেজিতে সঙ্গীত রেকর্ড করেছিলেন।[৪] বনি এম গ্রুপ তাঁকে অনুরোধ করেছিল পাকিস্তানের মুসারতের সাথে হিন্দিতে তাদের গান গাইতে, যার ফলে পপ অ্যালবাম এম-৩ তৈরি হয়। অ্যালবামের কয়েকটি গান হলো চোরি চোরি চলো! ! (আসল গান বনি এম দ্বারা হুররে! হুররে!), ও মেরি চম্পে কি ডালি ইত্যাদি। মহেন্দ্র কাপুরের গাওয়া বেশিরভাগ বিখ্যাত গানগুলি বিআর চোপড়া বা মনোজ কুমারের চলচ্চিত্রে গাওয়া। বন্ধন, শক্তি, ডোলি, এক নজর, আদমি অর ইনসান, সঙ্গম এবং তওয়াইফ -এর গানগুলিও বেশ জনপ্রিয়।
মহম্মদ রফির সাথে মহেন্দ্র কাপুরের একটি দ্বৈত সঙ্গীতও আছে। গানটি ছিল ১৯৬৭ সালের আদমি চলচ্চিত্রের জন্য গাওয়া,- ক্যায়সি হাসিন আজ বাহারোঁ কি রাত। এটি প্রাথমিক ভাবে রফি এবং তালাত মাহমুদের দ্বৈত সঙ্গীত হিসাবে রেকর্ড করা হয়েছিল। এই ছবির প্রধান তারকাদের মধ্যে একজন, মনোজ কুমার, গানে তালাতের কণ্ঠ ব্যবহার করতে অস্বীকার করেন। তার ফলে কাপুর তালাতের স্থলাভিষিক্ত হন এবং গানটি পুনরায় রেকর্ড করা হয়।[৩]
কাপুর প্রচুর সংখ্যক ভারতীয় ভাষায় গান গেয়েছেন। তিনি গুজরাটি, পাঞ্জাবি, ভোজপুরি এবং মারাঠি চলচ্চিত্রে সর্বাধিক সংখ্যক কণ্ঠদান করে গান গেয়েছেন।[৫] মারাঠি চলচ্চিত্রে, তিনি দাদা কোণ্ডকের সব ছবির জন্য কণ্ঠদান করে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়েছিলেন। দাদা কোণ্ডকের হয়ে কথ্য শৈলীতে গান গাওয়া সত্ত্বেও মারাঠি ছবির জন্য তাঁর গান শুধুমাত্র দাদা কোণ্ডকের চলচ্চিত্রতেই সীমাবদ্ধ ছিল না।
কাপুর বিবাহিত ছিলেন, তাঁর স্ত্রীয়ের নাম প্রবীণলতা কাপুর।[৪] তাঁর তিন কন্যা এবং এক পুত্র ছিল। তাঁর ছেলে রোহন কাপুর একজন অভিনেতা এবং গায়ক, যিনি ১৯৮০ এর দশকে যশ চোপড়ার ফাসলে (১৯৮৫) ও লাভ ৮৬ (১৯৮৬), এবং প্রকাশ মেহরার ইমানদারের মতো কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। পরে তিনি তাঁর বাবার সাথে একসঙ্গে স্টেজ শো করেছিলেন .
২০০৮ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর, মুম্বাইতে নিজের বাড়িতে, ৭৪ বছর বয়সে, কাপুর হার্ট অ্যাটাকের কারণে স্ত্রী, সন্তান ও নাতি-নাতনি রেখে মারা যান।[৬]
মহেন্দ্র কাপুর সোনালি যুগের গায়কদের একজন। তিনি বলিউডের অন্যতম এমন একজন জনপ্রিয় গায়ক হিসেবে পরিচিত হয়ে আছেন যিনি প্রায় সব জনপ্রিয় নায়ক এবং নেতৃস্থানীয় সুপরিচিত অভিনেতাদের হয়ে নেপথ্যে কণ্ঠ দিয়েছেন। পাঞ্জাবি চলচ্চিত্রে, তিনি বরেন্দ্র, মেহর মিত্তাল, প্রেম নাথ এবং আরও অনেককের হয়ে নেপথ্য সঙ্গীত গেয়েছেন।