![]() ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রকাশিত বঙ্গানুবাদের প্রচ্ছদ | |
লেখক | মুহাম্মদ শফি উসমানি |
---|---|
মূল শিরোনাম | معارف القرآن |
অনুবাদক | মুহাম্মদ মহিউদ্দিন খান |
প্রচ্ছদ শিল্পী | জসিম উদ্দিন |
দেশ | ব্রিটিশ ভারত |
মুক্তির সংখ্যা | ৮ খন্ড |
ধরন | তাফসীর |
প্রকাশিত | ১৯৮০ |
প্রকাশক | ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, সৌদি ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং প্রেস |
মিডিয়া ধরন | |
পৃষ্ঠাসংখ্যা | ৭৫০০ |
আইএসবিএন | ৯৮৪-০৬-০১১৯-৯ |
ওয়েবসাইট | maarifulquran.net |
মাআরিফুল কুরআন (উর্দু: معارف القرآن) পাকিস্তানি ইসলামী পণ্ডিত মুফতি মুহাম্মদ শফি (১৮৯৭–১৯৭৬) বিরচিত ৮ খণ্ডে সমাপ্ত কুরআনের একটি প্রামাণ্য ও নির্ভরযোগ্য তাফসির বা ব্যাখ্যাগ্রন্থ। মূলত উর্দুতে লেখা এই গ্রন্থটি লেখকের সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য রচনা।[১][২][৩][৪]
মাআরিফুল কুরআনের পটভূমি এবং সূচনা সম্পর্কে মুফতি মুহাম্মদ তাকি উসমানি এর ইংরেজি অনুবাদের ভূূূূূমিকাতে লিখেছেন:
১৯৫৪ সালে পবিত্র কোরআনের নির্বাচিত আয়াত ব্যাখ্যা করার জন্য মুফতি শফি উসমানিকে রেডিও পাকিস্তানে সাপ্তাহিক বক্তৃতা দেওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। এই আমন্ত্রণটি লেখক এই শর্তে গ্রহণ করেছিলেন যে তিনি এর বিনিময়ে কোন পারিশ্রমিক গ্রহণ করবেন না এবং কোন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ ছাড়াই তাঁর এই বক্তৃতা প্রচারিত হবে। এই সাপ্তাহিক অনুষ্ঠানের শিরোনাম ছিল মাআরিফুল কুরআন (পবিত্র কোরআনের জ্ঞান) এবং এটি প্রতি শুক্রবার সকালে রেডিও পাকিস্তানের নেটওয়ার্কে প্রচারিত হত। এই ধারাবাহিক বক্তৃতাটি ১৯৬৪ সালের জুন মাস পর্যন্ত দীর্ঘ দশ বছর অব্যাহত ছিল। এরপর নতুন কর্তৃপক্ষ তাদের সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় এই প্রোগ্রামটি বন্ধ করে দিয়েছিল। এই ধারাবাহিক বক্তৃতাগুলিতে পবিত্র কোরআনের শুরু থেকে সূরা ইব্রাহিম (সূরা নং ১৪) অবধি নির্বাচিত আয়াতগুলির উপর বিশদ আলোচনা হয়েছে। রেডিও পাকিস্তানের এই সাপ্তাহিক কর্মসূচিটি বিশ্বজুড়ে মুসলমানরা উষ্ণভাবে স্বাগত জানিয়েছিল এবং হাজার হাজার মুসলমান কেবল পাকিস্তান, ভারতে নয়, পশ্চিমা ও আফ্রিকান দেশগুলিতেও শ্রবণ করত। অনুষ্ঠানটি বন্ধ হওয়ার পরে বিশ্বজুড়ে অনুরোধের বন্যা হয়েছিল যে এই সিরিজটি বইয়ের আকারে স্থানান্তরিত করতে এবং পবিত্র কোরআনের বাকী অংশটি নিয়মিত ভাষ্য আকারে সম্পূর্ণ করতে। এই অনুরোধগুলি সম্মানিত লেখককে এই বক্তৃতাগুলিকে সংশোধন করতে এবং মূল বক্তৃতাগুলিতে অন্তর্ভুক্ত নয় এমন পদগুলিকে যুক্ত করার জন্য প্ররোচিত করেছিল। তিনি এই প্রকল্পটি ১৯৬৪ সালে শুরু করেছিলেন এবং সূরা ফাতিহার ভাষ্যকে এর সংশোধিত আকারে সমাপ্ত করে সূরা বাকারার সংশোধন শুরু করেন। যাইহোক, তার অসংখ্য ব্যস্ততার কারণে তাকে এই কাজটি বন্ধ করতে হয়েছিল এবং পরবর্তী পাঁচ বছরে এটি অপরিবর্তিত ছিল। ১৯৬৯ সালে সম্মানিত লেখক বেশ কয়েকটি রোগে ভুগছিলেন যা তাকে তাঁর বিছানায় সীমাবদ্ধ রেখেছিল। এই অসুস্থতার মধ্যে তিনি বিছানায় থাকার সময় এই কাজটি পুনরায় শুরু করেছিলেন এবং একই অবস্থায় সূরা বাকারা পূর্ণ করেছেন। সেই থেকে তিনি নিজেকে "মাআরিফুল-কুরআন" এর প্রতি নিবেদিত করেছিলেন। অনেক প্রতিকূলতা সত্ত্বেও তিনি কাজ চালিয়ে যান এবং কেবল পাঁচ বছরের মধ্যে আটটি খণ্ডে (প্রায় সাত হাজার পৃষ্ঠার সমন্বয়ে) কাজটি সমাপ্ত করেন। [৫]
গ্রন্থটি ৮ খণ্ডে বিভক্ত। প্রথম খণ্ডের শুরুতে একটি বিশদ ভূমিকা, কুরআনের কিছু প্রাথমিক বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলঃ ওহি, শানে নুযুল, কুরআন নাজিলের কালানুক্রমিক, প্রথম অবতীর্ণ আয়াত , মক্কা ও মদিনার আয়াত, কুরআন সংরক্ষণ, কুরআনের মুদ্রণ, তাফসিরের উৎস, আরবি ভাষা ইত্যাদি। রচনাশৈলীতে সরল বর্ণনামূলক পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়েছে। প্রথমত, বেশ কয়েকটি আয়াত মূল আরবি থেকে উর্দুতে আক্ষরিক অনুবাদ করা হয়েছে; এরপরে প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বিষয়-ভিত্তিক আলোচনা করা হয়েছে। এই রচনাশৈলী শেষ পর্যন্ত অনুসরণ করা হয়েছে। নীচে খণ্ড এবং সুরার তালিকা দেওয়া হলঃ[৬]
এই সূত্রধর্মী রচনাটি সংকলন করতে লেখক যে সূত্রগুলোর সহায়তা নিয়েছেন তা উল্লেখ করেছেন। এর মধ্যে কয়েকটি হ'ল:[৭]
ইলিয়াস পাটেল খানপুরী মাআরিফুল কুরআন গুজরাটি ভাষায় অনুবাদ করেছেন। তিনি এগারো খণ্ডে এই অনুবাদটি সমাপ্ত করেন।
মাআরিফুল কোরআনের ইংরেজি অনুবাদ করেছেন অধ্যাপক মুহাম্মদ হাসান আসকারী ও অধ্যাপক মুহাম্মদ শামীম এবং সম্পাদনা করেছেন মুফতি মুহাম্মদ তাকী উসমানি। এটি করাচি থেকে প্রকাশিত হয়েছে। [৮]
বাংলা ভাষায় মাআরিফুল কুরআনের সম্পূর্ণ আট খন্ড অনুবাদ করেছেন মাওলানা মহীউদ্দীন খান এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত হয়েছে। এবং কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং প্রেস কর্তৃক এটি সংক্ষিপ্ত আকারে এক খন্ডে বাংলা অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত তাফসীর শিরোনামে প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে সেটি আরও পরিমার্জিত হয়ে মদিনা পাবলিকেশন্স থেকে তিন খন্ডে প্রকাশিত হয়।
বিগত শতাব্দীর সত্তরের দশকে গ্রন্থটি প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন ভাষায় ও বিভিন্ন প্রকাশনী থেকে এর প্রকাশনা অব্যাহত আছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশ সরকারের ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের অনুবাদ প্রকল্পের অধীনে ১৯৮০ সালে সর্বপ্রথম এর বাংলা অনুবাদ প্রকাশিত হয়।[৯] মাত্র তিন মাসে এর অনুবাদ শেষ করেন মাওলানা মুহিউদ্দীন খান।[১০] ১৯৯২ সালে সৌদি সরকার কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং প্রেস কর্তৃক এর ১০ লক্ষ কপি ছাপিয়ে সারাবিশ্বে বিনামূল্যে বিতরণ করে।[১১]