মাইকেল হোল্ডিং

মাইকেল হোল্ডিং
১৯৮০ সালের সংগৃহীত স্থিরচিত্রে মাইকেল হোল্ডিং
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নাম
মাইকেল অ্যান্থনি হোল্ডিং
জন্ম (1954-02-16) ১৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৪ (বয়স ৭০)
কিংস্টন, জ্যামাইকা উপনিবেশ
ডাকনামহুইস্পারিং ডেথ
উচ্চতা৬ ফুট ৩.৫ ইঞ্চি (১.৯২ মিটার)
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
বোলিংয়ের ধরনডানহাতি ফাস্ট
ভূমিকাবোলার, অধিনায়ক, ধারাভাষ্যকার
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ ১৫৩)
২৮ নভেম্বর ১৯৭৫ বনাম অস্ট্রেলিয়া
শেষ টেস্ট২৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৭ বনাম নিউজিল্যান্ড
ওডিআই অভিষেক
(ক্যাপ ১৮)
২৬ আগস্ট ১৯৭৬ বনাম ইংল্যান্ড
শেষ ওডিআই৩০ জানুয়ারি ১৯৮৭ বনাম ইংল্যান্ড
ঘরোয়া দলের তথ্য
বছরদল
১৯৭৩-১৯৮৯জ্যামাইকা
১৯৮১ল্যাঙ্কাশায়ার
১৯৮২-৮৩তাসমানিয়া টাইগার্স
১৯৮৩-৮৯ডার্বিশায়ার
১৯৮৭-৮৮ক্যান্টারবারি
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট ওডিআই এফসি এলএ
ম্যাচ সংখ্যা ৬০ ১০২ ২২২ ২৪৯
রানের সংখ্যা ৯১০ ২৮২ ৩,৬০০ ১,৫৭৫
ব্যাটিং গড় ১৩.৭৮ ৯.০৯ ১৫.০০ ১২.৩০
১০০/৫০ ০/৬ ০/২ ০/১৪ ০/৭
সর্বোচ্চ রান ৭৩ ৬৪ ৮০ ৬৯
বল করেছে ১২,৬৮০ ৫,৪৭৩ ৩৮,৮৭৭ ১২,৬৬২
উইকেট ২৪৯ ১৪২ ৭৭৮ ৩৪৩
বোলিং গড় ২৩.৬৮ ২১.৩৬ ২৩.৪৩ ২০.৬২
ইনিংসে ৫ উইকেট ১৩ ৩৯
ম্যাচে ১০ উইকেট
সেরা বোলিং ৮/৯২ ৫/২৬ ৮/৯২ ৮/২১
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ২২/– ৩০/– ১২৫/– ৮১/–
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ১১ অক্টোবর ২০১৪

মাইকেল অ্যান্থনি হোল্ডিং (ইংরেজি: Michael Holding; জন্ম: ১৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫৪) জ্যামাইকার কিংস্টনে জন্মগ্রহণকারী সাবেক ও বিখ্যাত ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তারকা এবং ধারাভাষ্যকার। তাকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেট ইতিহাসে সর্বাপেক্ষা দ্রুতগতির বোলারদের একজনরূপে গণ্য করা হয়। বোলিং ক্রিজে শান্ত ভঙ্গীমায় অগ্রসর হওয়ার প্রেক্ষিতে আম্পায়ারগণ তাকে হুইস্পায়ারিং ডেথ ডাকনামে ভূষিত করেন। তার বোলিং ভঙ্গীমা অত্যন্ত মসৃণ ও দ্রুত এবং তিনি তার (৬ ফু + ইঞ্চি অথবা ১.৯১৮ মি) দীর্ঘ উচ্চতাকে কাজে লাগিয়ে পীচে বৃহৎ আকারের বাউন্স প্রদানে সক্ষম ছিলেন।

জোয়েল গার্নার, অ্যান্ডি রবার্টস, সিলভেস্টার ক্লার্ক, কলিন ক্রফট, ওয়েন ড্যানিয়েল এবং প্রয়াত ম্যালকম মার্শালের ন্যায় প্রথিতযশা পেস বোলারদের সহযোগিতায় সত্তর ও আশির দশকের প্রথমার্ধ্বে বিশ্ব ক্রিকেট অঙ্গনে ভীতিদায়ক বোলিং করে প্রতিপক্ষের ব্যাটিং মেরুদণ্ড ভেঙ্গে দিতেন মাইকেল হোল্ডিং। টেস্ট জীবনের শুরুর দিকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে সেরা বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন ১৪/১৪৯ যা অদ্যাবধি টিকে রয়েছে। প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে জ্যামাইকা, ক্যান্টারবারি, ডার্বিশায়ার, ল্যাঙ্কাশায়ার ও তাসমানিয়ার পক্ষে খেলেন।

প্রারম্ভিক জীবন

[সম্পাদনা]

রাল্ফ ও এনিড হোল্ডিং দম্পতির চার সন্তানের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ মাইকেল হোল্ডিং কিংস্টনে শৈশবকাল অতিবাহিত করেন। তার পরিবার খেলাধূলায় আসক্ত ছিল। মাইকেলের জন্মের স্বল্পকাল পরেই তার বাবা তাকে কিংস্টনের মেলবোর্ন ক্রিকেট ক্লাবের সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেন। তিন বছর বয়সেই হাঁপানি রোগ ধরা পড়ে মাইকেলের। কিন্ত সেজন্য তাকে ইনহলার ব্যবহার করতে হয়নি। কাছাকাছি এলাকায় অবস্থিত সাবিনা পার্কে প্রায়শঃই তারা স্বপরিবারে খেলা দেখতে যেতেন। তবে খেলা দেখার চেয়ে খেলতেই বেশি আগ্রহান্বিত ছিলেন মাইকেল হোল্ডিং।[]

১৯৮২-৮৩ সময়কালে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে তাসমানিয়া দলের পক্ষে অংশগ্রহণ করেন।

খেলোয়াড়ী জীবন

[সম্পাদনা]

১৯৭৫ সালের শেষদিকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল ছয় টেস্ট খেলতে অস্ট্রেলিয়া সফরে যায়। ঐ বছরের শুরুতে ক্রিকেট বিশ্বকাপের প্রথম আসরের চূড়ান্ত খেলায় অস্ট্রেলিয়াকে পরাজিত করেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল। ফলে ঐ সময়কালে দলটিকে সবচেয়ে সেরা দল হিসেবে বিবেচনা করা হয়।[] ফাস্ট বোলার বার্নার্ড জুলিয়েন তার বোলিংয়ে ছন্দ হারিয়ে ফেলেন। ফলে অভিষিক্ত মাইকেল হোল্ডিংকে অ্যান্ডি রবার্টসের সাথে বোলিং উদ্বোধনে নামতে হয়।[] দ্বিতীয় টেস্টে তার কুঁচকিতে টান পড়ে। এ সময় তিনি প্রায় ৯৭ মাইল বেগে বোলিং করতেন যা অস্ট্রেলিয়ার দ্রুততম বোলার জেফ থমসনের চেয়েও বেশি গতির ছিল।[] এ প্রসঙ্গে উইজডেন হোল্ডিংয়ের অভিষেক সিরিজ প্রসঙ্গে মন্তব্য করে যে, হোল্ডিং নিজেকে রবার্টসের সাথ উদ্বোধনী বোলিং জুটির উপযোগী হবার জন্য তার সমকক্ষ হতে চেয়েছেন। কখনোবা তিনি থমসন, লিলি এবং রবার্টসের চেয়ে দ্রুতগতিতে বল ছুঁড়েছেন।

কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান অধিনায়ক ক্লাইভ লয়েড জুলিয়েনের হাতে নতুন বল তুলে দিলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলকে এর জন্য খেসারত দিতে হয়। অস্ট্রেলিয়া ৫-১ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে। হোল্ডিং ৫ খেলায় ১০ উইকেট পান যার গড় ছিল ষাটের অধিক। উইজডেন বিশ্বাস করতো যে, তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে যথাসাধ্য ভাল চেষ্টা চালিয়েছেন ও অধিকতর দ্রুতগতিতে বোলিং করবেন।[][]

মার্চে চার টেস্ট খেলতে ভারত দল ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর করে। অস্ট্রেলিয়ায় দলের পরাজয়ের ফলে অ্যান্ডি রবার্টসকে বিশ্রামে রাখা হয় ও হোল্ডিংকে বোলিং আক্রমণে নেতৃত্ব দেয়া হয়। তিনি দলের শীর্ষ উইকেট সংগ্রাহকের ভূমিকায় থেকে ২০ রান গড়ে ১৯ উইকেট নেন। ঐ সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে।[][]

১৯৭৬ সালে ইংল্যান্ড সফরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। হোল্ডিংয়ের ইংরেজ ভূমির উপর অজানা অভিজ্ঞতা ও ব্রিট্রিশ গণমাধ্যমে হোল্ডিংয়ের বিষয়ে নেতিবাচক প্রচারণা চালায়। মেরিলেবোন ক্রিকেট ক্লাবের বিপক্ষে প্রস্তুতিমূলক খেলায় হোল্ডিংয়ের বোলিংয়ে ডেনিস অ্যামিস মাথায় গুরুতর আহত হন ও সেলাইয়ের প্রয়োজন পড়ে। অভিজ্ঞতাসম্পন্ন অ্যামিসকে ইংল্যান্ডের আসন্ন টেস্টগুলোয় ব্যাটিং উদ্বোধনে নামার সতর্ক সঙ্কেত হিসেবে গণ্য করা হয়।[] সিরিজের প্রারম্ভে ইংরেজ অধিনায়ক টনি গ্রেগ তার দলের জয়ের বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। এক স্বাক্ষাৎকালে তিনি বলেন যে, ‘আমি মনে করি না যে, দলটি উচ্চমানের। যদি তারা ভাল করে, তাহলে তারা উচ্চপর্যায়ের ক্রিকেটার। কিন্তু তারা যদি ভেঙ্গে পড়ে তাহলে তারা মাটিতে শুয়ে পড়বে। এ কাজে ব্রায়ান ক্লোজসহ অন্যান্যরা তাদেরকে শুইয়ে দিতে সহায়তা করবে।’[] তার এ মন্তব্য ওয়েস্ট ইন্ডিয়ানদের কানে গেলে সাম্প্রদায়িক ও বর্ণবৈষম্যবাদের অভিযোগ উত্থাপিত হয়।[১০]

রবার্টস, হোল্ডিং, ড্যানিয়েল ও হোল্ডারকে নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলিং আক্রমণ পরিচালিত হয়। প্রথম তিনজন স্বাভাবিক বাউন্সার নিয়মিতভাবে করছিলেন। কিন্তু উইজডেনের মতে হোল্ডিংয়ের বোলিং ছিল ব্যতিক্রমধর্মী ফাস্ট। ইংল্যান্ডের জন এডরিচ ও ব্রায়ান ক্লোজ বিশেষভাবে আক্রান্ত হন। জুনে সিরিজের শুরুতে ক্লোজ ৪৫ ও দ্বিতীয় টেস্টে এডরিচ ৩৯ ছিলেন।

ওভালে পঞ্চম টেস্টে হোল্ডিং ৮ উইকেট নেন ৯২ রানের বিনিময়ে। যা পরবর্তীকালে তার প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে সেরা বোলিং পরিসংখ্যান হিসেবে চিহ্নিত থাকে। এছাড়াও ঐ মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান বোলারদের মধ্যে সেরা বোলিং ছিল। ঐ খেলার দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি আরও ছয় উইকেট নেন। খেলা শেষে তার বোলিং পরিসংখ্যান দাঁড়ায় ১৪/১৪৯ যা ওয়েস্ট ইন্ডিজের টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে সেরা বোলিং হিসেবে অক্ষত রয়েছে। পাঁচ টেস্টের সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৩-০ ব্যবধানে জয়ী হয়।[১১]

সম্মাননা

[সম্পাদনা]

১৯৭৭ সালে উইজডেন কর্তৃপক্ষ তাকে বর্ষসেরা ক্রিকেটাররূপে ঘোষণা করে। ৯ মে, ২০১৩ তারিখ বৃহস্পতিবার মাইকেল হোল্ডিং সম্মানসূচক ডিগ্রী লাভ করেন ও পূর্ব লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক তাকে আজীবন সম্মাননা প্রদান করা হয়। জুন, ১৯৮৮ সালে জ্যামাইকান স্ট্যাম্পেও তাকে তুলে ধরা হয়।

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Michael Holding (২০১০)। No Holding Back: The Autobiography। Weidenfeld & Nicolson। পৃষ্ঠা 1–4। 
  2. "West Indies in Australia, 1975-76"। Wisden। সংগ্রহের তারিখ ১৭ আগস্ট ২০১২ 
  3. "West Indies in Australia, 1975-76: First Test Match"। Wisden। সংগ্রহের তারিখ ১৭ আগস্ট ২০১২ 
  4. David Tossell (২০০৭)। Grovel!: The Story and Legacy of the Summer of 1976। Know the Scores। পৃষ্ঠা 25 
  5. "Records / The Frank Worrell Trophy, 1975/76 / Most wickets"। ESPN Cricinfo। সংগ্রহের তারিখ ১৭ আগস্ট ২০১২ 
  6. "Records / India in West Indies Test Series, 1975/76 / Most wickets"। ESPN Cricinfo। সংগ্রহের তারিখ ১৭ আগস্ট ২০১২ 
  7. "India in the West Indies, 1976"। Wisden। সংগ্রহের তারিখ ১৭ আগস্ট ২০১২ 
  8. David Tossell (২০০৭)। Grovel!: The Story and Legacy of the Summer of 1976। Know the Scores। পৃষ্ঠা 19–21। 
  9. David Tossell (২০০৭)। Grovel!: The Story and Legacy of the Summer of 1976। Know the Scores। পৃষ্ঠা 68 
  10. David Tossell (২০০৭)। Grovel!: The Story and Legacy of the Summer of 1976। Know the Scores। পৃষ্ঠা 68–69। 
  11. "West Indies in England, 1976"। ESPN Cricinfo। সংগ্রহের তারিখ ১৮ আগস্ট ২০১২ 

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]