যে জটিল ও ধারাবাহিক প্রক্রিয়ায় জীবের মাতৃকোষ প্রথমে নিউক্লিয়াস ও পরে সাইটোপ্লাজম বিভাজনের মাধ্যমে সমআকৃতির ও সমগুণসম্পন্ন ২টি অপত্য কোষ সৃষ্টি করে,তাকে মাইটোসিস বলে।কোষবিদ্যায়মাইটোসিস (/maɪˈtoʊsɪs/) হল কোষ চক্রের একটি ধাপ যেখানে প্রতিলিপিকৃত ক্রোমোজোম দুটি নতুন নিউক্লিয়াসে বিভক্ত হয়। মাইটোসিস দ্বারা কোষ বিভাজন জিনগতভাবে সমবৈশিষ্ট্যসম্পন্ন অভিন্ন কোষের জন্ম দেয় যেখানে ক্রোমোজোমের মোট সংখ্যা বজায় থাকে।[১][২] সাধারণত, মাইটোসিস বিভাজনের (নিউক্লিয়াসের বিভাজন) পূর্বে ইন্টারফেজ পর্যায়ের S ধাপ (যে ধাপে ডিএনএ অনুলিপন সম্পন্ন হয়) সংঘটিত হয় এবং মাইটোসিসের পরে সম্পন্ন হয় টেলোফেজ ও সাইটোকাইনেসিস। সাইটোকাইনেসিস পর্যায়ে একটি কোষের সাইটোপ্লাজম, কোষঅঙ্গাণু এবং কোষঝিল্লি বিভক্ত হয়ে প্রায় সমান কোষীয় উপাদান সমৃদ্ধ দুটি কোষ সৃষ্টি হয়।[৩] একটি মাতৃকোষ বিভাজিত হয়ে জিনগতভাবে অভিন্ন দুটি কোষের সৃষ্টিই হল মাইটোসিসের বিভিন্ন পর্যায়ের সম্মিলনে গঠিত প্রাণীকোষচক্রের মাইটোটিক (M) ফেজ।[৪]
একগুচ্ছ প্রক্রিয়ার আরম্ভ হতে সমাপন পর্যন্ত বিবেচনা করে মাইটোসিস বিভাজনকে বিভিন্ন পর্যায়ে ভাগ করা যায়। এ পর্যায়গুলো হচ্ছে প্রোফেজ, প্রোমেটাফেজ, মেটাফেজ, অ্যানাফেজ এবং টেলোফেজ। মাইটোসিসের সময় পূর্বে প্রতিলিপিত ক্রোমোজোমগুলো ঘনীভূত হয় এবং স্পিন্ডল তন্তুর সাথে সংযুক্ত হয়। স্পিন্ডল তন্তু প্রত্যেক ক্রোমোজোমের একটি করে অনুলিপি কোষের অপর প্রান্তে পৌঁছে দেয়।[৫] ফলশ্রুতিতে সৃষ্টি হয় দুটি জিনগতভাবে সদৃশ নিউক্লিয়াস। কোষের বাকি অংশগুলো এরপর সাইটোকাইনেসিস প্রক্রিয়ায় বিভক্ত হয়ে দুটি অপত্যকোষে পরিণত হতে পারে। বিশেষ অণুবীক্ষণযন্ত্রের সাহায্যে মাইটোসিসের বিভিন্ন পর্যায় সরাসরি বাস্তবে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব।[৬] দুটি কোষের পরিবর্তে তিনটি অপত্যকোষের সৃষ্টি এক ধরনের মাইটোটিক ত্রুটি যাকে বলা হয় ট্রাইপোলার মাইটোসিস বা মাল্টিপোলার মাইটোসিস।[৭] অস্বাভাবিক মাইটোসিসের ফলে অ্যাপোপটোসিস (কোষের জিনগত নিয়ন্ত্রিত মৃত্যুর প্রক্রিয়া) ত্বরান্বিত হতে পারে অথবা পরিব্যক্তি ঘটতে পারে। এসব পরিব্যক্তির ফলে কয়েক ধরনের ক্যান্সারও হতে পারে। [৮]
মাইটোসিস কেবল সুকেন্দ্রিক কোষে সংঘটিত হয়। আদিকেন্দ্রিক কোষে নিউক্লিয়াস থাকে না, ফলে এসব কোষ দ্বিবিভাজন প্রক্রিয়ায় বিভাজিত হয়। প্রজাতিভেদে মাইটোসিসের বৈচিত্র্য রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, প্রাণীকোষে "উন্মুক্ত" মাইটোসিস সংঘটিত হয়, যেখানে ক্রোমোজোম বিভক্ত হওয়ার আগেই নিউক্লিয়ার ঝিল্লি বিলুপ্ত হয়। ফানজাই রাজ্যের জীবদেহে "বদ্ধ" মাইটোসিস সংঘটিত হয়, যেখানে অটুট নিউক্লিয়াসের ভেতরে ক্রোমোজোম বিভক্ত হয়। মাইটোসিসের শুরুর দিকে প্রায় গোলক আকৃতি ধারণের জন্য অধিকাংশ প্রাণীকোষ "মাইটোটিক কোষ গোলীয়করণ" নামক এক ধরনের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যায়। মানবদেহের বেশিরভাগ কোষ মাইটোসিস কোষ বিভাজনের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়। তবে জননকোষ, যেমন- শুক্রাণু ও ডিম্বাণু কোষ মিয়োসিস বিভাজনের মাধ্যমে তৈরি হয়।
১৮শ এবং ১৯শ শতকে কোষ বিভাজনের অনেক বর্ণনা পাওয়া গিয়েছিল, যেগুলোর নির্ভুলতার মাত্রা ভিন্ন ভিন্ন ছিল।[৯] ১৮৩৫ সালে জার্মান উদ্ভিদবিজ্ঞানী হুগো বন মোহল Cladophora glomerata নামক সবুজ শৈবালের কোষ বিভাজন বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, কোষ বিভাজনের মাধ্যমেই কোষের সংখ্যাবৃদ্ধি ঘটে।[১০][১১][১২] ১৮৩৮ সালে ম্যাথিয়াস জ্যাকব শ্লেইডেন দাবি করেন যে, কোষের অভ্যন্তরে নতুন কোষ সৃষ্টি হওয়ার ফলেই কোষের সংখ্যাবৃদ্ধি ঘটে। তবে পরবর্তীতে রবার্ট রিমেক সহ অন্যান্য বিজ্ঞানীদের গবেষণায় শ্লেইডেনের মতবাদ বর্জিত এবং মোহলের মতবাদ গৃহীত হয়।[১৩]
১৮৭৩ সালে সর্বপ্রথম ব্যাঙ, খরগোশ এবং বিড়ালের কর্নিয়া কোষের বিভাজন আবিষ্কার করেন পোলিশ কলাতত্ত্ববিদ ওয়াক্লো মায়জেল। তিনি ১৮৭৫ সালে প্রাণীকোষের বিভাজন বর্ণনা করেছিলেন । [১৪][১৫]
এছাড়া বর্তমানে পরিচিত "মাইটোসিস" প্রক্রিয়ার আবিষ্কারক হিসেবে বুতশলি, স্নাইডার এবং ফোল দাবি রাখতে পারেন।[৯] ১৮৭৩ সালে জার্মান প্রাণীবিজ্ঞানী অটো বুতশলি নেমাটোডা পর্বের প্রাণীদের পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে সংগৃহীত উপাত্ত প্রকাশ করেন। এসব পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে কয়েকবছর পর তিনি মাইটোসিস আবিষ্কার করেন এবং এর বর্ণনা দেন।[১৬][১৭][১৮]
১৮৮২ সালে "মাইটোসিস" শব্দটি সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন ওয়াল্টার ফ্লেমিং। [১৯] "মাইটোসিস" শব্দটি নেয়া হয়েছে গ্রিক শব্দ μίτος (মাইটোস, "মোচড়ানো সুতা") থেকে।[২০][২১] এ প্রক্রিয়াটির আরো বেশকিছু নাম রয়েছে।[২২] যেমন, "ক্যারিওকাইনেসিস" (নিউক্লিয়াসের বিভাজন), ১৮৭৮ সালে এ শব্দটি প্রথব ব্যবহার করেন শ্লাইখার।[২৩][২৪] অগাস্ট ওয়েইসম্যান ১৮৮৭ সালে এ প্রক্রিয়াটির নাম দেন "সমীকরণিক বিভাজন"[২৫] ব্যাপক অর্থে, কিছু লেখক "মাইটোসিস" শব্দটি দ্বারা ক্যারিওকাইনেসিস ও সাইটোকাইনেসিস উভয় প্রক্রিয়াকেই একসাথে বোঝান। [২৬] বর্তমানে, "সমীকরণিক বিভাজন" শব্দটি সাধারণত মিয়োসিস-২ বিভাজনের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। মিয়োসিস-২ হল মিয়োসিস প্রক্রিয়ার একটি অংশ, যা অনেক দিক দিয়ে মাইটোসিসের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।[২৭]
মাইটোসিস ও সাইটোকাইনেসিসের প্রধান ফলাফল হল একটি মাতৃকোষের জিনোম দুটি অপত্যকোষে স্থানান্তরিত হওয়া। জিনোম হল নির্দিষ্ট সংখ্যক ক্রোমোজোমের সমষ্টি। আর ক্রোমোজোম হল দৃঢ়সংলগ্নভাবে পেঁচানো ডিএনএ দ্বারা তৈরি একটি গঠন, যা কোষের সঠিক কার্যক্রমের জন্য জিনগত তথ্য ধারণ করে।[২৮] যেহেতু এ প্রক্রিয়ায় প্রত্যেক অপত্যকোষকে জিনগতভাবে মাতৃকোষের সদৃশ হতে হয়, তাই মাইটোসিস শুরুর পূর্বেই মাতৃকোষ তার প্রত্যেক ক্রোমোজোমের একটি করে অনুলিপি তৈরি করে। এ ঘটনাটি ঘটে ইন্টারফেজ পর্যায়ের S ফেজে। ক্রোমোজোম প্রতিলিপনের ফলে দুটি অবিকল সিস্টার ক্রোমাটিড সৃষ্টি হয়। সিস্টার ক্রোমাটিডদ্বয় কোহেসিন প্রোটিন দ্বারা সেন্ট্রোমিয়ারে যুক্ত থাকে।
যখন মাইটোসিস শুরু হয়, তখন ক্রোমোজোমগুলো ঘনীভূত এবং দৃশ্যমান হয়। কিছু প্রকৃতকোষী জীব, যেমন প্রাণীদেহের কোষের ডিএনএ কে সাইটোপ্লাজম থেকে পৃথককারী নিউক্লিয়ার ঝিল্লি ভেঙ্গে ছোট ছোট ভেসিকলে পরিণত হয়। কোষে রাইবোজোম গঠনকারী নিউক্লিওলাস বিলুপ্ত হয়ে যায়। কোষের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত মাইক্রোটিউবিউল বিস্তৃত হয়ে সেন্ট্রোমিয়ারের সাথে যুক্ত হয় এবং ক্রোমোজোমগুলোকে কোষের ভেতরে কেন্দ্রের দিকে সারিবদ্ধ করে। মাইক্রোটিউবিউল সংকুচিত হয়ে সিস্টার ক্রোমাটিডকে টেনে প্রত্যেকটি ক্রোমোজোমকে আলাদা করে ফেলে। এ পর্যায়ে সিস্টার ক্রোমাটিডগুলোকে বলা হয় অপত্য ক্রোমোজোম। কোষ সম্প্রসারিত হতে থাকলে টান সৃষ্টি হলে অপত্য ক্রোমোজোমগুলো বিপরীতক্রমে কোষের মেরুগুলোতে পৌঁছায় এবং অ্যানাফেজ পর্যায়ের শেষ দিকে সর্বাধিক ঘনীভূত হয়। বিচ্ছিন্ন অপত্য ক্রোমোজোমগুলোর চারদিকে নতুন নিউক্লিয়ার ঝিল্লি সৃষ্টি হয়। ইন্টারফেজ পর্যায়ের জন্য নিউক্লিয়াস প্রস্তুতি আরম্ব করলে ক্রোমোজোমগুলোর ঘনত্ব কমতে থাকে।
মাইটোটিক বিভাজনের সময়, সাধারণত অ্যানাফেজ পর্যায়ের সূচনায় কোষে সাইটোকাইনেসিস শুরু হয়। প্রাণীকোষে দুটি নিউক্লিয়াসের মাঝে ক্লিভেজ খাঁজ সৃষ্টির মাধ্যমে দুটি নতুন কোষ সৃষ্টি হয়। উদ্ভিদ কোষে দুটি নিউক্লিয়াসের মাঝখানে কোষপ্লেট তৈরি হয়। সাইটোকাইনেসিস সবসময় ঘটে না; সিনোসাইটিক কোষে (একাধিক নিউক্লিয়াসবিশিষ্ট কোষ) সাইটোকাইনেসিস ছাড়াই মাইটোসিস সংঘটিত হয়।
মাইটোটিক পর্যায় তুলনামূলকভাবে কোষচক্রের একটি স্বল্প সময় ধরে সংঘটিত হয়। কোষচক্রের বেশিরভাগ সময় ধরে থাকে ইন্টারফেজ দশা, যেখানে কোষ বিভাজিত হওয়ার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করে। ইন্টারফেজ আবার তিনটি দশায় বিভক্ত: G1দশা (প্রথম বিরতি), S দশা (সংশ্লেষণ), এবং G2দশা (দ্বিতীয় বিরতি। ইন্টারফেজের তিনটি দশার প্রত্যেকটি চলার সময় কোষ প্রোটিন এবং সাইটোপ্লাজমিক অঙ্গাণু তৈরির মাধ্যমে বেড়ে উঠে। তবে কেবল S দশায় ক্রোমোজোম অনুলিপিত হয়। এভাবেই, একটি কোষ বেড়ে উঠে (G1), ক্রোমোজোম অনুলিপন করার সাথে সাথে বাড়তে থাকে (S), আরো বৃদ্ধি পায় ও মাইটোসিসের জন্য প্রস্তুত হয় (G2), এবং অবশেষে কোষচক্রের পুনরাবৃত্তির আগে বিভাজিত হয়(M)। [২৯] কোষচক্রের এ সকল দশা সাইক্লিন, সাইক্লিন-নির্ভর কাইনেজ এবং অন্যান্য কোষচক্র প্রোটিন দ্বারা সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়। এ দশাগুলো যথাযথভাবে একটির পর আরেকটি সম্পন্ন হয়। বেশ কিছু কোষচক্র চেকপয়েন্ট কোষকে এক দশা থেকে আরেক দশায় যাওয়ার জন্য সংকেত প্রদান করে।[৩০] কোষ অস্থায়ী বা স্থায়ীভাবে কোষচক্র ত্যাগ করে G0দশায় প্রবেশ করে বিভাজন বন্ধ করে দিতে পারে। এ ঘটনা তখনই ঘটে যখন কোষের আধিক্য সৃষ্টি হয় অথবা কোষটি জীবদেহের কোনো কার্য সম্পাদনের জন্য বিশেষায়িত হয়ে যায়, যেমন-মানবদেহের হৃদপেশির কোষ এবং নিউরন। কিছু G0 কোষ পুনরায় কোষচক্রে প্রবেশ করতে পারে।
ডিএনএ দ্বিসূত্রক কাঠামো ভাঙ্গা অবস্থায় থাকলে তা ইন্টারফেজ দশায় দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়ায় মেরামত হয়ে যায়।[৩১] প্রথম প্রক্রিয়াটি হল- নন-হোমোলোগাস এন্ড জয়েনিং (এনএইচইজে) ডিএনএ এর দুটি ভাঙ্গা প্রান্ত ইন্টারফেজের G1, S এবং G2 দশায় জোড়া লাগিয়ে দিতে পারে। দ্বিতীয় প্রক্রিয়াটি হল-হোমোলোগাস রিকম্বিন্যাশনাল রিপেয়ার (এইচআরআর), যা ডিএনএ দ্বিসূত্রক কাঠামো মেরামতের কাজ আরো ভালোভাবে সম্পন্ন করতে পারে। এইচআরআর ইন্টারফেজের S ও G2 দশায় সক্রিয় হয়, যখন হয় ডিএনএ অনুলিপন আংশিক সম্পন্ন থাকে, অথবা পুরোপুরি সম্পন্ন হয়। কেননা এইচআরআর এর কার্যকারিতার জন্য দুটি সংলগ্ন ক্রোমাটিড (হোমোলোগ) দরকার হয়।
ইন্টারফেজ কোষকে মাইটোসিস বিভাজনের জন্য প্রস্তুত করে। এই দশাই নির্ধারণ করে মাইটোটিক বিভাজন হবে না কি হবে না। ডিএনএ ক্ষতিগ্রস্ত থাকলে অথবা কোষ গুরুত্বপূর্ণ কোনো দশা অপূর্ণ রাখলে ইন্টারফেজ দশা কোষের বিভাজন বন্ধ করে দেয়। ইন্টারফেজ দশাই মাইটোসিস বিভাজনের সাফল্য নির্ধারণ করে। এর কল্যাণেই ক্ষতিগ্রস্ত কোষের পরিমাণকমে যায় ও ক্যান্সার সৃষ্টিকারী কোষের উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ দশার ইন্টারফেজ প্রোটিন কোনো ভুল করলে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী কোষ উৎপন্ন হতে পারে।[৩২] উপরের দশাগুলোর কার্যপদ্ধতি আরো ভালো করে বোঝার জন্য এখনো অনেক গবেষণা চলছে।
উদ্ভিদকোষে প্রোফেজ পর্যায়ের আগে প্রাকপ্রোফেজ পর্যায় সংঘটিত হয়। অত্যধিক সংখ্যক কোষগহবর সমৃদ্ধ উদ্ভিদকোষে মাইটোসিস শুরু জন্য নিউক্লিয়াসকে কোষের কেন্দ্রে গমন করতে হয়। এসব কোষে ফ্র্যাগমোজোম নামক সাইটোপ্লাজমের অনুপ্রস্থ চাদর সৃষ্টি হয়, ফলে কোষটিকে দুইভাগে ভাগ করার জন্য উপযুক্ত বিভাজন তল সৃষ্টি হয়। ফ্র্যাগমোজোম তৈরি ছাড়াও প্রাকপ্রোফেজ পর্যায়ে মাইক্রোটিউবিউলস এবং অ্যাকটিন তন্তুর বলয়ের (একে প্রাকপ্রোফেজ ব্যান্ডও বলা হয়) সৃষ্টি হয়। কোষঝিল্লির নিচে যে স্থানে ভবিষ্যতে মাইটোটিক স্পিন্ডলযন্ত্র সৃষ্টি হবে, তার নিরক্ষীয় তলের চারদিকে এ বলয় সৃষ্টি হয়। কোষটি কোন স্থানে বিভক্ত হবে তা প্রাকপ্রোফেজ ব্যান্ড নির্ধারণ করে। উচ্চশ্রেণির উদ্ভিদ, যেমন সপুষ্পক উদ্ভিদে সেন্ট্রিওল না থাকায় এদের মাইক্রোটিউবিউল নিউক্লিয়াসের পৃষ্ঠে স্পিন্ডল সৃষ্টি করে। নিউক্লিয়ার ঝিল্লি ভেঙ্গে যাওয়ার পর ক্রোমোজোম স্পিন্ডলগুলোতে সজ্জিত হয়।[৩৩] প্রোমেটাফেজ পর্যায়ে স্পিন্ডল সৃষ্টি এবং নিউক্লিয়ার ঝিল্লি অবলুপ্ত হওয়ার সময় প্রাকপ্রোফেজ ব্যান্ড বিলুপ্ত হয়ে যায়।[৩৪]:৫৮–৬৭
ইন্টারফেজের G2দশার পরে প্রোফেজ দশা শুরু হয়। প্রোফেজ দশায় ক্রোমোজোম ঘনীভূত হওয়া ও মাইটোটিক স্পিন্ডল সৃষ্টির সূচনার মাধ্যমে কোষ বিভাজিত হওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। ইন্টারফেজ দশায় নিউক্লিয়াসের জিনগত বস্তু শিথিলভাবে মোড়ানো ক্রোমাটিন ধারণ করে। প্রোফেজের প্রারম্ভিক পর্যায়ে ক্রোমাটিন তন্তু ঘনীভূত হয়ে স্বতন্ত্র ক্রোমোজোমে পরিণত হয়। এসময় ক্রোমোজোমগুলো সাধারণ অণুবীক্ষণ যন্ত্রের উচ্চ বিবর্ধনের মাধ্যমে দেখা যায়। এ পর্যায় ক্রোমোজোমগুলোকে লম্বা, সরু ও সুতার মত দেখা যায়। প্রতিটি ক্রোমোজোমের দুটি করে ক্রোমাটিড থাকে। ক্রোমাটিডগুলো সেন্ট্রোমিয়ারে যুক্ত থাকে। (সূর্য)
প্রোফেজ পর্যায়ে জিন প্রতিলিপন বন্ধ হয়ে যায় এবং অ্যানাফেজ দশার শেষ পর্যায় থেকে G1দশা ব্যতীত এ প্রক্রিয়া আর শুরু হয় না।[৩৫][৩৬][৩৭] প্রোফেজের প্রথম দিকে নিউক্লিওলাসের বিলুপ্তি ঘটে[৩৮]
প্রাণীকোষের নিউক্লিয়াসের নিকটে প্রোটিনের শিথিল স্তুপ একজোড়া সেন্ট্রিওল দ্বারা বেষ্টিত হয়ে সেন্ট্রোজোম নামক অঙ্গাণু সৃষ্টি করে। সেন্ট্রোজোম কোষের মাইক্রোটিউবিউলের সমন্বয়সাধনকারী কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে। মাইটোসিস শুরু হওয়ার পূর্বেই কোষে থাকা একটি সেন্ট্রোজোম বিভক্ত হয়ে একজোড়া সেন্ট্রোজোম তৈরি করে। সেন্ট্রোজোমদ্বয় টিউবিউলিনের পলিমার তৈরির মাধ্যমে মাইক্রোটিউবিউল স্পিন্ডলযন্ত্র সৃষ্টি করে। মটর প্রোটিন এসব মাইক্রোটিউবিউল দিয়ে সেন্ট্রোজোমকে ধাক্কা দিয়ে কোষের বিপরীত প্রান্তে সরিয়ে দেয়। যদিও সেন্ট্রোজোম মাইক্রোটিউবিউল সংগঠনে সাহায্য করে, তবে স্পিন্ডল যন্ত্র সৃষ্টির জন্য সেন্ট্রোজোম প্রয়োজনীয় নয়। কেননা উদ্ভিদকোষে সেন্ট্রোজোম অনুপস্থিত[৩৩] এবং প্রাণীকোষের মাইটোসিসের জন্যেও এটি অত্যাবশ্যক নয়।[৩৯]
প্রাণীকোষের প্রোমেটাফেজের শুরুতে নিউক্লিয়ার ল্যামিন প্রোটিনের ফসফোরাইলেশনের ফলে নিউক্লিয়ার ঝিল্লি ভেঙ্গে ছোট ছোট থলিতে পরিণত হয়। ফলে মাইক্রোটিউবিউল নিউক্লিয়াসের ভেতরের স্থানে গমন করে। এই ঘটনাটিকে মুক্ত মাইটোসিস বলে এবং এটি বেশ কিছু বহুকোষী জীবে দেখা যায়। ফানজাই এবং প্রোটিস্টা রাজ্যের কিছু জীব, যেমন শৈবাল বা ট্রাইকোমোনাডে বদ্ধ মাইটোসিস দেখা যায়। বদ্ধ মাইটোসিসে নিউক্লিয়াসের ভেতরে স্পিন্ডল সৃষ্টি হয় অথবা নিউক্লিয়ার ঝিল্লিকে অক্ষত রেখেই মাইক্রোটিউবিউল নিউক্লিয়াসের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে।
প্রোমেটাফেজের শেষের দিকে কাইনেটোকোর মাইক্রোটিউবিউল ক্রোমোজোমাল কাইনেটোকোরকে খুঁজে তার সাথে সংযুক্ত হয়।[৪০]কাইনেটোকোর হচ্ছে এক দরনের প্রোটিন জাতীয় পদার্থ যা মাইক্রোটিউবিউলের বন্ধন স্থাপন করে। প্রোফেজের শেষ পর্যায়ে ক্রোমোজোমের সেন্ট্রোমিয়ারে কাইনেটোকোর তৈরি হয়।[৪০][৪১] কিছু সংখ্যল পোলার মাইক্রোটিউবিউল তার বিপরীত সেন্ট্রোজোমের অনুবন্ধী পোলার মাইক্রোটিউবিউলের সাথে যুক্ত হয়ে মাইটোটিক স্পিন্ডল সৃষ্টি করে। যদিও কাইনেটোকোরের গঠন ও কার্যক্রম সম্পর্কে সম্পূর্ণভাবে জানা যায় নি, তবে জানা গেছে যে কাইনেটোকোর কয়েক ধরনের আণবিক মটর প্রোটিন ধারণ করে। যখন মাইক্রোটিউবিউল কাইনেটোকোরের সাথে সংযুক্ত হয়, তখন মটর সক্রিয় হয় এবং এটিপি থেকে প্রাপ্ত শক্তি ব্যবহার করে উদ্ভূত সেন্ট্রোজোমের দিকে নালিকা অগ্রসর হয়। মাইক্রোটিউবিলের পলিমারকরণ ও ভাঙ্গন এবং মটর প্রোটিনের কার্যক্রমের ফলে ক্রোমোজোমের দুটি ক্রোমাটিডকে পৃথক করার জন্য প্রয়োজনীয় টান বল উৎপন্ন হয়।
প্রোমেটাফেজ পর্যায়ে সকল মাইক্রোটিউবিউল কাইনেটোকোরের সাথে সংযুক্ত হওয়ার পর সেন্ট্রোজোমদ্বয় ক্রোমোজোমগুলো পরস্পর বিপরীত মেরুর দিকে টানতে থাকে। এ টানের ফলে সৃষ্ট বলের কারণে ক্রোমোজোম মেটাফেজ প্লেট তথা বিষুবীয় তলে পৌঁছায়। বিষুবীয় তল হচ্ছে দুটি সেন্ট্রোজোমের মধ্যে (প্রায় কোষের মধ্যরেখায়) কল্পিত একটি রেখা। মাইটোসিসের শেষে ক্রোমোজোমের সমান বিন্যাসের জন্য মেটাফেজ চেকপয়েন্ট কাইনেটোকোরের সাথে মাইটোটিক স্পিন্ডলের সঠিক সংযুক্তি নিশ্চিত করে। মেটাফেজ চেকপয়েন্ট বিষুবীয় অঞ্চলে ক্রোমোজোমের বিন্যাসও নিশ্চিত করে থাকে। কোষ মেটাফেজ চেকপয়েন্ট সঠিকভাবে অতিক্রম করতে পারলে অ্যানাফেজ পর্যায় শুরু হয়।
অ্যানাফেজ A পর্যায়ে সিস্টার ক্রোমাটিডগুলোকে যুক্তকারী কোহেসিন প্রোটিনে ফাটল ধরে এবং ঘটনাক্রমে দুটি অভিন্ন অপত্য ক্রোমোজোম সৃষ্টি হয়।[৪২] কাইনেটোকোর মাইক্রোটিউবিউল সংকুচিত হয়ে নতুন অপত্য ক্রোমোজোমগুলোকে কোষের বিপরীত দুই প্রান্তে টানে। অ্যানাফেজ B পর্যায়ে পোলার মাইক্রোটিউবিউল একে অপরের বিরুদ্ধে বল প্রয়োগ করলে কোষ দৈর্ঘ্যে বৃদ্ধি পায়।[৪৩] অ্যানাফেজের শেষ পর্যায়ে ক্রোমোজোমগুলো সর্বোচ্চে পরিমাণে ঘনীভূত হয়ে ক্রোমোজোম বিভক্তিকরণ প্রক্রিয়া এবং নিউক্লিয়াসের পুনর্গঠনকে ত্বরান্বিত করে।[৪৪] বেশিরভাগ প্রাণীকোষে অ্যানাফেজ B এর পূর্বে অ্যানাফেজ A সংঘটিত হয়। কিন্তু ভার্টিব্রাটা উপপর্বের কিছু প্রাণীদের ক্ষেত্রে ঠিক উল্টো ব্যাপার দেখা যায়।[৪২]
টেলোফেজ (ব্যুৎপত্তি গ্রিক শব্দ τελος যার অর্থ "শেষ") হল এমন একটি পর্যায়, যেখানে প্রোফেজ ও প্রোমেটাফেজের বিপরীত ঘটনাগুলো ঘটে। টেলোফেজ পর্যায়ে পোলার মাইক্রোটিউবিউল দৈর্ঘ্যে বৃদ্ধি পেয়ে কোষকে আরো সম্প্রসারিত করতে থাকে। নিউক্লিয়ার ঝিল্লি ভেঙ্গে গেলে মাতৃকোষের পুরনো নিউক্লিয়ার ঝিল্লির ভেসিকল ব্যবহার করে সৃষ্ট নতুন নিউক্লিয়ার ঝিল্লির আবির্ভাব ঘটে। প্রত্যেক সেট অপত্য ক্রোমোজোমের চারদিকে নতুন ঝিল্লি তৈরি হয় (তবে সেন্ট্রোজোমগুলো ঝিল্লিবদ্ধ হয় না) এবং নিউক্লিওলাসের পুনঃআবির্ভাব ঘটে। নতুন নিউক্লিয়ার ঝিল্লি দ্বারা আবদ্ধ দুই সেট ক্রোমোজোম বিশ্রাম নিতে শুরু করে এবং জলযোজনের মাধ্যমে ঘনত্ব কমাতে থাকে। এভাবেই মাইটোসিস প্রক্রিয়ার সমাপ্তি ঘটে। প্রত্যেক অপত্য নিউক্লিয়াস এক সেট করে সমবৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ক্রোমোজোম ধারণ করে। প্রজাতিভেদে পরবর্তীতে কোষ বিভাজন হতেও পারে, আবার নাও হতে পারে।
সাইটোকাইনেসিস মাইটোসিসের কোন পর্যায় নয়। বরং এটি কোষ বিভাজন সম্পন্ন করার জন্য আলাদা একটি প্রয়োজনীয় পর্যায়। প্রাণীকোষে সংকোচনশীল বলয়যুক্ত একটি ক্লিভেজ খাঁজ সৃষ্টি হয়। মেটাফেজ প্লেট সৃষ্টির স্থানে এ খাঁজটি সবদিক দিয়ে সমান হয়ে নিউক্লিয়াসদুটিকে আলাদা করে ফেলে।[৪৫] প্রাণী এবং উদ্ভিদ উভয় জীবের কোষ বিভাজনের সময় গলগি বস্তু থেকে ভেসিকল মাইক্রোটিউবিউলের সাহায্যে কোষের মাঝখানে আসে।[৪৬] উদ্ভিদকোষের ক্ষেত্রে ভেসিকলগুলো ফ্র্যাগমোপ্লাস্টের কেন্দ্রে কোষপ্লেট গঠন করে এবং পর্যায়ক্রমে কোষপ্রাচীর গঠন করার মাধ্যমে নিউক্লিয়াস দুটিকে পৃথক করে ফেলে। ফ্র্যাগমোপ্লাস্ট হচ্ছে উন্নত উদ্ভিদকোষে বিদ্যমান এক ধরনের মাইক্রোটিউবিউল গঠন। কিছু সবুজ শৈবালে সাইটোকাইনেসিসের সময় ফাইকোপ্লাস্ট নামক মাইক্রোটিউবিউল বিন্যাস ব্যবহৃত হয়।[৩৪] প্রতিটি অপত্যকোষে মাতৃকোষের জিনোমের একটি সম্পূর্ণ অনুলিপি থাকে। সাইটোকাইনেসিসের সমাপ্তির মাধ্যমেই এম-ফেজের সমাপ্তি ঘটে।
অনেক কোষে মাইটোসিস ও সাইটোকাইনেসিস আলাদাভাবে সম্পন্ন হয়। ফলে একটি কোষে একাধিন নিউক্লিয়াস সৃষ্টি হয়। বেশিরভাগ সময় ফানজাই পর্বের জীব (ছত্রাক), স্লাইম মোল্ড (প্রোটিস্টা রাজ্যের জীববিশেষ) এবং সিনোসাইটিক শৈবালে এ ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। তবে আরো বিভিন্ন জীবে এ ধরনের গঠন সৃষ্টি হতে দেখা যায়। এমনকি বিভিন্ন প্রাণীতে সাইটোকাইনেসিস এবং মাইটোসিস স্বাধীনভাবে ঘটতে দেখা যায়, যেমন- Drosophila melanogaster (ফলের মাছি) এর ভ্রূণের বিভিন্ন দশায়।[৪৭]
মাইটোসিসের কার্যপদ্ধতি অথবা গুরুত্ব ক্রোমোজোমাল সেটের রক্ষণাবেক্ষণের উপর নির্ভর করে। মাইটোসিসের মাধ্যমে সৃষ্ট প্রতিটি কোষ মাতৃকোষের গঠনবিশিষ্ট সমান সংখ্যক ক্রোমোজোম লাভ করে।
নিচের ঘটনাগুলোর সময় মাইটোসিস সংঘটিত হয়।
বৃদ্ধি ও বিকাশ: কোনো জীবের দেহে কোষের সংখ্যা মাইটোসিসের মাধ্যমে বৃদ্ধি পায়। এককোষী জাইগোট থেকে একটি বহুকোষী জীবের সৃষ্টি ও বিকাশের জন্য মাইটোসিস ভিত্তি হিসেবে কাজ করে।
কোষের প্রতিস্থাপন: দেহের কিছু অংশ,যেমনঃ ত্বক ও পরিপাকনালির কোষগুলো প্রতিনিয়ত বিনষ্ট হয় এবং নতুন কোষ দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়। মাইটোসিসের মাধ্যমে আগের কোষগুলোর হুবহু গঠনবিশিষ্ট নতুন কোষ সৃষ্টি হয়। লোহিত রক্তকোষের আয়ুষ্কালও সংক্ষিপ্ত (মাত্র ৪ মাস) এবং মাইটোসিসের মাধ্যমেই নতুন লোহিত রক্তকোষ সৃষ্টি হয়।
পুনরুৎপাদনঃ কিছু জীব তাদের দেহের অংশবিশেষের পুনরৎপত্তি ঘটাতে পারে। এসব ক্ষেত্রে নতুন কোষগুলো মাইটোসিসের মাধ্যমেই গঠিত হয়ে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, তারামাছ মাইটোসিসের মাধ্যমে তার হারানো বাহু পুনরুৎপাদন করতে পারে।
অযৌন প্রজনন: কিছু জীব অযৌন প্রজননের মাধ্যমে জিনগত অভিন্ন সন্তান উৎপাদন করে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, হাইড্রা মুকুলোদগমের মাধ্যমে অযৌন প্রজনন সম্পন্ন করে। হাইড্রার দেহতলে মাইটোসিস বিভাজনের ফলে স্ফীত মুকুলের সৃষ্টি হয়। মুকুলের কোষগুলোতে মাইটোসিস চলতে থাকে এবং পর্যায়ক্রমে মুকুলটি একটি সম্পূর্ণ হাইড্রায় পরিণত হয়। উদ্ভিদের অযৌন প্রজনন কিংবা অঙ্গজ বিস্তারের সময়ও মাইটোসিস ঘটে থাকে।
সকল প্রকৃতকোষী জীবে মাইটোসিস প্রক্রিয়া একইভাবে সংঘটিত হয়। কিন্তু পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিচার করলে প্রধানত তিনভাবে মাইটোসিসের শ্রেণিবিভাগ করা যায়। নিউক্লিয়ার ঝিল্লির ভাঙ্গনের উপর ভিত্তি করে মাইটোসিসকে "মুক্ত" ও "বদ্ধ" এই দুই ভাগে ভাগ করা যায়। আর নিউক্লিয়াসের আংশিক ভাঙ্গনের মাধ্যমে আরেক ধরনের মাইটোসিস ঘটে, যাকে বলা হয় "অর্ধমুক্ত" মাইটোসিস। মেটাফেজ পর্যায়ে স্পিন্ডল যন্ত্রের প্রতিসাম্যতার উপর ভিত্তি করেও মাইটোসিসের প্রকারভেদ রয়েছে। অক্ষীয়ভাবে প্রতিসম (কেন্দ্রীভূত) আকৃতির স্পিন্ডল যন্ত্র সৃষ্টি হলে, এ প্রক্রিয়াকে "অর্থোমাইটোসিস" বলে। "প্লিউরোমাইটোসিস" প্রক্রিয়ায় খাপছাড়া স্পিন্ডল যন্ত্র দ্বিপার্শ্বীয় প্রতিসমভাবে বিন্যস্ত থাকে। আবার কেন্দ্রীয় স্পিন্ডলের অবস্থানের উপর ভিত্তি করে বদ্ধ প্লিউরোমাইটোসিসকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়ঃ "বহিঃনিউক্লিয়" (স্পিন্ডল সাইটোপ্লাজমে অবস্থান করে) এবং "অন্তঃনিউক্লিয়" (নিউক্লিয়াসে স্পিন্ডল অবস্থান করে)।[৪৮]
বদ্ধ অন্তঃনিউক্লিয় প্লিউরোমাইটোসিস
বদ্ধ বহিঃনিউক্লিয় প্লিউরোমাইটোসিস
বদ্ধ অর্থোমাইটোসিস
অর্ধমুক্ত প্লিউরোমাইটোসিস
অর্ধমুক্ত অর্থোমাইটোসিস
মুক্ত অর্থোমাইটোসিস
ব্যাকটেরিয়া ও আর্কিব্যাকটেরিয়ার নিউক্লিয়াস না থাকায় নিউক্লিয়াসের বিভাজন কেবল প্রকৃতকোষী জীবের দেহকোষে ঘটে থাকে। ব্যাকটেরিয়া ও আর্কিব্যাকটেরিয়া রাজ্যের জীব্দের কোষ ভিন্ন পদ্ধতিতে বিভাজিত হয়। প্রকৃতকোষী অধিরাজ্যগুলোর জীবদেহে মুক্ত মাইটোসিস, আবার কখনোবা বদ্ধ মাইটোসিস দেখা যায়। তবে এক্সক্যাভাটা অধিরাজ্যের জীবদেহে বিশেষ ধরনের বদ্ধ মাইটোসিস দেখা যায়। [৪৯] নিম্নে প্রকৃতকোষী জীবদেহে মাইটোসিসের বৈচিত্র্য দেখানো হল।[৪৮][৫০]
বদ্ধ অন্তঃনিউক্লিয় প্লিউরোমাইটোসিস দেখা যায় ফোরামিনিফেরা, কিছু প্রাসিনোমোনাডিডা, কিছু কাইনেটোপ্লাস্টিডা, অক্সিমোনাডিডা, হ্যাপ্লোস্পোরিডিয়া, বিভিন্ন ছত্রাক (সিট্রিডস, ওমাইসিটিস, জাইগোমাইসিটিস, এসকোমাইসিটিস), কিছু রেডিওলেরিয়ার (স্পিউমেলারিয়া এবং অ্যাকানথারিয়া) দেহকোষে। এ ধরনের মাইটোসিস সর্বাপেক্ষে প্রাচীন।
বদ্ধ বহিঃনিউক্লিয় প্লিউরোমাইটোসিস দেখা যায় ট্রাইকোমোনাডিডা ও ডাইনোফ্লাজেলাটা অধিশ্রেণির জীবের দেহকোষে।
বদ্ধ অর্থোমাইটোসিস দেখা যায় ডায়াটম, সিলিয়েট, কিছু মাইক্রোস্পোরিডিয়া, এককোষী ইস্ট এবং কিছু বহুকোষী ছত্রাকে।
অর্ধমুক্ত প্লিউরোমাইটোসিস এপিকমপ্লেক্সা পর্বের বেশিরিভাগ প্রাণীতে দেখা যায়।
অর্ধমুক্ত অর্থোমাইটোসিস কিছু অ্যামিবার (লোবাসা) বিভিন্ন প্রকরণ ও কিছু সবুজ ফ্লাজিলেটে (যেমন, রাফিডোফাইটা অথবা ভলভক্স) দেখা যায়।
মুক্ত অর্থোমাইটোসিস স্তন্যপায়ী প্রাণী, অন্যান্য মেটাজোয়া এবং স্থলজ উদ্ভিদে দেখা যায়। এছাড়াও কিছু প্রোটিস্টেও এ প্রক্রিয়া সংঘটিত হয়।
মাইটোসিস পর্যায় চলাকালে বিভিন্ন ত্রুটি হতে পারে, বিশেষ করে মানবদেহের ভ্রূণীয় বিকাশের সময় এমন ত্রুটি দেখা যায়।[৫১] মাইটোসিসের প্রত্যেক ধাপে চেকপয়েন্ট থাকে, যা মাইটোসিসের স্বাভাবিক ফলাফল নিশ্চিতকরণে কাজ করে থাকে।[৫২] তবে মাঝে মাঝেই বা বিরলক্ষেত্রে প্রক্রিয়াটিতে ভুল হতে দেখা যায়। মাইটোটিক ত্রুটি অ্যানিউপ্লয়েড কোষ সৃষ্টি করতে পারে, যেখানে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি বা অনেক কম ক্রোমোজোম দেখা যায়। এটি ক্যান্সারের একটি লক্ষণ।[৫৩][৫৪] নব মানবভ্রূণ, ক্যান্সার কোষ, সংক্রামিত বা বিষাক্ত কোষ অস্বাভাবিকভাবে বিভাজিত হয়ে (ত্রিমেরু বা বহুমেরুবিশিষ্ট মাইটোসিস) তিন বা ততোধিক অপত্যকোষে পরিণত হয়। এর ফলে পরিপূরক ক্রোমোজোমে বিভিন্ন ত্রুটি দেখা দিতে পারে।[৭]
ননডিসজাংশান নামক জটিলতায় অ্যানাফেজ পর্যায়ে সিস্টার ক্রোমাটিড সঠিকভাবে বিভাজিত হতে পারে না।[৫৫] ননডিসজাংশানে আক্রান্ত মাতৃকোষ থেকে একটি অপত্যকোষ দুইটি সিস্টার ক্রোমাটিড লাভ করে এবং অন্য অপত্যকোষটি কোনো ক্রোমোজোম লাভ করে না। ফলে প্রথম কোষটি ক্রোমোজোমের তিনটি অনুলিপি লাভ করে, এ অস্বাভাবিক অবস্থাকে বলে ট্রাইজোমি। দ্বিতীয় কোষটি ক্রোমোজোমের কেবল একটি অনুলিপি লাভ করে, যাকে মনোজোমি বলে। অনেক সময় ননডিসজাংশান ঘটলে, কোষের সাইটোকাইনেসিস সম্পন্ন হতে পারে না এবং একটি কোষেই দুইটি অপত্য নিউক্লিয়াস থেকে যায়। এ কোষটিকে "বাইনিউক্লিয়াটেড" কোষ বলে।[৫৬]
অ্যানাফেজ পর্যায়ে একটি ক্রোমাটিডের আন্দোলন বাধাপ্রাপ্ত হলে অ্যানাফেজ বিলম্বন নামক জটিলতার সৃষ্টি হয়।[৫৫] মাইটোটিক স্পিন্ডলের সাথে ক্রোমোজোম সঠিকভাবে সংযুক্ত না হলে এ ত্রুটি হতে পারে। বাধাপ্রাপ্ত ক্রোমাটিডটি উভয় নিউক্লিয়াস থেকে হারিয়ে যায়। ফলশ্রুতিতে, একটি অপত্যকোষ একটি ক্রোমোজোম হারিয়ে মনোজোমিক হয়ে যাবে।
ক্রোমোজোম অনুলিপিত হওয়ার পর কোষ বিভাজিত না হলে অন্তঃঅনুলিপন নামক ত্রুটির সৃষ্টি হয়। এর ফলে পলিপ্লয়েড কোষ সৃষ্টি হয় অথবা, ক্রোমোজোম বারবার অনুলিপিত হতে থাকলে পলিটিন ক্রোমোজোম সৃষ্টি হয়।[৫৫][৫৭] অনেক প্রজাতিতে অন্তঃঅনুলিপন ঘটে থাকে এবং অনেক প্রাণীর বিকাশে এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।[৫৭] অন্তঃমাইটোসিস হচ্ছে অন্তঃঅনুলিপনের একটি প্রকরণ। এ ধরনের ত্রুটিতে কোষ S দশায় ক্রোমোজোম অনুলিপিত করে এবং মাইটোসিস পর্যায়ে প্রবেশ করে। কিন্তু কোষ তার চক্র সম্পূর্ণ না করেই অকালে মাইটোসিস বন্ধ করে দেয়। দুইটি অপত্য নিউক্লিয়াসে বিভক্ত হওয়ার পরিবর্তে অনুলিপিত ক্রোমোজোমগুলো প্রকৃত নিউক্লিয়াসটির ভেতরেই অবস্থান করে।[৪৭][৫৮] এরপর এ কোষগুলো G1 এবং S পর্যায়ে প্রবেশ করে এবং পুনরায় তাদের ক্রোমোজোমকে অনুলিপিত করে।[৫৮] এ ঘটনাটি অনেকবার ঘটতে পারে। প্রত্যেকবার অন্তঃমাইটোসিস ও অনুলিপনের ফলে ক্রোমোজোমের সংখ্যা বাড়তে থাকে। অণুচক্রিকা সৃষ্টিকারী মেগাক্যারিওসাইট কোষ বিভাজনের সময় অন্তঃমাইটোসিস প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যায়।[৫৯][৬০]
সিলিয়েট এবং প্রাণীর অমরার টিস্যুতে অ্যামাইটোসিস প্রক্রিয়ার ফলে মাতৃকোষের অ্যালিলের যথেচ্ছ বণ্টন ঘটে।
সাইটোকাইনেসিস ব্যতীত ক্যারিওকাইনেসিস ঘটলে সিনোসাইট নামক বহুনিউক্লিয়াসবিশিষ্ট কোষের সৃষ্টি হয়।
হিস্টোপ্যাথোলজিতে মাইটোসিস বিভাজনের হার বিভিন্ন টিস্যুর নমুনা যাচাই এবং টিউমারের ভয়াবহতা নির্ণয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাপকাঠি। যেমন, স্তনের ক্যান্সের নির্ণয়ের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় ব্যবধানে মাইটোসিস সংঘটিত হওয়ার নির্দিষ্ট হার রয়েছে।[৬১] উচ্চ মাইটোটিক কার্যসম্পন্ন এলাকাগুলোতেই মাইটোসিসের সংখ্যা পরিমাপ করতে হয়। উচ্চ মাইটোটিক কার্যাবলিসম্পন্ন টিউমারে এ ধরনের এলাকাগুলো বাহ্যিক দৃষ্টিতে শনাক্ত করা কঠিন।[৬২] মাইটোসিসের অস্বাভাবিক রূপ শনাক্ত করার মাধ্যমে রোগ নির্ণয় করা যেতে পারে। যেমন, বিলম্বিত ধরনের মাইটোসিস (মাইটোটিক অঞ্চলে ঘনীভূত ক্রোমাটিন সংযুক্ত হয় না) হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস সংক্রান্ত জরায়ুমুখের ক্যান্সারের লক্ষণ প্রকাশ করে।
ক্যান্সার কোষের স্বাভাবিক এবং অস্বাভাবিক মাইটোসিস। A, স্বাভাবিক মাইটোসিস; B, ক্রোমাটিন সেতু; C, মাল্টিপোলার মাইটোসিস; D, রিং মাইটোসিস; E, বিক্ষিপ্ত মাইটোসিস; F, অপ্রতিসম মাইটোসিস; G, বিলম্বিত ধরনের মাইটোসিস; এবং H, মাইক্রোনিউক্লিয়াস. H এবং E রঞ্জক।
প্রাণীকোষের মাইটোসিসের সময় কোষটি প্রায় গোলাকৃতি ধারণ করে।[৬৩][৬৪][৬৫] এপিথেলিয়াম এবং এপিডার্মিসে মাইটোটিক স্পিন্ডলের সঠিক বিন্যাস ও অপত্যকোষের সঠিক অবস্থানের সাথে কার্যকরী কোষচক্র পারষ্পরিক সম্পর্কযুক্ত।[৬৪][৬৫][৬৬][৬৭] গবেষকরা আবিষ্কার করেছেন যে, কোষ অতিমাত্রায় গোলাকৃতি ধারণ করলে স্পিন্ডল যন্ত্রের ত্রুটি, মেরু বিভক্ত হয়ে যাওয়া, ক্রোমোজোম ও স্পিন্ডলের সংযুক্তি ব্যর্থ হওয়ার মত সমস্যা দেখা যায়।[৬৮] এইজন্য মনে করা হয় যে, মাইটোটিক কোষ গোলীয়করণ মাইটোসিস সঠিকভাবে সংঘটিত হওয়ার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।[৬৭][৬৯]
F-অ্যাক্টিন এবং মায়োসিন (অ্যাক্টোমায়োসিন) সংকুচিত হয়ে একজাতীয় কোষীয় বহিঃত্বকে পরিণত হয়ে গোলীয়করণের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি যোগান দেয়। এর ফলে ১) কোষের পরিধিকে শক্ত হয় এবং [৬৯][৭০][৭১] and ২) অন্তঃকোষীয় হাইড্রোস্ট্যাটিক চাপ বৃদ্ধি পায়। (ইন্টারফেজের চেয়ে প্রায় ১০ গুণ পর্যন্ত বেশি)[৭২][৭৩][৭৪] বিশেষ করে বদ্ধ অবস্থায় অন্তঃকোষীয় চাপের সৃষ্টি প্রক্রিয়াটি জটিল, কেননা এ ধরনের ঘটনায় গোলীয়করণের জন্য পার্শ্ববর্তী কোষ এবং/অথবা বহিঃকোষীয় মাতৃকার বিরুদ্ধে বাহ্যিক বল সৃষ্টি করতে হয়। চাপের সৃষ্টি ফরমিনের পরোক্ষ F-অ্যাক্টিন নিউক্লিয়েশন[৭৪] এবং আরএইচও কাইনেজ-পরোক্ষ (ROCK) মায়োসিন ২ এর সংকোচনের উপর নির্ভরশীল।[৭০][৭২][৭৪] উভয়েই Cdk1 এর কার্যকরীতায় সংকেত প্রদানকারী RhoA এবং ECT2 এর মাধ্যমে প্রবাহিত হয়।[৭০][৭১][৭৪] মাইটোসিসে গুরুত্বের জন্য মাইটোটিক অ্যাক্টোমায়োসিন বহিঃত্বক নিয়ে ব্যাপক গবেষণা করা হয়।
কোষ চক্রের G1 দশায় এক্স-রে বিকিরিত মাইটোটিক কোষ হোমোলোগাস ক্রোমোজোমদ্বয়ের মধ্যে রিকম্বিনেশনের মাধ্যমে রিকম্বিনোজেনিক ডিএনএ মেরামত করে।[৭৫] G2 দশায় বিকিরিত মাইটোটিক কোষ সিস্টার ক্রোমাটিডের রিকম্বিনেশনের মাধ্যমে বিভিন্ন ক্ষয়সাধন করে থাকে।[৭৫] রিকম্বিনেশনে নিয়োজিত জিন এনকোডিং এনজাইমে মিউটেশন ঘটলে ডিএনএ এর জন্য ক্ষতিকারক পদার্থের আক্রমণে কোষের মৃত্যুর আশঙ্কা বেড়ে যায়।[৭৬][৭৭][৭৮] এসব পর্যালোচনা করে বলা যায় যে, মরণাপন্ন কোষসহ সব ধরনের কোষের ডিএনএর ক্ষয়সাধনে মাইটোটিক রিকম্বিনেশন একটি গুরুত্বপূর্ণ অভিযোজন প্রক্রিয়া।
প্রকৃতকোষী মাইটোসিসের প্রধান আণবিক উপাদানগুলোর সাথে আদিকোষীয় অণুর অনেক সাদৃশ্য রয়েছে (যেমন, অ্যাক্টিন, টিউবিউলিন)। সার্বজনীন প্রকৃতকোষী বৈশিষ্ট্য হওয়া সত্ত্বেও মাইটোসিস প্রক্রিয়ার উৎপত্তির মূল আদিকোষে। যেহেতু মায়োসিস মাইটোসিস অপেক্ষা জটিল প্রক্রিয়া, তাই সম্ভবত মাইটোসিসের পর মায়োসিস প্রক্রিয়ার উদ্ভব হয়েছে।[৭৯] মায়োসিসের মাধ্যমে যৌন জনন প্রক্রিয়া প্রকৃতকোষীদের একটি মৌলিক বৈশিষ্ট্য।[৮০] আদিকোষ থেকে বিবর্তনের মাধ্যমে আলাদাভাবে মাইটোসিস ও মায়োসিস প্রক্রিয়ার উদ্ভব হয়ে থাকতে পারে।
ব্যাকটেরিয়ার দ্বিবিভাজনের সময় ডিএনএ অনুলিপনের পর দুটি বৃত্তাকার ক্রোমোজোম কোষঝিল্লির বিশেষ অঞ্চলে সংযুক্ত হয়। অন্যদিকে প্রকৃতকোষে সূত্রাকার ক্রোমোজোম স্পিন্ডলের মাইক্রোটিউবিউলের কাইনেটোকোরে সংযুক্ত হয়। মাইটোসিসের মধ্যে বদ্ধ অন্তঃনিউক্লিয় প্লিউরোমাইটোসিস সর্বাপেক্ষা প্রাচীন। কেননা এর সাথে ব্যাকটেরিয়ার বিভাজনের সর্বাধিক মিল পাওয়া যায়।[৪৮]
প্রতিপ্রভ অ্যান্টিবডি এবং রঙ দিয়ে রঞ্জিত করার মাধ্যমে আণুবীক্ষণিকভাবে মাইটোটিক কোষ পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব।
প্রোফেজের প্রারম্ভ: সবুজ সূত্র হিসেবে দেখানো হয়েছে পোলার মাইক্রোটিউবিউল, যা অক্ষত নিউক্লিয়াসের চারদিকে মাতৃকা গঠন করেছে। ঘনীভূত হতে থাকা ক্রোমোজোম নীল রঙে এবং লাল নোডিউল হিসেবে সেন্ট্রোজোম দেখানো হয়েছে।
প্রোমেটাফেজের প্রারম্ভ: নিউক্লিয়ার ঝিল্লি কেবলমাত্র ভেঙ্গে গিয়েছে। মাইক্রোটিউবিউলের সাথে ক্রোমোজোমের সেন্ট্রোমিয়ার সংযুক্তকারী কাইনেটোকোরের মিথষ্ক্রিয়া শুরু হয়েছে।
মেটাফেজ: সেন্ট্রোজোম কোষের মেরুতে সরে গিয়ে মাইটোটিক স্পিন্ডল গঠন করে। মেটাফেজ প্লেটে ক্রোমোজোমের সমাবেশ ঘটে।
অ্যানাফেজ: কাইনেটোকোর মাইক্রোটিউবিউল দুই সেট ক্রোমোজোমকে টেনে আলাদা করে এবং পোলার মাইক্রোটিউবিউলের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি ঘটিয়ে কোষের দুইভাগকে আরো দূরে নিয়ে যায়। ক্রোমোজোম সর্বাধিক পরিমাণে ঘনীভূত হয়।
টেলোফেজ: প্রোফেজ এবং প্রোমেটাফেজের ঘটনাগুলো বিপরীতক্রমে ঘটে এবং কোষচক্র সম্পূর্ণ হয়।
↑"Cell division and growth"। britannica.com। ENCYCLOPÆDIA BRITANNICA। ২০১৮-১০-২৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১১-০৪।
↑Carter, J. Stein (২০১৪-০১-১৪)। "Mitosis"। biology.clc.uc.edu। ২০১২-১০-২৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১১-১২।অজানা প্যারামিটার |name-list-style= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য)
↑ কখKalatova B, Jesenska R, Hlinka D, Dudas M (জানুয়ারি ২০১৫)। "Tripolar mitosis in human cells and embryos: occurrence, pathophysiology and medical implications"। Acta Histochemica। 117 (1): 111–25। ডিওআই:10.1016/j.acthis.2014.11.009। পিএমআইডি25554607।
↑ কখRoss, Anna E. "Human Anatomy & Physiology I: A Chronology of the Description of Mitosis". Christian Brothers University. Retrieved 02 May 2018. linkওয়েব্যাক মেশিনেআর্কাইভকৃত ২০১৬-০৫-১২ তারিখে.
↑"Notes and memoranda: The late professor von Mohl". Quarterly Journal of Microscopical Science, v. XV, New Series, p. 178-181, 1875. link.
↑Weyers, Wolfgang (2002). 150 Years of cell division. Dermatopathology: Practical & Conceptual, Vol. 8, No. 2. linkওয়েব্যাক মেশিনেআর্কাইভকৃত ২০১৯-০৪-০২ তারিখে
↑Komender, Janusz (২০০৮)। "Kilka słów o doktorze Wacławie Mayzlu i jego odkryciu" [On Waclaw Mayzel and his observation of mitotic division] (পিডিএফ)। Postępy Biologii Komórki (পোলিশ ভাষায়)। 35 (3): 405–407। ২০১২-১০-২৭ তারিখে মূল(পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা।অজানা প্যারামিটার |name-list-style= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য)
↑Iłowiecki, Maciej (১৯৮১)। Dzieje nauki polskiej। Warszawa: Wydawnictwo Interpress। পৃষ্ঠা 187। আইএসবিএন978-83-223-1876-8।অজানা প্যারামিটার |name-list-style= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য)
↑Bütschli, O. (1873). Beiträge zur Kenntnis der freilebenden Nematoden. Nova Acta der Kaiserlich Leopoldinisch-Carolinischen Deutschen Akademie der Naturforscher 36, 1-144. linkওয়েব্যাক মেশিনেআর্কাইভকৃত ২০১৮-০৮-১১ তারিখে.
↑Bütschli, O. (1876). Studien über die ersten Entwicklungsvorgänge der Eizelle, die Zelleilung und die Conjugation der Infusorien. Abh.d. Senckenb. Naturf. Ges. Frankfurt a. M. 10, 213-452. linkওয়েব্যাক মেশিনেআর্কাইভকৃত ২০১৮-০৮-০৯ তারিখে.
↑Toepfer G। "Karyokinesis"। BioConcepts। ২০১৮-০৫-০৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ মে ২০১৮।
↑Battaglia E (১৯৮৭)। "Embryological questions: 12. Have the Polygonum and Allium types been rightly established?"। Ann Bot। Rome। 45: 81–117। p. 85: Already in 1887, Weismann gave the names Aequationstheilung to the usual cell division, and Reduktionstheilungen to the two divisions involved in the halving process of the number of Kernsegmente
↑Mauseth JD (১৯৯১)। Botany: an Introduction to Plant Biology। Philadelphia: Saunders College Publishing। আইএসবিএন9780030302220। p. 102: Cell division is cytokinesis, and nuclear division is karyokinesis. The words "mitosis" and “meiosis" technically refer only to karyokinesis but are frequently used to describe cytokinesis as well.
↑Cooper, Geoffrey M. (২০০০)। "Meiosis and Fertilization"। The Cell: A Molecular Approach. 2nd Edition (ইংরেজি ভাষায়)।
↑Brown, Terence A. (২০০২)। The Human Genome (ইংরেজি ভাষায়)। Wiley-Liss।
↑উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; Blow2005 নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
↑Prescott DM, Bender MA (মার্চ ১৯৬২)। "Synthesis of RNA and protein during mitosis in mammalian tissue culture cells"। Experimental Cell Research। 26 (2): 260–8। ডিওআই:10.1016/0014-4827(62)90176-3। পিএমআইডি14488623।
↑Olson MO (২০১১)। The Nucleolus। Volume 15 of Protein Reviews। Berlin: Springer Science & Business Media। পৃষ্ঠা 15। আইএসবিএন9781461405146।
↑উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; Miller2000 নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
↑European Molecular Biology Laboratory (১২ জুন ২০০৭)। "Chromosome condensation through mitosis"। Science Daily। ১৩ জুন ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ অক্টোবর ২০২০।
↑উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; Glotzer2005 নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
↑উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; Albertson2005 নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
↑ কখউদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; Lilly2005 নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
↑ কখগউদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; Raikov1994 নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
↑R. Desalle, B. Schierwater: Key Transitions in Animal Evolution. CRC Press, 2010, p. 12, linkওয়েব্যাক মেশিনেআর্কাইভকৃত ২০১৯-০১-০২ তারিখে.
↑Mantikou E, Wong KM, Repping S, Mastenbroek S (ডিসেম্বর ২০১২)। "Molecular origin of mitotic aneuploidies in preimplantation embryos"। Biochimica et Biophysica Acta (BBA) - Molecular Basis of Disease। 1822 (12): 1921–30। ডিওআই:10.1016/j.bbadis.2012.06.013। পিএমআইডি22771499।
↑উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; Italiano2003 নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
↑Vitrat N, Cohen-Solal K, Pique C, Le Couedic JP, Norol F, Larsen AK, Katz A, Vainchenker W, Debili N (মে ১৯৯৮)। "Endomitosis of human megakaryocytes are due to abortive mitosis"। Blood। 91 (10): 3711–23। ডিওআই:10.1182/blood.V91.10.3711। পিএমআইডি9573008।
↑Botthof JG, Bielczyk-Maczyńska E, Ferreira L, Cvejic A (মে ২০১৭)। "rad51 leads to Fanconi anemia-like symptoms in zebrafish"। Proceedings of the National Academy of Sciences of the United States of America। 114 (22): E4452–E4461। ডিওআই:10.1073/pnas.1620631114। পিএমআইডি28512217। পিএমসি5465903। Here we provide in vivo evidence that the decrease in HSPC numbers in adult fish indeed stems from a combination of decreased proliferation and increased apoptosis during embryonic development. This defect appears to be mediated via p53(10), as our p53/rad51 double mutants did not display any observable hematological defects in embryos or adults.
↑Bernstein, H., Bernstein, C. Evolutionary origin and adaptive function of meiosis. In “Meiosis”, Intech Publ (Carol Bernstein and Harris Bernstein editors), Chapter 3: 41-75 (2013).