মাইথন বাঁধ | |
---|---|
দেশ | ভারত |
অবস্থান | ধানবাদ জেলা, ঝাড়খণ্ড |
স্থানাঙ্ক | ২৩°৫১′১″ উত্তর ৮৬°৪৬′৪০″ পূর্ব / ২৩.৮৫০২৮° উত্তর ৮৬.৭৭৭৭৮° পূর্ব |
অবস্থা | কারযকর |
মালিক | দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন |
পাওয়ার স্টেশন | |
কার্যকারক | দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন |
মাইথন বাঁধ (হিন্দি: मैथन बांध) ঝাড়খণ্ড রাজ্যে ধানবাদ থেকে ৪৮ কিমি দূরে মাইথনে অবস্থিত। এটি ১৫,৭১২ ফু (৪,৭৮৯ মি) দীর্ঘ ও ১৬৫ ফু (৫০ মি). উচ্চ.[১]
এই বাঁধ এর নির্মাণ হয়েছিল প্রধানত বন্যা নিয়ন্ত্রণ করার জন্যে এবং ৬০,০০০ কিলো ওয়াট জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্যে। এখানে একটি ভূগর্ভস্থ পাওয়ার স্টেশন রয়েছে, যা সমগ্র দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় প্রথম ভূগর্ভস্থ পাওয়ার স্টেশন। বাঁধটি নির্মিত হয়েছে বরাকর নদীর উপর। জলাধারটির আয়তন ৬৫ বর্গকিলোমিটার (২৫ মা২)।
ডিভিসি - স্বাধীন ভারতের প্রথম বহুমুখী নদী উপত্যকা প্রকল্প, যার পরিকল্পনা হয়েছিল ১৯৪৮ সালের ৭ই জুলাই সংবিধান পরিষদের একটি আইন দ্বারা (Act no. XIV of 1948)। ডিভিসি র কমান্ড এলাকার আয়তন দামোদর অববাহিকা জুড়ে প্রায় ২৪,২৩৫ বর্গকিলোমিটার। উপরের উপত্যকা গঠিত হয়েছে ঝাড়খণ্ড রাজ্যের দুটি সমগ্র জেলা (ধানবাদ ও বোকারো) এবং আটটি জেলার অঙ্গিশ বিশেষ নিয়ে। অন্যদিকে নিচের উপত্যকায় রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের পাঁচটি জেলার (বর্ধমান, হুগলী, বাঁকুড়া, হাওড়া ও পুরুলিয়া) অঙ্গিশ বিশেষ নিয়ে।
ডিভিসি-র পরিকল্পনা করা হয় , অববাহিকা অঞ্চলে সামাজিক এবং অর্থনৈতিক উন্নতির সাথে সম্পর্কিত পরিকল্পনা গুলিকে বাস্তবায়নের অভিপ্রায় নিয়ে । কঠিন, কিন্তু কার্যকর জল ব্যবস্থাপনা দ্বারা কর্পোরেশন ভয়াবহ নদী দামোদরকে একটি "দুঃখের নদী" থেকে একটি "সুযোগের নদী"তে রূপান্তরিত করেছে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
বাঁধ, খাল ও ব্যারেজের মাধ্যমে জল সম্পদের দক্ষ ব্যবস্থাপনা করে , ডিভিসি সেচকে সুগম করেছে এবঙ্গি সেইসাথে অববাহিকা অঞ্চলে শিল্প এবঙ্গ গার্হস্থ্য জল সরবরাহ করেছে, যাতে এই বিশাল অঞ্চল ব্যাপকভাবে উপকৃত হয়েছে। ডিভিসি ১৯৫৩ সাল থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণ করে আসছে; গ্রাহকদের প্রত্যাশা তো পূরণ করেইছে, সময়ের সাথে সাথে নিজেদের কর্মদক্ষতাকে ও অনেক বাড়িয়েছে.
সম্প্রতি ডিভিসি টাটা পাওয়ারের সঙ্গে সহযোগিতা করে একটি তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প শুরু করেছে , যার নাম মাইথন পাওয়ার লিমিটেড (এমপিএল). এর আগে ডিভিসি কয়েকটি গ্যাস টারবাইন বসিয়েছিল বিদ্যুত উতপাদনের জন্য; এটি ছিল একটি অনন্য প্রযুক্তি কিন্তু এখন আর তারা কার্যকরী নেই।
ডিভিসি হাজার হাজার পরিবারের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে এবং এখনো করে চলেছে। এছাড়াও করা জন্য প্রকৌশল এবং ম্যানেজমেন্ট স্নাতকদের তাদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণেরো সুযোগ দেয় ডি ভি সি।
ধানবাদ থেকে ৪৮ কিমি দূরে অবস্থিত 'মাঈ কে থান'- মা কল্যাণেশ্বরী মন্দির অবস্থিত। সেকারণেই মাইথন কে বলা হয় 'মা এর বাসভূমি' বা 'মা-এর থান'। এখানেই রয়েছে ডি ভি সি র সবচেয়ে বড় জলাধারটি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে টেনেসি ভ্যালি প্রকল্পের থেকে অনুপ্রাণিত এই প্রকল্পটি করা হয়েছে, বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও ৬০০০০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্যে। এটি বরাকর নদীর উপর নির্মিত।
এখানে রয়েছে অনন্য ভূগর্ভস্থ পাওয়ার স্টেশন; এই ধরনের পাওয়ার স্টেশন দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম। জলাধারটি ৬৫ বর্গ কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। এটা ১৫,৭১২ ফু (৪,৭৮৯ মি). দীর্ঘ ও ১৬৫ ফু (৫০ মি) উঁচু।
বাঁধ এর উদ্দেশ্য গুলি নিম্নরূপঃ
১৯৪২ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় একটি বন্যা সঙ্গিঘটিত হয় দামোদর উপত্যকা অঞ্চলে যা কলকাতাকে বাকি দেশের থেকে প্রায় ১০ সপ্তাহ বিচ্ছিন্ন করে রাখে।শীঘ্রই সরকার টেনেসি ভ্যালি অথরিটি (TVA)র একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার Mr. W. L. Voord এ ডাকেন এ ব্যাপারে সমাধান করার জন্য। তিনি ১৯৪৫ সালের মধ্যেই বাঁধের পরিকল্পনা সম্পূর্ণ করেন। অবশেষে স্বাধীন ভারতে প্রথম বাঁধ( তিলাইয়া বাঁধ) শুরু হয় ৭ জুলাই, ১৯৫৩ তারিখে। শীঘ্রই তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে কোনার, মাইথন এবঙ্গি পাঞ্চেত শুরু হয় যথাক্রমে ১৯৫৫, ১৯৫৭ ও ১৯৫৯ সালে।
দামোদর মুখ্যত একটি বর্ষাকালীন নদী যার ৮২% ভরাট হয় জুলাই–সেপ্টেম্বরের বৃষ্টিপাতে। ১লা জুন থেকে ৩১শে অক্টোবর সময়ের মধ্যে বৃষ্টির জলের সংরক্ষণ করা হয়, এবং সঞ্চিত বৃষ্টির জল ব্যবহার করা হয়, সেচ দ্বারা বর্ধমানের ভাটি এলাকাতে চাষের সুবিধার্থে এবং জলবিদ্যুৎ উৎপাদন এবং অন্যান্য কাজের জন্যে।
মাইথন হাইডেল পাওয়ার স্টেশন (এমএইচপিএস) যথাক্রমে ঝাড়খণ্ডের ধানবাদ ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বর্ধমান জেলার সীমানার কাছে দামোদরের সাথে বরাকরের সঙ্গমস্থলের প্রায় ১২।৯ কিলোমিটার উপরে অবস্থিত ।এই প্রকল্পটির অনন্য বৈশিষ্ট্য এই যে, এটি নদীর বামতীরে ভূগর্ভে অবস্থিত এবং এই ধরনের ভূগর্ভস্থ পাওয়ার স্টেশন ভারতে প্রথম। পাওয়ার স্টেশনএর মোট উৎপাদন ক্ষমতা ৬০ মেগাওয়াট; ৩টি ২০ মেগাওয়াট এর ইউনিট। এমএইচপিএস প্রায় জলের ১০০ ফুট নিচে অবস্থিত।
বিদ্যুৎ উৎপাদনের সাথে জড়িত মানুষজন বলে যে যতটা বেশি সম্ভব জল ভরাট করা উচিত; তাহলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্যে ভালো হবে কিন্তু বন্যা নিয়ন্ত্রণ বিভাগ চায় যে জল সংরক্ষণ কম উচ্চতা অবধি করা উচিত, তাহলে অত্যধিক বৃষ্টিতে বন্যা পরিস্থিতি উদ্ভূত হলেও এই জলস্তর একটি বন্যা কুশন হিসেবে কাজ করবে। এটি একটি বিরোধপূর্ণ দাবি, তাই উভয় পক্ষকে সন্তুষ্ট করার জন্য জল একটি যথোপযুক্ত পর্যায়ে রাখতে হয়।
বাঁধের সঞ্চয় ক্ষমতা প্রারম্ভিক সময়ের তুলনায় এখন অনেক কম হয়ে গেছে। ন্যূনতম আউটলেট (ন্যূনতম সাপ্লাই লেভেল) এর নিচে জলের পরিমাণের সমতুল্য জল সঞ্চয়ের ক্ষমতাকে ডেড স্টোরেজ ক্যাপাসিটি বলা হয়।ডেড স্টোরেজ এর ক্ষমতা হ্রাস হয়েছে প্রধানত নিচে পলি সঞ্চয়ের কারণে।বছরের পর বছর ধরে, মানুষের ও শিল্পএর বিভিন্ন কাজের জন্যেও স্টোরেজ ক্ষমতা কমে গেছে। মাননীয় শ্রী Voord এর হিসেব মত গভীরতা হওয়া উচিত ছিল ৫০০ ফু (১৫০ মি). কিন্তু, জমি অধিগ্রহণ এর অক্ষমতার কারণে গভীরতা হয় এ ৪৯৫ ফু (১৫১ মি)। তার পরিকল্পনা অনুযায়ী বাঁধের বহনক্ষমতা হওয়ার কথা ছিল ১০,০০,০০০ ঘনফুট/সে (২৮,০০০ মি৩/সে); কিন্তু নির্মাণ এর সময় বহনক্ষমতা ছিল শুধুমাত্র ২,৫০,০০০ ঘনফুট/সে (৭,১০০ মি৩/সে), এবং বর্তমানে এটির বহন ক্ষমতা ১,০০,০০০ ঘনফুট/সে (২,৮০০ মি৩/সে)। জমা পলি অপসারণের খরচ এখনকার হিসেবে একটি নতুন বাঁধ নির্মাণের সমান, অতএব, পলি অপসারণ অর্থনৈতিকভাবে ভালো সিদ্ধান্ত নয়। যদি পলি অপসারণ করা হয় এবং সেই পলিকে নদীর তীরেই রাখা হয় পুনরায় বর্ষাকালে সেই পলি ধুয়ে গিয়ে আবার জলাধারের মধ্যেই জমা হবে।
Maithon বাঁধ পরিষেবার ৬০ বছর অতিক্রান্ত করেছে, এবং নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ স্বত্বেও স্বাভাবিকভাবেই দীর্ঘ কর্মজীবনের প্রভাব পড়েছে মূল কাঠামোতেও।
বাঁধ এর বাড়তি জল নির্গমনের (spillway) দ্বার থেকে জল ছাড়ার আগে , সমস্ত সঙ্গিশ্লিষ্ট জেলা কর্তৃপক্ষ, নিম্ন উপত্যকায় থাকা কারখানা সমূহ, পৌরসভা এবং বর্ধমান, বাঁকুড়া, পুরুলিয়ার সিনিয়র প্রশাসনিক কর্মকর্তা; IOW Dept. পশ্চিমবঙ্গ সরকার; EE, DHW, দুর্গাপুর; সদস্য(RM); CWC, নতুন দিল্লি ও অন্যান্য দের জানানো হয়। যখনই মাইথন এবং পাঞ্চেত বাঁধ থেকে ছাড়িয়ে ১,১৩২ ঘনফুট/সে (৩২.১ মি৩/সে), এর বেশি প্রবাহে জল ছাড়া হয়, সম্প্রচার মাধ্যম যথা দূরদর্শন এবং অল ইন্ডিয়া রেডিও, আঞ্চলিক সংবাদ বুলেটিন, দূরদর্শন কলকাতা ইত্যাদির মাধ্যমে বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়।
বৃষ্টির জলের সাথে সাথে অনেক মাটি প্রবাহিত হয়, যা জলাধারের নিচে পলির সৃষ্টি করে এবং জলাধারের গভীরতা হ্রাস পায়। মাইথন বাঁধের পুনরুজ্জীবনের জন্য কিছু সংশোধনমূলক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত অবিলম্বে।