মাকরানা মর্মরপ্রস্তর হল এক ধরনের সাদা মর্মরপ্রস্তর, যা ভাস্কর্য এবং ভবন সজ্জায় ব্যবহারের জন্য জনপ্রিয়। এটি ভারতের রাজস্থান রাজ্যের মাকরানা শহরে খনি থেকে পাওয়া যায়। এই মার্বেল আগ্রার তাজমহল এবং কলকাতার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হলের মতো বেশ কিছু নামকরা স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছিল। মাকরানা মর্মরপ্রস্তরকে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অফ জিওলজিক্যাল সায়েন্সেস দ্বারা একটি বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী পাথরের সম্পদ হিসাবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।[১]
মাকরানা এলাকায়, মর্মরপ্রস্তরটি পাঁচটি দিগংশ-চ্যূতি স্তর হিসেবে পাওয়া যায়।[২] সেগুলো দিল্লি সুপারগ্রুপের আজমির গঠনের অংশ, যেটি পাললিক শিলাগুলোর একটি ক্রম যা প্রোটেরোজোয়িক সময় দিল্লি অববাহিকায় জমা হয়েছিল। প্রায় ১৪৫০ মিলিয়ন বছর আগে, এই শিলাগুলো দিল্লি পর্বতন (একটি প্রক্রিয়া যেখানে পৃথিবীর ভূত্বকের একটি অংশ ভাঁজ হয়ে গিয়ে পার্শ্বীয় চাপ দ্বারা বিকৃত হয়ে একটি পর্বতশ্রেণী তৈরি করে) দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল, যার ফলে তাদের রূপান্তর (বিদ্যমান শিলা থেকে ভিন্ন খনিজ বা গঠনবিন্যাস সহ অন্য শিলায় রূপান্তর) ঘটেছিল। এটি মূল চুনাপাথরকে মর্মরপ্রস্তরে রূপান্তরিত করেছিল এবং ভূ-ভাঁজের ফলে খাড়া চ্যূতি এবং বর্তমানে দেখতে পাওয়া নিম্নশিলার প্রকাশ ঘটেছিল।[৩]
মাকরানাকে মর্মরপ্রস্তর খননের ক্ষেত্রে ভারতের প্রাচীনতম স্থান হিসাবে বিবেচনা করা হয়। খনন করার পর, মাকরানা মর্মরপ্রস্তরকে কোনও ধরনের প্রক্রিয়াকরণের মধ্যে দিয়ে যেতে হয় না, এটি সরাসরি কাটাই এবং খোদাই করতে ব্যবহার করা হয়।[৪] মাকরানা মর্মরপ্রস্তর হল ভারতের দুটি ক্যালসাইট জাতীয় মর্মরপ্রস্তরগুলোর মধ্যে একটি, বাকি সবগুলো হল ডলোমাইট গোত্রের।[৫] এর দুটি বৈচিত্র্য রয়েছে: সাদা এবং আলবেটা।[২] রাজ্য সরকারের অনুমান অনুযায়ী এই অঞ্চলে মার্বেল মজুদের পরিমাণ ৫৫ মিলিয়ন টন।[৫] এই অঞ্চলের ৪০০টিরও বেশি খনি থেকে বছরে প্রায় ১২০ হাজার টন মার্বেল উৎপাদিত হয়।[৬]
মাকরানা মার্বেলে উচ্চ শতাংশে ক্যালসিয়াম রয়েছে এবং তাই এটি জলের ক্ষরণ প্রতিরোধী।[২] বলা হয় মাকরানা মর্মরপ্রস্তরের জল শোষণ ক্ষমতা ভারতের সকল প্রকার মর্মরপ্রস্তরের মধ্যে সর্বনিম্ন এবং এতে ৯৮ শতাংশ চুনাপাথর ও মাত্র দুই শতাংশ অপদ্রব্য রয়েছে বলে দাবি করা হয়। মাকরানা মর্মরপ্রস্তরের এই বৈশিষ্ট্যের জন্য এটি দীর্ঘ সময় ধরে একই রকম সাদা রঙের থাকে। এতে ৯৮ শতাংশ ক্যালসিয়াম থাকার ফলে এই মর্মরপ্রস্তরের ঔজ্বল্য সেরা হিসাবে বিবেচিত হয়। অপদ্রব্যের স্তরের পরিমাণের উপর নির্ভর করে মাকরানা মর্মরপ্রস্তরের বিভিন্ন রঙের বৈচিত্র্যগুলো খাঁটি সাদা, ধূসর রঙ সহ সাদা এবং গোলাপী হয়। ঘন সন্নিবদ্ধ বৈশিষ্ট্যের কারণে এটি শক্ত, দৃঢ় এবং স্বচ্ছ। এটি দীর্ঘ সময়ের জন্য তার ঔজ্বল্য এবং সাদা রঙ ধরে রাখতে পারে।[৫]
মাকরানা থেকে মর্মরপ্রস্তর মূলত পারস্য উপসাগরীয় দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, কানাডা, পাকিস্তান এবং রাশিয়ায় রপ্তানি করা হয়।[৫][৬] ভারতে, এটি ভবন নির্মাণ ছাড়াও প্রধানত হস্তশিল্প এবং ভাস্কর্যের কাজে ব্যবহৃত হয়।[৫] ২০১৫ সালে মাকরানা মর্মরপ্রস্তরকে চেন্নাইয়ের ভৌগোলিক নির্দেশক নিবন্ধন দ্বারা ভৌগোলিক নির্দেশকের মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল।[৭]