মাটির ময়না | |
---|---|
পরিচালক | তারেক মাসুদ |
প্রযোজক | ক্যাথরিন মাসুদ |
রচয়িতা | তারেক মাসুদ |
চিত্রনাট্যকার |
|
শ্রেষ্ঠাংশে |
|
সুরকার | মৌসুমী ভৌমিক |
চিত্রগ্রাহক | সুধীর পাল্সানে |
সম্পাদক | ক্যাথরিন মাসুদ |
প্রযোজনা কোম্পানি |
|
পরিবেশক |
|
মুক্তি |
|
স্থিতিকাল | ৯৮ মিনিট |
দেশ | বাংলাদেশ |
ভাষা | বাংলা |
নির্মাণব্যয় | মার্কিন$৩,০০,০০০ |
আয় | প্রা. মার্কিন$৪৬,৮৫২ (নিচে দেখুন) |
মাটির ময়না ২০০২ সালের বাংলাদেশী বাংলা যুদ্ধভিত্তিক নাট্য চলচ্চিত্র। এটি রচনা এবং পরিচালনা করেছেন তারেক মাসুদ। এটি তারেক পরিচালিত প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। তারেকের গল্প অবলম্বনে যৌথভাবে চলচ্চিত্রটির চিত্রনাট্য রচনা করেছেন তারেক এবং ক্যাথরিন মাসুদ। চলচ্চিত্রে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রাক্কালে গণঅভ্যুত্থানের পটভূমিতে মাসুদের ছেলেবেলার অভিজ্ঞতা ফুটে উঠেছে। চলচ্চিত্রের মূল ভূমিকায় অভিনয় করেছেন নুরুল ইসলাম বাবলু, রাসেল ফরাজী, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, রোকেয়া প্রাচী, শোয়েব ইসলাম এবং লামিসা আর রিমঝিম।
চলচ্চিত্র জুড়ে ঐতিহাসিক ঘটনার উদ্ধৃতি থাকলেও সেগুলো একটি কিশোরের মানবিক অভিজ্ঞতায় প্রকাশিত হয়েছে। মাদ্রাসায় তার শিক্ষক, সহপাঠীদের আচরণ আর পরিবারের সদস্যদের সাথে তার সম্পর্কের মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্রটির কাহিনি এগিয়ে যায়। ফরাসি সরকারের প্রাথমিক অর্থায়নে চলচ্চিত্রটির নির্মাণ শুরু হয়েছিল। ২০০২ সালের ১৫ মে ৫৫তম কান চলচ্চিত্র উৎসবে চলচ্চিত্রটির আনুষ্ঠানিক প্রদর্শনী হয়। ক্যাথরিন মাসুদের প্রযোজনায় চলচ্চিত্রটি মুক্তির পর বক্স অফিসে প্রায় মার্কিন$৪৬,৮৫২ মার্কিন ডলার আয় করে।
প্রাথমিক পর্যায়ে বাংলাদেশে চলচ্চিত্রটি নিষিদ্ধ করা হয়। পরবর্তীতে বহিষ্কারাদেশ বাতিলের পর ২০০৫ সালের ১৬ এপ্রিল লেজার ভিশন চলচ্চিত্রটির ভিসিডি এবং ডিভিডি সংস্করণ মুক্তি দেয়। ২০০২ সালে প্রথম বাংলাদেশি চলচ্চিত্র হিসেবে মাটির ময়না কান চলচ্চিত্র উৎসবে ডিরেক্টর্স ফোর্টনাইট আয়োজনে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র বিভাগে ফিপরেস্কি আন্তর্জাতিক সমালোচকদের পুরস্কার লাভ করে। চলচ্চিত্রটি শ্রেষ্ঠ শিশু শিল্পী ও শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করে। এছাড়াও ২৪তম বাচসাস পুরস্কার অনুষ্ঠানে পাঁচটি বিভাগে পুরস্কার সহ বিভিন্ন দেশিয়-আন্তর্জাতিক পুরস্কার জেতে। এটি ২০০২ সালে ৭৫তম একাডেমি পুরস্কার আয়োজনে শ্রেষ্ঠ বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্র বিভাগে বাংলাদেশের নিবেদিত প্রথম চলচ্চিত্র।[১]
মাটির ময়না ষাটের দশকের শেষভাগে ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান থেকে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পূর্বের অশান্ত সময়ের পটভূমিতে যুদ্ধ ও ধর্মের কারণে বিচ্ছিন্ন একটি পরিবারের গল্প।[২] পরিচালকের মাসুদের ছেলেবেলার প্রেক্ষাপটে নির্মিত আত্মজীবনীমূলক চলচ্চিত্রটি আনু (নুরুল ইসলাম বাবলু) নামের এক কিশোর চরিত্রের জীবনের গল্পের মধ্যে তুলে ধরা হয়েছে। আনুর বাবা কাজি (জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়) একজন ধর্মান্ধ মুসলিম, যিনি হোমিওপ্যাথিক ওষুধের অনুশীলন করতেন। আনুর মা আয়েশা (রোকেয়া প্রাচী) একসময় প্রফুল্ল মেয়ে ছিলেন, যিনি বিবাহের পর কাজির ধর্মান্ধতার কারণে ক্রমশ বশীভূত হয়ে পড়েন। আনুর ছোট বোন আসমা। কাজির কনিষ্ঠ ভাই মিলন পাকিস্তানের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে এমন স্থানীয় রাজনীতিতে জড়িত। যিনি বামপন্থী চিন্তার অনুসারি। কাজির অপছন্দ স্বত্তেও তিনি আনুকে হিন্দু উৎসব আর নৌকা বাইচ দেখাতে নিয়ে যান। চলচ্চিত্রে লোকগান, পুঁথিপাঠ, চৈত্রসংক্রান্তি তথা চড়ক পূজা, সূচিকর্ম, গ্রামীণ মেলা, বাহাস ইত্যাদি আবহমান ধর্মনিরপেক্ষ বাংলার সংস্কৃতি চিত্র দেখানো হয়।[৩]
কাজি নিজের ধর্মীয় মূলবোধ থেকে আনুকে মাদ্রাসায় (ইসলামি বিদ্যালয়) পাঠিয়ে দেন। মাদ্রাসায় আনুর নিঃসঙ্গ ছাত্র রোকনের (রাসেল ফরাজী) সাথে তার পরিচয় ঘটে এবং বন্ধুত্ব হয়। অন্যান্য ছাত্রদের তুলনায় রোকনের ভূমিকা ভিন্ন।[৪] সে আনুকে একটি কাল্পনিক বল দিয়ে ক্যাচ খেলতে আমন্ত্রণ জানান। মাদ্রাসায় থাকাকালীন সময়ে আনুর বোন আসমা মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়ে। আধুনিক ওষুধ সেবনে আনুর বাবা কাজির অস্বীকৃতি এবং নিজস্ব হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার ফলে আসমা মারা যায়।
রাজনৈতিক উত্থান মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়ায় আনুর পরিবারে অভ্যন্তরীণ সংকট ঘটতে থাকে। রাজনৈতিক বিভাজন তীব্র হওয়ার সাথে সাথে আনুর মাদ্রাসায়ও মধ্যপন্থী ও চরমপন্থী মতবাদের বিকাশ ঘটতে থাকে এবং ক্রমবর্ধমান বিভাজন সৃষ্টি হয়। বিভক্তির একই চিত্র দেখা যায় আনুর পরিবারে ও তার স্বাধীনচেতা মা আয়েশার মধ্যে। ধর্মীয় উদারতা, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র এবং ইসলামের দুর্বোধ্যতা প্রতিপাদ্যকে কেন্দ্র করে নির্মিত চলচ্চিত্রটি সংকটাপন্ন বিশ্বে সর্বজনীন প্রাসঙ্গিকতার অবতাড়না করে।
তারেক ও ক্যাথরিন মাসুদের মতে, চলচ্চিত্রটির প্রায় পুরোটুকু স্থানীয় অ-পেশাদার পরিবেশে ও স্থানীয় শব্দগ্রহণের মাধ্যমে নির্মিত হয়েছে।
"চলচ্চিত্রটি আমার জীবনের প্রতিচ্ছবি। চলচ্চিত্রের মূলচরিত্র ছেলেবেলায় আমি যা ছিলাম। আমাকে এমন একটি মাদ্রাসায় পাঠানো হয়েছিল যেখানে আমি ১৫ বছর বয়স পর্যন্ত পড়াশোনা করেছি এবং চলচ্চিত্রটি আমার অভিজ্ঞতার চিত্র তুলে ধরেছে।" |
— তারেক মাসুদ[৫] |
বেশকিছু বছর ধরে ১৯৬০-এর দশকের শেষের দিকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশ) তারেকের মাদ্রাসায় (ইসলামিক বিদ্যালয়) শৈশবকালীন আত্মজীবনীমূলক অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে[৬] একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণের পরিকল্পনা করছিলেন তারেক মাসুদ ও ক্যাথরিন মাসুদ।[৭] এটি ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে অত্যন্ত অশান্ত সময়, যখন বৃহত্তর ইসলামি রাষ্ট্র পাকিস্তানের পূর্ব শাখা হিসাবে দেশটি একটি শক্তিশালী ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন এবং মতবিরোধ ও সংস্কারকে দূরে রাখার প্রতিবাদী একটি ইসলামপন্থী সামরিক জান্তার মধ্যে বিভক্ত হয়েছিল।[৮] চলচ্চিত্রে সেই সময়ের ঐতিহাসিক ঘটনার তির্যক উল্লেখ থাকলেও তা মূলত একটি মানবিক, শিশুর দৃষ্টিতে দেখানো হয়েছে।[৯] ২০০০ সালের মে মাসে, চিত্রনাট্যের মানের ভিত্তিতে চলচ্চিত্র প্রযোজনার জন্য মাসুদ ফরাসি সংস্কৃতি ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয় এবং ইউরোপ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ফন্ডস স্যুদ (দক্ষিণ তহবিল) অনুদান লাভ করে। প্রাপ্ত অনুদানের মধ্যে চলচ্চিত্র সংভার, ৩৫ মিলিমিটার ক্যামেরা সরঞ্জাম এবং নির্মাণ প্রযুক্তিগত গুণমান নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় গবেষণাগার সুবিধাগুলি অন্তর্ভুক্ত ছিল।[১০] পরবর্তীতে সহ-প্রযোজনা এবং আন্তর্জাতিক পরিবেশক হিসেবে প্যারিস ভিত্তিক প্রযোজনা ও পরিবেশন সংস্থা এমকেটু চুক্তিবদ্ধ হয়।[১১][১০] ক্যাথরিন মাসুদের সঙ্গে একাধিক প্রযোজক চলচ্চিত্রটির প্রযোজনায় অংশ নিয়েছিল, যেখানে নাথালিস ক্রেকুথার।
২০০০ সালের শেষের দিকে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় দেড় বছরব্যপী চলচ্চিত্রের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। উচ্চাভিলাষী ব্যাপক মৌসুমি শুটিং এবং সময়ের প্রকাশনা নকশা জড়িত প্রকল্পে মাসুদ-ক্যাথরিন নিজেদের সমগ্র সঞ্চয়ের বিনিয়োগ ঘটান। পুরোপুরি অ-পেশাদারদের অভিনয়শিল্পীর সমন্বয়ে গঠিত চরিত্রগুলিতে পথশিশু, প্রকৃত মাদ্রাসা শিক্ষার্থী ও শিক্ষক, লোকসঙ্গীতশিল্পী এবং গ্রামবাসীদের নেয়া হয়েছে। প্রথম বাংলাদেশী পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র হিসেবে মাটির ময়না চলচ্চিত্রে স্বতঃস্ফূর্ত পরিবেশনা এবং বাস্তব পরিবেশ ধরে রাখতে বিভিন্ন দৃশ্যে সরাসরি শব্দধারণ করা হয়েছিল।[১০] শীত, বর্ষা এবং বসন্তের মরসুমে ধামরাই ও ফরিদপুরের গ্রামীণ পটভূমিসহ ছোট শহরের প্রকৃত অবস্থানে বছরব্যপী চলচ্চিত্রের দৃশ্যধারণ করা হয়।[১০] ২০০২ সালের প্রথমদিকে চলচ্চিত্রটির নির্মাণ শেষ হয়।[১০]
সকল গানের গীতিকার এ.টি. মাসুদ।
নং. | শিরোনাম | পরিবেশনকারী | দৈর্ঘ্য |
---|---|---|---|
১. | "পাখিটা বন্দি আছে" | মমতাজ | |
২. | "পুথিপাঠ" | শাহ আলম দেওয়ান | |
৩. | "শেরে খোদা আলী সাবে" | ইব্রাহীম বয়াতি | |
৪. | "যদি ভেস্তে যাইতে চাও" | আয়নাল মিয়া, মমতাজ | ৪:২২ |
বাংলাদেশের প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র হিসেবে ২০০২ সালের ১৫ মে ৫৫তম কান চলচ্চিত্র উৎসবের ডিরেক্টর্স ফোর্টনাইটে এটির আনুষ্ঠানিক প্রদর্শনী হয়।[১০][১২] ইউরোপ-আমেরিকায় বাণিজ্যিক মুক্তির পাশাপাশি চলচ্চিত্রটি পরবর্তী বছরগুলিতেও একাধিক উৎসবে প্রদর্শিত হয়েছিল। ২০০২ সালের আগস্টে এডিনবরা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ও কানাডার মন্ট্রিয়ল আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে[১৩], ৯ অক্টোবর স্পেনে সিটেজ চলচ্চিত্র উৎসবে[১৪] এবং মিশরের কায়রো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে চলচ্চিত্রটির প্রদর্শনী হয়।[১৫]
২০০৩ সালের ১১ জানুয়ারি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাম স্প্রিংস আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে চলচ্চিত্রটির প্রদর্শনী হয়।[১৬] সে বছর ৯ ফেব্রুয়ারি টরন্টো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়। ৫ এপ্রিলে নিউ ইয়র্কের ফিল্ম সেন্টার অব দ্য লিংকন সেন্টার এবং মিউজিয়াম অব মর্ডান আর্টের যৌথ আয়োজনে নিউ ডিরেক্টর্স/নিউ ফিল্ম উৎসবে চলচ্চিত্রটি নির্বাচিত হয়।[১০] ১৭ ডিসেম্বর ভারতের ৮ম কেরালা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে চলচ্চিত্রটির প্রদর্শনী হয়।[১৭] ২০০৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি আয়ারল্যান্ডের ডাবলিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে চলচ্চিত্রটির প্রদর্শনী হয়। ২৪ মার্চ একটি প্রেস স্ক্রিনিংও অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৫ সালে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসবে উদ্বোধনী চলচ্চিত্র হিসেবে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে মাটির ময়না প্রদর্শিত হয়।[১৮] ২০১৬ সালে বাংলাদেশ দূতাবাস সৌদি আরবের উদ্যোগে ভারত দুতাবাসে চলচ্চিত্রটির প্রদর্শনী আয়োজিত হয়।[১৯] ২০১৯ সালের এপ্রিলে পাকিস্তানের করাচিতে বাংলাদেশ ডেপুটি হাই কমিশন, করাচির আয়োজনে গেটে ইনস্টিটিউটের সহযোগিতায় চলচ্চিত্রটির প্রদর্শনী আয়োজন করে।[২০]
চলচ্চিত্রটি প্রথমে ফ্রান্সের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছিল। যদিও বাংলাদেশে প্রদর্শনী নিষিদ্ধকরণের কারণে প্রাথমিকভাবে চলচ্চিত্রটির কোনো বাণিজ্যিক প্রদর্শনী হয় নি। তবে পরবর্তীতে শুধুমাত্র দুইটি প্রেক্ষাগৃহে চলচ্চিত্রটি বাণিজ্যিকভাবে মুক্তি পেয়েছিল।[২১] ২০০৪ সালের ৩০ এপ্রিল নিউ ইয়র্ক এবং সান ফ্রান্সিসকো উপকূল অঞ্চলের প্রেক্ষাগৃহে চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায়।[১৫][২২] ২০০২ সালের অক্টোবরে এটি ঢাকার প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়। ২০০৩ সালের ৪ জুলাই প্রথম বাংলাদেশী চলচ্চিত্র হিসেবে যুক্তরাজ্যে এটির বাণিজ্যিক মুক্তি দেয়া হয়। ১৪ আগস্ট বাংলাদেশে ৪-সপ্তাহ ব্যাপী প্রদর্শনীর কারণে এটি রেকর্ড করেছিল।[১০] ২০০৭ সালের ২৯ জুলাই ভারতের কলকাতায় চলচ্চিত্রটি বাণিজ্যিকভাবে মুক্তি পায়।[২৩]
কান চলচ্চিত্র উৎসবে নির্বাচিত হওয়ার পর ফরাসি ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলি চলচ্চিত্রটির বাংলাদেশের ইতিবাচক চিত্র এবং সহনশীল ঐতিহ্যের জন্য প্রশংসিত হলেও বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড ধর্মীয়ভাবে সংবেদনশীল বিবেচনায় মাটির ময়না চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী নিষিদ্ধ করে।[৬][১০][২৪] এছাড়াও এটি মাদ্রাসা ব্যবস্থার বিকৃত চিত্র প্রদান করে বলে নিষেধাজ্ঞায় দাবী করা হয়েছিল।[২৫] নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে বাংলাদেশর গণমাধ্যমগুলিতে এবং ইন্টারনেটে বিশাল প্রচারণা শুরু হয়েছিল যা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি চাপ সৃষ্টি করেছিল। তারেক ও ক্যাথরিন মাসুদ এর বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে মামলা দায়ের করেন এবং তাদের সপক্ষে সিদ্ধান্ত পরিবর্তিত হয়।[১০] ফলে, ২০০২ সালের শেষের দিকে চলচ্চিত্রটি বাংলাদেশে প্রদর্শিত হবার অনুমতি লাভ করে।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক পাবলিক সার্ভিস টেলিভিশন প্রচার কোম্পানি চ্যানেল ফোর চলচ্চিত্রটির যুক্তরাজ্য পরিবেশক আইসিএ থেকে সম্প্রচারের স্বত্ব কিনে নেয়। চলচ্চিত্রটি ২০০৫ সালের জুলাই মাসে প্রথম বাংলাদেশী চলচ্চিত্র হিসেবে সম্প্রচারিত হয়।[১৫] পরবর্তীতে ২০০৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর আর্জেন্টিনা এবং ২০ ডিসেম্বর যুক্তরাজ্যের টেলিভিশনে চলচ্চিত্রটি সম্প্রচারিত হয়েছিল।[২৬]
সমষ্টিগত স্কোর | |
---|---|
উৎস | মূল্যায়ন |
মেটাক্রিটিক | ৭৫/১০০[২৭] |
রটেন টম্যাটোস | ৮৯%[২৮] |
পর্যালোচনা স্কোর | |
উৎস | মূল্যায়ন |
অলমুভি | [২৯] |
আইএমডিবি | [৩০] |
আলোসিনে | [৩১] |
এম্পায়ার | [৩২] |
দ্য গার্ডিয়ান | [৩৩] |
"সহজেই এই বছরের বা অন্য যে কোনও বছরের সেরা ছবি। সত্যজিৎ রায়ের ভাসমান সমতা এবং ইরানি পরিচালক আব্বাস কিয়ারোস্তামির কাজ দ্বারা সমানভাবে অনুপ্রাণিত মাসুদের অকপট তারল্য উল্লাসপূর্ণ হয়ে ওঠে।"
মূলত সমালোচক, দর্শক এবং চলচ্চিত্র বোদ্ধাদের কাছ থেকে মাটির ময়না ইতিবাচক পর্যালোচনা অর্জন করেছিল, যারা চলচ্চিত্রটির ঐতিহাসিক এবং সামাজিক প্রভাব সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলেন। চলচ্চিত্র পর্যালোচনা ওয়েবসাইট অলমুভিতে চলচ্চিত্রটি গড় ৪/৫ রেটিং লাভ করে।[২৯] ফরাসি চলচ্চিত্র ডেটাবেস আলোসিনেতে ১৩টি পর্যালোচনার ভিত্তিতে গড় ৩.৫/৫ স্বীকৃত রেটিং রয়েছে।[৩১] চলচ্চিত্র পর্যালোচনা সমষ্টিগত ওয়েবসাইট রটেন টম্যাটোসে, চলচ্চিত্রটির ৭.৭৫/১০ গড় রেটিংয়ের পাশাপাশি ২৭টি পর্যালোচনার ভিত্তিতে ৮৯% স্বীকৃত রেটিং রয়েছে। সাইটটির সমালোচনামূলক বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়েছে, "মাটির ময়না" চলচ্চিত্রে "একধরনের দ্বিগুণ বাগ্মিতা রয়েছে"।[২৮] মেটাক্রিটিক, যা এর পর্যালোচনাগুলিকে একটি ওজনদ্বার গড় রেটিং প্রদান করে, যেখানে চলচ্চিত্রটি ১৪ জন সমালোচকদের উপর ভিত্তি করে ৭৫ স্কোর লাভ করেছে, যেখানে "সাধারণত অনুকূলভাবে পর্যালোচনা" অন্তর্ভুক্ত।[২৭]
দ্য গার্ডিয়ানের পিটার ব্র্যাডশো বলেন, "শান্তভাবে দুর্দান্ত চলচ্চিত্রনির্মাণ মুসলিম ইতিহাসের মূল্যবান এবং স্বাধীনতা প্রবৃত্তি, ধর্মীয় গোঁড়ামিবাদ এবং পাশ্চাত্য ইসলামফোবিয়া উভয়ের একটি মূল্যবান ক্ষিপ্র প্রত্যাঘাত। এটি বছরের অন্যতম চলচ্চিত্র।"[৩৩] দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের আন হর্নাডে লিখেছেন, স্বল্পব্যায়ে নির্মিত চলচ্চিত্রটি বাংলাদেশের জলপথে এবং শহরগুলিতে জীবনের চিত্রের গীতিধর্মিতা তুলে এনেছে, যার কিছু দৃশ্য দর্শকদের জঁ রনোয়ারের ১৯৫১ সালের ক্লাসিক ল্য ফ্লোভ চলচ্চিত্রের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।[৩৪] দ্য বস্টন গ্লোবের টাই বার লিখেছেন, মাটির ময়না নির্মল কল্পনার সাথে ফুটে উঠেছে ব্যক্তিগত, রাজনৈতিক এবং আধ্যাত্মিক অস্থিরতার সংযোগ।[৩৫] মার্কিন চলচ্চিত্র সমালোচক ফ্র্যাঙ্ক শেক দ্য হলিউড রিপোর্টারে লিখেছেন, চলচ্চিত্রের চরিত্রগুলির প্রতি নির্মাতাদের স্পষ্ট সহানুভূতি এবং তার বিষয় সম্পর্কে ঘনিষ্ঠ জ্ঞান চলচ্চিত্রটিকে প্রাণবন্ত সত্যতা প্রদান করে। মাইকেল ও'সুলিভান দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের পর্যালোচনায় মন্তব্য করেন, "মাটির ময়না মানুষের অবস্থা সম্পর্কে বেশকয়েকটি সুন্দর এবং অলস প্রবণতায় আঘাত করে।[৩৬] ফিল্ম জার্নাল ইন্টারন্যাশনালের এরিক মন্ডারের মতে, চলচ্চিত্রটি নিজস্ব নাটকীয়তার জন্য কিছুটা সংযত হলেও অন্তত সমসাময়িক দর্শকদের কাছে প্রাসঙ্গিকভাবে বিশ্ব ইতিহাসের উল্লেখযোগ্য অংশের উপর আলোকপাত করে। মুভি হ্যাবিটের মার্টি ম্যাপস, চলচ্চিত্রটিকে নৃবিজ্ঞানের একটি ভাল প্রয়াস হিসেবে মন্তব্য করেন।[৩৭] মার্কিন চলচ্চিত্র ইতিহাসবিদ ও সমালোচক ইলিয়াস সাওয়াদা বলেন, "মাটির ময়না একটি অবিশ্বাস্যরূপে নম্র অভিজ্ঞতা"।[৩৮] মার্কিন লেখক ও চলচ্চিত্র সমালোচক ফিল হল ফিল্ম থ্রেটে এটিকে বাংলাদেশের দুর্দান্ত চলচ্চিত্র বলে মন্তব্য করেন। মার্কিন সাংবাদিক এবং ইতিহাসবিদ এলিয়ট স্টেইন বলেন, "সর্বপরি মাটির ময়না শৈশবের সরলতা ও বেঁচে থাকার অভিলাষের প্রতি সহানুভূতি – পাশাপাশি সত্যজিৎ রায়ের দুর্দান্ত পথের পাঁচালীর মতোন চিত্তাকর্ষক পরমানন্দ এবং স্বাভাবিক।[৩৯] বিবিসির জেমি রাসেলের মতে, যথেষ্ট দক্ষতার সাথে আনুর শৈশব মধ্য দিয়ে মাসুদ পরিবর্তনের সময়ে ক্রমবর্ধমান মৃদু প্রতিকৃতি তৈরি করেছিলেন।[৪০] সিয়াটেল চলচ্চিত্র সমালোচক শন জামেকারের মতে, চলচ্চিত্রটি সুস্পষ্ট ও অধরা এবং প্রায় ঐতিহাসিক বৈশিষ্ট্যগুলি সমন্বঢে কালজয়ী রচনা।[৪১] পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত জার্মান ইসলামিক স্টাডিজের অধ্যাপক জামাল মালিক, বলেন মাটির ময়নার গল্প একটি পাঠ্য কাঠামোয় উপস্থাপন করা হয়েছে যা ইউরোপিয় আর্ট ফিল্মের অনুরূপ।[৪২] ভারতীয় চলচ্চিত্রনির্মাতা অপর্ণা সেন চলচ্চিত্রটির প্রশংসা করেন।[৪৩][৪৪]
২০১৮ সালের ৬ ডিসেম্বর তারেক মাসুদের ৬২তম জন্মদিবসে গুগল ডুডলে তারেক মাসুদকে স্মরণ করা হয়। যেখানে মাটির ময়না চলচ্চিত্রের মাটির পাখি ব্যবহৃত হয়েছে।[৪৫][৪৬]
২০০৪ সালের ১৬ জুন চলচ্চিত্রটির ফরাসি প্রযোজক, পরিবেশক এবং বিশ্ব বিক্রয় প্রতিনিধী এমকেটু ওয়ার্নার ব্রাদার্স হোম এন্টারটেইনমেন্ট ফ্রান্সের অধীনে চলচ্চিত্রের ডিভিডি প্রকাশ করেছে (কেবল অঞ্চল ২ এর জন্য উপযুক্ত)।[৫৬] ২০০৫ সালের ১৫ এপ্রিল মাটির ময়নার ভিসিডি এবং ডিভিডি সংস্করণ লেজার ভিশন থেকে বাংলাদেশে প্রকাশিত হয়।[১৫] এতে দুই ঘণ্টা ব্যাপী অতিরিক্ত তথ্যচিত্র যুক্ত হয়েছে যাতে দৃশ্যধারণ, সাক্ষাৎকার ও দর্শকদের মতামত রয়েছে। এটি বাংলাদেশের প্রথম ইন্টারঅ্যাকটিভ ডিভিডি হিসেবে বিবেচিত।[১৫] চলচ্চিত্রটির উত্তর আমেরিকা পরিবেশক মাইলস্টোন ফিল্মস ২০০৫ সালের শেষে ডিভিডি সংস্করণে চলচ্চিত্রটি মুক্তি দেয়।[৫৭]