মাদারগঞ্জ | |
---|---|
উপজেলা | |
মানচিত্রে মাদারগঞ্জ উপজেলা | |
স্থানাঙ্ক: ২৪°৫৩′৪৭″ উত্তর ৮৯°৪৫′৭″ পূর্ব / ২৪.৮৯৬৩৯° উত্তর ৮৯.৭৫১৯৪° পূর্ব | |
দেশ | বাংলাদেশ |
বিভাগ | ময়মনসিংহ বিভাগ |
জেলা | জামালপুর জেলা |
আয়তন | |
• মোট | ২২৫.৩৯ বর্গকিমি (৮৭.০২ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (২০১১)[১] | |
• মোট | ২,৬৩,৬০৮ |
• জনঘনত্ব | ১,২০০/বর্গকিমি (৩,০০০/বর্গমাইল) |
সাক্ষরতার হার | |
• মোট | ৩৩.০% |
সময় অঞ্চল | বিএসটি (ইউটিসি+৬) |
পোস্ট কোড | ২০৪০ |
প্রশাসনিক বিভাগের কোড | ৩০ ৩৯ ৫৮ |
ওয়েবসাইট | দাপ্তরিক ওয়েবসাইট |
মাদারগঞ্জ বাংলাদেশের জামালপুর জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা। এটি ৭টি ইউনিয়ন এবং ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। এটি ময়মনসিংহ বিভাগের অধীন জামালপুর জেলার ৭ টি উপজেলার একটি এবং এটি জেলার পশ্চিমভাগে অবস্থিত। মাদারগঞ্জ উপজেলার উত্তরে ইসলামপুর উপজেলা ও মেলান্দহ উপজেলা, দক্ষিণে সরিষাবাড়ী উপজেলা ও বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দি উপজেলা,পূর্বে মেলান্দহ উপজেলা ও জামালপুর সদর উপজেলা, পশ্চিমে বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দি উপজেলা।
ব্রিটিশ শাসনামলে ১৯০৬ সালে মাদারগঞ্জ থানা প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৮৩ সালে মাদারগঞ্জকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয়। বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাদারগঞ্জ উপজেলা জামালপুর-৩ সংসদীয় আসনের অন্তর্ভুক্ত। এ আসনটি জাতীয় সংসদে ১৪০ নং আসন হিসেবে চিহ্নিত।
মাদারগঞ্জ উপজেলার আয়তন ২২৫.৩৯ বর্গ কিলোমিটার এবং জনসংখ্যা ২০১১ সনের আদম শুমারী অনুযায়ী ২,৬৩,৬০৮ জন। পুরষ ও নারীর অনুপাত ১০০ঃ৯৮, জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ১১৭০ জন, শিক্ষার হার ৩৩.০%।[২]
১৭৭৮ সালে ইংরেজ জরিপকারী মি. রেনেল যে মানচিত্র তৈরী করে তাতে যমুনার কোন নাম ছিল না, সে মানচিত্রে ব্রক্ষপুত্র ও দাওকোবা নদীর নাম পাওয়া যায়।১৮৪৫ সালে জামালপুর মহকুমা প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর ১৮৮২ সালে মাদারগঞ্জে একটি পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন করা হয়। ফাঁড়ি স্থাপনের ২৪ বছর পর ১৯০৬ সালের ১৫ জুন পূর্ববঙ্গ আসাম গেজেটে মাদারগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়িকে পূর্নাঙ্গ থানায় রুপান্তর করা হয়। মাদারগঞ্জ সেই থেকে একটি থানার নাম।
মাদারগঞ্জের প্রশাসনিক থানা যমুনা নদীর কারণে স্থান পরিবর্তিত হয়েছে। যেখানে একসময় থানার অবস্থান ছিল তা দীর্ঘদিন যমুনার গর্ভে বিলীন থাকার পর কিছু কাল আগে সেটি জেগে উঠলেও তা এখন এক বিশাল চরের অন্তর্গত। যমুনার ভাঙ্গনের তীব্রতা টের পেয়ে সরকারি কর্তৃপক্ষ থানার সব ধরনের দাপ্তরিক কার্যক্রম সরিয়ে তৎকালীন থানা নির্বাহী কর্মকর্তার (বর্তমানে ইউএনও) কার্যালয়ের পাশে ভূমি নিবন্ধন অফিসে স্থানান্তর করা হয়। দীর্ঘদিন ভূমি অফিসের অতিরিক্ত একটি টিনশেড ঘরে থানার কার্যক্রম পরিচালিত হয়। বর্তমানে মাদারগঞ্জ থানার কার্যক্রম তার নিজস্ব ভবন থেকেই পরিচালিত হচ্ছে।
যমুনার রাক্ষুসে স্বভাবের কারণে তার গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে তার কূল ঘেঁষে গড়ে ওঠা আসল মাদারগঞ্জের অনেকাংশই। তাই প্রয়োজনের তাগিদেই মাদরগেঞ্জের একেবারে লাগোয়া এলাকা বালিজুড়ি বাজারে আস্তে আস্তে মাদারগঞ্জের ব্যবাসয়িক কর্মকাণ্ড স্থানান্তরিত হয়েছে। বর্তমানে বালিজুড়ি বাজারকে কেন্দ্র করেই ওঠা এলাকাকেই মাদারগঞ্জ হিসেবে ধরে নেওয়া হয়।
ব্রিটিশ আমলে এবং ১৯০৬ সালের ১৫ জুন এ অঞ্চলটি ময়মনসিংহ জেলার জামালপুর মহকুমার আওতাভুক্ত থানা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ২৪ এপ্রিল পাকিস্তান বাহিনী মাদারগঞ্জে প্রবেশ করে।[৩] কিন্তু সেদিনই তারা মাদারগঞ্জে কয়েক ঘণ্টা অবস্থান করে জামালপুরে ফিরে যায়। ভৌগোলিক কারণেই পাকবাহিনী মাদারগঞ্জে কোন স্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করতে পারেনি। বলা যায যুদ্ধকালীন সময়ে মাদারগঞ্জ প্রায় মুক্ত এলাকা ছিল। ১৯৮৩ সালের ২৪ মার্চ মাদারগঞ্জ থানা উপজেলায় উন্নীত হয়। ২১ ডিসেম্বর ১৯৯৯ তারিখে মাদারগঞ্জ পৌরসভা গঠিত হয়।
জামালপুর জেলা সদর থেকে সড়কপথে ৩৪ কিলোমিটার পশ্চিমে যমুনা নদীর পূর্ব তীরবর্তী এলাকা জুড়ে মাদারগঞ্জ উপজেলার অবস্থান। মাদারগঞ্জ উপজেলা ২৪°৪৭´ থেকে ২৪°৫৯´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°৪০´ থেকে ৮৯°৫০´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত।[৪] এর আয়তন ২২৫.৩৯ বর্গ কিলোমিটার। এর উত্তরে ইসলামপুর উপজেলা ও মেলান্দহ উপজেলা, দক্ষিণে সরিষাবাড়ি উপজেলা ও বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দি উপজেলা,পূর্বে মেলান্দহ উপজেলা ও জামালপুর সদর উপজেলা এবং পশ্চিমে বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দি উপজেলা অবস্থিত।
উপজেলার মাটির প্রকৃতি বেলে-দোআঁশ ও এটেল-দোআঁশ। ভূমি উর্বর ও পলিসিক্ত। প্রায় প্রতিবছর এ অঞ্চল বন্যা কবলিত হয় এবং প্রচুর রবিশস্যের ক্ষতি হয়। মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে এখানে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। শীতকালে ঘন কুয়াশা হয়। গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা ৩০° থেকে ৩৭° সেলসিয়াস থাকে। গড় বৃষ্টিপাত ৮৫৩ সে.মি.। মোট কৃষিজমির পরিমাণ ৬০০৬২ একর, আবাদি জমির পরিমাণ ৪২৮৭৭ একর।[৫]
মাদারগঞ্জ উপজেলায় বর্তমানে ১টি পৌরসভা ও ৭টি ইউনিয়ন রয়েছে। সম্পূর্ণ উপজেলার প্রশাসনিক কার্যক্রম মাদারগঞ্জ থানার আওতাধীন।[৬]
এ উপজেলায় ১০১ টি মৌজা ও ১১৯ টি গ্রাম রয়েছে।[৫]
মাদারগঞ্জ পৌরসভা ২১ ডিসেম্বর ১৯৯৯ তারিখে গঠিত হয়। পৌরসভার আয়তন ১০.৭৮৮ বর্গ কিলোমিটার, ওয়ার্ড সংখ্যা ৯টি। ১৯৯৯ সালে মাদারগঞ্জ পৌরসভা গঠিত হয় এবং ‘গ’ শ্রেণির পৌরসভা হিসেবে এর কার্যক্রম শুরু হয়। পরবর্তীতে ২০১১ সালে এটি ‘খ’ শ্রেণির পৌরসভায় উন্নীত হয়। স্থানীয় সরকার বিভাগের ২০১১ সালের ৩১ মে ৮১১ নম্বর পরিপত্র অনুযায়ী জামালপুর জেলাধীন মাদারগঞ্জ পৌরসভাকে ‘খ’ শ্রেণি থেকে ‘ক’ শ্রেণিতে পৌরসভায় উন্নীত করা হয়।[৭]
বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মেলান্দহ ও মাদারগঞ্জ উপজেলা নিয়ে জামালপুর-৩ সংসদীয় আসন গঠিত। এ আসনটি জাতীয় সংসদে ১৪০ নং আসন হিসেবে চিহ্নিত।
নির্বাচিত সাংসদগণ:
নির্বাচন | সদস্য | দল | |
---|---|---|---|
১৯৭৩ | ডা. নুরুল ইসলাম | বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ[৮] | |
১৯৭৯ | আব্দুস সালাম তালুকদার | বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল [৯] | |
১৯৮৬ | সফিকুল ইসলাম খোকা | বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ[১০] | |
১৯৮৮ | সফিকুল ইসলাম খোকা | জাতীয় পার্টি (এরশাদ)[১১] | |
১৯৯১ | মির্জা আজম | বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ[১২] | |
ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬ | মোঃ আবুল হোসেন | বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল[১৩] | |
জুন ১৯৯৬ | মির্জা আজম | বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ[১৪] | |
২০০১ | মির্জা আজম | বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ[১৫] | |
২০০৮ | মির্জা আজম | বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ[১৬] | |
২০১৪ | মির্জা আজম | বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ[১৭] | |
২০১৮ | মির্জা আজম | বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ[১৮] |
২০১১ সনের আদম শুমারী অনুযায়ী মোট জনসংখ্যা ২,৬৩,৬০৮ জন।এর মধ্যে পুরুষ ১,৩০,৩৩৯ জন ও নারী ১,৩৩,২৬৯ জন। পুরষ ও নারীর অনুপাত ৯৮ঃ১০০, জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ১১৭০ জন, শিক্ষার হার ৩৩.০%। মাদারগঞ্জ উপজেলায় প্রধানত মুসলমান ও হিন্দু এই দুই সম্প্রদায়ের লোকের বসবাস। অন্যান্য ধর্মের লোকসংখ্যা একেবারেই কম। এর মধ্যে মুসলমান জনগোষ্ঠীই সংখ্যাগরিষ্ঠ। জনসংখ্যার মধ্যে মুসলিম ২,৫৯,০৯০, হিন্দু ৪,৪৮১, বৌদ্ধ ৩, খ্রিস্টান ৮ এবং অন্যান্য ২৬ জন।[৫]
মাদারগঞ্জ উপজেলায় বসবাসকারীদের আদি পুরুষদের বেশির ভাগই বহিরাগত। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পেশার সুবাদে এসে মাদারগঞ্জের মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর উর্বরভূমির কারণে তারা এখানে স্থায়ীভাবে বসতি গড়ে তুলে। তবে প্রতি উপজেলাতেই বংশগত উপাধি নিয়ে আদিবাসিন্দার দাবিদার আছে। মাদারগঞ্জ উপজেলায় যাদের বংশগত উপাধি ‘মন্ডল’ তারা নিজেদেরকে মাদারগঞ্জের আদিবাসী বলে দাবি করে। তবে তারাও কবে কোন সময়কালে মাদারগঞ্জে এসে বসবাস শুরু করে তার কোন সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায় না।
এ উপজেলায় শেখ, খন্দকার, মির্জা, মৃধা, আকন্দ, খান প্রভৃতি বংশ-উপাধিধারী লোক বাস করে। এসব বংশের পূর্বপুরুষেরা বেশির ভাগই বাইরের দেশ থেকে কেউ ব্যবসাসূত্রে, কেউ চাকরিসূত্রে আবার কেউবা বৈবাহিকসূত্রে এ অঞ্চলে এসে স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন করে। শেখরা এককালে জাজিরাতুল আরব আর উত্তর আফ্রিকার মুসলিম অধ্যুষিত এলাকার অধিবাসী ছিলেন। খন্দকারদের আদিপুরুষ ইরাক থেকে বাংলাদেশে আসে। তবে তারা প্রথমে বসতি স্থাপন করে বর্তমান পাবনা জেলার বেড়া উপজেলার শানিলা গ্রামে। সেই খন্দকারদের এক ছেলে খন্দকার জবান আলী ধর্ম প্রচারের জন্য মাদারগঞ্জে আসেন। তখন এই এলাকার ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা তাঁকে এখানে স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপনের অনুরোধ করেন। তাঁদের অনুরোধে তিনি বাংলা ১৩০০ সালে মাদারগঞ্জের বলদভরা গ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। মির্জাদের আদিপুরুষ যারা মাদারগঞ্জে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন তাঁরা ইরান থেকে এসেছিলেন বলে জানা যায়। তাঁদের মধ্যে বয়োজৈষ্ঠদের মতে তাঁদের কেউ কেউ মঙ্গোলিয়া থেকে এসেছিলেন। তাদের ভাষ্যমতে সম্রাট বাবর যখন ভারত জয় করেন তখনই তাঁরা এদেশে এসেছিলেন। এমনকি মির্জা মোহাম্মদ আলিবর্দী খান তাদের কৃতীপুরুষ বলে দাবি করেন। তবে মাদারগঞ্জে তাঁরা কখন বসবাস শুরু করেন তা সুনির্দিষ্টভাবে অনুমান করা যায় না। একইভাবে মৃধা, আকন্দ, খানরা ঠিক কোথা থেকে মাদারগঞ্জে এসে বসতি স্থাপন করে তারা যথাযথ তথ্য পাওয়া যায় না।[১৯]
মাদারগঞ্জ উপজেলার উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হলো: বালিজুড়ি এফ.এম. উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১০), ইসলামাবাদ ওয়াছিম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়, বালিজুড়ী রওশন আরা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, জোরখালী উচ্চ বিদ্যালয়, মহিষবাথান আর.এম উচ্চ বিদ্যালয়,(১৯৪৬), শ্যামগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৭), জাঙ্গালিয়া ডি এম উচ্চ বিদ্যালয়, মাদারগঞ্জ এ.এম. পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, লালডোবা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৯৮), আদারভিটা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ইত্যাদি। অন্যান্য উচ্চ বিদ্যালয়ের মধ্যে আছে গুনারিতলা উচ্চ বিদ্যালয়, ৫ নং ইউনিয়ন জাহানারা উচ্চ বিদ্যালয়, তাহমিনা হাছান আলী আমিনুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়, মির্জা রওশন আলী উচ্চ বিদ্যালয়, পলিশা উচ্চ বিদ্যালয়, জোনাইল উচ্চ বিদ্যালয়(১৯৬৯)
, জোনাইল নয়াপাড়া ফাতেমা খানমামুদ উচ্চ বিদ্যালয়, তেঘরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, ঝাড়কাটা উচ্চ বিদ্যালয়, ঝাড়কাটা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, কয়ড়া পাটাদহ উচ্চ বিদ্যালয়, ঘুঘুমারী উচ্চ বিদ্যালয় ইত্যাদি।
মাদারগঞ্জ উপজেলায় উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- মাদারগঞ্জ এ.এইচ.জেড সরকারি কলেজ (১৯৬৮), ব্যারিষ্টার আব্দুস সালাম কলেজ, খাজা শাহসুফী ইউনুস আলী কলেজ, নুরুন্নাহার মির্জা কাশেম মহিলা কলেজ, মির্জা আজম কলেজ, হাজী কাদের সাং মাহবুব টেক: কলেজ, সেকান্দর আলী চৌধুরী কৃষি ডিপ্লোমা কলেজ, মোজাম্মেল মমতাজ মহিলা কলেজ কারিগরী কলেজ, মাহমুদা বেলাল বিএম কারিগরী কলেজ ইত্যাদি।
মাদ্রাসা শিক্ষার দিকথেকে উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- বালিজুড়ী এস.এম ফাজিল সিনিয়র (ডিগ্রি) মাদ্রাসা, মাদারগঞ্জ আব্দুল আলী মির্জা কাসেম ফাজিল (ডিগ্রী) মাদরাসা, জোড়খালী দাখিল মাদরাসা, মিলন বাজার ফাজিল ডিগ্রি মাদরাসা, জোনাইল নয়াপাড়া কে.কে. মাহমুদ দাখিল মাদরাসা, জোনাইল রাইসিয়া বালিকা দাখিল মাদরাসা। যেগুলো বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড থেকে পরিচালিন। আর অন্যান্য শাখার মাদরাসাগুলো হলো- জোনাইল বাজার হাফেজিয়া কওমি মাদ্রাসা ও এতিমখানা, দারুল কুরআন ইন্টারন্যাশনাল হেফজ মাদ্রাসা, দারুল উলুম বালক বালিকা মাদ্রাসা ইত্যাদি।
এছাড়াও মাদারগঞ্জে উচ্চ শিক্ষার জন্য স্থাপিত হয়েছে শেখ রাসেল টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট। উক্ত প্রতিষ্ঠানটি গুনারীতলা ইউনিয়নভুক্ত ৪নং ওয়ার্ডের জোরখালী গ্রামের উত্তর-পশ্চিম পার্শে অবস্থিত।
২০১১ সালের পরিসংখ্যান অনুসারে মাদারগঞ্জ উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৬টি, রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় ৯৪টি, কিন্ডার গার্টেন ৩৩টি, এনজিও স্কুল ২২৬টি; সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ১টি, বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ৪৮টি, স্কুল এন্ড কলেজ ১টি; সরকারি কলেজ ১টি, বেসরকারি কলেজ ৭টি; মাদ্রাসা ২৭টি, কওমি মাদ্রাসা ২টি, এবতেদায়ি মাদ্রাসা ৭টি; এগ্রিকালচারাল ও ভেটেনারি কলেজ ১টি।[২]
উপজেলায় ৩১ শয্যা বিশিষ্ট একটি সরকারি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স (বর্তমানে তা ৫০ শয্যা বিশিষ্ট), ৭টি উপ-স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, ৩২টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। ২০১১ সালের পরিসংখ্যান অনুসারে মাদারগঞ্জ উপজেলায় বেসরকারি ৫টি ডায়াগনোস্টিক সেন্টার রয়েছে।
মাদারগঞ্জ মূলত কৃষিপ্রধান অঞ্চল। সব ধরনের ফসলই এখানে উৎপন্ন হয়। এখানে ধান, আলু, পাট, তামাক, বেগুন, মরিচ, সরিষা, ভুট্টা, গম, মিষ্টি আলু, মসুর, ছোলা, বাঁধাকপি, ফুলকপি, রসুন, সূর্যমুখী, মাষকলাই, যব, ঢেড়শ, হলুদ, আদা, পান এবং বিভিন্ন শাক-সবজি উৎপন্ন হয়।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি হলো- তিল, তিসি, চীনাবাদাম, কাউন।[২০]
প্রধান ফল-ফলাদি আম, নারিকেল, কাঁঠাল, কলা, ফুটি, তরমুজ।
প্রধান রপ্তানিদ্রব্য হলো- ধান, পাট, সরিষা, ছোলা, মাষকলাই, আদা, শাকসবজি, মিষ্টি আলু।[২০]
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস: কৃষি ৭১.৬৪%, অকৃষি শ্রমিক ২.১৩%, শিল্প ০.৪%, ব্যবসা ১১.৪%, পরিবহন ও যোগাযোগ ১.৪৮%, চাকরি ৩.৯৮%, নির্মাণ ১.০২%, ধর্মীয় সেবা ০.১৯%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৩৯% এবং অন্যান্য ৭.৩৭%।[২০]
শিল্প ও কলকারখানা চালকল, তেলকল, চিড়াকল, চানাচুর ফ্যাক্টরি, বেকারি, আইসক্রিম ফ্যাক্টরি, ছাপাখানা।[২০]
কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, তাঁতশিল্প, বাঁশশিল্প।[২০]
মাদারগঞ্জ উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা সড়ক পথেই হয়ে থাকে। বর্ষাকালে সীমিতভাবে নৌপথে চলাচল করে। মাদারগঞ্জ উপজেলায় মোট সড়ক পথের দৈর্ঘ্য ৪৯১.৩২ কিলোমিটার; এর মধ্যে পাকা রাস্তা ১৫১.৬৮ কিলোমিটার এবং কাঁচা রাস্তা ৩৩৯.৬৪ কিলোমিটার।[২১]
মাদারগঞ্জ উপজেলায় কোন রেলপথ না থাকায় সড়ক পথে জামালপুর সদর বা মেলান্দহ রেলস্টেশনে এসে সেখান থেকে রেলপথে ঢাকা যাতায়াত করা যায়। তাছাড়া সড়ক পথে বাস যোগাযোগ ব্যবস্থাও আছে। সড়ক পথে বিআরটিসি, রাজিব, ক্রাউন ডিলাক্স বাস যোগে সরাসরি ঢাকা যাতায়াত করা যায়। উপজেলায় অভ্যন্তরে সিএনজি, রিক্সা, অটোরিক্সা, নৌকা এবং চরাঞ্চলে ঘোড়ার গাড়ি চলাচলের মাধ্যম।
যমুনা নদীই মাদারগঞ্জ উপজেলার প্রধান নদী। এছাড়া চতলা ও ঝাড়কাটা নামে দুটি নদী আছে। এ দুটি নদী যমুনার শাখা নদী। শাখা নদী দুটি আবার স্থানভেদে ভিন্ন নামে প্রবাহিত হয়েছে। মাদারগঞ্জ উপজেলার ঝাড় কাটা গ্রামের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময়ে নদীটার নাম হয়ে যায় ঝাড়কাটা নদী।
এ উপজেলায় প্রচুর খাল-বিল আছে। খরকা বিল, ভুরভুরে, পানাগাড়ি, কইয়ের বিল ইত্যাদি এখানকার নামকরা বিল। জনসংখ্যার ক্রমবর্ধমান চাপে অনেক বিলই বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বাকিগুলোও বিলুপ্ত হওয়ার পথে।