মানচিত্রাবলী বা ভূচিত্রাবলী বা মানচিত্র গ্রন্থ বলতে সমগ্র পৃথিবীর বা পৃথিবীর কোনও অঞ্চলের একাধিক মানচিত্রের বাঁধাইকৃত সঙ্কলনকে বোঝায়।
আকার ও ভেতরে পরিবেশিত তথ্যের পরিমাণ ও প্রকৃতি অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের মানচিত্রাবলী প্রকাশিত হতে পারে। কিছু ভ্রমণকারী ছোট আকারের মানচিত্রাবলী বহন করেন, যাতে সড়ক ও দিকনির্দেশনা সংক্রান্ত তথ্য দেওয়া থাকে। ভ্রমণকারীর মানচিত্রাবলী সাধারণত কুণ্ডলিত তারে বাঁধাই করা থাকে, যাতে একে সহজে সমতল করে খোলা রাখা যায়। আবার কিছু কিছু মানচিত্রাবলী অত্যন্ত বৃহৎ ও অনুপুঙ্খ খুঁটিনাটি বিবরণে সমৃদ্ধ, যেগুলি খুলে পড়তে বিশেষ অবলম্বনের প্রয়োজন হতে পারে। একটি আকরগ্রন্থ (রেফারেন্স) হিসেবে ব্যবহৃত সাধারণ মানচিত্রাবলীতে বিভিন্ন স্থানের ভৌগোলিক অবস্থানের উপরে জোর দেওয়া হয়। দেশের ও দেশের প্রশাসনিক উপবিভাজনগুলির রাজনৈতিক সীমানার পাশাপাশি ভূতাত্ত্বিক, ভূরাজনৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয় ও অর্থনৈতিক পরিসংখ্যানসমৃদ্ধ মানচিত্রও অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে। বিশেষ বিষয়ের মানচিত্রাবলীতে একটি মাত্র বিষয়ের উপর জোর দেওয়া হয়, যেমন কৃষি বা জলবায়ু। সাধারণ মানচিত্রাবলীগুলিতে স্থানের ছবি, সারণি বা ছকে পরিবেশিত উপাত্ত, বিভিন্ন অঞ্চল সম্পর্কে বাস্তব তথ্য, এবং গ্রন্থের শেষে স্থাননামগুলির একটি নির্ঘণ্ট থাকে যাতে স্থাননামের পাশে পৃষ্ঠাসংখ্যা, এবং মানচিত্রের উল্লম্ব ও অনুভূমিক অক্ষ বরারবর স্থানটির অবস্থান সংখ্যা ও বর্ণের মাধ্যমে নির্দেশ করা থাকে। কখনও কখনও দ্রাঘিমা ও অক্ষাংশ দ্বারাও নির্ঘণ্টের স্থাননামের মানচিত্রে অবস্থান নির্দেশ করা হতে পারে। আধুনিক কম্পিউটার ও ইন্টারনেটের যুগে এসে বাঁধানো বই ছাড়াও কম্পিউটারের মনিটরের পর্দায় প্রদর্শনযোগ্য মানচিত্র সঙ্কলন প্রকাশ করা হয়ে থাকে।
১৬শ শতকে গেরার্দুস মের্কাতর (মার্কেটর) নামক একজন ব্যক্তি একটি মানচিত্র সঙ্কলন গ্রন্থনা করেন। তাঁর এই মানচিত্রাবলী গ্রন্থের ভেতরের মলাটে একটি অঙ্কিত ছবি ছিল, যেখানে দেখা যায় গ্রিক পুরাণের অ্যাটলাস নামের এক দৈত্য পৃথিবীকে কাঁধে নিয়ে বহন করছে। এরপরে অন্যান্য প্রকাশিত মানচিত্রাবলী গ্রন্থগুলিতেও অ্যাটলাসের ছবি রাখা শুরু হয়। তখন থেকে পাশ্চাত্যে, বিশেষ করে ইংরেজি ভাষায়, মানচিত্রাবলী বা মানচিত্র সঙ্কলনকে "অ্যাটলাস" বা এই জাতীয় নামে ডাকা হয়। ১৫৭০ খ্রিস্টাব্দে আব্রাহাম অর্টেলিয়াসের সঙ্কলিত থিয়েটার অফ দ্য ওয়ার্ল্ড-কে ইতিহাসের সর্বপ্রথম আধুনিক মানচিত্রাবলী হিসেবে গণ্য করা হয়।
পৃথিবী ছাড়া সৌরজগতের অন্যান্য গ্রহ ও উপগ্রহের মানচিত্রাবলীও প্রকাশ করা হয়েছে।[১]