মানব চোখ | |
---|---|
বিস্তারিত | |
তন্ত্র | ভিজ্যুয়াল সিস্টেম |
শনাক্তকারী | |
লাতিন | Oculi Hominum |
গ্রিক | ἀνθρώπινος ὀφθαλμός |
মে-এসএইচ | D005123 |
টিএ৯৮ | A01.1.00.007 A15.2.00.001 |
টিএ২ | 113, 6734 |
এফএমএ | FMA:54448 |
শারীরস্থান পরিভাষা |
মানব চোখ একটি ইন্দ্রিয় অঙ্গ, সংবেদনশীল স্নায়ুতন্ত্রের অংশ, যা দৃশ্যমান আলোতে প্রতিক্রিয়া দেখায় এবং আমাদেরকে জিনিস দেখা, আমাদের ভারসাম্য বজায় রাখা এবং সার্কাডীয় ছন্দ বজায় রাখা সহ বিভিন্ন উদ্দেশ্যে চাক্ষুষ তথ্য ব্যবহার করতে দেয়।
চোখকে একটি জীবন্ত অপটিক্যাল ডিভাইস হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। এটি প্রায় গোলাকার আকৃতির, এর বাইরের স্তরগুলি, যেমন চোখের সবচেয়ে বাইরের, সাদা অংশ (স্ক্লেরা) এবং এর ভিতরের স্তরগুলি (পিগমেন্টেড কোরয়েড) চোখের অপটিক অক্ষেবিপথগামী আলো প্রবেশ করতে দেয় না বা নিয়ন্ত্রন করে। ক্রমানুসারে, অপটিক অক্ষ বরাবর, অপটিক্যাল উপাদানগুলির মধ্যে প্রথমে লেন্স (কর্ণিয়া—চোখের স্পষ্ট অংশ) নিয়ে গঠিত যা বাইরের জগত থেকে আলোর ফোকাস করার বেশিরভাগ কাজ সম্পন্ন করে; তারপর একটি ডায়াফ্রামে একটি অ্যাপারচার (পিউপিল) (আইরিস-চোখের রঙিন অংশ যা চোখের অভ্যন্তরে প্রবেশ করা আলোর পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে; তারপরে আরেকটি লেন্স (ক্রিস্টালাইন লেন্স) যা চিত্রগুলিতে আলোর অবশিষ্ট ফোকাসিং সম্পন্ন করে; তারপর চোখের একটি আলো-সংবেদনশীল অংশ (রেটিনা) যেখানে ছবি পড়ে এবং প্রক্রিয়া করে। রেটিনা অপটিক স্নায়ুর মাধ্যমে মস্তিষ্কের সাথে যুক্ত। চোখের অবশিষ্ট উপাদানগুলি একে প্রয়োজনীয় আকারে রাখে, এটিকে পুষ্ট করে এবং রক্ষণাবেক্ষণ করে এবং রক্ষা করে।
রেটিনার তিন ধরনের কোষ আলোক শক্তিকে স্নায়ুতন্ত্রের দ্বারা ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক শক্তিতে রূপান্তর করে: রডগুলি কম তীব্রতার আলোতে সাড়া দেয় এবং কম-রেজোলিউশন, সাদা-কালো চিত্রের উপলব্ধিতে অবদান রাখে; শঙ্কু উচ্চ তীব্রতার আলোতে সাড়া দেয় এবং উচ্চ-রেজোলিউশন, রঙিন চিত্রের উপলব্ধিতে অবদান রাখে; এবং সম্প্রতি আবিষ্কৃত আলোক সংবেদনশীল গ্যাংলিয়ন কোষগুলি আলোর তীব্রতার সম্পূর্ণ পরিসরে সাড়া দেয় এবং রেটিনাতে পৌঁছানো আলোর পরিমাণ সামঞ্জস্য করতে, মেলাটোনিন হরমোন নিয়ন্ত্রণ ও দমন করতে এবং সার্কাডীয় ছন্দে প্রবেশ করতে অবদান রাখে।[১]
১) স্ক্লেরা:অক্ষিগোলকের পশ্চাদ্ভাগে অবস্থিত বহিরাবরক। এটি অক্ষিগোলকের পিছনে অবস্থিত অন্যান্য স্তরকে রক্ষা করে।
২) কোরোয়েড:অক্ষিগোলকের পশ্চাদ্ভাগে অবস্থিত মধ্য আবরক। এই আবরক রেটিনাকে রক্ষা করে এবং বিচ্ছুরিত আলোকের প্রতিফলন রোধ করে।
৩) রেটিনা:অক্ষিগোলকের পশ্চাদ্ভাগে অবস্থিত অন্তঃ আবরক। রেটিনা বস্তুর প্রতিবিম্ব গঠনে সাহায্য করে।
৪) করনিয়া:অক্ষিগোলকের বহিঃআবরকের সম্মুখভাগে অবস্থিত। করনিয়া প্রতিসারক মাধ্যম হিসেবে কাজ করে এছাড়া আলোক রশ্মিকে কেন্দ্রীভূত করে।
৫) আইরিশ:অক্ষিগোলকের সম্মুখভাগে লেন্সের ওপরে অবস্থিত। তারারন্ধ্র বা পিউপিলকে ছোট ও বড় হতে সাহায্য করে।
৬) পিউপিল:আইরিশের মাঝখানে অবস্থিত একটি ক্ষুদ্র ছিদ্র বিশেষ। এর মাধ্যমে চোখে আলোক রশ্মি প্রবেশ করে।
৭) লেন্স:আইরিশের পশ্চাদভাগে অবস্থিত, দ্বি-উত্তলাকার। লেন্স আলোর প্রতিসরণ ঘটায় এবং আলোক রশ্মিকে রেটিনার ওপর কেন্দ্রীভূত করে।
৮) কনজাংটিভা:করনিয়ার বাইরের আচ্ছাদন। করনিয়াকে রক্ষা করা এর কাজ।
৯) অ্যাকুয়াস হিউমার:করনিয়া এবং লেন্স-এর মধ্যবর্তী প্রকোষ্ঠে অবস্থিত। এই অর্ধতরল বিবর্ধক মাধ্যম হিসেবে কাজ করে।
১০) ভিট্রিয়াস হিউমার:লেন্স এবং রেটিনার অন্তবর্তী প্রকোষ্ঠে অবস্থিত। এই অর্ধতরল প্রতিসারক মাধ্যম হিসেবে কাজ করে।
১১) ব্লাইন্ড স্পট:রেটিনার এবং অপটিক স্নায়ুর মিলনস্থলে অবস্থিত। এখানে কোন প্রতিবিম্ব গঠিত হলে তা দেখা যায় না
১২) রড কোষ:রেটিনায় অবস্থিত। মৃদু আলো শোষণ করা এর কাজ।
১৩) কোন কোষ:রেটিনায় অবস্থিত। উজ্জ্বল আলো এবং বর্ণ শোষণ করা এর কাজ।
১৪) অশ্রু গ্রন্থি:অক্ষিকোটরের উপরিতলে, যেখানে উর্ধ্ব-পল্লব যুক্ত থাকে সেখানে অবস্থিত। অশ্রু ক্ষরণ করে চোখকে ভিজে রাখা এবং জীবাণুমুক্ত রাখা এর প্রধান কাজ।[২]
আমাদের চক্ষু বা চোখকে ছবি তোলার ক্যামেরার সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। তবে চোখের কাজ ক্যামেরার তুলনায় অনেক জটিল। আমরা যখন কোন বস্তুর দিকে তাকাই, সেইসময় বস্তু থেকে আলোক-রশ্মি প্রথমে আমাদের করনিয়াতে আসে। তারপর আলোক-রশ্মি অ্যাকুয়াস হিউমার এবং পিউপিল অতিক্রম করে লেন্সের গায়ে পড়ে। লেন্সে আলোক-রশ্মি প্রতিসৃত হয় তারপর ভিট্রিয়াস হিউমার পেরিয়ে রেটিনাতে অভিসারী রশ্মি হিসেবে পতিত হয়। এইভাবে বস্তুর উল্টো প্রতিবিম্ব রেটিনাতে সৃষ্টি হয়। এই প্রতিবিম্ব সৃষ্টির অনুভূতি লক্ষ লক্ষ রড ও কোন্ কোষ গ্রহণ করে অপটিক স্নায়ুর মাধ্যমে মস্তিষ্কে (Brain) প্রেরণ করে। অপটিক স্নায়ু কেটে ফেললে কিছুই দেখা যায় না। এ থেকেই প্রমাণিত হয়, কোন কিছু দেখতে মস্তিষ্ক তথা অপটিক স্নায়ুর প্রভাব কতখানি।মস্তিষ্কে আলোর অনুভূতি বা রেটিনাতে সৃষ্ট প্রতিবিম্বের অনুভূতি পৌঁছে গেলেই বস্তুটির আকার, প্রকৃতি, দূরত্ব, রঙ ইত্যাদি সম্পর্কে আমরা জানতে পারি। মস্তিস্কের জটিল কার্যকারিতার ফলেই উল্টো প্রতিবিম্ব তৈরি হওয়া সত্ত্বেও আমরা বস্তুকে সোজা দেখি।[৩]
যে বিশেষ প্রক্রিয়ায় স্থানত্যাগ না করে লেন্সের ফোকাস দৈর্ঘ্যের কিছুটা পরিবর্তন ঘটিয়ে বিভিন্ন দূরত্বে অবস্থিত বস্তুসমূহকে মোটামুটি স্পষ্টভাবে আমরা দেখতে পাই তাকে উপযোজন (Accommodation) বলে। চোখের লেন্সের বাইরের অংশ স্থিতিস্থাপক হওয়ার জন্য এবং বিভিন্ন পেশী ও সাসপেনসারী লিগামেন্ট-এর কার্যকারিতায় উপযোজন সম্ভব হয়।
একনেত্র দৃষ্টি: গরু, খরগোশ, ব্যাঙ ইত্যাদির প্রাণীর চোখ মাথার দুপাশে থাকে বলে এরা একই সঙ্গে দুটি চোখ দিয়ে একই বস্তু দেখতে পায় না। এরা দুটি চোখে দুধরনের বস্তু দেখে। এই ধরনের দেখাকে একনেত্র দৃষ্টি (Monocular vision) বলে। দ্বিনেত্র দৃষ্টি: মানুষ, বানর ইত্যাদি স্তন্যপায়ী প্রাণীর চোখ দুটি মাথার সামনে খুব কাছাকাছি অবস্থিত। এক্ষেত্রে দুটি চোখে দেখার সময় একই বস্তুর দুটি প্রতিবিম্ব দু'চোখে তৈরি হয়। প্রতিবিম্ব দুটির মধ্যে খুব কম পার্থক্য থাকে। দুটি চোখ দিয়ে একই বস্তুর দুটি প্রতিবিম্বের অনুভূতি গুরুমস্তিষ্কের দৃষ্টিকেন্দ্রে গিয়ে তা বিশ্লেষিত হয় এবং একই বস্তুর একটি প্রতিবিম্ব দেখা যায়। এই প্রকার দেখাকে দ্বিনেত্র দৃষ্টি (Binocular vision) বলে। দ্বিনেত্র দৃষ্টির ফলে লক্ষ্যবস্তুর দূরত্ব সম্পর্কে সঠিক ধারণা করা সম্ভব হয়।