বিভিন্ন দূর্যোগের সময় দূর্যোগকবলিত মানুষের জান-মালকে নিরাপদ স্থানে স্থানন্তর ও তাদের প্রয়োজনীয় রসদ সরবরাহকে মানবহিতৈষী সাহায্য বালে। এটি একধরনের অস্থায়ী সাহায্য ততক্ষণ পর্যন্ত, যতক্ষণ না সরকার বা অন্য কোন প্রতিষ্ঠান সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসে। দূর্যোগকবলিত এ সকল মানুষের মধ্যে আছে গৃহহীন, শরণার্থী, যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ ও দুর্যোগ কবলিত। ইউরোপীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নেটয়ার্ক মানবহিতৈষী কার্যাবলিতে পেশাদারিত্বের উপস্থিতির উপর এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে, তাতে বলা হয় " মানুষ ও নৈতিকতার মধ্যে মূল্যবোধের মেলবন্ধনের প্রকাশই মানবহিতৈষী সাহায্য" [১] মানবহিতৈষী সাহায্যের প্রথম উদ্দেশ্য মানুষের জীবন বাঁচানো, ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনা ও মানবিক মর্যাদার রক্ষা। প্রাকৃতিক ও মানব সৃষ্ট বিভিন্ন দুর্যোগে ও মানবিক সংকটে মানুষকে প্রয়োজনীয় দ্রবাদি প্রদান ও তাদের জান-মালকে নিরাপদ স্থানে স্থানন্তর করাই মানবহিতৈষী সাহায্য। যা মানবহিতৈষী উদ্দেশ্যেই করা হয়। অন্যদিকে উন্নয়ন সহযোগিতা বলতে বুঝায় বিভিন্ন আর্থসামাজিক নিয়ামকের অনুসন্ধান যেগুলো ঐ সংকট বা জরুরি অবস্থার সৃষ্টি করেছে। তাই বলা যায় মানবহিতৈষী সাহায্য ও উন্নয়ন সহযোগিতা দুটি আলাদা জিনিস।
দুর্যোগ কবলিতদের স্বল্প সময়ের জন্য সাহায্য করাই মানবহিতৈষী সহায়তার মূল লক্ষ। এটি চলতে থাকে যতক্ষন না দীর্ঘমেয়াদী সাহায্য সরকার বা অন্য কোন প্রতিষ্ঠান থেকে না আসে। মানবহিতৈষী সাহায্য মানুষ ও নৈতিকতার মধ্যে মূল্যবোধের মেল্বন্ধন করে।[২] মানবহিতৈষী সাহায্য স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক উভয় দিক থেকেই আসতে পারে। যেমন ফিলিপাইনে বিভিন্ন ধরনের অঙ্গসংগঠন ত্রাণ কার্য পরিচালনা করেছিল কিন্তু প্রথম সহায়তা করেছিল বিভিন্ন এনজিও ও তারপর সরকার। বিভিন্ন জরুরি অবস্থায় আন্তর্জাতিক সেবা পেতে জাতিসংঘের অফিস ফর দ্যা কোওর্ডিনেশন অব হিউমানিটারিয়ান অ্যাফের্স (Office for the Coordination of Humanitarian Affairs - OCHA )[৩] সহায়তা করে। কোন দুর্যোগের সংবাদে OCHA জাতিসংঘের ফোরাম ইন্টার এজেন্সি স্টান্ডিং কমিটি (Inter-Agency Standing Committee) তে জানায়, যার সদস্যগণ জরুরি সেবা দানে তৎপর। জাতিসংঘের চারটি অঙ্গসংস্থান প্রাথমিকভাবে মানবহিতৈষী সাহায্য সহযোগিতা করে থাকে, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি, জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার, ইউনিসেফ ও বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি।[৪]
'বৈদেশিক উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান' (The Overseas Development Institute)- লন্ডন ভিত্তিক একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ২০০৯ সালের এপ্রিল মাসে তাদের প্রতিবেদন প্রোভাইডিং এইড ইন ইনসেকিউর এনভাইরোন্মেন্টসঃ ২০০৯ আপডেট ( 'Providing aid in insecure environments:2009 Update ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১১ তারিখে ) নামে প্রকাশ করে। যেখানে বলা হয় যে মানবহিতৈষণার ইতিহাসে সবথেকে মরণঘাতি বছর ছিল ২০০৮, ঐ বছরে ১২২ জন মানবহিতৈষী কর্মী নিহত হন, ২৬০ জন আক্রমণের শিকার হন। অনিরাপদ দেশগুলোর মধ্যে সোমালিয়া ও আফগানিস্তান সব থেকে কম নিরাপদ দেশ। ২০১২ সালের প্রতিবেদনে-- দেখা যায় এ ধরনের ঘটনা বেশি ঘটে আফগানিস্তান, দক্ষিণ সুদান, সিরিয়া, পাকিস্তান ও সোমালিয়ায়।[৫]
১৯ শতকের শেষকে সমন্বিত আন্তর্জাতিক মানবহিতৈষী সাহায্যের শুরু বলে চিহ্নিত করা যায়। যার প্রথম উপস্থিতি লক্ষ করা যায়া ১৮৭৬-১৮৭৯ সালের চীনের উত্তরাংশের দুর্ভিক্ষে। ১৮৭৫ সালে চীনের উত্তরে ব্যাপক খরা দেখা দিলে পরের কয়েক বছর ফসল ফলানো সম্ভব হয়নি। ফলে সেখানে ১০ মিলিওনের মত মানুষ মারা গিয়ে থাকতে পারে।[৬]
১৮৭৬ সালের গ্রীষ্মে শানতুং-এ সংঘটিত দুর্ভিক্ষে ব্রিটিশ ধর্মপ্রচারক টিমথি রিচার্ড আন্তর্জাতিক অঙ্গনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন ও আক্রান্তদের সাহায্য করার জন্য সাংহাই এর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিকট আর্জি জানান। কূটনীতিক, ব্যবসায়ী প্রটেস্ট্যান্ট ও রোমান ক্যাথলিক ধর্ম প্রচারকদের নিয়ে গঠিত হয় শানতুং দুর্ভিক্ষের ত্রাণ কমিটি।[৭] এ দুর্ভিক্ষ মোকাবেলায় আন্তর্জাতিকবে অনুদান চাওয়া হয়। এতসব উদ্যোগে প্রায় ২০৪০০০ রূপার টেইল (Taels) সংগ্রহ হয় যা ২০১২ সালে রূপার মূল্যে ৭-১০ মিলিয়ন ইউ এস ডলারের সমান।[৮]
এরকমই আরেকটি উদ্যোগ নেওয়া হয় ১৮৭৬-৭৮ সালের ভারতের বড় দুর্ভিক্ষে, তারপরও কর্তৃপক্ষ তাদের লেসে ফেয়ার নীতির জন্য সমালোচিত হয়। দুর্ভিক্ষে ত্রাণ পদক্ষেপ নেওয়া হয় শেষের দিকে। যুক্তরাজ্যে একটি দুর্ভিক্ষ ত্রাণ তহবিল (A Famine Relief Fund) গঠন করা হয়, যেখানে প্রথম কয়েকমাসে £৪২৬০০০(ব্রিটিশ পাউন্ড) সংগৃহীত হয়।
প্রথম দিকের পদক্ষেপগুলো ছিল ব্যক্তিগত যেগুলো আর্থিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতায় সীমাবদ্ধ ছিল। এটি শুধু আশির দশকের কথা, যখন দুর্ভিক্ষের কথা বিশ্ব ব্যাপী প্রচার ও তার সাথে বিভিন্ন তারকাদের সংশ্লিষ্টতা সরকারের সাড়া দানকে বেগবান করে। ১৯৮৩-১৯৮৫ সালে ইথিওপিয়ায় দুর্ভিক্ষে এক মিলিয়নের ও বেশি মানুষ মারা যায়। বিবিসি সাংবাদ কর্মী মাইকেল বুরেক তার প্রতিবেদন তৈরী করেন। সেখানে তিনি দুর্ভিক্ষকে বর্ণনা করেন- বিংশ শতাব্দীর ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ হিসাবে। যার ভয়াবহতা ছিল পৃথিবীতেই নরক জ্বালার মত।[৯]
তহবিল সংগ্রহে বব গেলডফ একটি সঙ্গীতানুষ্ঠান করেন। এতে তিনি লক্ষ লক্ষ পশ্চিমা মানুষের দৃষ্টি আকর্ষনে সক্ষম হন। তিনি পশ্চিমাদেশগুলোর সরকারকে ও ইথিওপিয়ায় ত্রাণকার্যে অংশগ্রহণের জন্য অনুরোধ করেন। এই ত্রাণের কিছু অংশ ইরিত্রিয়ার দুর্ভিক্ষ পীড়িত অঞ্চলেও প্রেরণ করা হয়।[১০]
২০১৬ সালে মে মাসের ২৩ ও ২৪ তারিখে তুর্কির ইস্তাম্বুলে মানবহিতৈষী সাহায্য নিয়ে বিশ্ব সম্মেলন হয়। জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনের উদ্যোগে বিভিন্ন দেশের সরকার, নাগরিক সমাজ, বেসরকারী প্রতিষ্ঠান ও মানবহিতৈষী সাহায্য সংক্রান্ত বিভিন্ন গোষ্ঠীর উপস্থিতিতে বিশ্ব মানবহিতৈষী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। নিজেদের মধ্যে সংঘাত সংঘর্ষকে প্রতিরোধ ও বন্ধ করা, সংকট নিরসনে কাজ করা ও আর্থিক সাহায্য সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে সেখানে আলাপ আলোচনা হয়।
সরকারি, বেসরকারি, ব্যক্তিগত ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অনুদানে তহবিল গঠিত হয়। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে যেমন আছে সেন্ট্রাল ইমারজেন্সি রেসপন্স ফান্ড (Central Emergency Response Fund - CERF)। তহবিল সংগ্রহ ও মানবহিতৈষী সাহায্য প্রদানের বিষয়গুলো আন্তর্জাতিক অঙ্গণে দ্রুত প্রসারের কারণে, আগেরতুলনায় দ্রুত অনেক বেশি সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। যা সংকটাপন্ন লোকদের সংকট নিরসনে কার্যকরীভাবে ব্যবহার করা যাচ্ছে। জাতিসংঘের OCHA সাধারণ পরিষদের ৪৬/১৮২ প্রস্তাব অনুযায়ী মানবহিতৈষী সাহায্য সহায়তা ও সাড়াদানের সমন্বয় করে থাকে।
খাদ্য, আশ্রয়, শিক্ষা, চিকিৎসা ও নিরাপত্তাসহ মানবহিতৈষী সাহায্য অনেক প্রকার হতে পারে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে নগদ অর্থ না দিয়ে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় জিনিস দিয়ে সহায়তা করা হয়। আর মানবহিতৈষী সাহায্যের মাত্র ৬% দেওয়া হয় নগদ টাকায়।[১১] দেখা গেছে, এভাবে নগদ অর্থ দেওয়াই ভাল, কেননা সেক্ষেত্রে ভুক্তভোগী মিতব্যয়ীতার সাথে স্থানীয় বাজার থেকে নিজের পছন্দ মত প্রয়োজন মেটাতে পারে।[১১]
সংঘাত পরবর্তী পরিবেশে বিপুল পরিমানে সহায়তা প্রদানের পরেও কিছু কিছু দেশে সংঘাত থামেনি। [১২] তাই বিগত বছরগুলোতে সংঘাতপূর্ণ দেশে মানবহিতৈষী সাহায্যের কার্যকারিতা বিশেষ করে খাদ্য সহায়তা প্রদান সমালোচিত হয়েছে। সে সব দেশে মানবহিতৈষী সহায়তা প্রদান শুধু নিষ্ফলই হয়নি কোন কোন ক্ষেত্রে তা সংঘাতকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।[১৩] 'সাহায্য' চুরি এর একটি প্রধান কারণ। চুরির ক্ষেত্রে কোথাও কোথাও অস্ত্রও ব্যবহার করা হয়েছে। এতকিছুর পরও 'সাহায্য' যদি কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তির নিকট পৌঁছায়, এটা নিশ্চিত করা সম্ভব নয় যে তা কোন জঙ্গির হাতে পৌঁছায়নি। কেননা স্থানীয় জঙ্গিরাও হয়ত অপুষ্টির স্বীকার, তারা হয়ত কোন ভাবে ত্রাণ পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হয়েছে।[১৩] সম্প্রতি সংঘাত ও খাদ্য সহায়তার সম্পর্ক বিশ্লেষণ করে আরও দেখা যায় যে যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য সহায়তা সেসব দেশের গৃহ যুদ্ধকে গড়পরতায় আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। খাদ্য সহায়তা হিসাবে যুক্তরাষ্ট্র যখন গমের পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছে, দেশগুলোতে গৃহ যুদ্ধ ও প্রলম্বিত হয়েছে ফলে সেসব দেশে জাতিগত বিভেদ আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে। [১৩] যাহোক যুদ্ধ পরবর্তী অবস্থায় সাহায্য প্রদান ও তৎপরবর্তী যুদ্ধ নিয়ে আমরা অনেক গবেষণা করতে পারি, কিন্তু উপর্যুক্ত ঘটনাগুলোকে ভাষায় প্রকাশ করা একটু কঠিনই হবে বৈকি। তারপরও ইরাকে দেখা গেছে যে সাধারণ জনগণকে 'অল্প পরিমাণে' সাহায্য দিয়ে তাদের মাঝে উৎসাহ উদ্দীপনার সৃষ্টি করে সরকারকে কৌশলে সহযোগিতা করা যায়। [১২] অনুরূপভাবে অন্য এক গবেষণায় দেখা গেছে যে সাহায্য প্রদান সংঘাত কমায়, কেননা বর্ধিত সাহায্য সরকারের বাজেটের সীমাবদ্ধতা দূর করে, ফলে সরকার সামরিক ব্যয় বাড়িয়ে, সংঘর্ষে জড়িত ব্যক্তিদের নিবৃত্ত করতে পারে।[১৪] তাই সংঘাতের ক্ষেত্রে মানবহিতৈষী সাহায্য প্রদান, যাদেরকে দেওয়া হচ্ছে তাদের ধরন-ধারণের উপরই বেশি নির্ভর করে। অন্যান্য জিনিসের উপরও নির্ভর করে যেমন সে দেশের আর্থ-সামজিক, সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক, ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক অবস্থা।
সাড়া বিশ্বেই সহায়তা কর্মী আছেন। অনেক সময় তারা মানবহিতৈষী সাহায্যের উপর উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করেন। সেভ দ্যা চিলড্রেন ( Same The Children), অক্সফাম ( Oxfam) ও রেড আর (RedR) এরমত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের নিয়োগ দেয়।
মানবহিতৈষী ক্ষেত্রে কাজ করে এক্টিভ লার্নিং নেটওয়ার্ক ফর অ্যাকাউন্টেবিলিটি এন্ড পারফর্মেন্স ( Active Learning Network for Accountability and Performance - ALNAP), ২০০৮ সালে বিশ্বব্যাপী মানবহিতৈষী সাহায্য কর্মী গণনা করেছে ২১০,৮০০ জন। কর্মীদের মধ্যে মোটামুটি ভাবে ৫০% বিভিন্ন এনজিওর, ২৫% রেড ক্রস/রেড ক্রিসেন্ট মুভমেন্ট ( Red Cross/Red Crescent Movement) এর অবশিষ্ট ২৫% জাতিসংঘের।[১৫] গত ১০ বছর ধরে দেখাযাচ্ছে প্রতি বছর ৬% হারে মাঠ কর্মী বৃদ্ধি হচ্ছে।
মানবহিতৈষী সাহায্য কর্মীরা অনেক কঠিন কঠিন অবস্থার সম্মুখীন হন, যা হয়ত তাদের বাস্তব জীবনের সাধারণ জীবনধারায় কখনও সম্ভব নয়, তারপরও তাদেরকে স্বাভাবিক, নমনীয় ও দায়িত্ববোধের সাথে সেগুলো মোকাবেলা করতে হয়। ফলে তাদের মধ্যে বিভিন্ন মানসিক সমস্যা একটি স্বাভাবিক বিষয়ের মত হয়ে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলো মানবহিতৈষী সাহায্য কর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি তাই উদ্যোগের সৃষ্টি করেছে।[১৬][১৭] ২০১৫ সালে দ্য গার্ডিয়ান গ্লোবাল ডেভলোপমেন্ট প্রফেশনাল নেটওয়ার্ক (Global Development Professionals Network) এর কর্মীদের উপর এক জরিপ পরিচালনা করে, সেখানে দেখা যায় ৭৯ শতাংশ কর্মী মানসিক স্বাস্থ্যের ঝুঁকিতে রয়েছে।[১৮]
মানবহিতৈষী সাহায্যের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা, গুণগত মান ও কার্যকারিতা বৃদ্ধির জন্য বিগত দশকে মানবহিতৈষী সাহায্য সংস্থাগুলো আন্তঃপ্রয়াতিষ্ঠানিক কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে উল্লেখ যোগ্য চারটি হল এ্যক্টিভ লার্নিং নেটওয়ার্ক ফর এ্যকাউন্টেবিলিটি এন্ড পারফর্ম্যান্স ইন হিউম্যানিটারিয়ান একশন (Active Learning Network for Accountability and Performance in Humanitarian Action -ALNAP), হিউম্যানিটারিয়ান এ্যকাউন্টেবিলিটি পার্টনারশিপ (Humanitarian Accountability Partnership -HAP), পিপল ইন এইড (People In Aid) ও দ্যা স্ফিয়ার প্রজেক্ট (The Sphere Project)। ২০০৩ সালে এ প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিনিধিরা নিয়মিতভাবে বৈঠক করতেন যাতে তারা তাদের সাধারণ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করে সম্ভাব্যক্ষেত্রে কাজের সমন্বয় করতে পারেন।
দ্যা পিপল ইন এইড কোড অব গুড প্রাক্টিস (The People In Aid Code of Good Practice) আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত একটি ব্যবস্থাপনা সহায়ক প্রতিষ্ঠান, যা বিভিন্ন মানবহিতৈষী সাহায্য সংস্থা ও উন্নয়ন সহযোগীদের তাদের মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনায় সহায়তা করে। কোন একটি প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন দুর্যোগ, সংঘর্ষ ও দারিদ্র্য নিরসনের সময় কীভাবে নিজেদের গুণগত মান, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবে তারও পরামর্শ দিয়ে থাকে। [১৯]
হিউম্যানিটারিয়ান এ্যকাউন্টেবিলিটি পার্টনারশিপ ইন্টারন্যাশনাল (অথবা হ্যাপ ইন্টারন্যাশনাল) তাদের সহযোগী, দুর্যোগ উত্তরজীবী ও অন্যান্যদের সাথে নিয়ে মানবহিতৈষী ক্ষেত্রে দায়িত্বশীলতা ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার আদর্শ হ্যাপ ২০০৭ তৈরি করে। তাদের লক্ষ হচ্ছে হ্যাপ ২০০৭ আদর্শ অনুসারে অন্যান্য 'এজেন্সি' মানবহিতৈষী সহায়তার ক্ষেত্রে গুণগত মানের নিশ্চয়তা দিচ্ছে কি না তা পর্যবেক্ষণ করা।[২০] প্রায়োগিক ক্ষেত্রে তিন বছর মেয়াদী এই হ্যাপ সনদ, অন্যদের মিশন বিবৃতির সাথে বাইরে থেকে নীরিক্ষক প্রদান করে, তাদের হিসাব ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ সহ সকল কাজের উপর স্বচ্ছতা ও দায়িত্বশীলতা নিশ্চিত করে।[২১][২২]
হ্যাপ ইন্টারন্যাশনাল এর দাবি অনুযায়ী হ্যাপ ২০০৭ আদর্শ, মানবহিতৈষী সাহায্য সহযোগিতায় দায়িত্বশীলতা ও গুণগত মান নিশ্চতকরণের একটি ব্যবস্থা।
এজেন্সিগুলো কে যে সকল আদর্শ নীতি মেনে চলতে হয়-
বিভিন্ন বেসরকারি সাহায্য সংস্থার জোট হিউম্যানিয়ান চার্টার এন্ড মিনিয়াম স্ট্যান্ডার্ডস ইন ডিজাস্টার রেসপন্স (Humanitarian Charter and Minimum Standards in Disaster Response) নামে দ্যা স্ফেয়ার প্রজেক্ট নির্দেশিকা তৈরি করেন। এতে মানবহিতৈষী কার্য হিসাবে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত হয়
দ্যা স্ফেয়ার প্রজেক্ট এর একটি বিকল্প হল দ্যা কোয়ালিটি প্রজেক্ট। যা দ্যা কোয়ালিটি কম্পাস টুলের উপর ভিত্তি করে সৃষ্ট। দ্যা কোয়ালিটি প্রজেক্ট বিভিন্ন মান নির্ধারণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও অন্য যেসব ক্ষেত্রে গুণগত মান নিশ্চিত না করে সামান্যতম-এর নীতি গ্রহণ করা হয়েছে, সেগুলো বিবেচনায় নেয়।
২০১৭ সালে মানবহিতৈষী বিশ্বকোষ নামে একটি বিশ্বকোষ তৈরি করা হয়। যার উদ্দেশ্য মানবহিতৈষী সাহায্যের বিভিন্ন তথ্যের ক্ষেত্রে একটি সুস্পষ্ট ও বোধগম্য উৎস সৃষ্টি। যেখানে বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন স্থানের প্রাসঙ্গিক ঘটনাবলীর উল্লেখ থাকবে। আরও থাকবে সেগুলো থেকে আহরিত জ্ঞানের বিশ্লেষণ ও বিশেষ প্রয়োগের কথা, এবং থাকবে প্রমাণ ভিত্তিক বিভিন্ন সিদ্ধান্ত ও নীতিনির্ধারনের কথা।[২৪] এ উদ্যোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল যে এটি মানবহিতৈষী সাহায্য সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্যের কেন্দ্রীয় তথ্যাধার হিসাবে ব্যবহার হবে। হাইতিতে ২০১০ সালের ভূমিকম্পের পরে সেখানে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থাগুলো সেখানকার পরিবেশ পরিস্থিতি না বুঝে স্থানীয় জনগণকে ছাড়াই সাহায্য পরিচালনা করে, ফলে ত্রাণকার্য অতটা সফল হয়নি। আর ঘটনার পরই মানবহিতৈষী বিশ্বকোষ সৃষ্টির উদ্যোগ নেওয়া হয়। [২৪]
এই তথ্যাধার সবার জন্য উন্মুক্ত করা হবে। এর কাজ পরবর্তী বছরে শেষ করার কথা রয়েছে। ভুল ত্রুটি সংশোধন পূর্বক ২০১৮ সালের শেষের দিকে এর প্রথমের অংশ অনলাইনে প্রকাশ করার কথা আছে।[২৪]
সংস্থা