মানসী প্রধান | |
---|---|
জন্ম | ০৪ অক্টোবর ১৯৬২ বানাপুর, খোর্দ্ধা, উড়িষ্যা, ভারত |
জাতীয়তা | ভারতীয় |
পেশা | লেখক, নারী অধিকার কর্মী |
প্রতিষ্ঠান | OYSS Women, নির্ভয়া বাহিনী |
উল্লেখযোগ্য কর্ম | ঊর্মি-ও-উচ্ছ্বাস |
পুরস্কার | আউটস্ট্যান্ডিং উইমেন এওয়ার্ড ২০১১, নারী শক্তি পুরস্কার ২০১৩ |
মানসী প্রধান (জন্ম ০৪ অক্টোবর ১৯৬২) হলেন একজন ভারতীয় নারী অধিকার কর্মী, লেখক যিনি নারী অধিকার এর সক্রিয় কর্মী হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত। তিনি ভারতীয় নারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধে দেশব্যাপী অনার ফর উইমেন ন্যাশনাল ক্যাম্পেইন, নির্ভয়া বাহিনী এবং ওওয়াইএসএস উইমেন (OYSS Women) নামক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান।[১][২][৩][৪]
সমাজ কল্যাণে নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় অবদানের জন্য ভারত সরকার-এর মহিলা ও শিশু বিকাশ মন্ত্ৰণালয় কর্তৃক রাণী লক্ষ্মীবাঈ নারী শক্তি পুরস্কার ২০১৩ (পূৰ্বতন স্ত্ৰী শক্তি পুরস্কার) প্ৰদান করা হয়। তিনি “আউটস্ট্যান্ডিং উইমেন এওয়ার্ড ২০১১” লাভ করেন।[৫][৬]
একবিংশ শতাব্দীর একজন সক্রিয় নারী অধিকার কর্মী হিসেবে নিউইয়র্ক ভিত্তিক বাস্টল ম্যাগাজিন এর ২০১৬ সালে প্রকাশ করা বিশ্বের শীর্ষ ২০ জন লেখিকা ও নারী অধিকার কর্মীদের তালিকায় স্থান করে নেন যে তালিকায় নোবেল বিজয়ী শিরিন এবাদি, রিগোবার্টা মেঞ্চু, মালালা ইউসুফজাই, বেটি ফ্রাইডান, নাওমি ক্লেইন, এঞ্জেলা ডেভিস এর মত ব্যক্তিরাও অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।[৭] ২০১৭ সালে লস এঞ্জেলস ভিত্তিক ওয়েলকার মিডিয়া ইনকর্পোরেশন বিশ্বসেরা ১২ জন নারী অধিকারকর্মীর তালিকায় তার নাম প্রকাশ করে।
১০১৮ সালে তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রনে অক্সফোর্ড ইউনিয়নে অতিথি বক্তা হিসেবে বক্তব্য পেশ করেন।[৮] তিনি সেন্ট্রাল বোর্ড অব ফিল্ম সার্টিফিকেশন (সেন্সর বোর্ড) প্যানেলে, ভারতীয় জাতীয় মহিলা কমিশনের তদন্ত কমিটিতে দায়িত্ব পালন করেন।
মানষী প্রধান ভারতের উড়িষ্যা রাজ্যের খোর্দ্ধা জেলার বানাপুর এলাকার এক দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা হেমালতা প্রধান ছিলেন কৃষক আর মাতা গোদাবারিশ প্রধান ছিলেন গৃহিনী। দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে তিনি ই জ্যেষ্ঠ।[৯]
তৎকালীন সময়ে মেয়েদের শিক্ষার ক্ষেত্রে সামাজিক বাধা থাকায় এবং কাছাকাছি মাধ্যমিক বিদ্যালয় না থাকায় সামাজিক বিপত্তিকে উপেক্ষা করে তিনি প্রতিদিন ১৫ কিলোমিটার দুর্গম পাহাড়ী পথে হেঁটে বিদ্যালয়ে আসা যাওয়া করতেন।[৯] তার গ্রামে তিনিই প্রথম মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং পতিতপবন উচ্চ বিদ্যালয় গাম্ভারিমুন্দা থেকে মাধ্যমিক পাশের পর তার পরিবার পুরী স্থানান্তর হন। সরকারি মহিলা কলেজ থেকে অর্থনীতি বিষয়ে বি.এ ডিগ্রী লাভ করেন এবং উড়িয়া সাহিত্যে এম.এ ডিগ্রী লাভ করেন উৎকল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। পরবর্তীকালে আইন বিষয়ে পুরী’র জিএম ল কলেজ থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন তার অঞ্চলের সর্বপ্রথম মহিলা হিসেবে। তার জীবন কাহিনী নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলে প্রামান্যচিত্র নির্মিত হয়েছে।
তিনি অন্ধ্র ব্যাংক ও উড়িষ্যা সরকারের ফিন্যান্স ডিপার্টমেন্টে স্বল্পকালীন চাকরি করেছেন। কিন্তু স্বেচ্ছায় চাকরি থেকে অব্যাহতি নিয়ে ১৯৮৩ সালে ২১ বছর বয়সে নিজের ছাপাখানার ব্যবসা ও সাহিত্য পত্রিকা চালু করেন। কয়েক বছরেই তিনি তার দক্ষতা দিয়ে সফল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে প্রকাশ করতে সক্ষম হন।
মেয়েদের উচ্চ শিক্ষা ও সমাজে নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তিনি ১৯৮৭ সালে তিনি ওওয়াইএসএস উইমেন (OYSS Women) প্রতিষ্ঠা করেন।
ওওয়াইএসএস নারীরা নারী নেতৃত্বের বিভিন্ন কর্মশালা, শিক্ষা ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ ক্যাম্প, আইনি সচেতনতা ও আত্ম-প্রতিরক্ষামূলক বিভিন্ন ক্যাম্পেইন পরিচালনা করে সংগঠিত করছে, হাজার হাজার নারীকে তাদের পছন্দ মত বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতৃত্বের ভূমিকা পালনে উদ্যম যোগান দিয়ে আসছে।
২০০৯ সালে তিনি নারীদের প্রতি সহিংসতা বন্ধে অনার ফর উইমেন ন্যাশনাল ক্যাম্পেইন চালু করেন। এর মাধ্যমে নারী নির্যাতন ও নারীদের প্রতি সহিংসতা রোধ কল্পে বিভিন্ন মোটর শোভাযাত্রা, নারী অধিকার তথ্য সেবা কেন্দ্র, সভা-সেমিনার, পথনাটক ইত্যাদি জনসচেতনামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়।
২০১৪ সালে, মানসী প্রধান সমগ্র ভারতে ১০০০০ স্বেচ্ছাসেবীদের নিয়ে গড়ে তোলেন নির্ভয়া বাহিনী। তিনি ভারতের সব রাজ্য সরকার এর কাছে চার-দফা দাবী (ফোর পয়েন্ট চার্টার) উত্থাপন করেন এবং যার পরিপ্রেক্ষিতে বেশ কিছু রাজ্য সরকার দাবীগুলোকে যথোপযুক্ত সংশোধন করার মাধ্যমে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।[১০]
চার-দফা দাবী (ফোর পয়েন্ট চার্টার) হলো--
মানষী প্রধান একজন স্বনামধন্য লেখিকা। তার রচিত চতুর্থ বই ঊর্মি-ও-উচ্ছ্বাস (Urmi-O-Uchchwas ISBN 81-87833-00-9) আটটি প্রধান ভাষায় অনুদিত হয়েছে।[১১]