মানিকগঞ্জ | |
---|---|
শহর | |
দেশ | বাংলাদেশ |
বিভাগ | ঢাকা বিভাগ |
জেলা | মানিকগঞ্জ জেলা |
উপজেলা | মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা |
সরকার | |
• ধরন | পৌরসভা |
• শাসক | মানিকগঞ্জ পৌরসভা |
আয়তন | |
• মোট | ২৩.১১ বর্গকিমি (৮.৯২ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা | |
• মোট | ৭১,৬৯৮ |
• জনঘনত্ব | ৩,১০০/বর্গকিমি (৮,০০০/বর্গমাইল) |
সময় অঞ্চল | বাংলাদেশ সময় (ইউটিসি+৬) |
মানিকগঞ্জ বাংলাদেশের ঢাকা বিভাগের মানিকগঞ্জ জেলার সদরদপ্তর ও জেলা শহর। এটি রাজধানী ঢাকা থেকে ৫১ কিলোমিটার পশ্চিমে কালিগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত। মানিকগঞ্জ শহর মানিকগঞ্জ সদর উপজেলারও প্রশাসনিক সদরদপ্তর। ২৩.১১ বর্গকিলোমিটার আয়তন এবং ৭১,৬৯৮ জন জনসংখ্যা বিশিষ্ট্য শহরটি একটি ক শ্রেণীর পৌরসভা দ্বারা শাসিত হয়, যা সালে ১৯৬০ সালে টাউন কমিটি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। শহরটি নদীপথের সাথে সংযুক্ত থাকলেও, সড়কপথই যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম। ঢাকা আরিচা মহাসড়ক এ শহরের মধ্যদিয়ে অতিক্রম করেছে। সমুদ্র সমতল থেকে মানিকগঞ্জের উচ্চতা ১৫ মিটার[১] হওয়ায় এর আবহাওয়া গরম ও আর্দ্র জলবায়ু বিশিষ্ট। এটি মানিকগঞ্জ জেলার শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র।
মানিকগঞ্জ নামকরণের ভিন্ন ভিন্ন মতামত পাওয়া যায়, সংস্কৃত মানিক্য শব্দ থেকে মানিক শব্দটি এসেছে। মানিক হচ্ছে চুনি পদ্মরাগ। গঞ্জ শব্দটি ফার্সি। মানিকগঞ্জ নামে কোন গ্রাম বা মৌজার অস্তিত্ব নেই। ১৮৪৫ সাল মহুকুমা সৃষ্টির আগে কোন ঐতিহাসিক বিবরণে বা সরকারী নথিপত্রে মানিকগঞ্জ এর নাম পাওয়া যায়নি। কিংবদন্তি রয়েছে যে, অষ্টাদশ শতকের প্রথমার্ধে মানিক শাহ নামক এক সুফি দরবেশ সিংগাইর উপজেলার মানিকনগর গ্রামে আগমন করেন এবং খানকা প্রতিষ্ঠা করে ইসলাম ধর্ম প্রচার করেন। পরবর্তীকালে তিনি এ খানকা ছেড়ে হরিরামপুর উপজেলায় দরবেশ হায়দার সেখের মাজারে গমন করেন এবং ইছামতি তীরবর্তী জনশূন্য চরাভূমি বর্তমান মানিকনগরে এসে খানকা প্রতিষ্ঠা করেন। মানিক শাহের খানকাকে কেন্দ্র করে জনবসতি ও মোকাম প্রতিষ্ঠিত হয় বলে এ এলাকার নাম মানিকগঞ্জ হয়। আবার কেউ বলেন দুর্ধর্ষ পাঠান সরদার মানিক ঢালীর নামানুসারে মানিকগঞ্জ নামের উৎপত্তি হয়।
১৮৪৫ সালের মে মাসে মানিকগঞ্জ মহকুমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। মানিকগঞ্জ মহকুমা প্রথমে ফরিদপুর জেলার (১৮১১ সালে সৃষ্ট) অধীনে থাকলেও প্রশাসনিক জটিলতা নিরসনের জন্য ১৮৫৬ সালে মানিকগঞ্জ মহকুমাকে ফরিদপুর জেলা থেকে ঢাকা জেলায় অর্ন্তভূক্ত করা হয়।
১৯৬০ সালে মানিকগঞ্জ টাউন কমিটি প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ লোকাল কাউন্সিল অ্যান্ড মিউনিসিপাল কমিটি (অ্যামেমেন্ট) অর্ডার, ১৯৭২ অনুযায়ী মানিকগঞ্জ টাউন কমিটিকে মানিকগঞ্জ পৌরসভায় রুপান্তর করা হয়। তখন এর আয়তন ছিল মাত্র ১৩.৩৫ বর্গ কিলোমিটার। ১৯৮৪ সালে মানিকগঞ্জকে জেলা শহরের মর্যাদা দেওয়া হয়। ১৯৯৭ সালের ২৭ মার্চ মানিকগঞ্জ পৌরসভাকে ক শ্রেণীর (১ম শ্রেণী) পৌরসভায় উন্নীত করা হয়।
মানিকগঞ্জ ঢাকা থেকে পশ্চিম দিকে, ২৩°৫১'৪১" উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°০'০১" দক্ষিণ দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত।[২] সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা ১৫ মিটার এবং এর মোট আয়তন ২৩.১৪ বর্গকিলোমিটার। বাংলাদেশের ভূসংস্থান অনুসারে মানিকগঞ্জ গাঙ্গেয় প্লাবন সমভূমিতে অবস্থিত। বছরের অধিকাংশ সময়ই এখানে ক্রান্তীয় ভেজা এবং শুষ্ক আবহাওয়া বিরাজ করে। গড়ে তাপমাত্রা থাকে সর্বোচ্চ ৩৪.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বোনিম্ন ১১.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মত এখানেও এপ্রিল থেকে জুন হল সবচেয়ে উষ্ণতম মাস এবং ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারী হল সবচেয়ে শীতলতম মাস। মানিকগঞ্জে গড় বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত ১৯০০ মিলিমিটার।
২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী মানিকগঞ্জের মোট জনসংখ্যা ৭১,৬৯৮ জন।[৩] যার মধ্যে পুরুষ ৩৬,০৮৪ জন এবং মহিলা ৩৫,৬১৪ জন। নারী ও পুরুষের লিঙ্গ অনুপাত হল ১০০ঃ১০১.৩, যেখানে জাতীয় লিঙ্গ অনুপাত হল ১০০.৩ এবং জাতীয় শহুরে লিঙ্গ অনুপাত হল ১০৯.৩। মানিকগঞ্জ শহরের স্বাক্ষরতার হার ৬৯.১%, যেখানে জাতীয় নগরাঞ্চলীয় স্বাক্ষরতার হার ৫৯.৪%।