মাপন সিলিন্ডার, তরলের আয়তন পরিমাপের জন্য পরীক্ষাগারে ব্যবহৃত অতিসাধারণ একটি উপাদান। এর গঠন সরু ও নলাকার। মাপন সিলিন্ডারে চিহ্নিত প্রত্যেকটি দাগ, পরিমাপকৃত তরলের পরিমাণকে নির্দেশ করে।
বড় মাপন সিলিন্ডারগুলো সাধারণত পলিপ্রোপিলিনের চমৎকার রাসায়নিক প্রতিরোধ ক্ষমতার কারণে পলিপ্রোপিলিন দিয়ে অথবা স্বচ্ছতার কারণে পলিমিথাইলপেন্টেন দিয়ে তৈরী হয়, যা তাদের কাঁচের তুলনায় কম ভঙ্গুর ও হালকা করে। পলিপ্রোপিলিন (পিপি) পুনঃপুনঃ অটোক্লেভ করার জন্য উপযুক্ত, যদিও অটোক্লেভ যন্ত্রে ১২১° সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রা ব্যবহার করলে (২৫০° ফারেনহাইট) (রাসায়নিক গঠনের ওপর ভিত্তি করে: সাধারণ বাণিজ্যিক গ্রেডের পলিপ্রোপলিন ১৭৭° সেন্টিগ্রেডের (৩৫১° ফারেনহাইট) বেশি তাপমাত্রায় গলে যায়), পলিপ্রোপিলিন মাপন সিলিন্ডারের ক্ষতি হতে পারে, যা নিখুঁত পরিমাপ প্রাপ্তিতে বাধা তৈরী করে।[১]
একটি প্রচলিত মাপন সিলিন্ডার সাধারণত সরু এবং লম্বা হয় যাতে আয়তন পরিমাপের যথার্থতা বাড়ানো যায়। এর একটি প্লাস্টিক বা কাঁচের তৈরী ভূমি থাকে এবং পরিমাপকৃত তরল সহজে ঢলার সুবিধার্থে বাঁকানো মাথা বা স্পাউট থাকে। আরেকধরনের সিলিন্ডার হলো প্রশস্ত এবং খাটো। মিশ্রণ সিলিন্ডারে স্পাউটের বদলে কাঁচ সংযোগের একটি ব্যবস্থা থাকে, যাতে স্টপার এর সাহায্যে তা বন্ধ করা যায় অথবা অন্যান্য উপাদানের সাথে সরাসরি সংযুক্ত করা যায়।[২] এই ধরনের সিলিন্ডার থেকে, পরিমাপকৃত তরল সরাসরি ঢালা সম্ভব হয়না বরং ক্যানুলার সাহায্যে তা ঢালা হয়ে থাকে। মাপন সিলিন্ডারে পাঠ গ্রহণ করার সময় তরলের পৃষ্ঠ বরাবর পাঠ গ্রহণকারীর দৃষ্টি স্থাপণ করতে হয়, যেখানে মেনিস্কাসের কেন্দ্র পরিমাপ রেখা হিসেবে কাজ করে। মাপন সিলিন্ডারগুলোর সক্ষমতা ১০ মিলিলিটার থেকে ১০০০ মিলিলিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে।
সাধারণত, মাপন সিলিন্ডার তরলের আয়তন পরিমাপ করতে ব্যাবহ্রত হয়। মাপন সিলিন্ডার সাধারণত ফ্লাস্ক বা বিকার অপেক্ষা অধিক নির্ভুল ও নিখুঁত পরিমাপ দিতে সক্ষম, তবুও আয়তনমিতিক বিশ্লেষণ বা টাইট্রেশনে এটি ব্যবহার করা উচিত নয়[৩]; এক্ষেত্রে আয়তনমিতিক ফ্লাস্ক বা আয়তনমিতিক পিপেট ব্যবহার করা উচিত, কেননা এরা আরও বেশি নিখুঁত ও নির্ভুল। মাপন সিলিন্ডারগুলো কখনও কখনও তরলের বিচ্যুতি পরিমাপের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে কঠিন পদার্থের পরিমাণ পরিমাপ করতেও ব্যবহৃত হয়।
নির্ভুলতার জন্য মাপন সিলিন্ডারে আয়তন তিন অঙ্কের মাধ্যমে দাগাঙ্কিত: ১০০ মিলিলিটার সিলিন্ডারে দুইটি দাগের পার্থক্য ১ মিলিলিটার আর ১০ মিলিলিটার সিলিন্ডারে এই পার্থক্য ০.১ মিলিলিটার।
মাপন সিলিন্ডারে দুই শ্রেণির নির্ভুলতা বিদ্যমান। ক শ্রেনির নির্ভুলতা খ শ্রেণির দ্বিগুন।[৪] সিলিন্ডারগুলোর একক বা দ্বৈত পাল্লাও থাকতে পারে। একক পাল্লায় উপর থেকে নিচে আয়তনের পাঠ দেখা যায় আর দ্বৈত পাল্লার মাধ্যমে ভরাটকৃত তরলের পাঠ নেওয়া যায় (বিপরীত পাল্লা)।
মাপন সিলিন্ডারগুলো, হয় নির্দেশিত পরিমাণ তরল ধারণ করার জন্য (টিসি দ্বারা চিহ্নিত) অথবা তরল পরিত্যাগ করার (নির্দেশিত পরিমাণ তরল ঢেলে, অবশিষ্ট পরিমাণের হিসাবের জন্য) জন্য (টিডি দ্বারা চিহ্নিত)[৫] সামঞ্জস্য করা হয়। পূর্বে "সরবরাহ" এবং "ধারণ" করার জন্য তৈরীকৃত সিলিন্ডারের সহনশীলতা পৃথক হলেও, এখন তা একই। এছাড়া, "টিসি" ও "টিডি" এর বদলে আন্তর্জাতিক প্রতীক "আইএন" ও "ইএক্স" ব্যবহারের সম্ভাবনাই বেশি।[৬]
আয়তন যথাযথভাবে পরিমাপের জন্য, পাঠ নেওয়ার সময় চোখ বরাবর তরলের পৃষ্ঠ স্থাপণ করতে হবে এবং মেনিস্কাসের নিচ বরাবর পাঠ গ্রহণ করতে হবে।[৭] মেনিস্কাসের সাহায্যে আয়তনের পাঠ নেওয়ার মূল কারণ হলো আবদ্ধ স্থাণে তরলের প্রকৃতি। স্বভাবগতভাবেই, সিলিন্ডারের তরল আণবিক বলের কারণে চারপাশের সিলিন্ডারের দেয়াল কর্তৃক আকৃষ্ট হবে। এই বল, সিলিন্ডারে অবস্থিত তরলের ধরন অনুযায়ী, তরলের পৃষ্ঠকে উত্তল বা অবতল আকার ধারণে বাধ্য করে। অবতল তরলের পৃষ্ঠের নিচের অংশ থেকে পাঠ নেওয়া বা উত্তল অংশের উপরের অংশ থেকে পাঠ নেওয়া,তরলের মেনিস্কাস বরাবর পাঠ নেওয়ার সমতুল্য।[৮] ছবিতে, তরলের স্তর মেনিস্কাসের নিচ বরাবর অর্থাৎ অবতল অংশের হিসাব করা হবে। সিলিন্ডারে পরিমাপের প্রদত্ত ব্যবস্থার কারণে এখানে পাঠের সর্বাধিক নির্ভুলতা কমিয়ে ১ মিলিলিটার পর্যন্ত করা যেতে পারে। এখান থেকে, প্রাপ্ত ত্রুটি হবে ন্যুনতম অঙ্কের এক-দশমাংশ। উদাহরণস্বরূপ, পাঠ নেওয়ার পর যদি হিসাব করে মান পাওয়া যায় ৩৬.৫ মিলিলিটার তবে এর সাথে ০.১ মিলিলিটার ত্রুটিও অনর্ভুক্ত করতে হবে। অর্থাৎ, আরও নিখুঁত মান হবে ৩৬.৫ ০.১; ৩৬.৬ বা ৩৬.৪। ফলে, প্রদত্ত চিত্র হতে তিন স্থানীয় অঙ্ক পর্যন্ত মান পাওয়া যেতে পারে।[৯] আরেকটি উদাহরণ, যদি পাঠ নেওয়ার পর প্রাপ্ত মান হয় ৪০.০ মিলিলিটার তবে নিখুঁত মান হবে ৪০.০ ০.১; ৪০.১ বা ৩৯.৯।[১০]