মামোলা বাই (১৭১৫ - ১৭৯৫) ছিলেন ভোপালের নবাব ইয়ার মোহাম্মদ খানের রাজপুত স্ত্রী। তিনি ছিলেন ফৈজ মোহাম্মদ খানের সৎ মা। ভোপালের প্রথম নারী 'শাসক' মামোলা বাই কার্যকরভাবে প্রায় ৫০ বছর ধরে ভোপাল রাজ্য শাসন করেছেন, যদিও বেসরকারীভাবে। তাঁর দুই সৎ ছেলে ফৈজ এবং হায়াতের নামে তিনি শাসনকার্য পরিচালনা করেছিলেন।[১][২]
মামোলা বাই তাঁর দাতব্য এবং দরিদ্রদের প্রতি দয়ার জন্য পরিচিত ছিলেন, এই সঙ্গে তিনি ন্যায্য এবং নিরপেক্ষ হিসাবে সম্মানিত ছিলেন। তিনি সামাজিক অভ্যুত্থানের সময়ে ভোপালের ভঙ্গুর কর্তৃত্বকে একীভূত করেছিলেন। সম্ভবত তাঁর সবচেয়ে বড় সম্মান এসেছিল পীর ঘাউস আহমেদ শাহ্ গিলানীর কাছ থেকে। তিনি দরবেশ পীর আব্দুল কাদের আল-গিলানীর সরাসরি বংশধর ছিলেন এবং মামোলা বাইকে দ্বিতীয় রাবিয়া বাসারী বলে ঘোষণা করেছিলেন।[৩]
ইয়ার মোহাম্মদ খানের মৃত্যুর পর, মামোলা বাই রাজ দরবারের মর্যাদা রক্ষা করেন। ইয়ারের সৎ ভাই, সুলতান মোহাম্মদ খান, সিংহাসন দাবি করার চেষ্টা করেছিলেন। ছোট ভাই সদরের সাথে একত্রিত হয়ে, সুলতান মোহাম্মদ ফতেহগড় দুর্গ দখল করেন এবং প্রতিবেশী মারাঠা রাজ্যগুলির সমর্থন চান। মামোলা বাই ১১ বছর বয়সী ফৈজকে নবাব হিসাবে ঘোষণা করে, ইসলামনগর থেকে বিদ্রোহের মুখোমুখি হয়েছিলেন। তিনি সুলতান মোহাম্মদকে বাধা দেওয়ার জন্য বিজ্জে রামকে ৫০০০ সৈন্যের প্রধান হিসাবে ঘোষণা করে যুদ্ধে পাঠিয়েছিলেন। ঈদগাহ পাহাড়ের চারপাশে যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল যাতে তাঁর সেনাবাহিনী জয়লাভ করে।[৩]
ফৈজ মোহাম্মদ খান তৃতীয় নবাব হন। তিনি একজন অত্যন্ত ধার্মিক ব্যক্তি ছিলেন। সুফিবাদের প্রতি তাঁর ভক্তি এমন মাত্রায় বেড়ে গিয়েছিল যে তিনি রাজ্য রাজনীতিতে নিজের আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলেন। ফলস্বরূপ, বিজ্জে রামের সহায়তায় মামোলা বাই কার্যকরভাবে শাসনভার গ্রহণ করেন। দুজন হিন্দু শাসক দক্ষতার সঙ্গে এক মুসলমান সাম্রাজ্য শাসন করেছেন, যেখানে হিন্দু জনসংখ্যা ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ। মামোলা নিজেই ছোটে খান নামে একজন ব্রাহ্মণকে দত্তক নেন, যিনি পরে তাঁর মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন।
অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে, মামোলা বাই নিজেই ঘোড়ার পিঠে চড়ে রাইসেন দুর্গ দখল করতে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তিনি মুঘল বাহিনীকে পরাজিত করেন এবং পেশওয়াদের সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। তাদের সমর্থন নিয়ে, তিনি রাইসেন দুর্গের নিয়ন্ত্রণ নেন।[৩]
নিঃসন্দেহে, তিনি ছিলেন ভোপালের প্রথম অনানুষ্ঠানিক মহিলা শাসক এবং তিনি একটি বিশিষ্ট প্রশাসনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।[৩]
তাঁর প্রখর রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক বুদ্ধিও ছিল। তাঁর রাজত্বকালেই বোরবনেরা ভোপালে এসেছিল। তিনি তাদের আশ্রয় দিয়েছিলেন এবং রাজকীয় সেনাবাহিনী ও রাজদরবারে তাদের স্থান দিয়েছিলেন। মামোলা বাইয়ের অধীনে ভোপাল এবং বোরবনের মধ্যে সংযোগ শক্তিশালী হয়েছিল।[৩]
ফৈজ মোহাম্মদ খান ১৭৭৭ সালে মারা যান। রাজধানী ইসলামনগর থেকে ভোপালে স্থানান্তরিত করা হয়। উত্তরাধিকারের আরেকটি সংকট অনুভব করে, মামোলা বাই ফৈজের ছোট ভাই হায়াতকে চতুর্থ নবাব হিসেবে ঘোষণা করেন। কিন্তু তিনি একজন দুর্বল এবং অলস ব্যক্তি ছিলেন। ফৈজের বিধবা স্ত্রী সালেহা বেগম হায়াতের অধীনতা গ্রহণ করতে অস্বীকার করেন এবং বিদ্রোহ শুরু করেন। তিনি ইসলামনগরে একটি সমান্তরাল সরকার প্রতিষ্ঠা করেন এবং তাঁর স্বামীর সমাধিতে রাজ দরবার পরিচালনা শুরু করেন। মামোলা বাইয়ের শাসনকার্যকে অবজ্ঞা করে এটি তিন বছর ধরে চলেছিল। অবনতিশীল অবস্থা প্রশমিত করার জন্য, মামোলা বাই হায়াতকে সালেহা বেগমের সহকারী করার জন্য সক্রিয় অংশ নেন। এই ব্যবস্থাটি হায়াত বাতিল করে নবাবের উপাধি ও ক্ষমতা গ্রহণ করেছিলেন।[৩]