মারওয়া এল শেরবিনি | |
---|---|
জন্ম | আলেকজান্দ্রিয়া, মিসর | ৭ অক্টোবর ১৯৭৭
মৃত্যু | ১ জুলাই ২০০৯ ড্রেসডেন, জার্মানি | (বয়স ৩১)
মৃত্যুর কারণ | ছুরিকাঘাত |
সমাধি | আলেকজান্দ্রিয়া, মিসর |
জাতীয়তা | মিসরীয় |
পেশা | ঔষধ বিশেষজ্ঞ |
দাম্পত্য সঙ্গী | এলওয়ি আলি ওকাজ |
সন্তান | মুস্তাফা |
মারওয়া এল শেরবিনি (আরবি: مروه على الشربينى) ছিলেন একজন জার্মান অভিবাসী মিশরীয় নাগরিক যিনি জার্মানিতে বসবাসরত অবস্থায় ২০০৯ সালে ড্রেসডেনের এক জনাকীর্ণ আদালতে বিচারক ও নিরাপত্তা বাহিনী সুসজ্জিত মজলিসে সাম্প্রদায়িক আক্রমণে নিহত হন।[১] এসময় শেরবিনি অন্ত:সত্ত্বা ছিলেন ও তাকে প্রায় ১৮ বার ছুরিকাঘাত করা হয়।[১] রাশিয়ান বংশদ্ভুত জার্মান অভিবাসী অ্যালেক্স উইনস শেরবিনিকে হত্যা করে। এসময় আদালতে উইনসের বিরুদ্ধে ইভ টিজিং ও সাম্প্রদায়িক হামলার অভিযোগে শুনানি চলছিল। হত্যাকাণ্ডের সময় শেরবিনির স্বামী অ্যালেক্স উইনসকে বাধা দিতে গেলে খুনি অ্যালেক্স তাকেও উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে। এসময় আদালতে দায়িত্বরত এক পুলিশ সদস্য ভুল করে শেরবিনির স্বামীকে গুলি করে আহত করেন।[১] অ্যালেক্স উইনসকে হত্যা ও ধারাবাহিক হত্যা চেষ্টার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। পরবর্তীতে তাকে হত্যা ও হত্যাচেস্টা উভয় অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয় ও তার কাজকে অত্যন্ত জঘন্য আক্রমণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। কেননা তার এই আক্রমণ ছিলো আদালত প্রাঙ্গণে, একজন শিশুর সম্মুখে, দুইজন নিরপরাধ ব্যক্তির বিরুদ্ধে, বিদেশী নাগরিকের বিরুদ্ধে ঘৃণার প্রকাশ হিসেবে ও হত্যাকারির মত একই ধর্মে বিশ্বাস না রাখার কারণে।[১] এই অপরাধের শাস্তি হিসেবে আদালত এলেক্স উইনসকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়।
এল শেরবিনি হত্যাকাণ্ড খুব দ্রুত আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোচিত ও সমালোচিত হয়ে উঠে। বিশেষ করে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর জনগণ তীব্র প্রতিক্রিয়া জানাতে থাকে। মিসরীয় জনগণ ও সংবাদ মাধ্যমগুলো এই হত্যার কারণ হিসেবে সাম্প্রদায়িকতা ও বর্ণবাদকে চিহ্নিত করে।[২] বিশেষত শেরবিনি হিজাব পরিধান করতেন বলে তাকে এমন ঘটনার শিকার হতে হয় বলে সাধারন্যের মধ্যে ধারণা তৈরি হয়।[২] ধীরে ধীরে মিসর ও মিসরের বাইরে বিভিন্ন দেশে জার্মানি বিরোধী প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়লে হত্যাকাণ্ডের প্রায় ৯ দিন পর জার্মান সরকার দুঃখ প্রকাশ করে। এদিকে অ্যালেক্স উইনসের বিচারকার্য অত্যন্ত কড়া নিরাপত্তার সাথে বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম, কূটনৈতিক ও আইন বিশেষজ্ঞদের উপস্থিতিতে সম্পন্ন করা হয়।
মারওয়া এল শেরবিনি ১৯৭৭ সালে মিসরের আলেকজান্দ্রিয়া নগরে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা আলী এল শেরবিনি ছিলেন একজন রসায়নবিদ।[৩] শেরবিনির মায়ের নাম লায়লা শামস।[৪] ১৯৯৫ সালে শেরবিনি এল নাসর মহিলা মহাবিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। নাসর কলেজে তিনি ছাত্র সংসদে স্পিকারের ভূমিকা পালন করেছেন।[৪] ২০০০ সালে শেরবিনি আলেকজান্দ্রিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফার্মেসি বা ঔষধ বিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। লেখাপড়ার পাশাপাশি শেরবিনি খেলাধুলায়ও পারদর্শী ছিলেন। ১৯৯৫ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত শেরবিনি মিসর জাতীয় হ্যান্ডবল দলের সদস্য ছিলেন। ২০০৫ সালে শেরবিনি তার স্বামী আলী ওকাযের সাথে জার্মানির ব্রেমেন নগরে প্রত্যাবসন করেন। আলী ওকায ড্রেসডেন শহরে অবস্থিত মিনুফিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক ছিলেন। প্রভাষক আলী ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইন্সটিটিউট অফ মলিকিউলার সেল বায়োলজি এন্ড জেনেটিক্সে ডক্টরাল রিসার্চ করার সুযোগ লাভ করেছিলেন।[৪] আলীর কর্মসূত্রে ২০০৮ সালে শেরবিনি তার ২ বছর বয়সী সন্তানসহ ড্রেসডেনে চলে আসেন। জার্মানিতে একজন ফার্মাসিস্ট বা ঔষধ বিজ্ঞানী হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য শেরবিনি ড্রেসডেনের কার্ল গুস্তাভ কারুস হাসপাতাল ও একটি নিকটবর্তী ফার্মেসিতে খণ্ডকালীন চাকরি করতে থাকেন।[৪]
আরও কিছু উদ্যোক্তার সাথে একাত্মতা পোষণ করে এল শেরবিনি ড্রেসডেনে একটি ইসলামিক সাংস্কৃতিক ও শিক্ষা কেন্দ্র স্থাপনের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছিলেন। এই লক্ষে তিনি ও অন্যান্যরা সরকার অনুমোদিত একটি সেচ্ছাসেবী সংগঠনে অর্থায়ন করে যাচ্ছিলেন।[৪][৫] নিহত হওয়ার সময় শেরবিনি ৩ মাসের সন্তানসম্ভবা ছিলেন।[৪]
অ্যালেক্স উইনস (রাশিয়ানঃ Алекс Винс, যিনি আলেকজেন্ডার উইনস নামেও পরিচিত) ১৯৮০ সালে রাশিয়ার পের্ম নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। স্কুলজীবন শেষে তিনি গুদামঘর রক্ষক হিসেবে কাজ করার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।[৬][৭][৮] ১৯৯৯ সালে একটি মেডিক্যাল পরীক্ষার পর উইনসকে রাশিয়ার বাধ্যতামূলক সামরিক প্রশিক্ষণ কোর্সে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়। বলা হয়ে থাকে উইনস সম্ভবত কোন দুরারোগ্য মানসিক রোগাক্রান্ত ছিলেন।[৯][১০] ২০০৩ সালে উইনস রাশিয়া থেকে জার্মানি অভিবাসন গ্রহণ করেন ও জার্মান নাগরিকত্ব লাভ করেন। জার্মানিতে অ্যালেক্স একজন নির্মাণ শ্রমিক ও তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে কাজ করতেন। যদিও হত্যাকাণ্ড ঘটানোর সময়টাতে উইনস দীর্ঘকাল শুধুমাত্র বেকার ভাতার উপর নির্ভর করে বেঁচে ছিলেন।[৬][৭][৮] ২০০৯ সালের নভেম্বর মাসে দন্ডপ্রাপ্ত হওয়ার সময় উইনস ছিলেন ২৮ বছর বয়স্ক,[১১] অবিবাহিত ও সন্তানহীন।[১২][১৩]
এই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |