মারিয়া কুইতেরিয়া | |
---|---|
![]() ১৯২০ সালে ডোমেনিকো ফাইলুত্তি অঙ্কিত মারিয়া কুইতেরিয়ার প্রতিকৃতি | |
জন্ম | মারিয়া কুইতেরিয়া দে জেসাস মেদেইরস ২৭ জুলাই ১৭৯২ ফেইরা দ্য সান্তানা, ব্রাজিল উপনিবেশ |
মৃত্যু | ২১ আগস্ট ১৮৫৩ সালভাদর, ব্রাজিল | (বয়স ৬১)
অন্যান্য নাম | ব্রাজিলের জোন অব আর্ক |
নাগরিকত্ব | ব্রাজিলীয় ![]() |
পরিচিতির কারণ | সমরবিদ |
দাম্পত্য সঙ্গী | গাব্রিয়েল পেরেইরা দ্য ব্রিতো |
সন্তান | লুইসা মারিয়া দা কনসেইকাও (কন্যা) |
মারিয়া কুইতেরিয়া দে জেসাস মেদেইরস (স্পেনীয়: Maria Quitéria; জন্ম: ২৭ জুলাই, ১৭৯২ - মৃত্যু: ২১ আগস্ট, ১৮৫৩) বাহিয়া প্রদেশের সাও হোস দাস ইতাপোরোকাস এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ব্রাজিলের বিখ্যাত প্রমিলা লেফট্যানেন্ট ও জাতীয় বীর ছিলেন। ১৮২২-২৩ মেয়াদকালে ব্রাজিলের স্বাধীনতার যুদ্ধে তিনি পুরুষের পোশাক পরিধান করে অংশগ্রহণ করেন। শুরুতে তিনি ক্যাডেট হিসেবে ব্রাজিলীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দেন যা দেশের প্রথম মহিলা হিসেবে বিবেচ্য। এছাড়াও, ১৮২৩ সালে সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী প্রথম মহিলা ছিলেন মারিয়া কুইতেরিয়া।[১][২] পরবর্তীতে লেফট্যানেন্ট হন ও রাজকীয় আদেশ বলে সুসজ্জ্বিত হন।
১৯৯৬ সালে ব্রাজিল সরকার তাকে মরণোত্তর প্যাট্রোনেস অব টেবল কমপ্লেমেন্টারি ব্রাজিলিয়ান আর্মি অফিসার্স পদবীতে ভূষিত করে।[৩] তার কাজের পুণঃপুণঃ মূল্যায়ণের মাধ্যমে ফরাসি বীর জোন অব আর্কে সাথে তুলনা করে তাকে ব্রাজিলের জোন অব আর্ক হিসেবে ডাকা হয়ে থাকে।[৪]
সাও হোস দাস ইতাপোরোকাসের আওয়ার লেডি অব দ্য রোজারি অব পোর্তো দা কাচোইরার লিকুরিজেইরো ক্যাম্প এলাকায় তার জন্ম। বর্তমানে এলাকাটি বাহিয়া প্রদেশের ফেইরা দ্য সান্তানা নামে পরিচিত। তিনি পরিবারের জ্যেষ্ঠা কন্যা ছিলেন। বাবা গঞ্জালো আলভেস দ্য আলমেইডা ছিলেন কৃষক ও তার মায়ের নাম ছিল কুইতেরিয়া মারিয়া দে জেসাস।[৫] তারা উভয়েই ব্রাজিল উপনিবেশে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। গবেষকদের ধারণা তার জন্ম ১৭৯২ সালে হয়েছিল যা সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য মতবাদ।
১৮০৩ সালে তার বয়স যখন দশ বা এগারো ছিল, তখন মা মারা যান। পাঁচ মাস পর বিপত্নীক পিতা পুণরায় ইউজেনিয়া মারিয়া দোস সান্তোসকে বিয়ে করেন। কিন্তু বিয়ের অল্প কিছুদিন বাদেই ঐ সংসারে কোন সন্তানাদি না রেখেই ইউজেনিয়ার দেহাবসান ঘটে। তারপর তাদের পরিবার নতুন বাসস্থানে খামার সরিয়ে নেয়। সেখানে গঞ্জালো তৃতীয়বারের মতো মারিয়া রোসা দে ব্রিতো নাম্নী রমণীর পাণিগ্রহণ করেন। ঐ সংসারে তিন সন্তান জন্মগ্রহণ করে। নতুন সৎমাতা কখনো মারিয়া কুইতেরিয়ার স্বাধীন কর্মকাণ্ডের সাথে একাত্মতা পোষণ করেননি। ঐ সময়ে বিদ্যালয়ের সংখ্যা খুব সীমিত পরিসরে ছিল। এমনকি বৃহৎ শহরগুলোয়ও বিদ্যালয় কম থাকায় মারিয়াকে অশ্বচালনা করতে, শিকার করতে ও অস্ত্র ব্যবহার শিখতে হয়েছে যা ঐ সময়ের অপরিহার্য জ্ঞান হিসেবে আখ্যায়িত করা হতো।
১৮২১ এবং ১৮২২ সালের মধ্যে তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ঐ সময়ে তিনি পর্তুগীজ রাজত্বকালে বাহিয়া প্রদেশ থেকে নিজেকে সৈনিক হিসেবে যুক্ত করেন।
জানুয়ারি, ১৮২২ সালে ইনাসিও লুইস মাদেইরা দ্য মেলো'র নেতৃত্বে সালভাদর পর্তুগীজ বাহিনী অবতরণ করে। এরফলে লাপায় জোয়ানা অ্যাঞ্জেলিকা নাম্নী এক খ্রিস্টান সন্ন্যাসীনির প্রাণহানী ঘটে। ২৫ জুন, সিটি কাউন্সিল অধ্যুষিত গ্রামে প্রিন্স রিজেন্ট ডম পেদ্রো নিজেকে ব্রাজিলের চিরস্থায়ী রাজপ্রতিনিধিরূপে ঘোষণা করেন। এরফলে জুলাই মাসে বাহিয়ার স্বাধীনতাপন্থীদের লক্ষ্য করে পারাগুয়াকু নদী তীরবর্তী এলাকায় অবস্থানরত পর্তুগীজ রণতরী থেকে গুলিবর্ষণ করে। ৬ সেপ্টেম্বর গ্রামে প্রাদেশিক সরকারের অন্তর্বর্তীকালীন কাউন্সিল গঠন করা হয়। এর মাধ্যমে বাহিয়ায় স্বাধীনতা পূর্বকালীন আন্দোলন গড়ে উঠে। প্রদেশের সর্বত্র সম্পদ ও স্বেচ্ছাসেবকদের সন্ধানের উদ্দেশ্য নিয়ে লিবারেশন আর্মি গঠিত হয়।
সংসারে পুরুষ সন্তান না থাকলেও আশ্চর্যজনকভাবে কন্যা মারিয়া কুইতেরিয়া পিতার কাছে সৈনিক হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবার অনুমতি চান। কিন্তু বাবা অনুমতি দিতে অস্বীকার করলে তিনি পলায়ণ করেন ও সৎবোন মারিয়া তেরেসার স্বামী হোস কর্দেইরো দ্য মেদেইরসের বাড়ীতে চলে যান। তাদের সহায়তায় তারা উভয়েই নিজেদের চুল কেটে ফেলে পুরুষের বেশ ধারণ করেন। ১৮২২-২৩ মেয়াদকালে ব্রাজিলের স্বাধীনতার যুদ্ধে তিনি পুরুষের পোশাক পরিধান করে অংশগ্রহণ করেন। শুরুতে তিনি ক্যাডেট হিসেবে যোগ দেন। পরবর্তীতে লেফট্যানেন্ট হন ও রাজকীয় আদেশ বলে সুসজ্জ্বিত হন। এরপর তিনি জলপ্রপাত অধ্যুষিত গ্রামে আর্টিলারি রেজিমেন্টে নিজের নাম অন্তর্ভুক্ত করেন। কিন্তু দুই সপ্তাহ পর তার পিতা মারিয়াকে চিনে ফেলেন। মেজর হোস অ্যান্টোনিও দা সিলভা কাস্ত্রোর সহায়তায় প্রিন্স তার স্বেচ্ছাসেবক ব্যাটালিয়ন কমান্ডারদেরকে নিয়ে অস্ত্র পরিচালনা সিদ্ধ হন ও সামরিক শৃঙ্খলা অনুসরণ করে সেনাদলে যোগ দেন। তখন তার পোশাক ছিল স্কটিশ চেক-কাটা পশমী কাপড়ের কুঁচি দেওয়া ঘাগরা।
২৯ অক্টোবর তার ব্যাটালিয়ন মারে দ্বীপ প্রতিরক্ষা করে। এরপর কনসেইকাও, পিতুবা এবং ইতাপোয়া দখল করে ও প্রথম বিভাগের সাথে একীভূত হয়। ফেব্রুয়ারি, ১৮২৩ সালে অসম সাহসিকতার সাথে পিতুবায় যুদ্ধ করেছিলেন ও শত্রু পরিখায় আক্রমণ চালিয়ে বেশ কয়েকজন পর্তুগীজকে বন্দী করে একাকী তাবুতে নিয়ে আসেন। কিছু লেখক এ সংখ্যাটি দুই বলে উল্লেখ করেছেন।
৩১ মার্চ ক্যাডেট স্টেশনে প্রাদেশিক অন্তর্বর্তীকালীন কাউন্সিলের অর্ডার প্রাপক হন ও তলোয়ার এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক সরঞ্জামাদি পান। পরিশেষে, ২ জুলাই, ১৮২৩ তারিখে "লিবারেশন আর্মি" সালভাদর শহরে জয়সূচকভাবে প্রবেশ করলে সালভাদরের অধিবাসীরা মারিয়া কুইতেরিয়াকে স্বাগতঃ জানায় এবং দলের সকলকে জনগণ সম্মানিত করে। প্রাদেশিক সরকার তাকে একটি তলোয়ার বহন করার অধিকার দেয়।
জেনারেল পেদ্রো লাবাতাত ঐ প্রতিরোধের নেতৃত্বে থাকা ডি. পেদ্রো'র কাছে তার সম্মানসূচক ১ম ক্যাডেট পদবী দেয়ার কথা ঘোষণা দেন। ২০ আগস্ট রিও দি জানেইরো'র সম্রাট স্বয়ং তাকে নাইট মর্যাদার সমতুল্য ইম্পেরিয়াল ক্রুজ অর্ডারে ভূষিত করেন। প্রশংসাসূচক স্তুতির পাশাপাশি সম্রাট মারিয়া কুইতেরিয়ার অবাধ্যতার জন্য তার পিতার কাছে ক্ষমার কথাও উল্লেখ করেছিলেন।
বিখ্যাত গবেষক আরিস্তিদেস মিল্টন সাহসী ও সৎ মহিলারূপে মারিয়া কুইতেরিয়াকে মূল্যায়িত করেছেন। অন্যদিকে, ব্রিটিশ লেখক মারিয়া গ্রাহাম ব্রাজিলে তার সাথে পরিচিত হয়েছিলেন। তিনি মন্তব্য করেন যে,
মারিয়া দে জেসাস অশিক্ষিত থাকলেও চিরকাল বেঁচে থাকবেন। তাঁর বুদ্ধিমত্তা ও জোড়ালো দৃষ্টিভঙ্গীতেই তা উপলদ্ধ হয়েছে। যদি তিনি শিক্ষিত হতেন, তাহলে স্মরণীয় ব্যক্তিত্ব হতেন। পুরুষদের ভদ্রতা ও ধরনের মাধ্যমেই লোকদের চেনা সম্ভবপর।
সালভাদর সিটি থেকে মারিয়া কুইতেরিয়াকে সম্মানসূচক সামরিক পদক ও তার নামে নামাঙ্কিত করা হয়। একইভাবে ফেইরা দ্য সান্তানা শহর কর্তৃপক্ষ মিউনিসিপালিটিতে অসামান্য অবদান রাখায় কমেন্ডেশন মারিয়া কুইতেরিয়া প্রতিষ্ঠা করে।[৬] তার স্মরণে মারিয়া কুইতেরিয়া অ্যাভিনিউ ও গেতুলিও ভার্গাসের মিলনস্থলে একটি স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন করা হয়।
তার সেরা মরণোত্তর প্রতিকৃতিটি পূর্ণদৈর্ঘ্যের ছিল। আনুমানিক ১৯২০ সালে ডোমেনিক ফাইলুত্তি অঙ্কন করেছিলেন ও কাচোইরার সিটি কর্তৃপক্ষকে উপহার দেন। বর্তমানে সাঁও পাওলোর পলিস্তা যাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে।
২৮ জুন, ১৯৯৬ তারিখে মহামান্য রাষ্ট্রপতির আদেশ বলে মারিয়া কুইতেরিয়াকে টেবল কমপ্লেমেন্টারি ব্রাজিলয়ান আর্মি অফিসারদের পৃষ্ঠপোষিকারূপে ঘোষণা করা হয়। অতঃপর মন্ত্রীপরিষদের সভায় সকল ব্যারাক, সামরিক স্থাপনা ও সেনা কার্যালয়ে তার প্রতিকৃতি স্থাপনের নির্দেশ দেয়া হয়।
পিতার কাছে ক্ষমা ভিক্ষা লাভের পর সাবেক বাল্যবন্ধু গাব্রিয়েল পেরেইরা দ্য ব্রিতোর সাথে তার বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। তাদের সংসারে লুইসা মারিয়া দা কনসেইকাও নাম্নী এক কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। ১৮৩৫ সালে বিধবা হলে ফেইরা দ্য সান্তানায় চলে যান। সেখান থেকে তিনি সম্পত্তির অধিকার দাবী করেন। কিন্তু, বিচারের মন্থরতায় দাবী পরিত্যাগ করেন। এরপর কন্যাকে নিয়ে সাভিয়ার চলে যান। প্রায় অন্ধ অপরিচিত অবস্থায় ৬১ বছর বয়সে তার দেহাবসান ঘটে। গির্জায় তাকে সমাহিত করা হয় ও তার দেহাবশেষ সালভাদরের পার্শ্ববর্তী নাজারেথে সেন্ট অ্যানি মাদারে রাখা হয়।