মার্ক রাইল্যান্স | |
---|---|
Mark Rylance | |
জন্ম | ডেভিড মার্ক রাইল্যান্স ওয়াটার্স ১৮ জানুয়ারি ১৯৬০ |
শিক্ষা | রয়্যাল একাডেমি অব ড্রামাটিক আর্ট |
পেশা | অভিনেতা, মঞ্চ পরিচালক, নাট্যকার |
কর্মজীবন | ১৯৮০–বর্তমান |
উচ্চতা | ৫ ফু ৮ ইঞ্চি (১৭৩ সেমি) |
দাম্পত্য সঙ্গী | ক্লের ফান কাম্পেন (বি. ১৯৮৯) |
স্যার ডেভিড "মার্ক রাইল্যান্স" ওয়াটার্স (ইংরেজি: David Mark Rylance Waters; জন্ম ১৮ জানুয়ারি ১৯৬০) হলেন একজন ইংরেজ অভিনেতা, মঞ্চ পরিচালক এবং নাট্যকার। লন্ডনের রয়্যাল একাডেমি অব ড্রামাটিক আর্ট থেকে মঞ্চনাটক বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর ১৯৮০ সালে তিনি গ্লাসগোর সিটিজেন্স থিয়েটারে তার প্রথম পেশাদারী কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি ১৯৯৫ থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে লন্ডনের শেকসপিয়ার্স গ্লোবের প্রথম শৈল্পিক পরিচালক ছিলেন। ১৯৯৪ সালে তিনি ওয়েস্ট এন্ড থিয়েটারের মাচ অ্যাডু অ্যাবাউট নাথিং এবং ২০১০ সালে জেরুসালেম নাটকে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে লরন্স অলিভিয়ে পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া তিনি ব্রডওয়ে থিয়েটারের মঞ্চস্থ নাটকে অভিনয় করেন এবং বোয়িং বোয়িং (২০০৮), জেরুসালেম (২০১১), এবং টুয়েলফথ নাইট (২০১৪) নাটকে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে টনি পুরস্কার লাভ করেন
তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র হল প্রসপারোস বুকস (১৯৯১), অ্যাঞ্জেলস অ্যান্ড ইনসেক্টস (১৯৯৫), ইনস্টিটিউট বেঞ্জামেন্টা (১৯৯৬), এবং ইন্টিমেসি (২০০১)। রাইল্যান্স ব্রিজ অব স্পাইজ (২০১৫) চলচ্চিত্রে রুডলফ অ্যাবেল চরিত্রে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা বিভাগে একাডেমি পুরস্কার ও বাফটা পুরস্কার লাভ করেন। রাইল্যান্স পরবর্তীকালে রোয়াল্ড ডাল রচিত শিশুতোষ বই অবলম্বনে স্টিভেন স্পিলবার্গ নির্মিত দ্য বিএফজি চলচ্চিত্রে, এবং ক্রিস্টোফার নোলান পরিচালিত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশদের সেনাদের উদ্ধার বিষয়ক ডানকার্ক (২০১৭) চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন।
২০১৬ সালে "টাইম" সাময়িকীর ১০০ বিশ্বের শীর্ষ প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায় তার নাম আসে।[১]
রাইল্যান্স ইংল্যান্ডের কেন্টের অ্যাশফোর্ডে জন্মগ্রহণ করেন। তার মাতা অ্যান (জন্মনাম স্কিনার) এবং পিতা ডেভিড ওয়াটার্স। তারা দুজনেই ইংরেজ শিক্ষক। রাইল্যান্সের এক পিতামহী আইরিশ ছিলেন।[২] তার পিতামহ ও মাতামহ দুজনেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানে ব্রিটিশ কয়েদী ছিলেন।[৩] রাইল্যান্সের বোন সুজানাহ ওয়াটার্স একজন অপেরা গায়িকা ও লেখক এবং ভাই জোনাথান সোমালিয়ার হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।[৪]
রাইল্যান্স তার প্রদত্ত নাম মার্ক ওয়াটার্স বাদ দিয়ে মার্ক রাইল্যান্স নাম নিয়ে মঞ্চে অভিনয় শুরু করেন। তিনি ১৯৭৮ সালে ইংল্যান্ডে আসে এবং ১৯৭৮ থেকে ১৯৮০ সালে লন্ডনের রয়্যাল একাডেমি অব ড্রামাটিক আর্টে হিউ ক্রুটওয়েলের অধীনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে লন্ডনের বালহামের ক্রিস্যালিস থিয়েটার স্কুলে বারবারা ব্রিজমন্টের সাথে প্রশিক্ষণ লাভ করেন। ১৯৮০ সালে তিনি গ্লাসগো সিটিজেন্স থিয়েটারে তার প্রথম পেশাদারী কাজ লাভ করেন। ১৯৮২ ও ১৯৮৩ সালে তিনি স্ট্রাটফোর্ড আপন-অ্যাভন ও লন্ডনে রয়্যাল শেকসপিয়ার কোম্পানিতে অভিনয় করেন।
১৯৮৮ সালে রাইল্যান্স রয়্যাল শেকসপিয়ার কোম্পানিতে রন ড্যানিয়েলস নির্দেশিত হ্যামলেট নাটকে অভিনয় করেন এবং এই মঞ্চায়ন নিয়ে এক বছরের জন্য আয়ারল্যান্ডে ও ব্রিটেন সফরে যান। পরবর্তীকালে নাটকটি স্ট্রাটফোর্ড আপন-অ্যাভনে মঞ্চস্থ হয়। এছাড়া নাটকটি নিয়ে দুই বছরের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সফরে যান। ১৯৯০ সালে রাইল্যান্স ও ক্ল্যের ফান কাম্পেন (পরবর্তীতে তার স্ত্রী) তাদের নিজেদের থিয়েটার কোম্পানি "ফিবাস কার্ট" প্রতিষ্ঠা করেন। পরের বছর এই কোম্পানি থেকে দ্য টেম্পেস্ট পথনাট্য মঞ্চায়ন হয়।
রাইল্যান্স ১৯৯১ সালে গিলিস ম্যাককিনন পরিচালিত দ্য গ্রাস এরিনা চলচ্চিত্রের মূল ভূমিকায় অভিনয় করেন এবং শ্রেষ্ঠ নবাগত বিভাগে রেডিও টাইমস পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৯৩ সালে তিনি কুইন্স থিয়েটারে থেলমা হল্ট প্রযোজিত ও ম্যাথু ওয়ার্চাস নির্দেশিত মাচ অ্যাডো অ্যাবাউট নাথিং নাটকে অভিনয় করেন। এতে বেনিডিক চরিত্রে তার অভিনয়ের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে লরন্স অলিভিয়ে পুরস্কার লাভ করেন। ২০০৫ সালে তিনি ব্রিটিশ অস্ত্র বিশেষজ্ঞ ডেভিড কেলি চরিত্রে পিটার কস্মিন্স্কি পরিচালিত দ্য গভর্নমেন্ট ইনস্পেক্টর টেলিভিশন চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন।[৫] এতে অভিনয়ের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে ব্রিটিশ একাডেমি টেলিভিশন পুরস্কার লাভ করেন।
রাইল্যান্স টম হ্যাঙ্কস, অ্যামি রায়ান ও অ্যালান আলডার সাথে স্টিভেন স্পিলবার্গের জীবনীনির্ভর নাট্যধর্মী ব্রিজ অব স্পাইজ (২০১৫) চলচ্চিত্রে রুডলফ অ্যাবেল চরিত্রে অভিনয় করেন। তার এই চরিত্রটি প্রশংসিত হয় এবং অনেক সমালোচক একে ২০১৫ সালে সেরা অভিনয় বলে উল্লেখ করেন। দ্য সেন্ট লুইস পোস্ট-ডিসপ্যাচ-এ লেখা হয় "রাইল্যান্সের আধ্যাত্মিক অভিনয় নিশ্চিতভাবে অস্কারের মনোনয়ন পাবে।"[৬] নিউ ইয়র্ক সাময়িকীর ডেভিড ইডেলস্টিন বলেন, "রাইল্যান্স ব্রিজ অব স্পাইজ-কে ঠিকিয়ে রেখেছিল।"[৭] রাইল্যান্স তার এই অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা বিভাগে একাডেমি পুরস্কার,[৮] বাফটা পুরস্কার[৯] ও নিউ ইয়র্ক চলচ্চিত্র সমালোচক সমিতি পুরস্কার অর্জন করেন এবং গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার[১০] ও স্ক্রিন অ্যাক্টরস গিল্ড পুরস্কারসহ একাধিক পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন।
রাইল্যান্স রোয়াল্ড ডাল রচিত শিশুতোষ বই অবলম্বনে স্টিভেন স্পিলবার্গ নির্মিত দ্য বিএফজি চলচ্চিত্রে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন। ২০১৫ সালে ধারণকৃত চলচ্চিত্রটি ২০১৬ সালের জুলাইয়ে মুক্তি পায়।[১১] ২০১৬ সালে তিনি যৌথভাবে নতুন হাস্যরসাত্মক নাটক নাইস ফিশ রচনা করেন, এবং নিউ ইয়র্কের সেন্ট অ্যান্স ওয়্যারহাউজে এতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন। পরবর্তীকালে নাটকটি লন্ডনের ওয়েস্ট এন্ডের হ্যারল্ড পিন্টার থিয়েটারেও মঞ্চস্থ হয়।[১২][১৩] রাইল্যান্স ১৯৪০ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন ফরাসি শহর ডানকার্ক ব্রিটিশদের সেনাদের উদ্ধার নিয়ে ক্রিস্টোফার নোলান পরিচালিত ডানকার্ক (২০১৭) চলচ্চিত্রে একটি প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন।[১৪] এতে অন্যান্য প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন টম হার্ডি, কেনেথ ব্র্যানা, সিলিয়ান মার্ফি ও হ্যারি স্টাইলস।[১৫]
২০১৮ সালে তিনি স্পিলবার্গের পরিচালনায় রেডি প্লেয়ার ওয়ান চলচ্চিত্রে জেমস হ্যালিডে চরিত্রে অভিনয় করেন। একই বছর তিনি ব্রডওয়ে মঞ্চে ফ্যারিনেল্লি অ্যান্ড দ্য কিং নাটকে অভিনয় করে তার পঞ্চম টনি পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন।
২০১৯ সালে তিনি বিপির সাথে পৃষ্ঠপোষকতার চুক্তির কারণে রয়্যাল শেকসপিয়ার কোম্পানি থেকে অব্যহতি নেন। তিনি ১৯৮৯ সালে সর্বশেষ এই কোম্পানির মঞ্চনাটকে অভিনয় করেছিলেন।[১৬]
রাইল্যান্স পরিচালক, সুরস্কার ও নাট্যকার ক্লের ফান কাম্পেনকে বিয়ে করেন। ১৯৮৭ সালে ন্যাশনাল থিয়েটারে দ্য ওয়ান্ডারিং জিউ মঞ্চনাটকে কাজ করার সময় তাদের পরিচয় হয়। তারা ১৯৮৯ সালের ২১শে ডিসেম্বর অক্সফোর্ডশায়ারে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।[১৭] এই বিয়ের ফলে তিনি কাম্পেনের পূর্বের বিবাহের দুটি কন্যার সৎ বাবা হন। কন্যা দুজন হলেন অভিনেত্রী জুলিয়েট রাইল্যান্স ও চলচ্চিত্র নির্মাতা নাতাশা ফান কাম্পেন। নাতাশা ২০১২ সালের জুলাইয়ে ২৮ বছর বয়সে মারা যান। এ সময় রাইল্যান্সের লন্ডনে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ২০১২ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার কথা ছিল, কিন্তু নাতাশার মৃত্যুর কারণে কেনেথ ব্র্যানাকে তার স্থলাভিষিক্ত করা হয়।[১৮][১৯]
বছর | শিরোনাম | ভূমিকা | পরিচালক | টীকা |
---|---|---|---|---|
১৯৮৭ | হার্টস অব ফায়ার | ফিজ | রিচার্ড মার্কুয়ান্ড | |
১৯৯১ | দ্য গ্রাস এরিনা | জন হিলি | গিলিস ম্যাককিনন | |
প্রসপারোস বুকস | ফার্ডিনান্ড | পিটার গ্রিনাওয়ে | ||
১৯৯৫ | ইনস্টিটিউট বেঞ্জামেন্টা | ইয়াকপ ফন গুন্টেন | ব্রাদার্স কুয়াই | |
অ্যাঞ্জেল্স অ্যান্ড ইনসেক্ট্স | উইলিয়াম অ্যাডামসন | ফিলিপ হাস | ||
২০০১ | ইন্টিমেসি | জে | প্যাট্রিস শেরো | |
২০০৮ | দি আদার বলেইন গার্ল | থমাস বলেইন | জাস্টিন চ্যাডউইক | |
২০১১ | অ্যাননিমাস | হেনরি কন্ডেল | রোলান্ড এমেরিখ | |
ব্লিট্জ | ব্রুস রবার্টস | এলিয়ট লেস্টার | ||
২০১৩ | ডেজ অ্যান্ড নাইটস | স্টিভেন | ক্রিশ্চিয়ান কামার্গো | |
২০১৫ | দ্য গানম্যান | টেরেন্স কক্স | পিয়ের মোরেল | |
ব্রিজ অব স্পাইজ | রুডলফ অ্যাবেল | স্টিভেন স্পিলবার্গ | শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতার জন্য একাডেমি পুরস্কার শ্রেষ্ঠ পার্শ্বচরিত্রে অভিনেতা বিভাগে বাফটা পুরস্কার | |
২০১৬ | দ্য বিএফজি | দ্য বিএফজি | ||
২০১৭ | ডানকার্ক | মিস্টার ডসন | ক্রিস্টোফার নোলান | |
২০১৮ | রেডি প্লেয়ার ওয়ান | জেমস ডনোভান হ্যালিডে / অ্যানোরাক | স্টিভেন স্পিলবার্গ | নির্মাণ-উত্তর |