বিপণন |
---|
মার্কা ব্যবস্থাপনা (ইংরেজি: Brand Management) হল বিপণনের এমন একটি কার্যাবলি যার মাধ্যমে একটি পণ্যের বা কৃত্যের মার্কা কীভাবে ক্রেতা বা ভোক্তাদের মনের ভেতরে জায়গা করে নেবে সেটি বিশ্লেষণ করা হয়, কোন্ ধরনের ভোক্তাকে লক্ষ্য করে মার্কাটি বাজারে ছাড়া হবে সেটি নির্ধারণ করা হয় এবং সর্বোপরি মার্কার কাঙ্ক্ষিত সুনাম সৃষ্টি ও বজায় রাখা হয়। মার্কা ব্যবস্থাপনার জন্য ভোক্তা বা ক্রেতাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ। মার্কা ব্যবস্থাপনার দৃশ্যমান উপাদানগুলো হলো পণ্য, পণ্যের মূল্য, মোড়ক, বিজ্ঞাপন প্রভৃতি। আর অদৃশ্য উপাদানগুলোর মধ্যে রয়েছে ভোক্তার অভিজ্ঞতা, সন্তুষ্টি, এবং মার্কার সঙ্গে তার সম্পর্কটি কেমন সেটি। একজন মার্কা ব্যবস্থাপককে উপর্যুক্ত সবগুলো বিষয়ে নজর দিতে হয়। ২০০১ সালে হিসলপ (Hislop) বলেন, "মার্কা তৈরিকরণ হল "প্রতিযোগিতা থেকে নিজেকে আলাদা করে তুলে ধরতে এবং মার্কার প্রতি ক্রেতার আনুগত্য নির্মাণের স্বার্থে একটি কোম্পানির পণ্যের সঙ্গে ক্রেতার মনস্তাত্ত্বিক উপলব্ধিকে যুক্ত করবার বা এদের মধ্যে সম্পর্ক সৃষ্টি করার প্রক্রিয়া।"[১]
মার্কা তৈরিকরণের সূত্রপাত ঘটেছে খুব প্রাচীন সময়ে, যখন প্রস্তুতকারীরা নিজ নিজ হস্তশিল্পপণ্যের উপর ব্যবসায়িক মার্কা বসিয়ে দিতেন অন্যদের চাইতে নিজের পণ্যকে আলাদাভাবে উপস্থাপনের জন্য। খৃষ্টপূর্ব ২৭০০ সালে মিশরে গবাদিপশুর শরীরে মার্কা লাগিয়ে দেওয়া হতো, যাতে করে এক মালিকের পশুকে অন্য মালিকের পশু হতে সহজেই আলাদা করা যায়। তবে শিল্পবিপ্লবের ফলশ্রুতিতে এবং বিপণন, উৎপাদন ও ব্যবসায় ব্যবস্থাপনার মত প্রোফেশনাল শাখাগুলোর আবির্ভাবের কারণে উনিশ শতকে এসে মার্কািং ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতে শুরু করে।[১] মার্কাস্থাপন হল অন্য উৎপাদকের পণ্যের চাইতে নিজের পণ্যকে আলাদা করে তুলে ধরার একটি পন্থা যেটি পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির সাথে সাথে অধিক হারে ব্যবহৃত হতে শুরু করে। ধরা হয়ে থাকে, আধুনিক মার্কাস্থাপন শাস্ত্রের সূত্রপাত ঘটেছিলো প্রোক্টর অ্যান্ড গ্যাম্বল-এর তৎকালীন সভাপতি নিল এইচ ম্যাক এলরয়ের একটি বিখ্যাত "মেমো"র মাধ্যমে।[২]
মার্কা স্বত্বাধিকার মূল্য (Brand equity) হলো একটি মার্কার পণ্য ও সেবাসমূহের কার্যকারিতা, পছন্দনীয়তা ও সুনামের ওপর ভিত্তি করে যে মূল্যমান (value) নির্দিষ্ট করা হয়। 'ক্রেতানির্ভর মার্কা স্বত্বাধিকার মূল্য' (Customer-based Brand Equity) হলো কোন একটি মার্কার ব্যাপারে একজন ক্রেতার পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকার সুবাদে ওই মার্কার বিপণনে তার সাড়া কেমন হয় সেটি।[৩] যেমন- ক্রেতা যদি কোন মার্কা সম্পর্কে যথেষ্ট তথ্য রাখে, তাহলে নিশ্চই তিনি উপলব্ধি করতে পারবেন যে মার্কাটি কি ধরনের সুবিধা প্রদান করে, কি কি বিশেষত্ব বা গুনাগুন বহন করে। সেক্ষেত্রে তিনি মার্কাটি কিনতে আগ্রহী হবেন। অর্থাৎ মার্কাের ব্যাপারে তথ্যগুলো ক্রেতার মনোজগতে কিরকম সাড়া ফেলছে, সেটি ইতিবাচক নাকি নেতিবাচক, সেই সাড়ার ফলে তিনি পণ্যটি কিনতে আগ্রহী হচ্ছেন কিনা, তিনি বিশ্বস্ত ক্রেতায় পরিণত হয়েছেন কিনা- এসবই মার্কা স্বত্বাধিকার মূল্যের অংশ।
মার্কা পোর্টফোলিও হল সেসকল মার্কা এবং মার্কা লাইনের সমষ্টি যেগুলো কোন একটি কোম্পানি একটি নির্দিষ্ট পণ্যের ক্যাটাগরিতে বিক্রয় করা হয়।[৪] উদাহরণস্বরূপ ইউনিলিভারের শ্যাম্পু বা চুলের প্রসাধনির মার্কা পোর্টফোলিওর কথা বলা যায়। সানসিল্ক, ডাভ, ক্লিয়ার (ম্যান, উমেন) প্রভৃতি মার্কাগুলোকে নিয়ে শ্যাম্পুর একটি মার্কা পোর্টফোলিও গঠিত হয়।
মার্কা সম্প্রসারণ (Brand Extension) হলো একই মার্কা নামের অধীনে নতুন নতুন পণ্য যুক্ত করা। অন্যভাবে বলা যায়, বিদ্যমান মার্কা নাম ব্যবহার করে নতুন পণ্য বাজারে ছাড়াকেই বলে মার্কা সম্প্রসারণ। এর সুবিধা হল, যেহেতু মার্কাটি ইতোমধ্যেই শক্তিশালী এবং পছন্দনীয়, কাজেই ক্রেতারা একই মার্কার নতুন একটি পণ্যের প্রতিও আগ্রহী হবে এবং তাকে স্বাগত জানাবে।