মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চলচ্চিত্র (হলিউড) | |
---|---|
![]() হলিউড হিলসে হলিউডের প্রতীক, যা মার্কিন চলচ্চিত্র শিল্পের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত | |
সিনেমা পর্দার সংখ্যা | ৪০,৩৯৩ (২০১৭)[১] |
• प्रति व्यक्ति | ১৪/১০০,০০০ (২০১৭)[১] |
প্রধান চলচ্চিত্র-পরিবেশক |
|
নির্মিত কাল্পনিক চলচ্চিত্র (২০১৬)[৩] | |
কাল্পনিক | ৬৪৬ (৯৮.৫%) |
অ্যানিমেটেড | ১০ (১.৫%) |
মোট খরচ (২০১৭)[৫] | |
মোট | ১,২৩৯,৭৪২,৫৫০ |
• Per capita | ৩.৯ (২০১০)[৪] |
মোট আয় (২০১৭)[৫] | |
মোট | $১১.১ বিলিয়ন |
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংস্কৃতি |
---|
এটি ধারাবাহিকের একটি অংশ |
![]() |
সমাজ |
শিল্পকলা ও সাহিত্য |
অন্যান্য |
প্রতীক |
![]() মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রবেশদ্বার |
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চলচ্চিত্র, হলিউড নামেও পরিচিত, বিংশ শতাব্দী থেকে চলচ্চিত্র শিল্পে ব্যাপক প্রভাব রেখে আসছে। মার্কিন চলচ্চিত্রের প্রভাব বিস্তারকারী ধরন হল ধ্রুপদী হলিউড চলচ্চিত্র, যা ১৯১৭ থেকে ১৯৬০ সালে বিকাশ লাভ করে এবং সবচেয়ে বেশি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়। ওগ্যুস্ত ও লুই ল্যুমিয়েরকে আধুনিক চলচ্চিত্রের জনক হিসেবে অভিহিত করা হলেও[৬] চলচ্চিত্রের বিকাশের সাথে সাথেই মার্কিন চলচ্চিত্র প্রভাব বিস্তার শুরু করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রতি বছর গড়ে 600-এর অধিক ইংরেজি ভাষার চলচ্চিত্র মুক্তি দিয়ে থাকে, যা কোন একক ভাষার জাতীয় চলচ্চিত্র নির্মাণের দিক থেকে সর্বোচ্চ।[৭] অন্যদিকে জাতীয় চলচ্চিত্রের দিক থেকে যুক্তরাজ্য (২৯৯), কানাডা (২০৬), অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডও একই ভাষায় চলচ্চিত্র নির্মাণ করে, যা হলিউড ব্যবস্থার অংশ হিসেবে বিবেচিত নয়। হলিউডকে বহুভাষীয় চলচ্চিত্র হিসেবেও অভিহিত করা হয়।[৮] ধ্রুপদী হলিউড চলচ্চিত্রে একাধিক ভাষার সংস্করণ নির্মাণ করা হত, প্রায়ই স্পেনীয় ও ফরাসি ভাষার। সমকালীন হলিউড কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডেও চলচ্চিত্র নির্মাণ করে থাকে।
হলিউডকে সবচেয়ে পুরনো শিল্প হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যেখানে প্রাচীনতম চলচ্চিত্র স্টুডিও ও প্রযোজনা কোম্পানিসমূহ বিকাশ লাভ করে। এখানেই বিভিন্ন ধারার চলচ্চিত্র বিকশিত হয়, তন্মধ্যে রয়েছে নাট্যধর্মী, হাস্যরসাত্মক, সঙ্গীতধর্মী, প্রণয়ধর্মী, মারপিটধর্মী, ভীতিপ্রদ, বিজ্ঞান কল্পকাহিনীমূলক, যুদ্ধভিত্তিক মহাকাব্যিক, যা অন্যান্য জাতীয় চলচ্চিত্র শিল্পের জন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।
১৮৭৮ সালে ইডউইয়ার্ড মুইব্রিজ চলচ্চিত্রে আলোকচিত্রের ক্ষমতার প্রদর্শন করেন। ১৮৯৪ সালে নিউ ইয়র্ক সিটিতে টমাস আলভা এডিসনের কিনেটোস্কোপ ব্যবহার করে বিশ্বের প্রথম বাণিজ্যিক চলচ্চিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৯২৭ সালে বিশ্বের প্রথম সবাক সঙ্গীতধর্মী চলচ্চিত্র দ্য জ্যাজ সিঙ্গার নির্মাণ করে,[৯] এবং পরের দশকে সবাক চলচ্চিত্রের বিকাশের অগ্রদূত হিসেবে ভূমিকা রাখে। বিংশ শতাব্দীর শুরু থেকে মার্কিন চলচ্চিত্র শিল্প ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলেসের হলিউডের ৩০ মাইল অঞ্চল নিয়ে গড়ে ওঠে। পরিচালক ডি ডব্লিউ গ্রিফিথ প্রথম চলচ্চিত্রের ব্যাকরণ উদ্ভাবন করেন। অরসন ওয়েলসের সিটিজেন কেইন-কে প্রায়ই বিভিন্ন সমালোচকদের ভোটে সর্বকালের সেরা চলচ্চিত্র হিসেবে আখ্যা পেতে দেখা যায়।[১০]
প্রথম আলোকচিত্র ধারণ ও তা চলচ্চিত্রে রূপান্তরের নথি পাওয়া যায় ইডউইয়ার্ড মুইব্রিজের দৌড়াবস্থার একটি ঘোড়ার কয়েকটি আলোকচিত্র থেকে, যা ১৮৭৮ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার পালো আল্টোতে একই সারিতে কয়েকটি স্টিল ক্যামেরা স্থাপন করে তোলা হয়েছিল। মুইব্রিজের এই কাজের ফলে উদ্ভাবকগণ একই ধরনের যন্ত্র তৈরির চেষ্টা চালান। ১৮৯৪ সালে নিউ ইয়র্ক সিটিতে টমাস আলভা এডিসন কিনেটোস্কোপ নামে একই ধরনের যন্ত্র তৈরি করেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চলচ্চিত্রের ইতিহাসের মূল ভূমি ছিল পূর্ব উপকূল, সেখানকার নিউ জার্সির ফোর্ট লি এক সময় মার্কিন চলচ্চিত্রের রাজধানী হিসেবে পরিচিত ছিল। মার্কিন চলচ্চিত্র শিল্পের সূচনা ঘটে উনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে যখন টমাস আলভা এডিসন নিউ জার্সির ওয়েস্ট অরেঞ্জে প্রথম চলচ্চিত্র স্টুডিও "ব্ল্যাক মারিয়া" নির্মাণ করেন। হাডসন নদী ও হাডসন পালিসেডের নগর ও শহরগুলো নিউ ইয়র্ক সিটি থেকে স্বল্প মূল্যে তাদের জমি বিক্রি করে এবং বিংশ শতাব্দীর সূচনালগ্নে চলচ্চিত্র শিল্পের ব্যাপক সমৃদ্ধিতে প্রভূত সুফল লাভ করে।[১১][১২]
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চলচ্চিত্র শিল্প পুঁজিবাদী ও উদ্ভাবনী কর্মীদের আকর্ষণ করতে শুরু করেন এবং ১৯০৭ সালে কালেম কোম্পানি ফোর্ট লি শহরকে চলচ্চিত্রের দৃশ্যধারণের জন্য ব্যবহার করা শুরু করলে অন্য চলচ্চিত্র নির্মাতারাও তাদের অনুসরণ করতে শুরু করে। ১৯০৯ সালে ইউনিভার্সাল স্টুডিওজের পূর্বতন প্রতিষ্ঠান চ্যাম্পিয়ন ফিল্ম কোম্পানি প্রথম স্টুডিও নির্মাণ করে। অন্যরাও তাদের অনুসরণ করে এবং নতুন স্টুডিও নির্মাণ করে বা ফোর্ট লিতে স্থান ইজারা নেয়। ১৯১০ ও ১৯২০-এর দশকে চলচ্চিত্র কোম্পানিগুলো, তথা ইন্ডিপেন্ডেন্ট মুভিং পিকচার্স কোম্পানি, পিয়ারলেস স্টুডিওজ, দ্য সোল্যাক্স কোম্পানি, এক্লেয়ার স্টুডিওজ, গোল্ডউইন পিকচার কর্পোরেশন, আমেরিকান মেলিয়েস (স্টার ফিল্মস), ওয়ার্ল্ড ফিল্ম কোম্পানি, বায়োগ্রাফ স্টুডিওজ, ফক্স ফিল্ম কর্পোরেশন, পাথে ফ্রেরে, মেট্রো পিকচার্স কর্পোরেশন, ভিক্টর ফিল্ম কোম্পানি, ও সেলৎজনিক পিকচার্স কর্পোরেশন ফোর্ট লিতে চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে থাকে। উল্লেখযোগ্য অভিনয়শিল্পীদের মধ্যে অস্কার বিজয়ী ম্যারি পিকফোর্ড এখানেই বায়োগ্রাফ স্টুডিওজের অধীনে তার কর্মজীবন শুরু করেন।[১৩][১৪]
নিউ ইয়র্কের কুইন্সে নির্বাক চলচ্চিত্র যুগে কফম্যান অ্যাস্টোরিয়া স্টুডিওজ প্রতিষ্ঠিত হয় এবং মার্ক্স ভ্রাতৃদ্বয় ও ডব্লিউ. সি. ফিল্ডস এটি ব্যবহার করতেন। এডিসন স্টুডিওজ ব্রনক্সে অবস্থিত ছিল। ম্যানহাটনের চেলসি প্রায়ই ব্যবহৃত হত। ফ্লোরিডার পিকচার সিটিও ১৯২০-এর দশকে চলচ্চিত্র নির্মাণের কেন্দ্র হিসেবে পরিকল্পিত স্থান ছিল, কিন্তু ১৯২৮ সালের ওকিচোবি হ্যারিকেনের কারণে এই পরিকল্পনা বাতিল হয় এবং পিকচার সিটি এর মূল নাম হোব সাউন্ডে ফিরিয়ে নেওয়া হয়। চলচ্চিত্র নির্মাণের অন্যান্য প্রধানতম কেন্দ্রগুলো হল শিকাগো, টেক্সাস, ক্যালিফোর্নিয়া, ও কিউবা।
বিংশ শতাব্দীর সূচনালগ্নে চলচ্চিত্রের স্বত্ত্ব নিয়ে দ্বন্দ্ব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে চলচ্চিত্র কোম্পানির বিস্তৃতিতে প্রভাব রাখে। অনেক কোম্পানি যেসব যন্ত্রপাতি ব্যবহার করত তাতে তাদের অধিকার ছিল না এবং এর ফলে নিউ ইয়র্কে চলচ্চিত্রের দৃশ্যধারণ কঠিন হয়ে ওঠেছিল। এটি এডিসনের কোম্পানির সদরদপ্তরের নিকটে ছিল এবং এই কোম্পানির প্রতিনিধিরা ক্যামেরা জব্দ করতে ওঠে পড়ে। ১৯১২ সালের মধ্যে বেশিরভাগ মূলধারার চলচ্চিত্র কোম্পানি দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়া বা লস অ্যাঞ্জেলেসে এই অঞ্চলের সারা বছর ব্যাপী অনুকূল আবহাওয়ার জন্য তাদের নির্মাণ কার্যক্রম স্থানান্তর করে।[১৫]
১৯১০ সালের শুরুতে বায়োগ্রাফ কোম্পানি পরিচালক ডি ডব্লিউ গ্রিফিথকে তার দল নিয়ে পশ্চিম উপকূলে পাঠায়। তার দলে ছিলেন অভিনয়শিল্পী ব্ল্যাঞ্চ সুইট, লিলিয়ান গিশ, ম্যারি পিকফোর্ড, লিওনেল ব্যারিমোর ও আরও অনেকে। তার লস অ্যাঞ্জেলেসের জর্জ স্ট্রিটের নিকটবর্তী একটি খালি স্থানে দৃশ্যধারণ শুরু করে। সেখানে কোম্পানিটি নতুন অঞ্চল খুঁজে বের করার সিদ্ধান্ত নেয়, হলিউডের কয়েক মাইল উত্তরে ভ্রমণ করে, যেখানে লোকজন বন্ধুভাবাপন্ন ছিল ও চলচ্চিত্র কোম্পানির দৃশ্যধারণ উপভোগ করতেন। গ্রিফিথ পরে হলিউডে চিত্রায়িত প্রথম চলচ্চিত্র ইন ওল্ড ক্যালিফোর্নিয়া (১৯১০) নির্মাণ করেন। এটি উনবিংশ শতাব্দীতে ক্যালিফোর্নিয়া সম্পর্কিত প্রণয়ধর্মী নাট্য চলচ্চিত্র। গ্রিফিথ কয়েক মাস সেখানে অবস্থান করেন এবং নিউ ইয়র্কে ফিরে আসার পূর্বে আরও কয়েকটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। হলিউডে গ্রিফিথের চলচ্চিত্র নির্মাণের সফলতার কথা শুনে ১৯১৩ সালে অনেক চলচ্চিত্র নির্মাতা চলচ্চিত্র নির্মাণের পদ্ধতির স্বত্বাধিকারী টমাস আলভা এডিসনের ফি এড়াতে পশ্চিমে যেতে শুরু করে।[১৬] নিউ জার্সির বায়োনের নেস্টর স্টুডিওজ ১৯১১ সালে হলিউডে প্রথম স্টুডিও নির্মাণ করে।[১৭] ডেভিড ও উইলিয়াম হর্সলির মালিকানাধীন নেস্টর স্টুডিওজ পরে ইউনিভার্সাল স্টুডিওজের সাথে একত্রিত হয় এবং উইলিয়াম হর্সলির অন্য কোম্পানি হলিউড ফিল্ম ল্যাবরেটরি এখনো বিদ্যমান হলিউডের সবচেয়ে পুরনো কোম্পানি, যা বর্তমানে হলিউড ডিজিটাল ল্যাবরেটরি নামে পরিচিত। হলিউডের অত্যধিক অতিথিপরায়ণ ও সাশ্রয়ী আবহাওয়া ১৯৩০-এর দশকে সকল চলচ্চিত্র নির্মাতাদের পশ্চিম উপকূলে নিয়ে যায়। সে সময়ে টমাস এডিসন পূর্ব উপকূলে এডিসন্স মোশন পিকচার প্যাটেন্ট কোম্পানির অধীনে চলচ্চিত্র নির্মাণ ও চলচ্চিত্র প্রযোজকদের সাথে সম্পৃক্ত সকল কিছুর স্বত্বাধিকারী ছিলেন এবং এডিসন বা তার প্রতিনিধিগণ প্রায়ই অভিযোগ করত বা নির্দেশনা প্রদান করত, অন্যদিকে পশ্চিম উপকূলে চলচ্চিত্র নির্মাতারা এডিসনের নিয়ন্ত্রণের বাইরে স্বাধীনভাগে কাজ করতে পারত।[১৮]
লস অ্যাঞ্জেলেসে স্টুডিও ও হলিউড বর্ধিত হতে থাকে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে চলচ্চিত্র নির্মিত হত, কিন্তু এই শিল্পের বিকাশ ঘটতে থাকলে চলচ্চিত্র নির্মাতারা দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার দিকে আকৃষ্ট হতে থাকে। তারা মূলত উষ্ণ আবহাওয়া ও নির্ভরযোগ্য সূর্যের আলোর জন্য এই অঞ্চলের প্রতি আকৃষ্ট হয়, এবং তার সারা বছর ব্যাপী বহিঃদৃশ্য ও বিভিন্ন দৃশ্যের চিত্রায়ন করতে পারত। চলচ্চিত্রের (বিশেষ করে মার্কিন চলচ্চিত্র) বেশ কয়েকটি শুরুর ঘটনা ছিল, কিন্তু গ্রিফিথের ১৯১৫ সালের বিতর্কিত মহাকাব্যিক চলচ্চিত্র দ্য বার্থ অব আ নেশন বিশ্বব্যাপী চলচ্চিত্রায়নের শব্দভাণ্ডারের অগ্রদূত হিসেবে বিবেচিত, যা এখনো রূপালি পর্দায় বিরাজমান।
বিংশ শতাব্দীর সূচনালগ্নে যখন চলচ্চিত্র তখনো নতুন মাধ্যম, অনেক ইহুদি অভিবাসী মার্কিন চলচ্চিত্র শিল্পে কর্মসংস্থান খুঁজে পায়। তারা এই নতুন ব্যবসায়ে তাদের অবদান রাখতে সক্ষম হয়, এবং এক নিকেল (পাঁচ সেন্ট) মূল্যে তারা দোকানের সামনে অবস্থিত নিকলোডেয়ন নামক প্রেক্ষাগৃহে তার স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র প্রদর্শনী করে। কয়েক বছরের মধ্যে স্যামুয়েল গোল্ডউইন, উইলিয়াম ফক্স, কার্ল লেমলি, আডলফ জুকর, লুই বি. মেয়ার ও ওয়ার্নার ভাইদের (হ্যারি, আলবার্ট, স্যামুয়েল, ও জ্যাক) মত উচ্চাকাঙ্ক্ষী ব্যক্তিরা এই ব্যবসায়ের প্রযোজনায় চলে আসেন। অচিরেই তারা চলচ্চিত্র স্টুডিও নামে নতুন ধরনের ব্যবসায়ের প্রধান হয়ে ওঠেন। এই শুরুর সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কমপক্ষে একজন নারী পরিচালক, প্রযোজক ও স্টুডিও প্রধান ছিলেন, যেমন ফ্রান্সে জন্মগ্রহণকারী পরিচালক অ্যালিস গাই-ব্লাশে। তারা এই শিল্পের আন্তর্জাতিকীকরণের ভিত্তিও গড়ে তুলেন, যদিও এই শিল্পটিকে আমেরো-কেন্দ্রিক প্রাদেশিকতার দোষে অভিযুক্ত করা হয়।
অন্য চলচ্চিত্র নির্মাতারাও প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপ থেকে আগমন করেন, তন্মধ্যে ছিলেন পরিচালক আর্নস্ট লুবিচ, অ্যালফ্রেড হিচকক, ফ্রিৎস লাং, ও জঁ রনোয়ার এবং অভিনয়শিল্পী রুডলফ ভালেন্টিনো, মারলেনে ডিট্রিশ, রোনাল্ড কলম্যান ও শার্ল বোয়ায়ে। তারা নিউ ইয়র্ক সিটির মঞ্চে অন্য অভিনয়শিল্পীদের সাথে যোগ দেন এবং সবাক চলচ্চিত্রের সূত্রপাত ঘটলে বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে দ্রুত বর্ধমান শিল্পের অংশ হয়ে ওঠেন। ১৯৪০-এর দশকে চলচ্চিত্রের জনপ্রিয়তার সর্বোচ্চ পর্যায়ে স্টুডিওগুলো প্রতি বছর প্রায় ৪০০ চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে থাকে, এবং প্রতি সপ্তাহে ৯০ মিলিয়ন মার্কিন দর্শক তা দেখেন।[১৯]
১৯২০-এর দশকের শেষভাগে হলিউডে শব্দের অধিক ব্যবহার দেখা যায়।[২০] ১৯২৭ সালে প্রথম সংলাপ-সংবলিত পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র দ্য জ্যাজ সিঙ্গার মুক্তির পর হলিউড চলচ্চিত্র কোম্পানিগুলো ওয়ার্নার ব্রসের দিকে আকৃষ্ট হয় এবং ভিটাফোন শব্দ ব্যবস্থার ব্যবহার শুরু করে। ১৯২৮ সাল পর্যন্ত ভিটাফোনের মালিকানা ছিল ওয়ার্নার ব্রসের। ১৯২৮ সালে মে মাসে ওয়েস্টার্ন ইলেকট্রিক কোম্পানির সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইলেকট্রিক্যাল রিসার্চ প্রডাক্ট ইনকর্পোরেটেড (ইআপিআই) চলচ্চিত্রের শব্দ পরিবেশনার একক স্বত্ব লাভ করে।[১৯]
সবাক চলচ্চিত্রের একটি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ছিল এমন যে নির্বাক চলচ্চিত্রে কাজ করা অনেক অভিনয়শিল্পী হঠাৎ করে কর্মহীন হয়ে পড়েন, কারণ তাদের অনেকের কণ্ঠ খারাপ ছিল বা তাদের সংলাপগুলো মনে রাখতে পারতেন না। ইতোমধ্যে, ১৯২২ সালে মার্কিন রাজনীতিবিদ উইল এইচ হেইস রাজনীতি ত্যাগ করে চলচ্চিত্র স্টুডিওর প্রধান সংস্থা মোশন পিকচার প্রডিউসার্স অ্যান্ড ডিস্টিবিউটর্স অব আমেরিকা (এমপিপিডিএ) গঠন করেন।[২১] ১৯৪৫ সালে হেইসের অবসরের পর সংস্থাটি মোশন পিকচার অ্যাসোসিয়েশন অব আমেরিকা (এমপিএএ) নামে পরিচিতি লাভ করে।
সবাক চলচ্চিত্রের শুরুর দিকে মার্কিন স্টুডিওগুলো দেখতে পায় যে তাদের সবাক চলচ্চিত্রগুলো বিদেশি বাজারে, এমনকি ইংরেজি ভাষার অন্যান্য উপভাষার লোকজনের কাছে প্রত্যাখ্যাত হচ্ছে। শব্দ সংকলনের পদ্ধতি শব্দ পুনঃসংযোজনের জন্য খুবই সেকেলে। একটি সমাধান ছিল হলিউড চলচ্চিত্রের সমান্তরাল বিদেশি ভাষার সংস্করণ নির্মাণ করা। ১৯৩০ সালের দিকে মার্কিন কোম্পানিগুলো ফ্রান্সের জয়েনভিল-ল্য-পঁ-তে একটি স্টুডিও খোলে, যেখানে ভিন্ন কলাকুশলীসহ একই সেট, পোশাক, এমনকি একই রকম দৃশ্যের ব্যবহার করা হত।
বিদেশি বেকার অভিনয়শিল্পী, নাট্যকার, ও সুন্দরী প্রতিযোগিতা বিজয়ীদের হলিউডের চলচ্চিত্রের জন্য নির্বাচন করা হয় ও তাদের নিয়ে আসা হয়, এবং তারা সেখানে ইংরেজি ভাষার সমান্তরাল সংস্করণগুলোতে কাজ করেন। এই সমান্তরাল সংস্করণগুলোর নির্মাণ ব্যয় অল্প ছিল এবং রাতে দৃশ্যধারণ করা হত এবং বিদেশি ভাষা বলতে না পারা দ্বিতীয় সারির মার্কিন পরিচালকদের দ্বারা পরিচালিত হত। স্পেনীয় ভাষার কলাকুশলীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন লুইস বুনুয়েল, এনরিক হারদিয়েল পনসেলা, জাভিয়ের কুগাত, ও এডগার নেভিল। এই নির্মাণগুলো বেশ কিছু কারণে তাদের নির্ধারিত বাজারে সফল হতে পারেনি, তন্মধ্যে রয়েছে:
তা স্বত্ত্বেও কিছু নির্মাণ, যেমন ড্রাকুলা চলচ্চিত্রের স্পেনীয় সংস্করণ মূল কাজের তুল্য ছিল। ১৯৩০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে শব্দের সমন্বয়ের উন্নতি সাধিত হয় এবং পৃথকভাবে শব্দগ্রহণ তথা ডাবিং নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়।
ধ্রুপদী হলিউড চলচ্চিত্র হল ১৯১৭ থেকে ১৯৬০ সালের প্রযুক্তিগত ও বর্ণনামূলক বৈশিষ্টের চলচ্চিত্র। ১৯২০-এর দশকের শেষভাগ থেকে ১৯৬০-এর দশকের সূচনালগ্নে মার্কিন চলচ্চিত্রে নির্বাক যুগের সমাপ্তি পর্যন্ত হলিউডের স্বর্ণযুগে হলিউড স্টুডিওগুলো থেকে হাজার খানেক চলচ্চিত্র নির্মিত হয়। স্বর্ণযুগের সূত্রপাত হয় অবিসংবাদিতভাবে ১৯২৭ সালে দ্য জ্যাজ সিঙ্গার চলচ্চিত্র মুক্তির পাওয়ার পর থেকে, যার ফলে নির্বাক যুগের সমাপ্তি ঘটে এবং চলচ্চিত্রের শব্দের ব্যবহারের ফলে চলচ্চিত্রের বক্স অফিস আয় বাড়তে থাকে।
১৯২৭ সালে দ্য জ্যাজ সিঙ্গার মুক্তির পর ওয়ার্নার ব্রস. ব্যাপক সফলতা অর্জন করে এবং ১৯২৮ সালে স্ট্যানলি থিয়েটার্স ও ফার্স্ট ন্যাশনাল প্রডাকশন্স ক্রয় করার পর তারা নিজেরাই প্রেক্ষাগৃহের ব্যবস্থা চালু করে। এমজিএমও লুওয়ের মালিকানা লাভ করে, যা ১৯২৪ সালে গঠিত হয়েছিল, এবং ফক্স ফিল্ম কর্পোরেশন ফক্স থিয়েটারের মালিকানা অর্জন করেন। আরকেও'ও ১৯২৮ সালে কিথ-অর্ফেউম থিয়েটার ও রেডিও কর্পোরেশন অব আমেরিকাকে অধিগ্রহণ করে ওয়েস্টার্ন ইলেকট্রিক/ইআরপিআই'র একচ্ছত্র ব্যবসা শুরু করে,[২২] এবং চলচ্চিত্রে শব্দ যোগ করার তাদের নিজস্ব পদ্ধতি ফটোফোন উদ্ভাবন করে।
প্যারামাউন্ট ওয়ার্নার ব্রস. ও আরকেও'র সাফল্যের অনুসরণ করে ১৯২৬ সালে বালাবান ও কাৎজকে অধিগ্রহণ করে, এবং ১৯২০-এর দশকের শেষভাগে একাধিক প্রেক্ষাগৃহে ক্রয় করে এবং মিশিগানের ডেট্রয়েটে প্রেক্ষাগৃহের একক ব্যবসায় শুরু করে।[২৩] ১৯৩০-এর দশকের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম সারির প্রায় সকল মেট্রোপলিটন প্রেক্ষাগৃহসমূহ বড় পাঁচটি স্টুডিও - এমজিএম, প্যারামাউন্ট, আরকেও, ওয়ার্নার ব্রস. ও টুয়েন্টিয়েথ সেঞ্চুরি ফক্সের মালিকানায় চলে আসে।[২৪]
বেশিরভাগ হলিউড চলচ্চিত্রই একটি সূত্র অনুসরণ করে নির্মিত হয়, যেমন - পশ্চিমা ধারা, স্ল্যাপস্টিক কমেডি, সঙ্গীতধর্মী, অ্যানিমেটেড কার্টুন, জীবনী সংক্রান্ত চলচ্চিত্র, এবং একটি স্টুডিওর চলচ্চিত্রের জন্য একই কলাকুশলীদের দল কাজ করত। উদাহরণস্বরূপ, সেড্রিক গিবন্স ও হার্বার্ট স্টোথার্ট সবসময় মেট্রো-গোল্ডউইন-মেয়ারের চলচ্চিত্রে কাজ করতেন, আলফ্রেড নিউম্যান ২০ বছর টুয়েন্টিয়েথ সেঞ্চুরি ফক্সের জন্য কাজ করেছেন, সেসিল বি. ডামিলের প্রায় সবকয়টি চলচ্চিত্রই প্যারামাউন্ট থেকে নির্মিত হয়েছে, এবং পরিচালক হেনরি কিং টুয়েন্টিয়েথ সেঞ্চুরি ফক্সের প্রযোজনায় চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন।
একই সময়ে যে কোন দর্শক সাধারণত আন্দাজ করতে পারতেন কোন স্টুডিও কোন চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছে, বিশেষ করে চলচ্চিত্রে অভিনয়শিল্পীদের উপস্থিতি দেখে। উদাহরণস্বরূপ, এমজিএম দাবী করেন তারা সর্বাধিক তারকাদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। প্রতিটি স্টুডিওর নিজস্ব ধরন ও বৈশিষ্ট ছিল, যার ফলে আন্দাজ করা সম্ভব হত, এই বৈশিষ্ট বর্তমানে বিদ্যমান নেই।
টু হ্যাভ অ্যান্ড হ্যাভ নট (১৯৪৪) কেবল অভিনয়শিল্পী হামফ্রি বোগার্ট (১৮৯৯-১৯৫৭) ও লরেন বাকল (১৯২৪-২০১৪)-এর প্রথম জুটি গঠনের জন্য বিখ্যাত নয়, বরং এর রচয়িতা দুজন পরবর্তী কালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন, তারা হলেন আর্নেস্ট হেমিংওয়ে (১৮৯৯-১৯৬১), যার উপন্যাস থেকে এই চলচ্চিত্রের গল্পটি নেওয়া হয়েছে এবং উইলিয়াম ফকনার (১৮৯৭-১৯৬২), যিনি চলচ্চিত্রের উপযোগী চিত্রনাট্য রচনা করেছেন।
চলচ্চিত্র নির্মাণ তখনো ব্যবসা হিসেবে গণ্য ছিল, এবং চলচ্চিত্র কোম্পানিগুলো স্টুডিও ব্যবস্থার অধীনে পরিচালিত হয়ে উপার্জন করতে থাকে। প্রধান স্টুডিওগুলো পারিশ্রমিকের বিনিময়ে হাজারের অধিক কলাকুশলী - অভিনয়শিল্পী, প্রযোজক, পরিচালক, লেখক, স্টান্ট মেন, ক্রাফটসম্যান, ও যন্ত্রকারিগর রাখত। তারা পশ্চিমা ধারার এবং অন্যান্য বড় ধারার চলচ্চিত্রের চিত্রায়নের জন্য দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার গ্রামাঞ্চলে চলচ্চিত্রের জন্য র্যাঞ্চ ক্রয় করত বা ইজারা নিত। তারা দেশব্যাপী নগর ও শহরে হাজার হাজার প্রেক্ষাগৃহের মালিকানা কিনে রাখত যেখানে তারা তাদের চলচ্চিত্র প্রদর্শন করাত এবং তাতে সবসময় নতুন উপাদানের প্রয়োজন হত।
১৯৩০ সালে এমপিপিডিএ সভাপতি উইল হেইস হেইস (নির্মাণ) কোড উদ্ভাবন করেন, এই কোড অনুসরণ করে সেন্সরশিপ নীতিমালা প্রণীত হয় এবং ১৯৩০ সালে সেন্সরশিপের প্রতি সরকারের হুমকির পর প্রভাব ফেলে।[২৫] যাই হোক, ১৯৩৪ সালের পূর্বে এই কোডটি বলবৎ হয়নি, প্রাক-কোড হলিউড নামে এই যুগে কিছু উসকানিমূলক চলচ্চিত্র ও ভয়ানক বিজ্ঞাপনের ফলে আতঙ্কিত হলে ক্যাথলিক ওয়াচডগ সংস্থা দ্য লিজিয়ন অব ডিসেন্সি চলচ্চিত্র বর্জনের হুমকি দেয়।[২৬] যেসব চলচ্চিত্র নির্মাণ কোড প্রশাসনের নিকট থেকে অনুমতির সিল পায়নি তাদের $২৫,০০০ জরিমান করা হত এবং প্রেক্ষাগৃহ থেকে কোন আয় করতে পারত না, কারণ এমপিপিডিএ বড় পাঁচটি স্টুডিওর মাধ্যমে দেশের সকল প্রেক্ষাগৃহ নিয়ন্ত্রণ করত।
১৯৩০-এর দশক জুড়ে, এবং স্বর্ণযুগের বেশির ভাগ সময়, এমজিএম চলচ্চিত্র পর্দায় আধিপত্য বিস্তার করত ও তাদের অধীনে হলিউডের শীর্ষ তারকারা ছিল, এবং সর্বোপরি হলিউড তারকা পদ্ধতি সৃষ্টির জন্য পরিচিত ছিল।[২৭] কিছু এমজিএম তারকা, যেমন "হলিউডের রাজা" খ্যাত ক্লার্ক গেবল, লিওনেল ব্যারিমোর, জিন হার্লো, নর্মা শিয়েরার, গ্রেটা গার্বো, জোন ক্রফোর্ড, জিনেট ম্যাকডোনাল্ড ও তার স্বামী জিন রেমন্ড, স্পেন্সার ট্রেসি, জুডি গারল্যান্ড ও জিন কেলি।[২৭] এই যুগে মার্কিন চলচ্চিত্রের আরেকটি বড় অর্জন হল ওয়াল্ট ডিজনির অ্যানিমেশন কোম্পানি। ১৯৩৭ সালে ডিজনি এই সময়ের সবচেয়ে সফল চলচ্চিত্র স্নো হোয়াইট অ্যান্ড দ্য সেভেন ডোয়ার্ফস নির্মাণ করেন।[২৮] এই খ্যাতি দ্রুতই ছাড়িয়ে যায় সেলৎসনিক ইন্টারন্যাশনালের সর্বকালের সফল চলচ্চিত্র গন উইথ দ্য উইন্ড।[২৯]
অনেক চলচ্চিত্র ইতিহাসবেত্তা চলচ্চিত্র নির্মাণের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বিকাশ লাভ করা চলচ্চিত্রের অনেক প্রধান কাজের মূল্যায়ন করেছেন। এর অন্যতম কারণ হল এই সময়ে যত চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে, সবগুলোই হিট হয়নি। একটি স্টুডিও মাঝারি নির্মাণব্যয়ের ভালো গল্প ও তুলনামূলকভাবে অপরিচিত অভিনয়শিল্পী নিয়েও জুয়া খেলতে পারে, এমন একটি উদাহরণ হল অরসন ওয়েলস পরিচালিত সিটিজেন কেইন এবং এই চলচ্চিত্রটিকে প্রায়ই সর্বকালের সেরা চলচ্চিত্র হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। অন্যদিকে, দৃঢ় ইচ্ছাশক্তিসম্পন্ন পরিচালকগণ, যেমন হাওয়ার্ড হক্স (১৮৯৬-১৯৭৭), অ্যালফ্রেড হিচকক (১৮৯৯-১৯৮০), ও ফ্রাঙ্ক ক্যাপ্রা (১৮৯৭-১৯৯১) স্টুডিওগুলোর সাথে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়ে তাদের শৈল্পিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ ঘটিয়েছেন।
স্টুডিও ব্যবস্থা ১৯৩৯ সালে তার শিখরে পৌঁছায় এবং এই বছরে ধ্রুপদী সব চলচ্চিত্র মুক্তি পায়, তন্মধ্যে ছিল দ্য উইজার্ড অব অজ, গন উইথ দ্য উইন্ড, স্টেজকোচ, মিস্টার স্মিথ গোজ টু ওয়াশিংটন, উদারিং হাইটস, অনলি অ্যাঞ্জেলস হ্যাভ উইংস, নিনোচ্কা ও মিডনাইট। স্বর্ণযুগের ধ্রুপদী বিবেচিত অন্যান্য চলচ্চিত্রসমূহ হল কাসাব্ল্যাঙ্কা, ইট্স আ ওয়ান্ডারফুল লাইফ, ইট হ্যাপেন্ড ওয়ান নাইট, কিং কং, মিউটিনি অন দ্য বাউন্টি, টপ হ্যাট, সিটি লাইট্স, রেড রিভার, দ্য লেডি ফ্রম সাংহাই, রিয়ার উইন্ডো, অন দ্য ওয়াটারফ্রন্ট, রেবেল উইদাউট আ কজ, সাম লাইক ইট হট ও দ্য মাঞ্চুরিয়ান ক্যান্ডিডেট।
স্টুডিও ব্যবস্থা ও হলিউডের স্বর্ণযুগ ১৯৪০-এর দশকের শেষভাগে বিকশিত হওয়া দুটি কারণে বিলুপ্ত হতে থাকে: প্রথমত ফেডারেল এন্টিট্রাস্ট অ্যাকশন, যা চলচ্চিত্রের নির্মাণ এর প্রদর্শনী থেকে পৃথক করে দেয় এবং দ্বিতীয়ত টেলিভিশনের আগমন।
১৯৩৮ সালে মূলধারার স্টুডিওগুলোর বড় বাজেটের চলচ্চিত্র চলাকালীন ওয়াল্ট ডিজনির স্নো হোয়াইট অ্যান্ড দ্য সেভেন ডোয়ার্ফস মুক্তি পায় এবং দ্রুতই সর্বোচ্চ আয়কারী চলচ্চিত্র হয়ে ওঠে। স্টুডিওগুলোর জন্য এটি লজ্জাজনক ব্যাপার ছিল, কারণ এই চলচ্চিত্রটি স্বাধীনভাবে প্রযোজিত অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্র ছিল, যাতে কোন স্টুডিও'র তারকা ছিল না।[৩০] ইতোমধ্যে এটি ব্লক-বুকিং অনুশীলনের জন্য হতাশাজনক হয়ে ওঠে, এতে স্টুডিওগুলো প্রেক্ষাগৃহে একই সময়ে শুধু সম্পূর্ণ বছরের চলচ্চিত্রের সময়সূচি বিক্রয় করে এবং মধ্যমমানের চলচ্চিত্রগুলোর মুক্তিকালে তাদের লাভ এনে দিতে লক-ইন পদ্ধতি ব্যবহার করে।
রুজভেল্ট প্রশাসনের প্রখ্যাত ট্রাস্ট বাস্টার সহকারী এটর্নি জেনারেল থারম্যান আর্নল্ড এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে হলিউডের আটটি বড় স্টুডিওর বিরুদ্ধে ১৯৩৮ সালের জুলাইয়ে শেরমান এন্টি-ট্রাস্ট আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ জারি করে।[৩১][৩২] ফেডারেল মামলার ফলাফলে আটটি স্টুডিও থেকে পাঁচটি স্টুডিও (প্রধান পাঁচ: ওয়ার্নার ব্রস., এমজিএম, ফক্স, আরকেও ও প্যারামাউন্ট) ১৯৪০ সালের অক্টোবরে আর্নল্ডের সাথে সমঝোতায় পৌঁছায় এবং একটি ডিক্রিতে স্বাক্ষর করে, যাতে তিন বছরের মধ্যে:
"ছোট তিন" স্টুডিওর (ইউনিভার্সাল স্টুডিওজ, ইউনাইটেড আর্টিস্ট্স ও কলাম্বিয়া পিকচার্স) কোন প্রেক্ষাগৃহের মালিকানা ছিল না এবং তারা চুক্তির ডিক্রিতে অংশগ্রহণ করতে অসম্মতি জানায়।[৩১][৩২] বেশ কয়জন স্বাধীন চলচ্চিত্র প্রযোজকও এই আপোষে খুশি ছিলেন না এবং তারা সোসাইটি অব ইন্ডিপেন্ডেন্ট মোশন পিকচার প্রডিউসার্স নামে একটি ইউনিয়ন গঠন করেন এবং ডেট্রয়েটের প্রেক্ষাগৃহসমূহ আয়ত্ত্বে রাখার জন্য প্যারামাউন্টের বিরুদ্ধে একচেটে ব্যবসায়ের অভিযোগ আনে - প্যারামাউন্ট তখনো বব হোপ, পলেট গডার্ড, ভেরোনিকা লেক, বেটি হাটন-দের মত অভিনয়শিল্পী, বিং ক্রাজবি ও অ্যালান ল্যাড-দের মত জনপ্রিয় গায়ক এবং ১৯৪২ সাল থেকে এই স্টুডিওর অভিনেতা গ্যারি কুপারের উপর কর্তৃত্ব ধরে রেখেছিল। বড় পাঁচ স্টুডিও বড় কোন পরিণতি ছাড়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় চুক্তির ডিক্রির আবশ্যকীয়তা পূরণ করতে পারেনি, কিন্তু যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর তারাও প্যারামাউন্টের সাথে হলিউড বিশ্বস্ততা-বিরোধী মামলার বিবাদী হিসেবে যোগ দেয়, ছোট তিন স্টুডিওর তাদের সাথে যোগ দেয়।[৩৩]
সুপ্রিম আদালত রায় দেয় যে বড় স্টুডিওগুলোর প্রেক্ষাগৃহ ও চলচ্চিত্র পরিবেশনার মালিকানা লাভ শেরমান অ্যান্টি-ট্রাস্ট আইনের লঙ্ঘনের শামিল। ফলে স্টুডিওগুলো তাদের চুক্তির আওতা থেকে অভিনয়শিল্পী ও কলাকুশলীদের ছাড় দিতে থাকে। এতে প্রধান হলিউড স্টুডিওগুলোর চলচ্চিত্র নির্মাণ কৌশল পরিবর্তিত হতে থাকে এবং প্রত্যেকেই সম্পূর্ণ ভিন্ন অভিনয়শিল্পী ও কলাকুশলীদের নিয়ে কাজ করতে পারে।
এই সিদ্ধান্তের ফলে মেট্রো-গোল্ডউইন-মেয়ার, প্যারামাউন্ট পিকচার্স, ইউনিভার্সাল পিকচার্স, কলাম্বিয়া পিকচার্স, আরকেও পিকচার্স, ও টুয়েন্টিয়েথ সেঞ্চুরি ফক্সের চলচ্চিত্রগুলো অচিরেই সহজে চিহ্নিত করা যেত। কিছু চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব, যেমন সেসিল বি. ডামিল, তাদের কর্মজীবনের শেষ পর্যন্ত চুক্তিবদ্ধ কলাকুশলী হিসেবে কাজ করেছেন অথবা তাদের চলচ্চিত্রে একই সৃজনশীল দলকে ব্যবহার করেছেন, ফলে ডামিলের চলচ্চিত্র ১৯৩২ বা ১৯৫৬ সালে যখনই নির্মিত হোক না কেন তা দেখতে একই রকম হত।
গড় নির্মাণ ব্যয় বাড়তে থাকলে চলচ্চিত্র নির্মাণের সংখ্যা কমতে থাকে, এবং চলচ্চিত্র শিল্পে বড় পরিবর্তন দেখা দেয়। তখন স্টুডিওগুলোর লক্ষ্য হয়ে ওঠে এমন বিনোদন প্রদান করা যা টেলিভিশন প্রচার করতে পারবে না: জমকালো ও জীবনের চেয়ে বেশি কিছু। স্টুডিওগুলো টেলিভিশনে বিক্রির উদ্দেশ্যে তাদের প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শিত চলচ্চিত্রের কিছু অংশ অন্য কোম্পানির কাছে বিক্রি করে দিতে থাকে। ১৯৪৯ সালের মধ্যে সকল বড় চলচ্চিত্র স্টুডিওগুলো তাদের প্রেক্ষাগৃহের মালিকানা ত্যাগ করে।
জোসেফ বার্স্টিন ইনকর্পোরেটেড বনাম উইলসন মামলার ১৯৫২ মিরাকল ডিসিশনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম আদালত ১৯১৫ সালের মিউচুয়াল ফিল্ম কর্পোরেশন বনাম ওহাইওর শিল্প কমিশনের মামলার অবস্থানে ফিরে যায় এবং বলা হয় যে চলচ্চিত্র শিল্পের একটি রূপ এবং সংবিধানের প্রথম সংশোধনীর সংরক্ষণের নির্দেশ দেওয়া হয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইন চলচ্চিত্রের সেন্সর করতে পারবে না। ১৯৬৮ সালের মধ্যে চলচ্চিত্র স্টুডিওগুলো তাদের সেন্সরশিপ কার্যাবলিকে খুব বেশি অবজ্ঞা করতে শুরু করে, মোশন পিকচার অ্যাসোসিয়েশন অব আমেরিকা (এমপিএএ) হেইস কোড দিয়ে তা স্থলাভিষিক্ত করে। চলচ্চিত্রের রেটিং ব্যবস্থা চালুর সাথে সাথে মূল কোডটি সমাপ্ত হয়েছে বলে সরকার সেন্সরশিপের ব্যাপারে হুমকি দিলে এই কোড লঙ্ঘিত হয়।
ধ্রুপদ-উত্তর চলচ্চিত্র শব্দগুচ্ছ নব্য হলিউডের গল্পবর্ণনার পরিবর্তিত কৌশলকে বিবৃত করতে ব্যবহৃত হয়। যুক্তি দেখানো হয় যে ধ্রুপদী যুগে দর্শকের চাহিদা অনুযায়ী নাটকীয়তা ও চরিত্রায়নে নতুন পদ্ধতি প্রদর্শিত হত: সময়কাল ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠত, গল্পে "বাঁকপূর্ণ সমাপ্তি" থাকত, এবং মুখ্য চরিত্র ও খল চরিত্রের মধ্যকার সংলাপগুলো অস্পষ্ট থাকত। ধ্রুপদ-উত্তর সময়ের গল্পবর্ণনার মূলভিত্তি একটি ছিল নোয়া চলচ্চিত্র, যেমন - রেবেল উইদাউট আ কজ (১৯৫৫) ও অ্যালফ্রেড হিচককের সাইকো (১৯৬০)।
নব্য হলিউডি ধারণাতে ১৯৬০-এর দশকে ইউরোপে উদ্ভাবিত চলচ্চিত্র প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষিত পরিচালকদের নতুন প্রজন্মের বিকাশ ঘটে। ১৯৬৭ সালের বনি অ্যান্ড ক্লাইড দিয়ে মার্কিন চলচ্চিত্রের ফিরে আসার সূত্রপাত হয় এবং চলচ্চিত্রের নতুন প্রজন্ম হিসেবে পরবর্তী কালের বক্স অফিসে সফলতা অর্জন করে।[৩৪] ফ্রান্সিস ফোর্ড কোপলা, স্টিভেন স্পিলবার্গ, জর্জ লুকাস, ব্রায়ান দে পালমা, স্ট্যানলি কুবরিক, মার্টিন স্কোরসেজি, রোমান পোলান্স্কি, ও উইলিয়াম ফ্রিডকিনদের মত চলচ্চিত্র নির্মাতাগণ চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরু করেন এবং চলচ্চিত্রের ইতিহাসে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করে বিদ্যমান ধারা ও পদ্ধতিতে উন্নয়ন সাধন করেন। ১৯৬৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত অ্যান্ডি ওয়ারহলের ব্লু মুভি-র মাধ্যমে প্রথম যৌনউত্তেজক চলচ্চিত্র নিয়ে তারকা ব্যক্তিত্বগণ (যেমন জনি কারসন ও বব হোপ) গণমাধ্যমে আলোচনা করেন,[৩৫] এবং সমালোচকগণ (যেমন রজার ইবার্ট) তা গুরুত্বের সাথে নেন।[৩৬][৩৭] দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর রাফ ব্লুমেন্থল এই ধারাকে "পর্নো চিক" নামে আখ্যা দেন এবং আধুনিক মার্কিন সংস্কৃতিতে পরবর্তী কালে একে পর্নের স্বর্ণযুগের সূচনা বলে অভিহিত করা হয়।[৩৬][৩৮][৩৯] লেখক টনি বেন্টলির মতে, জর্জ বার্নার্ড শ'র পিগম্যালিয়ন নাটক অবলম্বনে র্যাডলি মেৎজগারের ১৯৭৬ সালের দি ওপেনিং অব মিস্টি বিটোফেন এবং এর থেকে উপযোগকৃত মাই ফেয়ার লেডি মূলধারার গল্পবর্ণনা ও পটভূমিতে যুক্ত হয়[৪০] এবং স্বর্ণযুগের রাজমুকুট হিসেবে বিবেচিত হয়।[৪১]
১৯৭০-এর দশকে নব্য হলিউডি চলচ্চিত্র নির্মাতাগণের চলচ্চিত্রসমূহ সমালোচনামূলকভাবে প্রশংসিত ও ব্যবসায়িকভাবে সফলতা লাভ করে। প্রারম্ভিক নব্য হলিউড চলচ্চিত্র, যেমন বনি অ্যান্ড ক্লাইড ও ইজি রাইডার ছিল তুলনামূলকভাবে স্বল্প নির্মাণব্যয়ের এবং নৈতিকতা বিবর্জিত নায়ক ও অতিরিক্ত যৌনতা ও সহিংসতাপূর্ণ। এছাড়া ফ্রিডকিনের দি একসরজিস্ট, স্পিলবার্গের জস, কোপলা'র দ্য গডফাদার ও অ্যাপোক্যালিপ্স নাউ, স্কোরসেজির ট্যাক্সি ড্রাইভার, কুবরিকের ২০০১: আ স্পেস ওডিসি, পোলান্স্কির চায়নাটাউন, লুকাসের আমেরিকান গ্রাফিটি ও স্টার ওয়ার্স ব্যাপক সফলতা লাভ করে এবং আধুনিক "ব্লকবাস্টার"-এর উত্থানে সহায়তা করে ও স্টুডিওগুলোকে প্রচুর হিট চলচ্চিত্র নির্মাণের চেষ্টায় উৎসাহিত করে।[৪২]
এইসকল তরুণ পরিচালকদের অতিরিক্ত প্রশ্রয় কাজে লাগেনি। তারা প্রায়ই অতিরিক্ত কাজ করতে থাকে ও অতিরিক্ত ব্যয় করতে থাকে এবং এর ফলে নিজে বা স্টুডিও দেউলিয়া হয়ে থাকে। এর তিনটি প্রসিদ্ধ উদাহরণ হল কোপলার অ্যাপোক্যালিপ্স নাউ ও ওয়ান ফ্রম দ্য হার্ট এবং বিশেষভাগে মাইকেল চিমিনো'র হ্যাভেন্স গেট, যা এককভাবেই ইউনাইটেড আর্টিস্ট্সকে দেউলিয়া করে দেয়। যাই হোক, অ্যাপোক্যালিপ্স নাউ এর নির্মাণব্যয় তুলতে সক্ষম হয় এবং শ্রেষ্ঠকর্ম হিসেবে ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করে ও কান চলচ্চিত্র উৎসব হতে পাল্ম দর জয় করে।[৪৩]
১৯৮০-এর দশক ও ১৯৯০-এর দশকে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন হল হোম ভিডিও বাজারের উত্থান। স্টুডিওগুলো হোম ভিডিওকে সম্পূর্ণরূপে গ্রহণ করে যা বিস্তৃত নতুন ব্যবসায়ের সন্ধান দেয়। শোগার্লস, দ্য সিক্রেটস অব এনআইএমএইচ, ও দ্য শশ্যাংক রিডেম্পশন-এর মত চলচ্চিত্রসমূহ প্রেক্ষাগৃহে মন্দ ব্যবসা করলেও ভিডিও বাজারে সফলতা পায়। এই সময়ে চলচ্চিত্র নির্মাতারা ভিডিওটেপের ব্যবহার শুরু করেন। কোয়েন্টিন টারান্টিনো ও পল টমাস অ্যান্ডারসনদের মত পরিচালকবৃন্দ সহস্রাধিক চলচ্চিত্র এবং পূর্ববর্তী চলচ্চিত্রের সূত্র ও সম্পর্ক খোঁজে পেতে সক্ষম হন। টারান্টিনো পরিচালক রবার্ট রদ্রিগেজের সাথে একাধিকবার কাজ করেছেন। রদ্রিগেজ ১৯৯২ সালে মারপিটধর্মী এল মারিয়াচি চলচ্চিত্র পরিচালনা করেন, যা $৭,০০০ নির্মাণব্যয়ের বিপরীতে $২ মিলিয়ন আয় করে ব্যবসায়িক সফলতা অর্জন করে।
স্বাধীন চলচ্চিত্রের বিস্তৃতি ও চলচ্চিত্র নির্মাণের ব্যয় কমে যাওয়ার সাথে হোম ভিডিওর উত্থান মার্কিন চলচ্চিত্র নির্মাণের দিক পাল্টে দেয় এবং হলিউডের নিম্ন ও মধ্যম শ্রেণীর যারা স্টুডিওর আর্থিক সম্পদের সাথে পাল্লা দিতে পারতো না তদের চলচ্চিত্র নির্মাণের রেনেসাঁর দিকে নিয়ে যায়। একবিংশ শতাব্দীতে ডিভিডির উত্থানের ফলে ডিভিডি স্টুডিওগুলোর জন্য আরও লাভজনক হয়ে ওঠে এবং চলচ্চিত্রের সাথে অতিরিক্ত দৃশ্য, সম্প্রসারিত সংস্করণ ও মন্তব্য যুক্তকরণ বৃদ্ধি পায়।
বছর | টিকেট | আয় |
---|---|---|
১৯৯৫ | ১.২২ | $৫.৩১ |
১৯৯৬ | ১.৩১ | $৫.৭৯ |
১৯৯৭ | ১.৩৯ | $৬.৩৬ |
১৯৯৮ | ১.৪৪ | $৬.৭৭ |
১৯৯৯ | ১.৪৪ | $৭.৩৪ |
২০০০ | ১.৪০ | $৭.৫৪ |
২০০১ | ১.৪৮ | $৮.৩৬ |
২০০২ | ১.৫৮ | $৯.১৬ |
২০০৩ | ১.৫২ | $৯.২০ |
২০০৪ | ১.৫০ | $৯.২৯ |
২০০৫ | ১.৩৭ | $৮.৮০ |
২০০৬ | ১.৪০ | $৯.১৬ |
২০০৭ | ১.৪২ | $৯.৭৭ |
২০০৮ | ১.৩৬ | $৯.৭৫ |
২০০৯ | ১.৪২ | $১০.৬৪ |
২০১০ | ১.৩৩ | $১০.৪৮ |
২০১১ | ১.২৮ | $১০.১৭ |
২০১২ | ১.৪০ | $১১.১৬ |
২০১৩ | ১.৩৪ | $১০.৮৯ |
২০১৪ | ১.২৬ | $১০.২৭ |
২০১৫ | ১.৩২ | $১১.১৬ |
২০১৬ | ১.৩০ | $১১.২৬ |
২০১৭ | ১.২৩ | $১০.৯৯ |
দ্য নাম্বারস থেকে সংকলিত।[৪৪] |
১৯৫০-এর দশকের পর থেকেই দর্শনীয় মহাকাব্যিক চলচ্চিত্রগুলো নতুন বিস্তৃত কৌশলের সুবিধা নিয়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। ১৯৯০-এর দশকে চলচ্চিত্র নির্মাতারা প্রযুক্তিগত, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উদ্ভাবনের সুবিধা নিতে থাকে যা পূর্ববর্তী দশকে সুলভ ছিল না। ডিক ট্রেসি (১৯৯০) প্রথম ডিজিটাল সাউন্ডট্রেক সমৃদ্ধ ৩৫ মিমি চলচ্চিত্র। ব্যাটম্যান রিটার্নস (১৯৯২) ছিল ডলবি ডিজিটাল সিক্স-চ্যানেল স্টেরিও ব্যবহৃত প্রথম চলচ্চিত্র যা তখন থেকে এই শিল্পের মানদণ্ডে পরিণত হয়। কম্পিউটার গ্রাফিক্স বা সিজি'র এমন এক পর্যায়ে চলে যায় যেখানে জুরাসিক পার্ক প্রযুক্তি ব্যবহার করে বাস্তব দেখতে প্রাণি তৈরি করতে সক্ষম হয়। দ্য ফ্যান্টম মেন্যান্স (১৯৯৯) ডিজিটালে ক্যামেরায় ধারণকৃত প্রথম পূর্ণাঙ্গ চলচ্চিত্র।[৪৫]
এমনকি এদুয়ার্দো সানচেস ও দানিয়েল মিরিক পরিচালিত স্বল্প নির্মাণব্যয়ের ইন্ডি ভীতিপ্রদ চলচ্চিত্র ব্লেয়ার উইচ প্রজেক্ট (১৯৯৯) ব্যাপক বাণিজ্যিক সফলতা অর্জন করে। মাত্র $৩৫,০০০ নির্মাণব্যয়ে নির্মিত চলচ্চিত্রটি কোন বড় তারকা ও বিশেষ ইফেক্ট ছাড়াই আধুনিক বিপণন কৌশল ও অনলাইন প্রচারণা ব্যবহার করে $২৪৮ মিলিয়ন আয় করে। জর্জ লুকাসের স্টার ওয়ার্স ত্রয়ীর $১ বিলিয়ন পূর্ববর্তী পর্বের মত না হলেও ব্লেয়ার উইচ প্রজেক্ট শতকরা আয়ের দিক থেকে সর্বকালের সর্বোচ্চ আয়কারী চলচ্চিত্রের খ্যাতি অর্জন করে।
অন্যদিকে চিত্রনাট্যকারগণ শীর্ষ অভিনয়শিল্পী ও পরিচালকদের চেয়ে সাধারণত কম পারিশ্রমিক পেতে থাকেন, যা প্রতি চলচ্চিত্রের জন্য $১ মিলিয়নের চেয়েও কম। যাই হোক, চলচ্চিত্রের নির্মাণব্যয় বৃদ্ধির পিছনে এককভাবে প্রভাব রাখে বিশেষ দৃশ্য। চলচ্চিত্র পর্দায় দর্শনীয় দৃশ্য তৈরির প্রবণতা মার্কিন চলচ্চিত্রের নতুন রূপ দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১৯৯৯ সালের মধ্যে একটি ব্লকবাস্টার চলচ্চিত্রের গড় ব্যয় ছিল বিপণন ও প্রচারণার পূর্বে $৬০ মিলিয়ন এবং বিপণন ও প্রচারণার ব্যয় ছিল আরও $৮০ মিলিয়ন।
তখন থেকে মার্কিন চলচ্চিত্রসমূহ প্রধান দুটি ভাগে বিভক্ত হতে থাকে, সেগুলো হল ব্লকবাস্টার ও স্বাধীন চলচ্চিত্র। স্টুডিওগুলো নিজেদের লাভের কথা বিবেচনা করে প্রতি বছর অল্প সংখ্যক প্রচুর ব্যয়বহুল চলচ্চিত্রের উপর নির্ভরশীল হতে থাকে। এমন ব্লকবাস্টারগুলো দর্শনীয় চলচ্চিত্র, তারকা খ্যাতি, ও উচ্চ নির্মাণ গুণের দিকে জোর দিতে থাকে এবং এসবের জন্য প্রচুর ব্যয় প্রয়োজন। ব্লকবাস্টারগুলো বিপুল পরিমাণ দর্শকদের আকৃষ্ট করতে সাধারণত তারকা খ্যাতি ও প্রচুর বিজ্ঞাপনের দিকে মনোযোগ দেয়। একটি সফল ব্লকবাস্টার তাদের নির্মাণ ব্যয় তুলে আনতে ও লাভ করতে অসংখ্য দর্শকের আকৃষ্ট করে থাকে।
মার্কিন স্বাধীন চলচ্চিত্রগুলো ১৯৮০-এর দশকের শেষভাগে ও ১৯৯০-এর দশকের শুরুতে নতুনভাবে পথচলা শুরু করে যখন চলচ্চিত্র নির্মাতাদের নতুন প্রজন্ম, স্পাইক লি, স্টিভেন সোডারবার্গ, কেভিন স্মিথ ও কোয়েন্টিন টারান্টিনো যথাক্রমে ডু দ্য রাইট থিং, সেক্স, লাইজ, অ্যান্ড ভিডিওটেপ, ক্লার্কস ও রেজারভোয়ার ডগ্স চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। পরিচালনা, চিত্রনাট্য রচনা, সম্পাদনা ও অন্যান্য উপাদানের দিক থেকে, এই চলচ্চিত্রগুলো ছিল অভিনব এবং হলিউডের চলচ্চিত্রের রীতির বিরুদ্ধে যাওয়ায় কিছু ক্ষেত্রে অপ্রাসঙ্গিক। তদুপরি, এই চলচ্চিত্রগুলোর আর্থিক সফলতা ও জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে এদের মিশে যাওয়ার ফলে স্বাধীন চলচ্চিত্রের বাণিজ্যিক সক্ষমতা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। তখন থেকে স্বাধীন চলচ্চিত্র শিল্প আরও স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত হয় এবং মার্কিন চলচ্চিত্রের আরও প্রভাব বিস্তার করে। অনেক বড় স্টুডিও এই ধরনের চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য সহায়ক প্রতিষ্ঠান গঠন করেন, উদাহরণস্বরূপ, ফক্স সার্চলাইট পিকচার্স।
একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে মূলধারার চলচ্চিত্রের বাজারে পূর্বে যেসব চলচ্চিত্রের উপস্থিতি ক্ষীণ বলে গণ্য করা হতো তা মার্কিন বক্স অফিসে আরও প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে থাকে। এই ধরনের চলচ্চিত্রের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল বিদেশি ভাষার ক্রাউচিং টাইগার, হিডেন ড্রাগন ও হিরো এবং প্রামাণ্য চলচ্চিত্র, যেমন - সুপার সাইজ মি, মার্চ অব দ্য পেঙ্গুইনস, ও মাইকেল মুরের বোলিং ফর কলাম্বিন ও ফাররেনহাইট নাইন/ইলেভেন।
১৯৩০-এর দশকে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানরা হলিউডে অর্থ উপার্জনের সুযোগ দেখেন। রাষ্ট্রপতি ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্ট হলিউডের সাথে বড় অংশীদারত্বে যান। তিনি প্রথমবারের মত হলিউডের তারকাদের নিয়ে জাতীয় ক্যাম্পেইন করার সুযোগ ব্যবহার করেন। মেলভিন ডগলাস ১৯৩৯ সালে ওয়াশিংটন সফরে যান এবং প্রধানতম নতুন বণিকদের সাথে সাক্ষাৎ করেন।
প্রধান অভিনয়শিল্পদের সত্যায়ন পত্র স্বাক্ষর করা হয়, বেতার উপস্থিতি এবং মুদ্রিত বিজ্ঞাপন তৈরি করা হয়। বৃহত্তর দর্শকদের নিকট দলের রাজনৈতিক মতাদর্শ প্রচারের জন্য চলচ্চিত্র তারকাদের ব্যবহার করা হত। ১৯৬০-এর দশকের মধ্যে ওয়াশিংটনে আসা নতুন ও তরুণ রাষ্ট্রপতি জন এফ. কেনেডি ও ফ্রাঙ্ক সিনাত্রার সাথে তার গভীর বন্ধুত্ব জাঁকজমকের নতুন যুগের দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। হলিউডের শেষ মুঘলরা চলে যায় এবং তরুণ ও নতুন নির্বাহী ও প্রযোজকগণ আরও উদারপন্থী ধারণার সূত্রপাত ঘটাতে থাকেন।
তারকাখ্যাতি ও অর্থ রাজনীতিবিদদের উচ্চ শ্রেণী ও জাঁকজমকপূর্ণ হলিউডি জীবনযাত্রার প্রতি আকৃষ্ট করে তোলে। রোনাল্ড ব্রাউনস্টাইন তার "দ্য পাওয়ার অ্যান্ড দ্য গ্লিটার" বইতে লিখেন, ১৯৭০ ও ১৯৮০-এর দশকে রাজনীতিতে টেলিভিশন গুরুত্বপূর্ণ নতুন মাধ্যম ছিল এবং হলিউড সেই মাধ্যমে অভিনয়শিল্পীদের তাদের রাজনৈতিক মতাদর্শ সম্পর্কে কথা বলার সুযোগ করে দেয়, যেমন জেন ফন্ডা ভিয়েতনাম যুদ্ধের বিরুদ্ধে কথা বলেন।[৪৬] অনেক তারকা ও প্রযোজক ডেমোক্র্যাটিক দলকে সমর্থন দেওয়ার প্রবণতা দেখা যায়, তথাপি এই যুগে অনেক রিপাবলিকান অভিনয়শিল্পী ও প্রযোজকের জন্ম হয়। সাবেক অভিনেতা রোনাল্ড রেগন ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর হন এবং পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪০তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে অধিষ্ঠিত হন। এই ধারাবাহিকতায় আর্নল্ড শোয়ার্জনেগার ২০০৩ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর হন।
বর্তমানে হলিউড থেকে অনুদান দিয়ে ফেডারেল রাজনীতির ফান্ড গঠন করা হয়।[৪৭] উদাহরণস্বরূপ, ২০০৭ সালের ২০শে ফেব্রুয়ারি বেভারলি হিল্টনে ডেমোক্যাটিকদের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মনোনীত বারাক ওবামাকে নিয়ে $২,৩০০-এ-প্লেট হলিউড উৎসব করা হয়, এর আমন্ত্রয়িতা ছিলেন ড্রিমওয়ার্কসের প্রতিষ্ঠাতা ডেভিড গেফেন, জেফ্রি কাৎজেনবের্গ ও স্টিভেন স্পিলবার্গ।[৪৭]
১৯১২ সালে মার্কিন চলচ্চিত্র কোম্পানিগুলো ঘরোয়া বাজারে প্রতিযোগিতায় ডুবতে বসে। নিকলোডিয়ন বুমের দ্বারা সৃষ্ট বিশাল চাহিদা অনুযায়ী চলচ্চিত্র নির্মাণ করে দর্শকদের সন্তুষ্ট করা দুস্কর হয়ে পড়ে। মোশন পিকচার্স পেটেন্টস কোম্পানির সদস্যরা, তথা এডিসন স্টুডিও-ও ফরাসি, ইতালীয় ও অন্যান্য আমদানিকৃত চলচ্চিত্রের প্রতিযোগিতা কমানোর উপায় খুঁজতে থাকে। এই কোম্পানিগুলোর কাছে তখন চলচ্চিত্র রফতানি করাটা লাভজনক মনে হয়। ভিটাগ্রাফ স্টুডিওজ প্রথম মার্কিন কোম্পানি হিসেবে ইউরোপে তাদের নিজস্ব পরিবেশনা অফিস খোলে। তারা ১৯০৬ সালে লন্ডনে একটি শাখা স্থাপন করে এবং এর কিছুদিন পরেই প্যারিসে দ্বিতীয় শাখা খোলে।[৪৮]
অন্যান্য মার্কিন কোম্পানিগুলোও বিদেশি বাজারে যেতে শুরু করে এবং ১৯২০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে দেশের বাইরে মার্কিন পরিবেশনা বিস্তৃতি লাভ করতে শুরু করে। মূলত, বেশিরভাগ কোম্পানিই তাদের চলচ্চিত্র পরোক্ষভাবে বিক্রয় করত। যাই হোক, যেহেতু তারা বৈদেশিক বাণিজ্যে অনভিজ্ঞ ছিল, তারা বিদেশি পরিবেশনা ফার্ম বা রফতানি প্রতিনিধির নিকট সাধাসিধেভাবে তাদের চলচ্চিত্রের বিদেশি স্বত্ব বিক্রয় করত। ধীরে ধীরে, লন্ডন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চলচ্চিত্রের আন্তর্জাতিক প্রচারণার কেন্দ্র হতে শুরু করে।[৪৮]
অনেক ব্রিটিশ কোম্পানি এই ব্যবসায়ের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে লাভ করতে থাকে এবং তা করার ফলে তারা যুক্তরাজ্যের বাজার থেকে মার্কিন চলচ্চিত্রের জন্য বড় অংশ প্রদান করে ব্রিটিশ চলচ্চিত্রগুলোর বাজারকে দুর্বল করে দিতে থাকে। ১৯১১ সালের মধ্যে গ্রেট ব্রিটেনে আমদানিকৃত চলচ্চিত্রে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ ভাগ চলচ্চিত্র ছিল মার্কিন। মার্কিন চলচ্চিত্রগুলো জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডেও ভালো ব্যবসা করতে থাকে।[৪৮]
সাম্প্রতিককালে, বিশ্বায়ন তীব্রতর হতে শুরু করেছে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার মুক্ত বাণিজ্যের কর্মসূচি ও সাংস্কৃতিক পণ্যের বাণিজ্যের প্রচারে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। হলিউড বিশ্বব্যাপী সাংস্কৃতিক উৎস হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। মার্কিন বহুজাগতিক গণমাধ্যম সংস্থার মাধ্যমেই শুধু নয় বরং বিভিন্ন সংস্কৃতির জনপ্রিয় আবেদন নিয়ে বিপুল-নির্মাণব্যয়ের চলচ্চিত্র নির্মাণের অদ্বিতীয় সক্ষমতার কারণে হলিউডের এই সফলতা রফতানির বাজারে ছড়িয়ে পড়ছে।[৪৯]
ইতোমধ্যে, হলিউড চীনা বাজারে গভীরভাবে প্রবেশ করেছে, যদিও এতে চীনের সেন্সর ব্যবস্থার প্রভার রয়েছে। চীনে নির্মিত চলচ্চিত্রগুলো সেন্সরে কঠোরভাবে পরিত্যাজ্য বিষয়গুলো হল "ভূত, সহিংসতা, খুন, ভয় ও শয়তান।" এই ধরনের গল্পের উপাদানে কর্তন প্রয়োজন হতে পারে। দাপ্তরিক চীনা মানদণ্ড অনুসরণ করে হলিউডের "অনুমোদিত" চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে হয়, কিন্তু নান্দনিক মানদণ্ডের দিয়ে বক্স অফিসের লাভ পরিত্যাগ করতে হয়। এমনকি, চীনা দর্শকবৃন্দের কাছে ভালো মার্কিন চলচ্চিত্রগুলোর তাদের নিজেদের ভাষায় ডাবিঙের পর মুক্তির জন্য অপেক্ষা করা বিরক্তিকর মনে হয়।[৫০]
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চলচ্চিত্র শিল্প হলিউডে নারীরা সৃজনশীল অবস্থানের দিক থেকে সংখ্যাতীতভাবে কম প্রতিনিধিত্ব করছে। এই কম প্রতিনিধিত্ব করাকে "সেলুলয়েড সিলিং" নামে অভিহিত করা হয়, যা কর্মসংস্থানে বৈষম্যের পরিভাষা "গ্লাস সিলিং"-এর একটি রূপভেদ। ২০১৩ সালে সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক গ্রহীত অভিনেতাগণ সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক গ্রহীতা অভিনেত্রীদের চেয়ে ২.৫ গুণ বেশি পারিশ্রমিক পেয়েছে।[৫১] বয়োজ্যেষ্ঠ অভিনেতারা বয়সে তাদের সমকক্ষ নারীদের থেকে বেশি পারিশ্রমিক পেয়ে থাকে, নারী চলচ্চিত্র তারকারা বেশিরভাগই গড়ে প্রতি চলচ্চিত্রে সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক পেয়ে থাকে ৩৪ বছর বয়সে, অন্যদিক পুরুষ তারকারা বেশি উপার্জন করে ৫১ বছর বয়সে।[৫২]
২০১৩ সালে স্যান ডিয়েগো স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অব উইমেন ইন টেলিভিশন অ্যান্ড ফিল্মের সেলুলয়েড সিলিং প্রতিবেদনে ২০১২ সালের ২৫০ সর্বোচ্চ আয়কারী চলচ্চিত্রের ২,৮১৩ জনের তালিকা সংগ্রহ করে।[৫৩] তালিকায় নারীর সংখ্যা নিম্নরূপ:
দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর একটি নিবন্ধে বলা হয়েছে যে ২০১৩ সালের মাত্র ১৫% শীর্ষ চলচ্চিত্রে নারীরা মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছে।[৫৪] লেখক উল্লেখ করেন যে নারীর কথা বলার মত উল্লেখযোগ্য চরিত্রে কাজের শতাংশ ১৯৪০-এর দশকের চেয়ে খুব বৃদ্ধি পায়নি, ১৯৪০-এর দশকের এই সংখ্যা ছিল শতকরা ২৫ থেকে ২৮ ভাগ। ১৯৯৮ সাল থেকে পর্দার পিছনে পরিচালনা ছাড়া অন্য কাজে নারীর প্রতিনিধিত্বের সংখ্যা মাত্র ১ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। নারীরা ২০১২ সালে শীর্ষ আয়কারী চলচ্চিত্রের পরিচালনার দিক থেকে ১৯৯৮ সালের মত একই (৯%) রয়ে গেছে।[৫১]
মার্কিন চলচ্চিত্র শিল্প বিভিন্ন সংস্কৃতি ও বৈচিত্র চরিত্রকে জাতিগত ছাঁচে উপযুক্তভাবে ফুটিয়ে তুলতে চেষ্টা করে থাকে।[৫৫] উদাহরণস্বরূপ, লাতিন আমেরিকানদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে লাতিনো পৌরষ বা লাতিনা কলহপরায়ণ নারীর মত লিঙ্গ নির্দেশক চরিত্র, গ্যাঙের সদস্য, (অবৈধ) অভিবাসী, বা বিনোদনদাতা হিসেবে দেখানো হয়।[৫৬] রুশ বা রুশ মার্কিনীদের বর্বর মস্তান, নির্দয় এজেন্ট ও দুষ্কৃতিকারী হিসেবে দেখানো হয়।[৫৭][৫৮][৫৯] ইতালীয় বা ইতালীয় মার্কিনীদের সংগঠিত অপরাধ বা মাফিয়াচক্রের সাথে জড়িত থাকতে দেখা যায়।[৬০][৬১][৬২] কোরীয়-মার্কিন অভিনেতা ড্যানিয়েল ডে কিমের মতে, এশীয় বা এশীয় মার্কিন পুরুষদের রহস্যময় দুষ্কৃতিকারী বা খোঁজাদের মত নিষ্কাম প্রকৃতির দেখানো হয়ে থাকে।[৬২] ৯/১১ এর পূর্বে আরব ও আরব মার্কিনীদের প্রায়ই জঙ্গী হিসেবে দেখানো হত।[৬২]
Note: in order to provide a fair comparison between movies released in different years, all rankings are based on ticket sales, which are calculated using average ticket prices announced by the MPAA in their annual state of the industry report.