মার্গারেট ব্রাউন | |
---|---|
ইংরেজি: Margaret Brown | |
![]() আনু. ১৯১০-এর দশকে ব্রাউন | |
জন্ম | মার্গারেট টবিন ১৮ জুলাই ১৮৬৭ |
মৃত্যু | ২৬ অক্টোবর ১৯৩২ নিউ ইয়র্ক সিটি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র | (বয়স ৬৫)
সমাধি | সেমেটারি অব দ্য হলি রুড, ওয়েস্টবেরি, নিউ ইয়র্ক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র |
অন্যান্য নাম | মার্গারেট টবিন ব্রাউন, ম্যাগি ব্রাউন, মলি ব্রাউন, মিসেস জেমস জে. ব্রাউন |
পেশা | স্বেচ্ছাসেবক, জনহিতৈষী, ও ভোটাধিকার আন্দোলনকর্মী |
পরিচিতির কারণ | টাইটানিক জাহাজ ডুবি থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তি |
দাম্পত্য সঙ্গী | জেমস জোসেফ ব্রাউন (বি. ১৮৮৬; separated ১৯০৯) |
সন্তান | ২ |
মার্গারেট ব্রাউন (ইংরেজি: Margaret Brown; কুমারী নাম: টবিন, ১৮ জুলাই ১৮৬৭ - ২৬ অক্টোবর ১৯৩২), মরণোত্তর "আনসিঙ্কেবল মলি ব্রাউন" নামে পরিচিত, একটি মার্কিন সামাজিক অবস্থাসম্পন্ন নারী ও জনহিতৈষী। তিনি ১৯১২ সালে টাইটানিক জাহাজ ডুবি থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তি। তিনি ৬ নং লাইফবোটে নিযুক্তদের দলকে কেউ জীবিত আছে কিনা তা দেখতে ধ্বংসস্তূপের দিকে যেতে বলে ব্যর্থ হন।[১]
তার জীবদ্দশায় তার বন্ধুরা তাকে "ম্যাগি" নামে ডাকত, কিন্তু তার মৃত্যুর পর শোক সংবাদগুলোতে তাকে "আনসিঙ্কেবল মিসেস ব্রাউন" বলে অভিহিত করে।[২] জিন ফাউলার তার ১৯৩৩ সালের টিম্বারলাইন বইতে তাকে "মলি ব্রাউন" বলে উল্লেখ করেন।[৩] পরের বছর সংবাদপত্রে তাকে "আনসিঙ্কেবল মিসেস ব্রাউন" ও "মলি ব্রাউন" বলে অভিহিত করা হয়।[৪]
মার্গারেট টবিন ১৮৬৭ সালের ১৮ই জুলাই[৫][৬][৭] মিজুরি অঙ্গরাজ্যের হ্যানিবল শহরে মিসিসিপি নদীর তীরে ডেঙ্কলার অ্যালিতে জন্মগ্রহণ করেন।[৬][ক] তিন কক্ষ-বিশিষ্ট যে কুঠিরে তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন, সেটি এখন মলি ব্রাউনের জন্মস্থান ও জাদুঘর, যা হ্যানিবলের ৬০০ বাটলার স্ট্রিটে অবস্থিত।[৬][৮] তার পিতা জন টবিন ও মাতা জোহ্যানা কলিন্স।[৯] তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আগত আইরিশ ক্যাথলিক অভিবাসী ছিলেন।[১০][১১] মার্গারেটের চার ভাইবোন ছিল, তারা হলেন ড্যানিয়েল, মাইকেল, উইলিয়াম ও হেলেন। মার্গারেটের পিতামাতা দুজনেই পূর্বে বিবাহিত ছিলেন এবং স্বামী-স্ত্রীরা মারা গিয়েছিলেন। মার্গারেটের পিতার প্রথম বিয়ে থেকে তার ক্যাথরিন ব্রিজেট নামে এক সৎ বোন এবং মায়ের প্রথম বিয়ে থেকে ম্যারি অ্যান কলিন্স নামে এক সৎ বোন ছিল।[১২] পরিবারের সকলে তাকে ম্যাগি নামে ডাকতেন। তিনি তার খালা ম্যারি ওলিয়ারির গ্রামার স্কুলে পড়াশোনা করেন। স্কুলটি তার বাড়ির পার্শ্ববর্তী রাস্তায় ছিল, এর নিকটে অবস্থিত হ্যানিবল গ্যাস ওয়ার্কসে তার পিতা শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। তাদের এলাকাটি আইরিশ ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের বসতি ছিল।[১৩]:৬৩
১৮ বছর বয়সে মার্গারেট তার ভাই ড্যানিয়েল, সৎ বোন ম্যারি অ্যান কলিন্স এবং ম্যারি অ্যানের স্বামী জন ল্যান্ড্রিগানের সাথে কলোরাডোর লিডভিলে চলে যান। মার্গারেট ও ড্যানিয়েল দুই কক্ষ-বিশিষ্ট একটি কাঠের কেবিনে থাকতেন। মার্গারেট সেখানে একটি দোকানে কার্পেট ও ঝালর সেলাইয়ের কাজ করতেন[১২] এবং ড্যানিয়েল খনিতে কাজ করতেন।[১৪]
মার্গারেট লিডভিলে জেমস জোসেফ ব্রাউনের (১৮৫৪-১৯২২, ডাকনাম "জে.জে.") সাথে পরিচিত হন। জে.জে. ধনী ছিলেন না, কিন্তু মার্গারেট তাকে ভালোবাসতেন এবং তাকে বিয়ে করেন। জে.জে.-এর মৃত্যুর পর মার্গারেট বলেন,
আমি একজন ধনী ব্যক্তিকে চেয়েছিলাম, কিন্তু আমি জিম ব্রাউনকে ভালোবাসতাম। আমি ভাবতাম কীভাবে আমি আমার পিতার জন্য সুখ এনে দিতে পারি এবং কীভাবে এই ক্লান্ত বৃদ্ধ মানুষকে আমার আকাঙ্ক্ষার জিনিসগুলো দিতে পারে এমন একজন পুরুষের অপেক্ষায় আমি অবিবাহিত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। জিম আমাদের মতই দরিদ্র ছিল এবং কোন ভাল সুযোগ ছিল না। আমি নিজেই সে সময়ে কঠোর পরিশ্রম করতাম। আমি জিমকে ভালোবাসতাম, কিন্তু তিনি দরিদ্র ছিলেন। সবশেষে, আমি সিদ্ধান্ত নেই যে আমি ধনী লোক যার অর্থের প্রতি আমার আকর্ষণ রয়েছে তার চেয়ে দরিদ্র লোকের সাথে ভালো থাকব যাকে আমি ভালোবাসি। তাই আমি জিম ব্রাউনকে বিয়ে করেছিলাম।[১৫][১৬]:৪৪–৪৫
মার্গারেট ও জে.জে. ১৮৮৬ সালের ১লা সেপ্টেম্বর লিডভিল অ্যানুসিয়েশন চার্চে বিয়ে করেন।[১২] তাদের দুই সন্তান ছিল, তারা হলেন লরেন্স পালমার ব্রাউন (১৮৮৭-১৯৪৯), ল্যারি নামে পরিচিত এবং ক্যাথরিন এলেন ব্রাউন (১৮৮৯-১৯৬৯), হেলেন নামে পরিচিত।[১৬]:৫১, ৫২, ১১৭ তারা তাদের ভাইবোনের তিন কন্যাকেও লালন পালন করেন, তারা হলেন গ্রেস, ফ্লরেন্স ও হেলেন টবিন।[১৩]:xxiv
১৮৯৩ সালে লিটল জনি খনিতে বিপুল পরিমাণ আকরিক সিম অনুসন্ধানে জে.জে.-এর খনির প্রকৌশল প্রচেষ্টা কার্যকর হলে ব্রাউন পরিবার প্রচুর সম্পদ অর্জন করে।[১৬]:৫৬–৫৭ নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান আইবেক্স মাইনিং কোম্পানি জে.জে.কে ১২,৫০০টি স্টকের শেয়ার পুরস্কার দেয় এবং তাকে বোর্ডে আসন দেয়।[১৭] লিডভিলে মার্গারেট সোপ কিচেনে কাজ করে খনিতে কর্মরত পরিবারদের সহায়তা করতেন।[১৮]
১৮৯৪ সালে ব্রাউন দম্পতি ডেনভারে ৩০,০০০ মার্কিন ডলারের বিনিময়ে একটি ভিক্টোরীয় ম্যানসন ক্রয় করে, যা বর্তমানে মলি ব্রাউন হাউজ নামে পরিচিত। ১৮৯৭ সালে তারা সাউথওয়েস্ট ডেনভারে বিয়ার ক্রিকের নিকট অ্যাভোকা লজ নামে একটি গ্রীষ্মকালীন বাড়ি নির্মাণ করেন। মার্গারেট ডেনভার ওম্যান্স ক্লাবের চার্টার সদস্য হন।[৭] এই ক্লাবের উদ্দেশ্য ছিল শিক্ষা ও জনহিতৈষী কাজের মাধ্যমে নারীদের জীবনমানের উন্নয়ন। সামাজের উচ্চস্তরের নারীদের সাথে খাপ খাইয়ে নিয়ে ব্রাউন শিল্পকলায় আকৃষ্ট হন এবং ফরাসি, জার্মান, ইতালীয় ও রুশ ভাষায় সাবলীলভাবে কথা বলতে শুরু করেন। ফরাসি সংস্কৃতির প্রতি তার ভালোবাসা প্রচারের জন্য ব্রাউন যৌথ উদ্যোগে ডেনভারে আলেয়ঁস ফ্রঁসেজের একটি শাখা প্রতিষ্ঠা করেন।[১৩]:৩৪, ১৪৫–১৪৬ এছাড়া তিনি নারীদের ভোটাধিকারের জন্য লবিং করেন।[১৯][২০]
ব্রাউন যে সামাজিক জীবন যাপন উপভোগ করছিলেন জে.জে. তাতে আগ্রহী ছিলেন না। ফলে তারা একে অপরের থেকে দূরে সরে যেতে থাকেন।[১৯] বিবাহের ২৩ বছর পর ১৯০৯ সালে মার্গারেট ও জে.জে. বিচ্ছেদের চুক্তি স্বাক্ষর করেন। তিনি ভ্রমণ ও রাজনৈতিক কাজের জন্য প্রতি মাসে ৭০০ মার্কিন ডলার পেতেন।[১৩]:৬৭
ব্রাউন ডেনভারের ক্যাথিড্রাল অব দি ইমাকিউলেট কনসেপশনের জন্য তহবিল সংগ্রহে সহায়তা করেন। ১৯১১ সালে এর কাজ সম্পূর্ণ হয়। তিনি নিঃস্ব শিশুদের সহায়তা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কিশোর আদালত প্রতিষ্ঠার জন্য বিচারক বেন লিন্ডসির সাথে কাজ করেন।[৭]
ব্রাউন ১৯১২ সালের প্রথম মাসগুলো প্যারিসে কাটান। সেখানে তিনি তার কন্যাকে দেখতে যান এবং চতুর্থ জন জ্যাকব অ্যাস্টরের পার্টিতে অংশগ্রহণ করেন। ডেনভারে তার বড় নাতী লরেন্স পালমার ব্রাউন জুনিয়রের অসুস্থ্যতার খবর পেয়ে তিনি তৎক্ষণাৎ নিউ ইয়র্কের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়া প্রথম উপলব্ধ লাইনার টাইটানিকের প্যাসেজ বুক করেন।[১৩]:১–২ শুরুতে তার কন্যা হেলেনের তাকে সঙ্গ দেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু প্যারিসের সর্বনে অধ্যয়নরত হেলেন বন্ধুদের সাথে লন্ডনে ভ্রমণের সিদ্ধান্ত নেন।[১৩]:২–৩ ব্রাউন ১০ই এপ্রিল সন্ধ্যায় প্রথম শ্রেণির যাত্রী হিসেবে টাইটানিকে ওঠেন, তাকে ফ্রান্সের শেরবুর্গ থেকে এসএস নোম্যাডিকে করে পাঠানো হয়েছিল[১৩]:৩–৪ এবং জাহাজটি সেই রাতে নিউ ইয়র্ক সিটির উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে।[২১]
১৯১২ সালের ১৪ই এপ্রিল রাত ১১:৪০ ঘটিকায় হিমশৈলের সাথে সংঘর্ষে ১৫ই এপ্রিল রাত ২:২০ ঘটিকায় টাইটানিক ডুবে যায়।[১][২১] ব্রাউন অন্যান্য যাত্রীদের লাইফবোটে ওঠতে সহায়তা করে, কিন্তু অবশেষে ৬ নং লাইফবোটে ওঠে জাহাজ ত্যাগ করেন।[১] আরএমএস টাইটানিকের ১,৫০০ জনেরও বেশি যাত্রী মারা যান; জাহাজে মোট ২,২২৪ জন যাত্রী ছিলেন।[২১]
১৯৩২ সালে ব্রাউনের মৃত্যুর পর বিভিন্ন লেখকগণ তাকে "মলি ব্রাউন" ও "দি আনসিঙ্কেবল মিসেস ব্রাউন" বলে আখ্যায়িত করেন,[৩][৪] কারণ তিনি জাহাজটি খালি করতে সহায়তা করেন, তার লাইফবোটে নিজে একটি দাঁড় নিয়ে লাইফবোটে নিযুক্ত দলকে ফিরে গিয়ে আরও যাত্রীদের বাঁচাতে অনুরোধ করেন।[১][২১]
তিনি ১৯১৪ সালে লাডলো গণহত্যায় মৃত খনি শ্রমিক ও তাদের পরিবারের সহায়তায় এগিয়ে আসেন।[১৯] তিনি সে বছর রোড আইল্যান্ড অঙ্গরাজ্যের নিউপোর্ট শহরে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক নারী অধিকার সম্মেলন আয়োজনে সহায়তা করেন।[২২]
১৯২০-এর দশকে মার্গারেট ব্রাউন তার ব্যক্তিগর পছন্দের প্রতি দৃষ্টি নিবন্ধ করেন, বিশেষ করে মঞ্চনাটকের প্রতি। তিনি ১৯৩২ সালের ২৬শে অক্টোবর রাত ১০:৫৫ ঘটিকায় ৬৫ বছর বয়সে নিউ ইয়র্ক সিটির বার্বিজন হোটেলে নিদ্রাবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যু পরবর্তী ময়নাতদন্তে প্রকাশিত হয় যে তার মস্তিষ্কে টিউমার ছিল। ১৯৩২ সালে ৩১শে অক্টোবর তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও পরিবারের উপস্থিতিতে ছোট পরিসরে একটি শেষকৃত্যের পর তাকে নিউ ইয়র্কের ওয়েস্টবেরির সেন্ট ব্রিজিড্স সেমেটারিতে, যা বর্তমানে সেমেটারি অব দ্য হলি রুড নামে পরিচিত, জে.জে.-এর পাশে সমাহিত করা হয়।[২][২৩] শেষকৃত্যে গান গাওয়া হয়েছিল, কিন্তু কোন প্রশংসাসূচক বক্তব্য ছিল না।[২]
১৯৮৫ সালে কলোরাডো উইমেন্স হল অব ফেমে ব্রাউনের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়।[১৯]