ডক্টর অব মেডিসিন মার্সেলো মালপিজি | |
---|---|
জন্ম | |
মৃত্যু | ২৯ নভেম্বর ১৬৯৪ | (বয়স ৬৬)
জাতীয়তা | ইতালীয় |
মাতৃশিক্ষায়তন | বোলোনা বিশ্ববিদ্যালয় |
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন | |
কর্মক্ষেত্র | শারীরবিদ্যা, টিস্যুতত্ত্ব, ভ্রূণতত্ত্ব, চিকিৎসাবিদ্যা |
প্রতিষ্ঠানসমূহ | বোলোনা বিশ্ববিদ্যালয় পিসা বিশ্ববিদ্যালয় মেসিনা বিশ্ববিদ্যালয় |
ডক্টরাল উপদেষ্টা | জিওভান্নি বোরেলি |
ডক্টরেট শিক্ষার্থী | আন্তোনিও মারিও ভালসালভা |
মার্সেলো মালপিজি (১০ মার্চ ১৬২৮-২৯ নভেম্বর ১৬৯৪) একজন ইতালীয় জীববিজ্ঞানী ও চিকিৎসক ছিলেন। তিনি আণুবীক্ষণিক শারীরবিদ্যা ও টিস্যুতত্ত্বের প্রতিষ্ঠাতা এবং শারীরবিদ্যা ও ভ্রূণতত্ত্বের জনক। ক্ষরণতন্ত্রের বিভিন্ন অঙ্গাণুর নাম তার নামে নামকরণ করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে মালপিজীয় নালিকা ও মালপিজীয় পিরামিড। উদ্ভিদবিজ্ঞানে মালপিজিয়াসিয়ে গোত্রের নামকরণও তার নামানুসারে করা হয়েছে। তিনিই সর্বপ্রথম কৈশিক নালি পর্যবেক্ষণ করেন। ইয়ান সোয়ার্মডামের পরে তিনিই প্রথম অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে লোহিত রক্ত কণিকা পর্যবেক্ষণ করেন। তার রচনা "ডি পলিপো কর্ডিস"(১৬৬৬) রক্তের গঠন বুঝতে সাহায্য করে। রক্ত তঞ্চন প্রক্রিয়া সম্পর্কে জ্ঞান লাভেও রচনাটি সহায়তা করে। তিনি সেখানে বর্ণনা করেন, হৃৎপিণ্ডের বাম ও ডান পার্শ্বে রক্ত তঞ্চন প্রক্রিয়া কীভাবে ভিন্ন হয়।[১]
অণুবীক্ষণ যন্ত্র ব্যবহার করে মালপিজি বুঝতে সক্ষম হন, অমেরুদণ্ডী প্রাণী ফুসফুস নয়, বরঞ্চ ট্রাকিয়া নামে দেহত্বকে অবস্থিত ছোট গর্তের সাহায্যে শ্বসনকার্য চালায়।[২] মালপিজি মস্তিষ্কের শারীরতত্ত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত অধ্যয়ন করেন। মালপিজির মতে, মস্তিষ্ক প্রকৃতপক্ষে একটি গ্রন্থি (যদিও মস্তিষ্ক ও গ্রন্থি এক জিনিস নয়)। তবে আধুনিক প্রাণরসবিদ্যার তত্ত্ব অনুযায়ী, মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস হরমোন ক্ষরণকারী অঙ্গাণু হিসেবে স্বীকৃত।
উদ্ভিদবিজ্ঞান ও প্রাণিবিজ্ঞানে মালপিজির ব্যাপক জ্ঞান ছিল। লন্ডনের রাজকীয় সমিতি ১৬৭৫ ও ১৬৭৯ সালে দুই খণ্ডে উদ্ভিদবিজ্ঞান ও প্রাণিবিজ্ঞানের উপর মালপিজির রচনা প্রকাশ করে। ১৬৮৭ ও ১৬৯৭ সালে এর উন্নততর সংস্করণ প্রকাশিত হয়।
মালপিজি ১৬২৮ সালের ১০ মার্চ ইতালির বোলোনা শহরের নিকটে ক্রেভালকোরে জন্মগ্রহণ করেন। মালপিজি সচ্ছল পরিবারের সন্তান। ক্রেভালকোর শহরেই তিনি শিক্ষা গ্রহণ করেন। ১৭ বছর বয়সে তিনি বোলোনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৬৪৫ সালে মালপিজি ব্যাকরণগত অধ্যয়ন সম্পন্ন করেন। ১৬৪৯ সালে তিনি দর্শনশাস্ত্র বিষয়ে পড়াশোনা করেন। মা ফ্রান্সেস নাটালিসের অনুরোধে তিনি পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে পড়াশোনা করতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। মালপিজির বাবা মা ও পিতামহী অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের দেখাশোনা করার জন্য তিনি বোলোনা প্রত্যাবর্তন করেন। বোলোনা বিশ্ববিদ্যালয়ে মালপিজি এরিস্টটলীয় দর্শন অধ্যয়ন করেন। কর্তৃপক্ষের বিরোধিতা সত্ত্বেও তিনি ১৬৫৩ সালে দর্শন ও চিকিৎসাবিদ্যায় পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৬৬৭ সালে হেনরি ওল্ডেনবুর্গ তাকে রাজকীয় সমিতির ফেলো পদে যোগদানের আহবান জানান।
১৬৫৬ সালে পিসকানির দ্বিতীয় ফার্দিনান্দ মালপিজিকে পিসা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করতে আমন্ত্রণ জানান। সেখানে মালপিজি ও জিওভান্নি বোরেলির মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপিত হয়। মালপিজি রক্ত সংবহনতন্ত্র সম্পর্কে সে সময়ে প্রচলিত ধারণার বিরোধিতা করেন এবং নতুন করে এ বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ গবেষণা করেন।
১৬৫৬ সালে বোলোনা বিশ্ববিদ্যালয়ে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে মালপিজি কর্মজীবন শুরু করেন। অতঃপর তিনি পিসা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন। সেখানেই তিনি মানব শারীরতত্ত্বের পরীক্ষামূলক অধ্যয়ন করেন।
১৬৬৩ সালে মালপিজি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর গ্রহণ করেন। ১৬৬৯ সালে তিনি রয়েল সোসাইটির ফেলো নির্বাচিত হন। পোপ একাদশ ইনোসেন্ট ১৬৯১ সালে মালপিজিকে রোমে তার চিকিৎসক হিসেবে কাজ করার আমন্ত্রণ দেন। মালপিজি উক্ত আমন্ত্রণ সাদরে গ্রহণ করেন এবং মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত রোমেই অবস্থান করেন।
৩৮ বছর বয়সে মালপিজি শারীরতাত্ত্বিক অধ্যয়নে প্রবৃত্ত হন। তিনি শুরুতে মৃতদেহ ব্যবচ্ছেদের মাধ্যমে গবেষণা শুরু করলেও পরবর্তীতে অণুবীক্ষণ যন্ত্র ব্যবহার করেন।
১৬৬১ সালে মালপিজি ব্যাঙের ফুসফুসে কৈশিক নালিকা পর্যবেক্ষণ করেন। [৩]
১৬৭৯ সালে মালপিজি শিম ও তরমুজের বৃদ্ধির পর্যায়গুলোর অনিন্দ্যসুন্দর চিত্র অঙ্কন করেন। তার সম্মানে সুইডিশ জীববিজ্ঞানী ক্যারোলাস লিনিয়াস মালপিজিয়া গণের নামকরণ করেন।
|তারিখ=
(সাহায্য)