লিঙ্গ বৈষম্য সূচক | |
---|---|
মান | ০.২৫৬ (২০১২) |
অবস্থান | ৪২তম |
মাতৃত্বকালীন মৃত্যু (প্রতি এক লক্ষে) | ২৯ (২০১০) |
সংসদে নারী | ১৩.২% (২০১২) |
মাধ্যমিক শিক্ষাসহ ২৫ উর্ধ্ব নারী | ৬৬.০% (২০১০) |
শ্রম ক্ষেত্রে নারী | ৪৩.৮% (২০১১) |
বৈশ্বিক জেন্ডার গ্যাপ সূচক[১] | |
মান | ০.৬৫১৮ (২০১৩) |
অবস্থান | ১৪৪-এর মধ্যে ১০২তম |
সমাজে নারী |
---|
|
মালয়েশিয়ায় নারীরা মালয়েশিয়ার সরকারের পক্ষ হতে নিজেদের অধিকার, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সামাজিক কাজকর্ম ইত্যাদিতে সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকে। এই ক্ষেত্রগুলো সরকার ন্যাশনাল ইউনিটি এবং সোশিয়াল ডেভেলপমেন্ট মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে নিশ্চিত করেছে। এই মন্ত্রণালয় ১৯৯৭ সালে গঠিত হয়। ১৯৯৩ সালে এটি হাওয়া নামে পরিচিত ছিল। পরবর্তীতে ২০০১ সালে এটি উইমেন এফেয়ার্স মন্ত্রণালয়ে পরিণত হয়।
মালয়েশিয়ার ৪৭% নারী চাকুরি ক্ষেত্রে নিয়োজিত।[২]
জাতিসংঘের ২০০৯ সালের ইউনিভার্সাল পিরিয়ডিক রিভিউ অব মালয়েশিয়ার পর, সরকার একটি নীতি হাতে নেয় যার নাম দেয়া হয় সিএডিএডাব্লিও। ২০১০ সালে এই নীতি কার্যকর করা হয়। বর্তমানে মালয়েশিয়ায় নারীদের অধিকারের অবস্থা অনেকটা মিশ্র প্রকৃতির। এটি নির্ভর করে মূলত ভৌগোলিক অবস্থান, ধর্ম, সামাজিক রীতিনীতির ওপর।[৩][৪]
শরীয়া পুরুষদের একাধীক নারীকে বিয়ে করার অধিকার দেয়, যদি সে পুরুষ সেসব নারীদের ভরণ পোষণের ক্ষমতা রাখে। মালয়শিয়ার মোট ৪ টি রাজ্যে নারী পুরুষ সমান পধিকার ভোগ করে।চাকুরি ক্ষেত্রে নারী পুরুষের বৈষম্য থাকতে পারে। তবে তা ইসলামিক আইনের জন্য নয়। কেদাহ রাজ্যে, শুধুমাত্র নারী দর্শকের সামনেই নারীরা নাচ-গান করতে পারে। .[৫]
মালয়েশিয়ায় যৌন হয়রানি একটি সাধারণ ব্যাপার। ২০১০ সাল থেকে মালয়শিয়ার রেইলওয়ে গোলাপি কালারের বগি শুধুমাত্র মহিলাদের জন্য চালু করেছে। যেখানে শুধুমাত্র মহিলারাই উঠতে পারবে।[৬] এমনকি রাজধানী কুয়ালালামপুরে শুধুমাত্র মহিলাদের জন্য বাস চালু করা হয়েছে।[৬] ২০১১ সাল থেকে চালু করা হয়েছে মহিলা ট্যাক্সি।[৭] এই ট্যাক্সি মহিলারাই চালায়, ফোন কলের মাধ্যমে এই ট্যাক্সিতে উঠতে হয়।[৭]
নারী খৎনা মালয়েশিয়ায় প্রচলিত আছে। মুসলিম পরিবারগুলোর মধ্যে প্রায় ৯০% পরিবারে এই প্রথা মেনে চলে।[৮][৯] কারণগুলো হল ধর্মীয় রীতি, সংস্কৃতি এবং একটি বিশ্বাস, যে এই নারী খৎনা বিয়ের আগে অযাচিত যৌন সঙ্গমকে দূর করবে।[৯][১০] তবে এই খৎনা আফ্রিকার দেশগুলোর মতো ভয়াবহ পদ্ধতিতে সম্পন্ন হয় না। খুব সামান্য অংশই এতে কাটা হয়।[৯][১১] এই খৎনা মূলত ধর্মীয় আঙ্গিকেই বেশি প্রচলিত। ২০০৯ সালে, ফাতওয়া কমিটি মুসলিমদের জন্য নারী খৎনা কে বাধ্যতামূলক করে তবে মাত্রাতিরিক্ত কাটা কে বাদ দিয়ে।[১২]
মালয়শিয়ার নারীদের অত্যাচার নিপীড়ন থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট আইন আছে (ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স আইন ১৯৯৪)। এ আইনে, একজন নারী তার স্বামী পরিবর্তন করতে পারবেন যদি সে তার ওপর শারীরিক-মানসিক নির্যাতন চালায়।[১৩][১৪] বিয়ে জনিত ধর্ষণও এই আইনে শাস্তির আওতায় পড়বে। বিয়ে জনিত ধর্ষণ বলতে বোধানো হচ্ছে যদি কোন নারীর স্বামী বলপ্রয়োগ করে, তাকে অত্যাচার করে, মানসিক চাপ দিয়ে, অথবা অন্য কাউকে দিয়ে যৌন সঙ্গমে লিপ্ত হয়।[১৪] একটি জড়িপে দেখা যায়, মালয়েশিয়ায় ১৫ বছরের বেশি, ৩৯% নারী বিয়ে জনিত ধর্ষণের স্বীকার হয়।[১৫] উইমেন এইডস সংগঠন এই ধর্ষণের ক্ষেত্রে নারীদের জন্য একটি এস এম এস হেল্পলাইন খুলেছেন।[১৬]
বিয়ের ক্ষেত্রে মালয়েশিয়ার নারীদের আইন মেনে বিয়ে করতে হয়। যদিও তাদের অধিকারের ক্ষেত্রে আপোষ করা হয় না। ইসলামিক আইনে বলা আছে, একজন নারী তার স্বামীর প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করবে। আইন ৫৯(২) এ বলা আছে, একজন নারী তখনই দোষী সাব্যস্ত হবে যখন, ১। যখন সে তার স্বামীর বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নেবে ২। যখন স্বামীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে যেয়ে তাকে ছেড়ে চলে যাবে ৩। কোন যৌক্তিক কারণ ছাড়া স্বামীর সাথে কোথাও যেতে, ফিরতে অনিচ্ছা বোধ করবে।[১৭] এছাড়া নারীদের নিজেদের অধিকারের জন্যেও কিছু আইন কার্যকর আছে।[১৮]
বিয়ে জনিত ধর্ষণ আইন ২০০৭ সালে প্রণিত হয়।[১৯][২০]
২০১০ সালের জড়িপে দেখা যায়, মালয়েশিয়ায় পুরুষের তুলনায় নারীদের স্বাক্ষরতার হার কিছুটা কম। যেখানে নারীদের হার ৯০.৭% এবং পুরুষদের ৯৫.৪%।[২১] বর্তমানে সরকার শিক্ষাক্ষেত্রে ছেলে মেয়ে উভয়ের জন্যই অনেক বেশি অর্থ বরাদ্দ করেছে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে আগের তুলনায় আরো অনেক বেশি নারী পড়াশুনা করছে।[২২]
মালয়েশীয় সশস্ত্র বাহিনী ১৯৮০-এর দশক থেকে নারীদেরকে পূর্ণ উদ্যোগে নেওয়া শুরু করে প্রধানমন্ত্রী মাহাথির বিন মোহাম্মদের নির্দেশে। মাহাথির মার্কিন সামরিক বাহিনীর আদলে তার নিজের দেশের সামরিক বাহিনী গড়ে তোলার চিন্তা ভাবনা থেকে সামরিক বাহিনীর তিন শাখাতেই নারীদের একেবারে নিম্ন পদ থেকে কর্মকর্তা পদ দেওয়ার পরিকল্পনা করেন এবং তার তিন বাহিনী প্রধানদেরকে নির্দেশ দেন। তখন থেকে মালয়েশীয় নারীরা সামরিক বাহিনীতে নাবিক, বিমানসেনা এবং সৈনিক হতে পারছেন, তবে সামরিক উর্দিতে নারীদের মাথায় হিজাব পরা বাধ্যতামূলক।[২৩]
২০০৬ সালে, মালয়েশিয়ার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে মারিনা মাহাথির বলেন মালয়েশিয়ার নারীদের অবস্থা অনেকটা আফ্রিকার পিছিয়ে পড়া, বৈষম্যের স্বীকার নারীদের মতন।[২৪][২৫]
মাহাথীর যে বিষয়টি নিয়ে বলেন তা হল পুরুষদের যখন তখন নারীদের তালাক দেয়া, ইচ্ছামতো বিয়ে করা এবং নারীদের অধিকারের ওপর কতৃত্ব।[২৪] এই সমালোচনা মালয়েশিয়ার ইসলামিক সংগঠনগুলোর ভালো লাগেনি। তারা বলেন এটি ইসলামিক শরীয়াকে খর্ব করে।[২৪]
সাধারণ: