মালাবার দাগযুক্ত ধনেশ | |
---|---|
কাওয়ার রাজ্য, কর্ণাটক, ভারত | |
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | Animalia |
পর্ব: | কর্ডাটা |
শ্রেণী: | পক্ষী |
বর্গ: | Coraciiformes |
পরিবার: | Bucerotidae |
গণ: | Anthracoceros |
প্রজাতি: | A. coronatus |
দ্বিপদী নাম | |
Anthracoceros coronatus (Boddaert, 1783) |
মালাবার দাগযুক্ত ধনেশ (Anthracoceros coronatus) হল একধরনের ধনেশ প্রজাতির পাখি।[২] পৃথিবীতে এই প্রজাতির সংখ্যা কম এবং ক্রমহ্রাসমান তাই একে প্রায় অস্তিত্ববিপন্ন পাখি হিসেবে গণ্য করা হয়[৩]
মালাবার দাগযুক্ত ধনেশ প্রধানত ক্রান্তীয় এবং উপক্রান্তীয় এশিয়ার এবং ভারতের বিভিন্ন জায়গায় বসবাস করে। এছাড়াও পূর্ব বোর্ণিওতেও এদের বসবাস লক্ষ্য করা যায়। এদের প্রধান বাসস্থান হল আর্দ্র্র বনভূমি এবং ঘন জঙ্গল, তবে কখনো কখনো এরা লোকালয়েও চলে আসে বসবাস করবার জন্য।
এরা আকারে বেশ বড় হয়, লম্বায় ৬৫ সেমি হয়। এদের পাখনা প্রধানত কালোই হয় এবং এদের পেট হয় সাদা রঙের। এদের গলাতে সাদা রঙের ছোপ ছোপ থাকে এবং ল্যাজের গোড়াতে এবং পাখনার বাইরের অংশের রঙও সাদা হয়। এদের হলুদ রঙের ঠোট হয় এবং এদের ঠোঁটের ওপরে কালো রঙের বিরাট বড় একটা শিরস্ত্রাণ থাকে। মহিলাদের সাদা রঙের চক্ষ ত্বক আছে যা পুরুষদের ক্ষেত্রে নেই। তরুণদের শিরস্ত্রাণ থাকে না। অনেকে কাও ধনেশের সাথে এদেরকে মিশিয়ে ফেলে।
এই প্রজাতিটি সবকিছুই খেতে পারে অর্থাৎ সর্বগ্রাসী। প্রধানত ফল-মূল, ছোটো প্রাণী, পোকামাকড়, সরীসৃপ ইত্যাদি খেয়েই এরা বেঁচে থাকে। শিকারকে মেরে ফেলা হয় এবং সম্পূর্ণ গিলে নেওয়া হয়। ডুমুর তাদের খাদ্য তালিকার একটা প্রধান অঙ্গ বিষেশত মে থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত তারা এই ডুমুর খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। অপ্রজনন কাল এবং প্রজনন কাল (মার্চ থেকে এপ্রিল) এই সময়ের মধ্যে তাদের খাদ্যের মধ্যে ডুমুরই ৭৫ শতাংশ জায়গা ধারণ করে থাকে। এরা Strychnos nux-vomica নামে একটি গাছের ফল খায় বলে জানা গেছে যে গাছের ফল অন্যান্যদের কাছে বিষাক্ত বলে মনে হয়।[৪]
ডিম ফোটানোর সময়ে মহিলারা ২ টো থেকে ৩ টে ডিম পারে গাছের গর্তে। এরা নিজ বাসার মধ্যে ঢুকে গিয়ে বাসাকে বন্ধ করে দেয় কাদা, মল-মূত্র, ফলের খোলস ইত্যাদির মাধ্যমে যাতে বাইরের কেউ তাদের বাসায় ঢুকতে না পারে। এদের বন্ধ বাসার সামনে এক জায়গায় একটা ছোট ছিদ্র থাকে যেখান থেকে স্ত্রী ধনেশ মল-মুত্র ত্যাগ করে এবং পুরুষদের থেকে খাদ্য নেয়। পুরুষেরাই সমস্ত খাবার নিয়ে আসে মহিলা এবং তরূণ ধনেশদের জন্য। খাবারের মধ্যে থাকে বিভিন্ন ধরনের ফল, ডুমুর, ছোটো ছোটো পোকামাকড়, ছোটো সরীসৃপ ইত্যাদি। বাসার ভিতরে মহিলারা ডিম পাড়ে এবং ডিমে তা দেয় তাকে ফোটানোর জন্য। এই সময় তারা পাখনাগুলোকে শরীর থেকে ঝেরে ফেলে এবং পুনরায় যখন এদের পাখনার বাড়ন্ত দেখতে মেলে তখন তাদের বাচ্চারাও বড় হয়ে যায় এবং তারপরে মা ধনেশ সেই বাসা ভেঙ্গে ফেলে এবং বাচ্চারা প্রথম উড়তে শেখে।
এদেরকে মাঝে মাঝেই শহরাঞ্চলে দেখতে পাওয়া যায়। কাইগা পারমাণবিক কেন্দ্রের চারপাশের বনে সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্য বিরল ধরনের পাখির প্রজাতির জন্য একটি উপযুক্ত স্থান হয়ে উঠেছে।[৫] একটা গবেষণায় দেখা গেছে যে ২৩ বছরে এদের সংখ্যার কোনো পরিবর্তন হয়নি।[৬] মধ্য ভারতে এটা মানা হয় যে এই ধনেশদের মাথার খুলি ঝুলিয়ে রাখলে সম্পদের ভান্ডার বৃদ্ধি পায়।[৭]