মালাবার ধূসর ধনেশ | |
---|---|
![]() | |
মহিলা ধনেশ ঠোটের রঙ সম্পূর্ণ কালো (থাট্টেকাড, কেরল) | |
![]() | |
পুরুষ ধনেশ কেরলে | |
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | Animalia |
পর্ব: | কর্ডাটা |
শ্রেণী: | পক্ষী |
বর্গ: | Coraciiformes |
পরিবার: | Bucerotidae |
গণ: | Ocyceros |
প্রজাতি: | O. griseus |
দ্বিপদী নাম | |
Ocyceros griseus (Latham, 1790) | |
![]() | |
প্রতিশব্দ | |
Tockus griseus |
মালাবার ধূসর ধনেশ (Ocyceros griseus) হল একধরনের ধনেশ প্রজাতি যারা দক্ষিণ ভারতের পশ্চিম ঘাটের দিকে বেশি বসবাস করে। এদের ঠোট খুব বড় হয় কিন্তু ধনেশের অন্যান্য প্রজাতির মতোন এদের শিরস্ত্রাণ থাকে না। এদের প্রধানত দেখতে পাওয়া যায় ঘন জঙ্গলে। প্রধানত রবার গাছ, সুপারি গাছ এবং কফি গাছে এদের বসবাস।[২] তারা ছোটো দলে ঘুরে বেড়ায় প্রধানত ডুমুর এবং অন্যান্য ফল-মূল খেয়ে বেচে থাকে এরা। তাদের তারস্বরে চিৎকার এবং হাসার মতোন গলার আওয়াজ স্থানীয় মানুষদেরকে ওদেরকে চেনা সহজ করে দেয়।
মালাবার ধূসর ধনেশ হল একটা বড় ধনেশ এবং এদের আকার হয় মাঝারি ধরনের। ৪৫ থেকে ৫৮ সেমি (১৮ থেকে ২৩ ইঞ্চি) লম্বা এবং ২৩ সেমি (৯.১ ইঞ্চি) লম্বা ল্যাজ এবং একটি ফ্যাকাশে হলুদ রঙের ঠোট থাকে।[৩] পুরুষদের ঠোট প্রধানত লালচে রঙের হয় এবং এদের সাম্নের দিকটা হয় হলুদ রঙের এবং মহিলাদের প্রধানত ঠোটের রঙ হয় হলুদ রঙের এবং যাতে নিচের চোয়াল হয় কালো রঙের ও ওপরেরটায় কালো কালো ডোরাকাটা দাগ থাকে। তাদের চোখের চারপাশে সাদা রঙের দাগ দেখতে পাওয়া যায়। তাদের পাখনা হয় বাদামি-ধূসর রঙের। এদের প্রাথমিক পাখনার রঙ হয় সাদা রঙের। ভারতীয় ধূসর ধনেশদের থেকে এদেরকে সহজেই আলাদা করা যায় শিরস্ত্রাণের ভিত্তিতে। এদের লম্বা ল্যাজ হয় কালচে রঙের এবং মাথার দিকের রঙ হয় সাদা। লম্বা ধনুকের মতোন বাকা ঠোটে কোন শিরস্ত্রাণ নেই। অপ্রাপ্তবয়স্কদের গায়ের রঙ হয় হাল্কা বাদামি রঙের এবং এদের ঠোটের রঙ হয় সম্পূর্ণ হলুদ।[৪] বাচ্চাদের চোখের পাতা হয় ফ্যাকাশে সাদা অথবা হলুদ রঙের।[৫][৬]
মৃগীরোগের চিতকার, হাস্যময়, কর্কশ তীক্ষ্ন ধ্বনি ইত্যাদি এদের ডাকের বৈশিষ্ট্য। ([৭]
)মালাবার ধূসর ধনেশ ভারতের পশ্চিম ঘাটের এবং তার আশেপাশের পাহাড়-পর্বতে বসবাস করে। এদেরকে প্রধানত পাওয়া যায় ঘন জঙ্গল এলাকায় এবং পাতলা জঙ্গল এলাকা মূলত ভারতীয় ধূসর ধনেশদের দ্বারা অধিকৃত। অতীতে শ্রীলঙ্কান ধূসর ধনেশদের এদের সাথে মিলিয়ে ফেলা হত কিন্তু অত্যাধুনিক গবেষণার পরে এদেরকে আলাদা করা হয়েছে।[৪]
এদেরকে প্রধানত ছোটো ছোটো দলে ঘুরে বেড়াতে এবং বসবাস করতে দেখা যায়। এরা প্রধানত বিভিন্ন লম্বা লম্বা গাছে বসবাস করতে পছন্দ করে।[৮] তারা প্রধানত শাক-সব্জি খেয়ে বেচে থাকে।[৯]
এদের প্রজনন কাল হল জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত। এরা নিজেরা গাছে বাসা বাঁধতে পারে না। অন্যের করে দেওয়া গর্তে বসবাস করে। আনাইমাল্লাই পর্বতের একটা গবেষণায় দেখা গাছে যে এদের বেশিরভাগরাই বড় বড় গাছে থাকতে পছন্দ করে। এই গর্তগুলো প্রধানত দেখতে পাওয়া যায়।[১০] গাছের বিভিন্ন প্রজাতি যেমন Lagerstroemia microcarpa, Terminalia bellirica এবং Terminalia crenulata এই গাছে বসবাস করে বছরের ৭০ শতাংশ সময়ে মুদুমালাই অঞ্চলে।[১১] এই প্রজাতিটি একগামী এবং এরা একই বাসা বছরের পর বছর ব্যবহার করে থাকে। মহিলারা বাসার মধ্যে ঢুকে গিয়ে তার মলের সাহায্যে বাসাকে আটকে দেয় যাতে বাইরের কেউ তাতে ঢুকতে না পারে। এরপরেই মহিলারা ৩-৪ টে সাদা রঙের ছোটো ছোটো ডীম পারে এবং এই সময়ে মহিলারা তাদের পাখনা ঝেরে ফেলে শরীর থেকে। এদের বন্ধ বাসার সামনে এক জায়গায় একটা ছোট ছিদ্র থাকে যেখান থেকে মহিলারা মল-মুত্র ত্যাগ করে এবং পুরুষদের থেকে খাদ্য নেয়। পুরুষেরাই সমস্ত খাবার নিয়ে আসে মহিলা এবং তরূণ ধনেশদের জন্য। খাবারের মধ্যে থাকে বিভিন্ন ধরনের ফল, ডুমুর, ছোটো ছোটো পোকামাকড়, ছোটো সরীসৃপ ইত্যাদি। পুরুষেরা খাদ্য এনে গাছে টোকা মেরে মহিলাদের ইঙ্গিত করতে থাকে খাদ্যটা নেবার জন্য।[১২] বেরিগুলোকে ওয়াক তুলে বার করে পুরুষেরা ঠোটের সামনে নিয়ে আসে এবং মহিলাদের খাওয়ায়।[৭]