শায়খুল হিন্দ, মাওলানা মাহমুদ হাসান দেওবন্দি | |
---|---|
محمود حسن دیوبندی | |
৩য় সদরুল মুদাররিস, দারুল উলুম দেওবন্দ | |
কাজের মেয়াদ ১৮৯০ – ১৯১৫ | |
পূর্বসূরী | সৈয়দ আহমদ দেহলভি |
উত্তরসূরী | আনোয়ার শাহ কাশ্মীরি |
ব্যক্তিগত তথ্য | |
জন্ম | ১৮৫১ |
মৃত্যু | ৩০ নভেম্বর ১৯২০ দিল্লি, ব্রিটিশ ভারত | (বয়স ৬৮–৬৯)
সমাধিস্থল | মাজারে কাসেমি |
ধর্ম | ইসলাম |
জাতিসত্তা | ভারতীয় |
আখ্যা | সুন্নি |
ব্যবহারশাস্ত্র | হানাফি |
আন্দোলন | দেওবন্দি |
প্রধান আগ্রহ | |
উল্লেখযোগ্য ধারণা | রেশমি রুমাল আন্দোলন |
উল্লেখযোগ্য কাজ | |
যেখানের শিক্ষার্থী | দারুল উলুম দেওবন্দ |
শিক্ষক | |
তরিকা | চিশতিয়া-সাবিরিয়া-ইমদাদিয়া |
এর প্রতিষ্ঠাতা | জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া |
ঊর্ধ্বতন পদ | |
এর শিষ্য | |
শিষ্য | |
সাহিত্যকর্ম |
|
দেওবন্দি আন্দোলন |
---|
সিরিজের অংশ |
মাহমুদ হাসান দেওবন্দি (শায়খুল হিন্দ নামে সমধিক প্রসিদ্ধ;[১] ১৮৫১–১৯২০) একজন ভারতীয় ইসলামি পণ্ডিত এবং স্বাধীনতা আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। তিনি জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ার সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং ভারতের স্বাধীনতার জন্য রেশমি রুমাল আন্দোলনের অন্যতম সূচনাকারী ও মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন। তিনি দারুল উলুম দেওবন্দের প্রথম ছাত্র ছিলেন। তার শিক্ষকদের মধ্যে অন্যতম কাসেম নানুতুবি ও মাহমুদ দেওবন্দি। সুফিবাদে তিনি ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কি ও রশিদ আহমদ গাঙ্গুহির খলিফা ছিলেন।
তিনি দারুল উলুম দেওবন্দের সদরুল মুদাররিসের (অধ্যক্ষ) দায়িত্ব পালন করেন এবং সামরাতুত তারবিয়াত, জমিয়তুল আনসার এবং নাযারাতুল মাআরিফের মত সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি উর্দু ভাষায় কুরআনের অনুবাদক এবং আদিল্লায়ে কামিলাহ, ইজাহ আল-আদিল্লাহ, আহসান আল কিরা ও জাহদ আল মুকিল গ্রন্থসমূহের রচয়িতা। তিনি দারুল উলুম দেওবন্দে হাদিস শিক্ষাদানের পাশাপাশি সুনানে আবু দাউদের অনুলিপি করেছিলেন। তার প্রধান ছাত্রদের মধ্যে রয়েছেন আশরাফ আলী থানভী, আনোয়ার শাহ কাশ্মীরি, হুসাইন আহমদ মাদানি, কেফায়াতুল্লাহ দেহলভি, উবায়দুল্লাহ সিন্ধি, শাব্বির আহমদ উসমানি, আজিজুর রহমান উসমানি ও ইলিয়াস কান্ধলভি।
তিনি ব্রিটিশ শাসনের কট্টর বিরোধী ছিলেন। ভারতে তাদের ক্ষমতা থেকে উৎখাত করার জন্য তিনি আন্দোলন শুরু করেন কিন্তু ১৯১৬ সালে গ্রেপ্তার হয়ে মাল্টায় কারাবন্দী হন। তিনি ১৯২০ সালে মুক্তি লাভ করেন এবং খিলাফত কমিটি তাকে ‘শায়খুল হিন্দ’ (ভারতের নেতা) উপাধি প্রদান করে। তিনি অসহযোগ আন্দোলনের সমর্থনে ফতোয়া প্রদান করেছিলেন এবং স্বাধীনতা আন্দোলনে মুসলমানদের অন্তর্ভুক্তির জন্য ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে ভ্রমণ করেন। তিনি ১৯২০ সালের নভেম্বরে জমিয়ত উলামায়ে হিন্দের দ্বিতীয় সাধারণ সভায় সভাপতিত্ব করেন এবং সংগঠনটির সভাপতি মনোনীত হন। তার স্মৃতিতে শায়খুল হিন্দ মাওলানা মাহমুদ হাসান মেডিকেল কলেজের নামকরণ করা হয়েছে। ২০১৩ সালে ভারত সরকার তার রেশমি রুমাল আন্দোলন নিয়ে একটি স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করে।
মাহমুদ হাসান ১৮৫১ সালে বেরেলি শহরের (বর্তমানে উত্তরপ্রদেশ) দেওবন্দের উসমানি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।[২][৩] তার পিতা জুলফিকার আলি দেওবন্দি, যিনি দারুল উলুম দেওবন্দের সহ-প্রতিষ্ঠাতা, বেরেলি কলেজের অধ্যাপক ছিলেন এবং পরে মাদ্রাসার উপ-পরিদর্শক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।[২][৪]
তিনি মিঁয়াজি ম্যাংলোরির নিকট কুরআন এবং আব্দুল লতিফের নিকট ফার্সি অধ্যয়ন করেন।[২] ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের সময় তার পিতা মিরাটে চলে যান এবং তাকে দেওবন্দে পাঠিয়ে দেওয়া হয়, সেখানে তিনি তার চাচা মেহতাব আলীর কাছে দারসে নিজামি পাঠ্যক্রমের ফার্সি ও আরবি সাহিত্য অধ্যয়ন করেন।[২] তারপর তিনি দারুল উলুম দেওবন্দের প্রথম ছাত্র হিসেবে মাহমুদ দেওবন্দির কাছে পড়াশোনা শুরু করেন।[৫][৬] ১৮৬৯ সালে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা সমাপ্ত করে কাসেম নানুতুবির নিকট সিহাহ সিত্তাহ অধ্যয়ন করতে তিনি মিরাটে চলে যান।[৭] সেখানে তিনি দুই বছর নানুতুবির নিকট হাদিস অধ্যয়ন করেন এবং ছুটির সময় তার পিতার কাছে আরবি সাহিত্য অধ্যয়ন করেন।[৮] তিনি ১৮৭২ সালে দাওরায়ে হাদিস (স্নাতক) সমাপ্ত করেন এবং ১৮৭৩ সালে দারুল উলুম দেওবন্দের প্রথম সমাবর্তনে সম্মাননা পাগড়ি লাভ করেন।[৯][১০] সুফিবাদে তিনি ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কি ও রশিদ আহমদ গাঙ্গুহির অনুমোদিত শিষ্য ছিলেন।[১১]
শিক্ষাজীবন সমাপ্তির পর ১৮৭৩ সালে তিনি দারুল উলুম দেওবন্দের শিক্ষক নিযুক্ত হন।[৩] ১৮৯০ সালে তিনি সদরুল মুদাররিস হিসেবে পদোন্নতি পান।[১০][১২][১৩] তিনি দেওবন্দ মাদ্রাসাকে কেবল একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মনে করতেন না, বরং ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের ক্ষতি পূরণের জন্য প্রতিষ্ঠিত একটি প্রতিষ্ঠান মনে করতেন।[৫]
তিনি ১৮৭৮ সালে সামরাতুত তারবিয়াত গঠন করেন।[১৪] এটি একটি বুদ্ধিবৃত্তিক কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় যার মাধ্যমে দারুল উলুম দেওবন্দের শিক্ষার্থী ও স্নাতকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হত।[১৫] পরবর্তীতে এটি জমিয়তুল আনসারে রূপ নেয়, যা ১৯০৯ সালে আহমদ হাসান আমরুহীর সভাপতিত্বে মোরাদাবাদে অনুষ্ঠিত প্রথম সম্মেলনের মাধ্যমে শুরু হয়।[১৬] এরপর দেওবন্দি তার ছাত্র উবায়দুল্লাহ সিন্ধিকে সাথে নিয়ে ১৯১৩ সালের নভেম্বর মাসে নাযারাতুল মাআরিফ আল কুরআনিয়া শুরু করেন।[১৬][১৭] আলেমদের প্রভাব বৃদ্ধি এবং ইংরেজি শিক্ষিত মুসলমানদের ইসলামি শিক্ষা প্রদান করাই ছিল এই সংগঠনের উদ্দেশ্য।[১৮] হুসাইন আহমদ মাদানি বলেন, ‘নাযারাতুল মাআরিফ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ছিল, মুসলিম যুবক বিশেষত পশ্চিমা শিক্ষিত মুসলমানদের শক্তিশালী ইমানদার হিসেবে গড়ে তোলা এবং তাদের পথ দেখানো, কুরআনের শিক্ষাসমূহ এমন যৌক্তিকভাবে উপস্থাপন করা যাতে এটি ইসলাম বিরোধী প্রচারণার বিষাক্ত প্রভাব এবং আধুনিক যুগে ইসলামি বিশ্বাস ও নীতিগুলির ব্যবহারিকতা সম্পর্কে কু-প্রতিষ্ঠিত সংশয়বাদ দূর করে।’[১৯][২০]
তিনি ভারতে ব্রিটিশ শাসনের অবসান করতে চেয়েছিলেন; এজন্য তিনি মুহাম্মদ মিয়াঁ মনসুর আনসারিকে সাথে নিয়ে রেশমি রুমাল আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন।[২১] তিনি এই আন্দোলনের মূল সংগঠক ছিলেন।[২২] এজন্য তিনি দুটি ভৌগোলিক অঞ্চল বেছে নেন।[২৩] প্রথমটি ছিল তৎকালীন আফগানিস্তান ও ভারতের মধ্যবর্তী স্বায়ত্তশাসিত উপজাতি এলাকা।[২৩] নিজামুদ্দিন আসির আদ্রাভি বলেন, ‘এটি একটি ঐতিহাসিক বাস্তবতা, যারাই ভারত আক্রমণ করতে এসেছিল, তারা এই পথ ব্যবহার করেছিল এবং মাহমুদ হাসান আন্দোলনের জন্য এই অঞ্চল নির্বাচন করা অবশ্যই তার বিচক্ষণতা এবং অন্তর্দৃষ্টির সর্বোচ্চ প্রমাণ।’[২৪] দ্বিতীয় এলাকাটি ছিল ভারতের মধ্যে; তিনি সমস্ত আন্তরিক নেতাদের প্রভাবিত করতে চেয়েছিলেন যারা তার উদ্দেশ্যকে সমর্থন করার প্রতি যত্নশীল ছিলেন এবং এতে তিনি বেশ সফল হয়েছিলেন।[২৪] প্রথম সারিতে কাজ করা পণ্ডিতদের মধ্যে ছিলেন—আব্দুল গাফফার খান, আব্দুর রহিম সিন্ধি, মুহাম্মদ মিয়াঁ মনসুর আনসারি, উবায়দুল্লাহ সিন্ধি এবং উজাইর গুল পেশাওয়ারির মত তার ছাত্র ও সঙ্গীরা।[২৫] তারা তার কর্মসূচিকে সীমান্ত এলাকায় এবং স্বায়ত্তশাসিত উপজাতিদের মধ্যে প্রচার করেন।[২৬] দ্বিতীয় সারিতে কাজ করা পণ্ডিতদের মধ্যে ছিলেন—মুখতার আহমদ আনসারি, আব্দুর রহিম রায়পুরী এবং আহমদুল্লাহ পানিপতি।[২৭] মুহাম্মদ মিয়া দেওবন্দি বলেন, ‘শায়খুল হিন্দ তাঁর শিষ্যদের এবং তাঁর কাছে আসা লোকদের প্রকৃতি ও সামর্থ্য মনোযোগ সহকারে দেখতেন। তিনি তাদের মধ্যে থেকে কিছু ব্যক্তিকে নির্বাচন করেন এবং তাদের ইয়াগিস্তানে পৌঁছে স্বায়ত্তশাসিত উপজাতিদের ভারতে আক্রমণ করতে প্ররোচিত করার আদেশ দেন।’[২৮] আফগান এবং তুর্কি সরকার যদি মিলিশিয়াকে সামরিক সহায়তা প্রদান করে এবং এই বাহিনীর আক্রমণের সময় দেশটির জনগণ বিদ্রোহের জন্য উঠে পড়ে, তবে ভারতের অভ্যন্তরের জনগণকে বিদ্রোহের জন্য প্রস্তুত করতে এই কর্মসূচির নকশা করা হয়েছিল।[২৬] ইয়াগিস্তান মাহমুদ হাসানের আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু ছিল।[২৯] মহেন্দ্র প্রতাপকে রাষ্ট্রপতি নিযুক্ত করে তার ছাত্র উবায়দুল্লাহ সিন্ধি ও তার সঙ্গীরা ভারতের অস্থায়ী সরকার গঠন করেছিল।[৩০]
জার্মান এবং তুর্কি সমর্থন লাভের জন্য ১৯১৫ সালে মাহমুদ হাসান নিজেই হেজাজ ভ্রমণ করেন।[৩১] মুহাম্মদ মিয়াঁ মনসুর আনসারি, মুর্তাজা হাসান চাঁদপুরী, সাহুল ভাগলপুরী এবং উজাইর গুল পেশাওয়ারি সহ প্রমুখ আলেমদের সাথে নিয়ে ১৯১৫ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর তিনি বোম্বে ত্যাগ করেন।[৩২][৩৩] ১৯১৫ সালের ১৮ অক্টোবর তিনি মক্কায় যান যেখানে তিনি তুরস্কের গভর্নর গালিব পাশা এবং তুরস্কের প্রতিরক্ষামন্ত্রী আনোয়ার পাশার সাথে বৈঠক করেন।[৩৪][৩৫] গালিব পাশা তাকে সহায়তার আশ্বাস দেন এবং তাকে তিনটি চিঠি দেন, একটি ভারতীয় মুসলমানদের উদ্দেশ্যে, দ্বিতীয়টি গভর্নর বুসরা পাশাকে এবং তৃতীয়টি আনোয়ার পাশাকে।[৩৬] তিনি সিরিয়ার গভর্নর জামাল পাশার সাথেও বৈঠক করেন, জামাল গালিব পাশার বক্তব্যর সাথে একমত হন।[৩৬] দেওবন্দি আশঙ্কা করেছিলেন, ভারতে ফিরে এলে ব্রিটিশরা তাকে গ্রেপ্তার করতে পারে। সেজন্য তাকে আফগান সীমান্তে পৌঁছিয়ে দিতে বলেন যেখান থেকে তিনি ইয়াগিস্তানে পৌঁছাতে পারেন।[৩৬] জামাল ওজর দেখিয়ে তাকে বলেছিলেন, যদি তিনি গ্রেপ্তারের আশঙ্কা করেন তবে তিনি হেজাজ বা অন্য যেকোনো তুর্কি এলাকায় থামতে পারেন।[৩৬] পরবর্তীকালে রেশমি রুমাল আন্দোলন ফাঁস হয়ে যায় এবং এর সদস্যদের গ্রেপ্তার করা হয়।[৩৭] দেওবন্দিকে ১৯১৬ সালের ডিসেম্বর মাসে তার সঙ্গী ও ছাত্র হুসাইন আহমদ মাদানি এবং উজাইর গুল পেশোয়ারির সাথে মক্কার শরিফ হুসাইন গ্রেপ্তার করেন, যিনি তুর্কিদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে ব্রিটিশদের সাথে মিত্রতা স্থাপন করেন।[৩৮][৩১] এরপর শরিফ তাদেরকে ব্রিটিশদের হাতে তুলে দেন এবং মাল্টার ভারডালা দুর্গে তাদের কারারুদ্ধ করা হয়।[৩৯][৪০]
তিনি ১৯২০ সালের মে মাসে মুক্তি পান[৪০] এবং ১৯২০ সালের ৮ জুন বোম্বেতে পৌঁছেন।[৪১] আব্দুল বারি ফিরিঙ্গি মহল্লী, হাফেজ মুহাম্মদ আহমদ, কেফায়াতুল্লাহ দেহলভি, শওকত আলি ও মহাত্মা গান্ধী সহ প্রধান রাজনৈতিক ও পণ্ডিত ব্যক্তিরা তাকে স্বাগত জানান।[৪২] তার মুক্তি খিলাফত আন্দোলনের জন্য একটি বিশাল সাহায্য হিসেবে দেখা হয়।[৪২] খিলাফত কমিটি তাকে ‘শায়খুল হিন্দ’ (ভারতের নেতা) উপাধিতে ভূষিত করে।[৪১]
মাহমুদ হাসান দেওবন্দ মাদ্রাসার আলেমদের খিলাফত আন্দোলনে যোগ দিতে অনুপ্রাণিত করেছিলেন।[৪২] তিনি ব্রিটিশ পণ্য বর্জনের জন্য একটি ফতোয়া জারি করেন; যা তৎকালীন মোহামেডান অ্যাংলো ওরিয়েন্টাল কলেজের শিক্ষার্থীরা চেয়েছিল।[৪৩] এই ফতোয়ায় তিনি শিক্ষার্থীদের সরকারকে কোনোভাবে সমর্থন না করতে পরামর্শ দেন, সরকারের অর্থায়নে পরিচালিত স্কুল-কলেজ এবং সরকারি চাকরি বর্জন করতে বলেন।[৪৪] এই ফতোয়ার পর অধিকাংশ শিক্ষার্থী কলেজ ত্যাগ করে।[৪৫] এই ফতোয়া অসহযোগ আন্দোলনকেও সমর্থন করে।[৪৪] এরপর তিনি এলাহাবাদ, ফতেপুর, গাজীপুর, ফৈজাবাদ, লখনউ ও মোরাদাবাদ ভ্রমণ করেন এবং আন্দোলনের সমর্থনে মুসলমানদের পথ দেখান।[৪৬]
তিনি জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ার প্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করতে আমন্ত্রিত হন, পরে যেটি জাতীয় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় নামে পরিচিতি পায়।[৪৭] তিনি মুহাম্মদ আলি জওহর ও হাকিম আজমল খানের সাথে এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।[৪৮] তারা আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্রিটিশদের প্রতি পক্ষপাতিত্বে হতাশ এবং নতুন বিশ্ববিদ্যালয় চায় এমন শিক্ষার্থীদের দাবির দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন।[৪৭][৪৯] দেওবন্দির ছাত্ররা অবশ্য তাকে প্রস্তাবটি গ্রহণ না করার জন্য অনুরোধ করেছিল কারণ তিনি মাল্টায় কারাবাসের সময় থেকে ক্রমশ দুর্বল এবং ফ্যাকাশে হয়ে যাচ্ছিলেন।[৫০][৪৭] তিনি তাদের উদ্বেগের জবাবে বলেন, ‘যদি আমার সভাপতিত্ব ব্রিটিশদের কষ্ট দেয়, তাহলে আমি অবশ্যই এই অনুষ্ঠানে অংশ নেব।’[৪৭] পরবর্তীকালে তাকে একটি পালকিতে দেওবন্দ রেল স্টেশনে নিয়ে আসা হয়, যেখান থেকে তিনি আলিগড়ে যান।[৪৭]
তিনি কিছু লিখতে সক্ষম না হওয়ায় তার ছাত্র শাব্বির আহমদ উসমানিকে তার সভাপতির ভাষণ প্রস্তুত করতে বলেন। এরপর প্রস্তুতকৃত বক্তৃতায় তিনি সংশোধন ও সংযোজন করেন এবং মুদ্রণের জন্য প্রেরণ করেন। ১৯২০ সালের ২৯ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠানে উসমানি এই ভাষণটি উচ্চস্বরে পাঠ করেন,[৫১] যার পরে দেওবন্দি জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।[৫০] দেওবন্দি বক্তৃতায় বলেছিলেন, ‘আপনাদের মধ্যে জ্ঞানী ব্যক্তিরা ভালভাবেই জানেন, আমাদের আকাবির বা পূর্বসূরিরা কখনও বিদেশী ভাষা শেখা বা অন্যান্য জাতির একাডেমিক জ্ঞান অর্জনের বিষয়ে নিষেধ করেন নি। হ্যাঁ, বলা হয়েছিল, ইংরেজি শিক্ষার চূড়ান্ত পরিণতি হল, ইংরেজি শিক্ষিতরা হয় খ্রিষ্টধর্মের রঙে নিজেদের রঙিন করে অথবা তারা তাদের নাস্তিক ঔদ্ধত্যর মাধ্যমে তাদের নিজ ধর্ম এবং সহধর্মালম্বীদের উপহাস করে অথবা তারা বর্তমান সরকারের পূজা করে; তাহলে এই ধরনের শিক্ষা না নিয়ে অজ্ঞ থাকাই ভাল।’[৫২] তিনি মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর সাথে একমত হন যিনি বলেছিলেন, ‘এই কলেজগুলির উচ্চশিক্ষা দুধের মতো বিশুদ্ধ এবং পরিষ্কার, তবে কিছুটা বিষের সাথে মিশ্রিত’ এবং তিনি জাতীয় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি পাতনযন্ত্রের সাথে বিবেচনা করেন, যেটি এই বিষকে শিক্ষা থেকে পৃথক করবে।[৫২]
তিনি ১৯২০ সালের নভেম্বর মাসে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত জমিয়ত উলামায়ে হিন্দের দ্বিতীয় সাধারণ সভায় সভাপতিত্ব করেন।[৫৩] এই সভায় তিনি জমিয়তের সভাপতি নিযুক্ত হন, কিছুদিন পর [৩০ নভেম্বর] মৃত্যুবরণ করলে তিনি সে দায়িত্ব পালন করতে পারেন নি।[৫৪] ১৯ নভেম্বর থেকে শুরু করে তিন দিন সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং তার ছাত্র শাব্বির আহমদ উসমানি তার পক্ষ থেকে উচ্চস্বরে সভাপতির ভাষণ পাঠ করেন।[৫৫] তিনি হিন্দু-মুসলিম-শিখ ঐক্যের পক্ষে সমর্থন করে বলেন, ‘হিন্দু ও মুসলমানরা যদি ঐক্যবদ্ধ হয়, তবে স্বাধীনতা অর্জন করা খুব বেশি কঠিন না’।[৫৬][৫৭] এটিই ছিল তার সর্বশেষ সম্মেলন।[৫৭]
তার ছাত্রদের সংখ্যা সহস্রাধিক।[৫৮] তার প্রধান ছাত্রদের মধ্যে রয়েছেন: আনোয়ার শাহ কাশ্মীরি, আসগর হুসাইন দেওবন্দি, আশরাফ আলী থানভী, হুসাইন আহমদ মাদানি, ইজাজ আলী আমরুহী, কেফায়াতুল্লাহ দেহলভি, মানাজির আহসান গিলানি, মুহাম্মদ মিয়াঁ মনসুর আনসারি, শফি উসমানি, মুফতী ফয়জুল্লাহ, রসুল খান, শাব্বির আহমদ উসমানি, সৈয়দ ফখরুদ্দিন আহমদ, উবায়দুল্লাহ সিন্ধি এবং উজাইর গুল পেশাওয়ারি।[১০][৫৯][৬০] ইব্রাহিম মুসা বলেন, ‘তাঁর ছাত্ররা মাদ্রাসা নেটওয়ার্কে জনপ্রিয়তা অর্জন করে এবং দক্ষিণ এশিয়ার জনজীবনে ধর্মীয় পাণ্ডিত্য, রাজনীতি এবং প্রতিষ্ঠান গঠনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখে।’[৬১]
তিনি উর্দুতে কুরআনের একটি আন্তঃরৈখিক অনুবাদ লিখেছিলেন।[৬২] পরে তিনি ব্যাখ্যামূলক টীকা দিয়ে এই অনুবাদটি ব্যাখ্যা করতে শুরু করেন, এভাবে ১৯২০ সালে মারা যাওয়ার সময় তিনি চতুর্থ অধ্যায় সূরা নিসা পর্যন্ত সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছিলেন।[৬৩] তার ছাত্র শাব্বির আহমদ উসমানি তার এই অসমাপ্ত কাজটি সমাপ্ত করে তাফসিরে উসমানী নামে প্রকাশ করেন।[৬৪] পরে একদল আলেমের পৃষ্ঠপোষকতায় আফগানিস্তানের শেষ রাজা মুহাম্মদ জহির শাহ ফার্সি ভাষায় গ্রন্থটির অনুবাদ করেন।[৬৫] ১৯৮৯ সালে সৌদি আরবের আওকাফ মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে পবিত্র কোরআন মুদ্রণের জন্য বাদশাহ ফাহদ কমপ্লেক্স থেকে এটি আল কুরআনুল কারিম নামে প্রকাশিত হয়। শুরুতে বাদশাহ ফাহাদ বিন আবদুল আজিজের পৃষ্ঠাব্যাপী আরবিতে একটি ভূমিকা রয়েছে।[৬৬]
তিনি দীর্ঘ সময় ধরে দারুল উলুম দেওবন্দে সহীহ বুখারী শিক্ষাদান করেছেন। মাল্টায় কারাগারে বন্দী হওয়ার পর তিনি গ্রন্থটির অধ্যায়-শিরোনাম ব্যাখ্যা করে একটি গ্রন্থ লিখতে শুরু করেন।[৬৭] হাদিস শিক্ষায় এরকম অধ্যায়-শিরোনাম নির্ধারণকে একটি পৃথক শাস্ত্র হিসেবে দেখা হয়।[৬৮] তিনি এই বিষয়ে ১৫টি নীতি নিয়ে গ্রন্থটি শুরু করেন। ১ম অধ্যায় ওহী থেকে শুরু করে ৩য় অধ্যায় জ্ঞান পর্যন্ত আলোচনা করেন।[৬৯] ৫২ পৃষ্ঠা বিশিষ্ট এই গ্রন্থটির শিরোনাম আল আবওয়াব ওয়াত তারাজিম লিল বুখারি (অনু. সহীহ বুখারীর অধ্যায়-শিরোনামের ব্যাখ্যা)।[৬৭]
তৎকালীন সময়ে ভারতের আহলে হাদিস পণ্ডিত মুহাম্মদ হুসাইন বাটালভি তাদের বিপরীত মতাদর্শ হানাফি চিন্তাধারার কর্তৃত্ব নিয়ে দশটি প্রশ্ন তুলে একটি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন, প্রতিটি প্রশ্নের উত্তরের জন্য ১০ রুপি পুরস্কার ঘোষণা করেন।[৭০][৭১] প্রশ্নগুলো অমৃতসর থেকে প্রকাশিত হয় এবং দারুল উলুম দেওবন্দেও পাঠানো হয়।[৭০] দেওবন্দের নীতি ছিল মুসলিম সম্প্রদায়কে বিভক্ত করে এমন বিষয়গুলো এড়িয়ে চলা, কিন্তু আহলে হাদিসরা বিষয়টি কে বাধ্য করে। পরবর্তীকালে মাহমুদ হাসান দেওবন্দি তার শিক্ষক নানুতুবির অনুরোধে আদিল্লায়ে কামিলাহ (অনু. নিখুঁত যুক্তি) নামে গ্রন্থাকারে পাল্টা একাধিক প্রশ্ন উত্থাপন করেন।[৭২] প্রতিটি প্রশ্নের উত্তরের জন্য তিনি ২০ রুপি প্রদানের ঘোষণা দেন।[৭৩]
আদিল্লায়ে কামিলাহ প্রকাশের পর তার প্রতিক্রিয়ায় একজন আহলে হাদিস পণ্ডিত আহমদ হাসান আমরুহী মিসবাহুল আদিল্লাহ লিখেন।[৭২] দেওবন্দি কিছু সময় অপেক্ষা করছিলেন মূল প্রশ্নকর্তা মুহাম্মদ হুসাইন বাটালভির কাছ থেকে প্রতিক্রিয়া আসার জন্য,[৭৪] তখন বাটালভি ঘোষণা করেন, আমরুহীর কাজই যথেষ্ট এবং তিনি নিজেই উত্তর লেখার ধারণাটি বাতলে দিয়েছেন।[৭৪] তখন এর জবাবে তিনি ইজাহ আল-আদিল্লাহ (অনু. যুক্তির ব্যাখ্যা) রচনা করেন; যা তার আগের বই আদিল্লায়ে কামিলাহ’র ব্যাখ্যা।[৭৪]
তার এই বইয়ের আলোচ্য বিষয় গ্রাম বা মফস্বল অঞ্চলে জুমার নামাজের অনুমোদন নিয়ে।[৭৫] সৈয়দ নাজির হুসাইন ফতোয়া দেন, জুমার নামাজের জন্য স্থানের কোনো নির্দিষ্টকরণ নেই। যেখানেই অন্তত ২ জন জড়ো হন, সেখানে জুমার নামাজ পড়তে হবে।[৭৫] হানাফি ফকিহ রশিদ আহমদ গাঙ্গুহি হানাফি মাজহাবের দৃষ্টিকোণ থেকে এর জবাবে ১৪ পৃষ্ঠার একটি ফতোয়া লিখেছিলেন, যার নাম ছিল ‘আওথাকুল উরা’।[৭৫]
আহলে হাদিস পণ্ডিতরা গাঙ্গুহির এই বইয়ের সমালোচনা করেন; যাদের সমালোচনায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে একই যুক্তি উত্থাপিত হয়েছে।[৭৫] গাঙ্গুহির ছাত্র মাহমুদ হাসান দেওবন্দি মনে করেন, তাদের সমালোচনার ভাষা সঠিক হয় নি। তাই এর প্রতিক্রিয়ায় তিনি একটি দীর্ঘ বই লিখেছেন, যার শিরোনাম ‘আহসান আল-কিরা ফি তাওজিহ আওথাকুল উরা’।[৭৬]
শাহ ইসমাইল দেহলভি এবং তার সঙ্গীরা মুসলমানদের বিদআত থেকে মুক্ত করার কাজ করেছিলেন, ফলশ্রুতিতে বিদআতের সাথে যুক্ত ব্যক্তিরা তাদের সমালোচনা করেছিলেন।[৭৭] বিশেষ করে দেহলভির বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ আনা হয় এবং তাকে কাফের ফতোয়া দেয়া হয়।[৭৭] পরবর্তীকালে আহমদ হাসান কানপুরী ‘তানজিহুর রহমাহ’ (অনু. দয়ালুদের মহিমা) গ্রন্থে দেহলভিকে চরমপন্থি মুতাজিলাদের সদস্য বলে অভিহিত করেন।[৭৮] এর জবাবে মাহমুদ হাসান দেওবন্দি ২ খণ্ডে ‘জাহদ আল-মুকিল ফি তানজিহী আল মুয়িজ্জি ওয়াল মুজিল ’ রচনা করেন।[৭৯] এই বইয়ে শরহে আকিদাতুন নাসাফির অনুসরণে ইলমুল কালামের পরিভাষা ব্যবহার করে আল্লাহর গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্য আলোচনা করা হয়েছে।[৭৮] দেওবন্দি ইলমুল কালাম ব্যবহার করে শাহ ইসমাইল দেহলভি এবং এরকম অন্যান্য আলেমদের বিরুদ্ধে করা অভিযোগের জবাব দিয়েছেন।[৭৯]
তৎকালীন সময়ে সিহাহ সিত্তাহ’র পাণ্ডুলিপিগুলোর বেশিরভাগ অংশই মক্কা ও মদিনার গ্রন্থাগার সমূহে সংরক্ষিত ছিল।[৮০] ভারতীয় আলেম আহমদ আলী সাহারানপুরি মক্কায় বিদ্যমান পাণ্ডুলিপিগুলো অনুলিপি করেন এবং এরপর শাহ মুহাম্মদ ইসহাকের কাছে তা অধ্যয়ন করেন। ভারতে ফিরে এসে তিনি তার প্রেস থেকে এই সমস্ত পাণ্ডুলিপির অনুলিপিকৃত সংস্করণ প্রকাশ করতে শুরু করেন।[৮১] তারপর তার ছাত্র কাসেম নানুতুবি এই অনুলিপি করা অব্যাহত রেখেছিলেন।[৮০]
পরে সিহাহ সিত্তাহ’র অন্যতম সুনানে আবু দাউদ অনুলিপি করার প্রয়োজনীয়তা দেখা যায়। এই গ্রন্থটির প্রকাশিত পাণ্ডুলিপি সমূহ একটি থেকে অপরটি আলাদা ছিল।[৮০] মাহমুদ হাসান দেওবন্দি প্রাপ্ত সমস্ত পাণ্ডুলিপি সংগ্রহ করেন এবং পরবর্তীতে পাঠ্যগুলো অনুলিপি করে বই আকারে প্রকাশ করেন। ১৯০০ সালে দিল্লির মুজতাবাই প্রেস থেকে এটি প্রকাশিত হয়েছিল।[৮২]
আলিগড়ে জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া প্রতিষ্ঠার একদিন পর ১৯২০ সালের ৩০ অক্টোবর মুখতার আহমদ আনসারির অনুরোধে তিনি দিল্লি যান। বেশ কয়েকদিন পরে তার স্বাস্থ্যের অবনতি হয় এবং দরিয়াগঞ্জে আনসারির বাড়িতে তার কাছ থেকে তিনি চিকিৎসা নেন।[৮৩][৮৪] ১৯২০ সালের ৩০ নভেম্বর দিল্লিতে তার মৃত্যু হয়।[৮৫] তার মৃত্যুর খবর প্রকাশের পর হিন্দু ও মুসলমানরা তাদের দোকান বন্ধ করে তাকে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য আনসারির বাড়ির বাইরে জড়ো হন।[৮৬] এরপর আনসারি তার ভাই হাকিম মুহাম্মদ হাসানকে জিজ্ঞেস করেন, তিনি মাহমুদ হাসানকে দিল্লিতে মেহদিয়ান কবরস্থানে দাফন করবেন নাকি মৃতদেহ সরানোর ব্যবস্থা করে তাকে দেওবন্দে কবর দিতে পছন্দ করেন।[৮৫] তার শিক্ষক কাসেম নানুতুবির পাশে কবরস্থ হওয়ার ইচ্ছার কারণে তাকে দেওবন্দে দাফন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।[৮৭] একাধিকবার তার জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। দিল্লির লোকেরা আনসারির বাড়ির বাইরে তার জানাজার নামাজ পড়ে, তারপরে মৃতদেহটি দেওবন্দে স্থানান্তরিত করা হয়। দিল্লি রেলস্টেশনে পৌঁছানোর সাথে সাথে প্রচুর লোক জড়ো হয়ে আরেকটি জানাজার নামাজ পড়ে। পরবর্তীতে মিরাট সিটি রেলওয়ে স্টেশন এবং মিরাট ক্যান্ট রেলস্টেশনেও জানাজার নামাজ পড়া হয়।[৮৭] তার পঞ্চম ও শেষ জানাযার নামাজের ইমামতি করেন তার ভাই হাকিম মুহাম্মদ হাসান এবং তাকে মাজারে কাসেমিতে সমাহিত করা হয়।[৮৭]
তার বেশ কয়েকটি সম্মাননা রয়েছে। আশরাফ আলী থানভী তাকে ‘শায়খুল আলম’ (বিশ্বের নেতা) বলে অভিহিত করেন।[৮৮] থানভী বলেন, ‘আমাদের মতে তিনি ভারত, সিন্ধু, আরব ও অনারবের নেতা’।[৮৮] সাহারানপুরের একটি মেডিকেল কলেজের নাম রাখা হয় শায়খুল হিন্দ মাওলানা মাহমুদ হাসান মেডিকেল কলেজ।[৮৯] ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় তার রেশমি রুমাল আন্দোলনের একটি স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করেন।[৯০]