মিউনিখ বিদ্যালয় (গ্রিক: Σχολή του Μονάχου) শব্দটি দ্বারা সেইসব চিত্রশিল্পীদের বোঝানো হয় যারা মিউনিখে ছবি এঁকেছেন অথবা ললিতকলা রয়াল একাডেমিতে (জার্মান: Münchner Akademie der Bildenden Künste) ১৮৫০ থেকে ১৯১৮ সালের মধ্যে ছবি আঁকার প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে একাডেমিটি ছবি আঁকার প্রশিক্ষণের জন্য ইউরোপে বিখ্যাত হয়ে ওঠে এবং ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেও শিক্ষানবীশদের আকর্ষণ করতে শুরু করে।[১]
১৮৫০ থেকে ১৯১৪ সাল পর্যন্ত মিউনিখ চিত্রকলা এবং চাক্ষুষ শিল্পের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিল। মধ্য শতাব্দীর আন্দোলন রোমান্টিকতা থেকে দূরে সরে এসে ফ্রেস্কো চিত্রশিল্পের ওপর জোড় দিতে মুরু করে। এই পরিবর্তন শুরু করেন কার্ল ভন পাইলটি, যিনি ১৮৫৬ সাল থেকে এই একাডেমিতে অধ্যাপনা করে আসছিলেন। ১৮৭৪ সালে তিনি একাডেমির পরিচালক হন।[২] পাইলটির ইতিহাস চিত্র আঁকার অনুপ্রেরণা ছিল ফরাসি চিত্রশিল্পী পল দেলারচির চিত্রকর্ম। এছাড়া পিটার পল রুবেনস ও ভেনিসিয় চিত্রের রঙিন বর্ণবাদ পাইলটিকে অনুপ্রাণিত করত।[২] পাইলটির পাশাপাশি এই একাডেমিতে আরো কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ চিত্রশিল্পী ছিলেন, যেমন উইলহেল ফন ডিয়েজ (১৮৩৯-১৯০৭), উইলহেম ফন কাউলবাখ, আর্তুর ফন র্যামবার্গ[৩] এবং নিকোলাস গিজিস।
মিউনিখ বিদ্যালয়ে আরো কতিপয় চিত্রশিল্পীদের মধ্যে অ্যান্থন ব্রেইথ, আলফ্রেড কওয়াস্কি, হ্যানস মাকার্ট, গ্যাবরিয়েল ম্যাক্স, ভিকটর মুলার, ফ্রিজ ওসয়াল্ড, ফ্রাঞ্জ ভন লেনব্যাখ, ফ্রেডরিখ কাউলবাখ, উইলহেম লেইবল, উইলহেম ত্রুবনার, এবং বিশেষ শিল্পধারার চিত্রশিল্পীদের মধ্যে ফ্রাঞ্জ ডিফ্রেগগার, এডওয়ার্ড ভন গ্রুজনার, হারমান ভন কাউলবাখ এবং মিরস্লাব ক্রালজেভিচ অন্যতম।
মিউনিখ বিদ্যালয়ের শেষ প্রজন্মের শিল্পীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল লোভিস করিন্থ, আর্নেস্ট ওপলার, ভাসসিলি ক্যানডিনস্কি, পল ক্লী এবং ফ্রাঞ্জ মার্ক, যারা প্রায় সকলেই জার্মান অ্যাভা-গার্ডের অনুবর্তী ছিলেন।
জার্মানির বাইরে মিউনিখ বিদ্যালয়ের চিত্রশিল্পীদের তৈরি আরো অনেক চিত্রশিল্পের বিদ্যালয় গড়ে ওঠে। বিশেষ করে মিউনিখ বিদ্যালয়ের অনন্য ধরন এবং বৈশিষ্ট্য এখানকার শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে, উদাহরণস্বরূপ, ১৯ শতকের গ্রিক একাডেমিক শিল্প। বাভারিয়া এবং গ্রিসের আগ থেকেই সংস্কৃতির মিলবন্ধনের কারণে অনেক গ্রিক চিত্রশিল্পী মিউনিখ বিদ্যালয়ে শিক্ষাগ্রহণ করেছেন। এরই প্রেক্ষিতে গ্রিক শিল্পের মিউনিখ স্কুল ১ম শতাব্দীর গ্রিক শিল্পের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শৈল্পিক আন্দোলন যা মিউনিখ একাডেমি থেকে শক্তিশালী প্রভাব ফেলে।[৪] গ্রিক শিল্পের মিউনিখ বিদ্যালয়ের শিল্পীদের মধ্যে কন্সটানটিনোস ভোলানাকিস, জর্জিওস রোইলস, নিকোলাস গিজিস, পলিক্রনিস লেমবেসিস, নিকোলাস ভোকোস, নিকিফোরোস লিৎরাস এবং জর্জিওস জেকোবিদেস অন্যতম।
হাঙ্গেরিয় নাগিবানিয়া বিদ্যালয়ের বেশিরভাগ চিত্রশিল্পী মিউনিখে পড়াশুনা করেছেন, উদাহরণস্বরূপ গুলা আখাসি।[৫] পোল্যান্ডেও প্রতিনিধিত্ব করেছেন মিউনিখের অনেক চিত্রশিল্পী, যাদের মধ্যে ইয়োসেফ খেলমন্স্কি, ওয়াদিশ্ল চাকোস্ক্রি, জুলিয়ান ফালাট, আলেকজান্ডার গিরিমিস্ক, মাক্সিমিলিয়ান গিরিমিস্ক এবং আলফ্রেড উইয়েরুস-কোয়ালস্কি উল্লেখযোগ্য। সুইডেনের যেসব চিত্রশিল্পীরা মিউনিখে পড়াশুনা করেছেন তাদের মধ্যে জোহান ক্রিস্টোফার বকলান্ড এবং জোহান ফ্রেডরিক হোকের অন্যতম। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের অনেক চিত্রশিল্পী যেমন ফ্রাঙ্ক ডুভেনেক এবং উইলিয়াম ম্যারিট চেজ মিউনিখ বিদ্যালয়ের সবচেয়ে বিখ্যাত উদাহরণ ছিলেন।[৬] অন্যান্য মার্কিন চিত্রশিল্পীদের মধ্যে হেনরি চেজ জন হেনরি টোয়াচমেন এবং ওয়াল্টার শিরলও মিউনিখ বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেছেন।
মিউনিখ বিদ্যালয় নিজেদের বৈশিষ্ট্যেই শিল্পচর্চা করত, যেখানে এই বিদ্যালয়কে প্রকৃতিগত শৈলী এবং অন্ধকার চিয়ারোসকুর দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। চিত্রের বিষয়বস্তু ছিল ভূদৃশ্য চিত্রকর্ম, প্রতিকৃতি, জেনার শিল্প, ষ্টিল লাইফ।