মিন অং হ্লাইং

মিন অং হ্লাইং
২০১৭ সালে জেনারেল মিন অং হ্লাইং
মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় প্রশাসনিক কাউন্সিলের চেয়ারম্যান
(মিয়ানমারের ডি ফ্যাক্টো সরকারপ্রধান)
দায়িত্বাধীন
অধিকৃত কার্যালয়
২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১
ডেপুটিশো উইন
পূর্বসূরীঅং সান সু চি (মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা হিসাবে)
মিয়ানমারের প্রধানমন্ত্রী
দায়িত্বাধীন
অধিকৃত কার্যালয়
১ আগস্ট ২০২১
রাষ্ট্রপতিমিন্ট সুয়ি (ভারপ্রাপ্ত)
ডেপুটিশো উইন
পূর্বসূরীথিন সিন (২০১১)
মিয়ানমারের সেনাবাহিনী প্রধান
দায়িত্বাধীন
অধিকৃত কার্যালয়
৩০ মার্চ, ২০১১
ডেপুটিশো উইন
পূর্বসূরীথান শ্বে
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম৩ জুলাই, ১৯৫৬
ট্যাভয়, বার্মা
জাতীয়তাবর্মী
রাজনৈতিক দলnone
দাম্পত্য সঙ্গীচু চু হ্লা
সন্তানঅং প্যে সোন
থিন থিরি থেট মোন
পিতাথং হ্লাইং
প্রাক্তন শিক্ষার্থীমিয়ানমার ডিফেন্স একাডেমি
রেঙ্গুন বিশ্ববিদ্যালয়
লাথা সেন্ট্রাল হাই স্কুল
সামরিক পরিষেবা
আনুগত্য মিয়ানমার
শাখামিয়ানমার সেনাবাহিনী
কাজের মেয়াদ১৯৭৪- বর্তমান
পদসিনিয়র জেনারেল

জেনারেল মিন অং হ্লাইং (Burmese: မင်းအောင်လှိုင် ইংরেজি: Min Aung Hlaing; abbreviated: MAL pronounced [mɪ́ɰ̃ àʊɰ̃ l̥àɪɰ̃]; জন্ম ৩ জুলাই ১৯৫৬) [] হলেন মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী তাতমাডোয়ের প্রধান এবং মিয়ানমারের বর্তমান ডি ফ্যাক্টো সরকারপ্রধান। সম্প্রতি মিয়ানমারে সংঘটিত একটি সামরিক অভ্যুত্থানের পর তিনি মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা (মিয়ানমারের ডি ফ্যাক্টো সরকার প্রধান) অং সান সু চি-কে ক্ষমতাচ্যুত করে নিজে ক্ষমতা দখল করে নেন। বর্তমানে তিনি মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় প্রশাসনিক কাউন্সিলের চেয়ারম্যান, মিয়ানমারের প্রধানমন্ত্রী এবং মিয়ানমারের সেনাপ্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন।

জেনারেল মিন অং হ্লাইং ৩ জুলাই, ১৯৫৬ সালে মিয়ানমারের ট্যাভয় শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা থং হ্লাইং একজন বিভাগীয় প্রকৌশলী ছিলেন। তিনি লাথা সেন্ট্রাল হাই স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। তিনি রেঙ্গুন বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনশাস্ত্রে পড়াশোনা করেন। ১৯৭৪ সালে তিনি মিয়ানমার ডিফেন্স অ্যাকাডেমিতে ভর্তি হন।

২০১০ সালের মিয়ানমারের জাতীয় নির্বাচনের সময় তিনি মিয়ানমারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের জয়েন্ট চিফ অফ স্টাফ নিযুক্ত হন এবং ২০১১ সাল পর্যন্ত এই পদে দায়িত্ব পালন করেন। ৩১ মে, ২০১১ সালে তিনি মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী তাতমাডো-র জেনারেল পদে সেনাপ্রধান বা কমান্ডার-ইন-চিফ পদ গ্রহণ করেন। তিনি মিয়ানমারের জাতীয় প্রতিরক্ষা ও সুরক্ষা কাউন্সিলের সদস্যও ছিলেন। ২০১১ সালে চার তারকা জেনারেল ও ২০১৩ সালে পাঁচ তারকা জেনারেল হিসাবে পদান্নোতি পান।

২০২০ সালের নভেম্বরে মিন অং হ্লাইং ক্ষমতাসীন এনএলডি এর প্রতি সিভিল সার্ভিস কর্মচারী আইন লঙ্ঘন করে আসন্ন ২০২০ সালের মিয়ানমারের সংসদীয় নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। ২০২০ সালের ৫ নভেম্বর তাতমাডো ঘোষণা করে, সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং এর পদ মিয়ানমারের উপরাষ্ট্রপতির সমতুল্য। প্রকৃৃতপক্ষে মিন অং হ্লাইং ছিলেন অং সান সু চি-র দল এনএলডি এর বিরোধী। যাইহোক, ২০২০ এর নির্বাচনে ব্যালট দেওয়ার পর মিন অং হ্লাইং নির্বাচনের ফল মেনে নেওয়ার ও নির্বাচনে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ না করার ঘোষণা দেন। কিন্তু ২০২০ সালের নির্বাচনে এনএলডি বিশাল ব্যবধানে জয় লাভ করে।

কিন্তু মিন অং হ্লাইং নির্বাচনের ফল সহজে মেনে নেন নি। সেনাবাহিনী এই নির্বাচনে ভোট জালিয়াতি ও অনিয়মের অভিযোগ এনে মিয়ানমারের নির্বাচন কমিশনের আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জমা দেয়। ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে মিন অং হ্লাইং প্রকাশ্যে মন্তব্য করেন যে, যদি গত বছরের নির্বাচনের সময় ভোটার জালিয়াতির অভিযোগের যথাযথ সমাধান না হয়, তবে তিনি অভ্যুত্থান বাতিল ও সংবিধান সংশোধন করার কথা অস্বীকার করবেন না। তার এই মন্তব্যগুলি মিয়ানমারে একটি সম্ভাব্য সেনা অভ্যুত্থান সম্পর্কে উদ্বেগ জাগিয়ে তোলে।

এদিকে নির্বাচন কমিশন সেনাবাহিনীর জমা দেওয়া অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে ও একটি বিবৃতি দেয় যে, উপর্যুক্ত প্রমাণ না থাকার দরুন নির্বাচন কমিশন সেনাবাহিনীর জমা দেওয়া অভিযোগকে মঞ্জুর করে নি। ফলস্বরূপ তাতমাডো (মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী) ২৯ জানুয়ারি সংবিধান সুরক্ষা ও সংরক্ষণের ঘোষণা দিয়ে একটি স্পষ্ট বিবৃতি জারি করে।

অবশেষে, মিন অং হ্লাইং এর নেতৃত্বে ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১-এ মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়। এর পরদিন, অর্থাৎ ২ ফেব্রুয়ারিতে, ২০২০ সালের নির্বাচনে জয় লাভকারী সংসদ সদস্যদের ইউনিয়ন অ্যাসেম্বলিতে শপথ গ্রহণ করার কথা ছিল। কিন্তু ২ ফেব্রুয়ারিতে মিন অং হ্লাইং একটি অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসনিক কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে তিনি ওই কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন।

জেনারেল মিন অং হ্লাইং যথেষ্ট সমালোচিত। জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের মতে, মিন অং হ্লাইংয়ের হুকুমেই বর্মী সৈন্যরা কাচিন, শানরাখাইনের মতো মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী রাজ্যসমূহে হত্যাযজ্ঞ চালায়। তার হুকুমেই বহু বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা করা হয় ও তাদের গ্রামসমূহ পুড়িয়ে দেওয়া হয়। রাখাইন রাজ্যের বহু রোহিঙ্গাদের দেশ ত্যাগে বাধ্য করা হয়। এসকল বিষয়ের জন্য তিনি আন্তর্জাতিকভাবেও যথেষ্ট সমালোচিত। যদিও ক্ষমতা লাভের পর তিনি বাংলাদেশ সরকারকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন চালু রাখার প্রতিশ্রুতি দেন। আবার ২০২১ সালের অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমারের রাষ্ট্রপতি উইন মিন্টমিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক নেতাদের গৃহবন্দী করে রাখা ও সামরিক শাসন-বিরোধী গণ আন্দোলনে বহু বেসামরিক নাগরিকদের গ্রেফতার তাকে আন্তর্জাতিক নিন্দার মুখে ফেলে দেয়।

আরো দেখুন

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "Min Aung Hlaing | Biography, Military, & Facts | Britannica"www.britannica.com (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২৩-০৮-০১। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৮-১৬