মিরপুর

মিরপুর
থানা
মিরপুরের একটি আকাশচুম্বী অট্টালিকা
মিরপুরের একটি আকাশচুম্বী অট্টালিকা
মিরপুর বাংলাদেশ-এ অবস্থিত
মিরপুর
মিরপুর
স্থানাঙ্ক: ২৩°৪৮.৩′ উত্তর ৯০°২২′ পূর্ব / ২৩.৮০৫০° উত্তর ৯০.৩৬৭° পূর্ব / 23.8050; 90.367
দেশ বাংলাদেশ
বিভাগঢাকা
জেলাঢাকা
আয়তন
 • মোট৫৮.৬৬ বর্গকিমি (২২.৬৫ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা (১৯৯১)
 • মোট৬,৪১,৬৩০
 • জনঘনত্ব১১,০০০/বর্গকিমি (২৮,০০০/বর্গমাইল)
সময় অঞ্চলবিএসটি (ইউটিসি+০৬:০০)

মিরপুর বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার একটি থানা। এর উত্তরে শাহ আলী থানাপল্লবী থানা, দক্ষিণে থানাদার-উস-সালাম থানা, পূর্বে কাফরুল থানাপল্লবী থানার একাংশ এবং পশ্চিমে শাহ আলী থানা, দার-উস-সালাম থানাসাভার উপজেলা[]

নামকরণ

[সম্পাদনা]

মোঘল আমলের ঢাকার অনেক অভিজাত লোকের নামের আগে “মীর” শব্দটি ব্যবহৃত হতো। ধারণা করা হয়, কোন মীরের ভূ-সম্পত্তির অন্তর্গত ছিল এলাকাটি, যা পরে মীরপুর বা মিরপুর নামে পরিচিতি লাভ করে।[]

ভৌগোলিক অবস্থান

[সম্পাদনা]

প্রায় ১,২০,৩২৯ টি বসতবাড়ি নিয়ে সমগ্র মিরপুরের আয়তন ৫৮.৬৬ বর্গ কিলোমিটার। মিরপুর এ কাজীপাড়া,শেওড়াপাড়া,সেনপাড়া পর্বতা, শিয়ালবাড়ী ও সেকশন ১,২,৬,,৯,১০,১১,পল্লবী,১২,১৩ এবং ১৪ রয়েছে। শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়াম এই ঢাকার মিরপুর অবস্থিত। এ ছাড়া নোবেল জয়ী প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংক এখানে রয়েছে। এছাড়াও এখানে বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানা, জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান, শাহ আলী বাগদাদীশহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ রয়েছে।

জনমিতি

[সম্পাদনা]

২০১১ সালে বিশ্বকাপ ক্রিকেট শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে হয়েছিল।

মিরপুর ও তার বিভিন্ন এলাকার নামকরণ এবং এর ভূমিরুপ আমাদের প্রাচীনত্ত অন্বেষনে দিক নির্দেশনা দিতে পারে। মিরপুরের ভূমিরুপ প্লাইস্টোসিন উঁচু ভূমির একটি ধারা এবং মিরপুর চিড়িয়াখানা এলাকা এবং সেনপাড়া পর্বতা থেকে শুরু করে দক্ষিণ-পূর্বে বর্তমান কাঁঠালবাগান পর্যন্ত প্লাইটোসিন যুগের সমতল ভূমির চিহ্ন বহন করছে (হক:২০১০)। ঢাকার প্রচীন উঁচুভূমি বলতে বুঝায় মিরপুর চিড়িয়াখানার উঁচু ভূমি ও সেনপাড়া পর্বতা থেকে পূর্ব-দক্ষিণে কাঁঠালবাগান পর্যন্ত উঁচু ভূমি, লালমাটিয়ার উঁচু ভূমি এবং লালবাগ থেকে নারায়ণগঞ্জ জেলার কুতুবপুর ইউনিয়ন পর্যন্ত উঁচু থেকে ক্রমশ ঢালু নিম্নভূমি অঞ্চল। ঢাকার এই বৈচিত্র্যময় ভূমি কাঠামোই ঢাকার অতীত ইতিহাসকে বৈচিত্র্যময়তা প্রদান করেছিল। বিচিত্র এই ভূমিরূপ সম্ভবত গুপ্ত পূর্ববর্তী সময় থেকেই মানুষ বিভিন্ন প্রয়োজনে ব্যবহার করে আসছিল (হক:২০১০), যেখানে সম্ভবত মিরপুরেরও একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান ছিল।

‘মীর’ শব্দটি একটি উপাধি যা সুলতানী ও মোগল উভয় সময়ই বিভিন্ন প্রশাসনিক বা দাপ্তরিক নামের সঙ্গে ব্যবহৃত হতো (শাহনাওয়াজ:২০০৪)। আবার শব্দের শেষে পুর বা পুরা যুক্ত করে নাম মুসলিম আমলে উৎপত্তির সাক্ষ্য বহন করে (করিম:২০০৩)। সুতরাং মিরপুর নামকরণটি কোনসময়ের তা নিয়ে বিতর্ক থেকে যায়। ‘কাজীপাড়া’ নামটি মুসলমান শাসনামলের বলে মনে হয়, তবে সময়কাল সংক্রান্ত কোন সিদ্ধান্তে আমরা পৌঁছাতে পারি না। সেক্ষেত্রে গাবতলীর কোটবাড়ি, দিয়াবাড়ি, দড়িয়াঘাট, পাইকপাড়া, সেনপাড়া পর্বতা প্রভৃতি নামগুলির বিশ্লেষণ গুরুত্বের দাবি রাখে। ‘কোটবাড়ি’ কোনভাবেই মুসলিম যুগের শব্দ বা প্রশাসনিক একক নয়। ‘কোটবাড়ি’ নামটি প্রশাসনিক কাঠামোর সঙ্গে যুক্ত। অতীতে দুর্গকে কোট/গড় (ক্ষুদ্র দুর্গ বিশেষ) বলা হতো (হক:২০১০)। এদেশে ছোট বড় নদীর গতিপথে অসংখ্য কোটবাড়ি বা কোন স্থানের নামের সঙ্গে কোট/গড় নাম যোগ করে স্থান নাম পাওয়া যায়, যেমন মহাস্থানগড় দুর্গনগরী এদের মধ্যে অন্যতম। ঢাকা মহানগর এলাকায় যে তিনটি এমন ক্ষুদ্র দুর্গের অস্তিত্বের কথা জানা যায়, তাদের মধ্যে মিরপুর ও গাবতলী বাসস্ট্যাণ্ড-এর মাঝামাঝি এক জায়গায় কোটবাড়ি এবং এর পাশে দিয়াবাড়ি, দরিয়াঘাট নামগুলো পাওয়া যায়। এই নামগুলো সম্ভবত প্রাচীন এবং তা সুলতানী পূর্বযুগের বলে ধারণা করা যায়। কারণ সুলতানী যুগ থেকে ধরে বর্তমান পর্যন্ত কখনো এখানে কোটবাড়ির মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক অবকাঠামো গড়ে উঠেছিল বলে কোন ঐতিহাসিক দলিল থেকে জানা যায় না।

কোটবড়ি বর্তমানে গাবতলীর পর্বতা সিনেমা হলের ঠিক পিছনে তুরাগ নদীর তীরে অবস্থিত। তুরাগ নদীর প্রবাহধারা বর্তমানে একটি খালের মত দেখালেও আদতে এটি ছিল একটি বিশাল নদী। সাভারের বিরুলিয়া ছিল এর উত্তর তীর এবং মিরপুরের উঁচু ভূমি ছিল এর দক্ষিণ তীর। সম্ভবত এই বিশালতার কারণেই এখানকার স্থানের নাম হয়েছে দিয়াবাড়ি এবং দরিয়াঘাট। ড. হকও একই মত পোষণ করেন। তুরাগ নদীর উপর প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ রাখার লক্ষ্যে এবং এই নদী পথে গমনাগমনকারী নৌযানগুলো থেকে খাজনা আদায় ও নিরাপত্তা প্রদানের বিষয়ে এই স্থানটির (কোটবাড়ির অবস্থান) উপযোগিতা অনস্বীকার্য। অতীতে নদীপথসমূহে অবস্থিত কোটগুলো ছিল একেবারে নদীর পাড়ে, আকৃতি ছিল অনেকটা আয়তাকার। কেবলমাত্র নদীর দিক ছাড়া বাকী তিন দিকে পার্শ্ববর্তী এলাকার মাটি কেটে উঁচু করা হতো। নিম্নভূমি এলাকার কাঁচা সড়কের মত এর দেয়াল উচুঁ করা হতো, আর মাটি কাটার কারণে তিন দিক দিয়েই থাকত পরিখার মতো। ফলে কোটের চারিদিকেই ছিল পানির প্রবাহ। মীরপুর কোটবাড়ি এলাকার চারপাশে ছিল গভীর পরিখা যা ৮০-র দশকেও দৃশ্যমান ছিল (হক:২০১০)। কোটবাড়ি এলাকার সামান্য পূর্বদিকে একটি জায়গার নাম ‘পাইকপাড়া’। ‘পাইক’ শব্দের অর্থ হচ্ছে সৈন্য, বিশেষত হিন্দু সৈন্যবাহিনীকে ‘পাইক বাহিনী’ বলা হতো। সুলতান ইলিয়াস শাহ সর্বপ্রথম এ বাহিনীর ব্যবহার করেন (শাহনাওয়াজ:২০০৪)। এবং ‘পাড়া’ শব্দের অর্থ হচ্ছে লম্বাটে মহল্লা। প্রাচীনকাল থেকেই সৈন্যদের পাইক বলে অভিহিত করা হতো, এমনকি সুলতানী ও মোগল যুগে সৈন্যদের পাইক বলে অভিহিত করা হতো। সুতরাং পাইকপাড়ার পাইক কোন সময়ের নির্ণয় করা কঠিন। মিরপুরে শাহ আলী একজন সুফি ছিলেন। কোন তথ্যপ্রমাণে তিনি সৈন্যবাহিনী রেখেছিলেন বলে জানা নেই (হক:২০১০)। বাংলার সুলতানগণ ঢাকার এই অংশ ব্যবহার করেছিলেন কিংবা মোগল শাসকগণ ঢাকার এই অংশে কোন সামরিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছিলেন বলেও প্রমাণ পাওয়া যায় না। ফলে পাইকপাড়া নামটি সম্ভবত প্রাচীন এবং যেহেতু কোটবাড়ির ঠিক সন্নিকটেই পাইকপাড়ার অবস্থান এ দু'য়ের সাথে সম্পর্কিত হওয়াটাই স্বাভাবিক। প্রাচীন হলেও আবার কোন যুগের? মৌর্য, গুপ্ত নাকি পাল বা সেন সেই প্রশ্নও উঠে। পাইকপাড়ার পাশেই রয়েছে সেনপাড়া পর্বতা। এই সেন যদি সেনবংশীদের সেন হয় তবে ধরে নিতে হবে যে এই পাইকপাড়া অন্তত সেন যুগের। কিন্তু ড. হক দেখিয়েছেন এ সেনপাড়া পর্বতা এবং পাইকপাড়া সেন শাসনামলের নয় (হক:২০১০)। উপরন্তু তিনি যুক্তি তর্ক উপস্থাপন করে বলেছেন যে সম্ভবত এখানে গুপ্তপূর্ববর্তী সময়কাল থেকেই এই এলাকার বৈচিত্রময় ভূমিরুপের কারণে এখানে মনুষ্য বসতি থাকার প্রবল সম্ভনা রয়েছে যা খ্রিষ্টীয় ৫ম শতকের সমসাময়িক হতে পারে।

ইতিহাস

[সম্পাদনা]
মিরপুরের দৃষ্টিনন্দন দৃশ্য

ঢাকার মিরপুর এলাকার মধ্যে অনেকগুলো এলাকা অন্তর্ভু্ক্ত রয়েছে। প্রতিটি এলাকার নামকরণের আবার আলাদা আলাদা ইতিহাস রয়েছে। মিরপুরের একটি অংশ জঙ্গালাকীর্ণ ও মাটির টিলার মত স্থান ছিল। সেই কারণে এলাকাটি পর্বতা নামে পরিচিত ছিল। আবার অন্য একটি অংশে সেন পদবীধারী হিন্দুদের বসবাস ছিল। সেই স্থানটি সেনপাড়া বা সেন পর্বতা নামে পরিচিতি লাভ করেছে। মিরপুরের একটি অংশে কাজী পরিবার বা কাজী উপাধিধারীগণ বাস করতো। তাই সে এলাকার নাম হয় কাজীপাড়া। আবার একটি এলাকায় অনেক শেওড়াগাছ ছিল। সেই এলাকাটি শেওড়াপাড়া নামে পরিচিতি পায়। এভাবেই মীরপুরের বিভিন্ন এলাকার নাম বিভিন্ন প্রেক্ষাপট অনুযায়ী রাখা হয়েছে। []

১৯৭২ এর ৩১ জানুয়ারি মিরপুর পাকহানাদার থেকে মুক্ত হয়। ৩১ জানুয়ারি মিরপুর মুক্ত দিবস। Survey of Pakistan ১৯৫২ সালে প্রকাশিত ঢাকার একটি মানচিত্রে (দানী; ২০০৯: মানচিত্র-৫) মিরপুরের অবস্থান চিহ্নিত করা না গেলেও বর্তমান মিরপুর রোডটিকে নির্দেশ করা যায়। সম্ভবত এটি একটি উপরাস্তা ছিল। সুতরাং তৎকালীন সময়ে বর্তমান মিরপুরে বসতির অবস্থান ছিল কিন্তু এটি তৎকালীন রাজধানীর অন্তর্ভুক্ত ছিল না। এছাড়া বৃহত্তর মিরপুরের বিভিন্ন স্থানে বিশেষত গাবতলী, বাগবাড়ি, হরিরামপুর, আমিন বাজার প্রভৃতি স্থানে প্রচুর পরিমাণে উপনিবেশকালের স্থাপনার চিহ্ন পাওয়া যায়। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের সময় ঢাকাকে প্রাদেশিক রাজধানী করা হয়। এসময়কারও ঢাকার কোন মানচিত্রে মিরপুরের অবস্থান দেখানো হয়েছে বলে জানা যায় না।

প্রায় দেড়শ বছর পেছনে ফিরে তাকালে দেখা যাবে, ১৭৬৫ সালের ঢাকা ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকার একটি মানচিত্রে সাভারের অবস্থান দেখানো হয়েছে (দানী; ২০০৯: মানচিত্র-১)। এখানেই প্রথম মিরপুরের অবস্থান সম্পর্কিত একটি প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত পাওয়া যায়। অন্যদিকে প্রদত্ত মানচিত্রটিতে খেয়াল করলে দেখা যাবে বিরুলিয়া এবং জহুরাবাদ এর অবস্থান নির্দিষ্ট করা আছে। উল্লেখ্য যে, বর্তমানে মিরপুর হরিরামপুর এলাকার পেছনে একটি জহুরাবাদের অস্তিত্ব লক্ষণীয় এবং তার পাশে তুরাগ নদীর বাঁধ এবং নদীর অন্যপাড়ে বিরুলিয়া গ্রাম।

মিরপুরের উল্লেখযোগ্য স্থান

[সম্পাদনা]

আরো দেখুন

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "মিরপুর থানা- বাংলাপিডিয়া"। ১১ এপ্রিল ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ মার্চ ২০১২ 
  2. মামুন, মুনতাসীর (জুলাই ২০০৮)। ঢাকা: স্মৃতি বিস্মৃতির নগরী (পরিবর্ধিত সংস্করণ)। ঢাকা: অনন্যা প্রকাশনী। পৃষ্ঠা ২১০। আইএসবিএন 984-412-104-3 
  3. নাজির হোসেন, "কিংবদন্তির ঢাকা", তৃতীয় সংস্করণ, এপ্রিল ১৯৯৫, থ্রিস্টার কো-অপারেটিভ মালটিপারপাস সোসাইটি লিঃ, ঢাকা, পৃষ্ঠা ১৭৯, ১৮০

আরও পড়ুন

[সম্পাদনা]
  • Dani, Ahmed Hasan. 2009 (rept); Dhaka: A Record of its changing fortunes. Asiatic Society of Bangladesh, Dhaka.
  • Dani, Ahmed Hasan. 1957; Bibliography of the Muslim Inscriptions of Bengal. Asiatic Society of Pakistan, Dacca.
  • মামুন, মুনতাসির। ১৯৯৪; ঢাকা: স্মৃতি বিস্মৃতির নগরী। বাংলা একাডেমী, ঢাকা।
  • করিম, ড. আব্দুল। ২০০৩ (পুনঃ মুদ্রণ); মোগল রাজধানী ঢাকা। বাংলা একাডেমী, ঢাকা।
  • হাসান, ড. সৈয়দ মাহমুদুল। ২০০১; বাংলাদেশের মুসলিম পুরাকীর্তি।মাওলা ব্রাদার্স, ঢাকা।
  • শাহনাওয়াজ, এ কে এম। ২০০৪; বাংলার সংস্কৃতি বাংলার সভ্যতা। দিব্য প্রকাশ, ঢাকা।
  • শাহনাওয়াজ, এ কে এম। ২০০৮; সা¤প্রতিক প্রতœগবেষণায় বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য পুনর্গঠনের সম্ভাবনা। বাংলা একাডেমী, ঢাকা।
  • হক, অধ্যাপক মো. মোজাম্মেল। ২০১০; প্রাচীন ঢাকা: ইতিহাস না ভাবনা, ঠিকানা, বর্ষ ৯, সংখ্যা ৯। সাহিত্য বিকাশ আন্দোলন, নারায়ণগঞ্জ।