মির্জা গালিব

মোঘল রাজদরবারে উর্দূ কবি
মির্জা আসাদুল্লাহ বেগ
১৮৬৮ এ মির্জা গালিব
১৮৬৮ এ মির্জা গালিব
স্থানীয় নাম
مرزا غالب  (উর্দু)
জন্মমির্জা বেগ আসাদুল্লাহ খান
(১৭৯৭-১২-২৭)২৭ ডিসেম্বর ১৭৯৭
আগ্রা, মুঘল সাম্রাজ্য
মৃত্যু১৫ ফেব্রুয়ারি ১৮৬৯(1869-02-15) (বয়স ৭১)
Gali Qasim Jaan, Ballimaran, Chandni Chowk, Delhi, British India
সমাধিস্থলমির্জা গালিবের মাজার, যা দিল্লির নিজামুদ্দিন দরগাহের নিকট অবস্থিত।
ছদ্মনাম
পেশা
  • কবি
  • লেখক
ভাষাউর্দু, ফার্সি
সময়কালমুঘল সাম্রাজ্য
বিট্রিশ ভারত
ধরনগজল, কাসিদা, রুবাই, কিতা, মর্সিয়া
বিষয়প্রেম, দর্শস, আধ্যাত্মিকতা
সাহিত্য আন্দোলনউর্দু আন্দোলন
উল্লেখযোগ্য রচনাদিওয়ান-ই-গালিব
সক্রিয় বছরআনু. ১৮০৮–১৮৬৯
দাম্পত্যসঙ্গীউমরাও বেগম (বি. ১৮১০)
উর্দু সাহিত্য
ادبیاتِ اُردُو
উর্দু সাহিত্য
বিষয়শ্রেণী
উর্দু ভাষা
রেখতা
উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব
আমির খসরু (উর্দু সাহিত্যের জনক) - ওয়ালী দাক্ষিণী (উর্দু কবিতার জনক)- মীর তকি মীর - গালিব - Abdul Haq (Baba-e-Urdu)
Urdu writers
WritersNovelistsPoets
Forms
GhazalFiction
Institutions
Anjuman-i Taraqqi-i Urdu
Urdu movement
Literary Prizes
Related Portals
Literature Portal

India Portal

Pakistan Portal
গালিবের প্রাসাদে মির্জা গালিবের মূর্তি

মির্জা বেগ আসাদুল্লাহ খান (উর্দু /ফার্সি: مرزا اسد اللہ بیگ), মির্জা গালিব নামে অধিক পরিচিত[], ডাক নাম গালিব (উর্দু/ফার্সি]: غالب, গালিব অর্থ সর্বোচ্চ) এবং (পূর্বের ডাক নাম) আসাদ (উর্দু/ফার্সি]: اسد, আসাদ অর্থ সিংহ) (ডিসেম্বর ২৭, ১৭৯৭ — ফেব্রুয়ারি ১৫, ১৮৬৯) ভারতবর্ষে মোঘল-সম্রাজ্যের শেষ ও ব্রিটিশ শাসনের শুরুর দিকের একজন উর্দু এবং ফার্সি ভাষার কবি । সাহিত্যে তার অনন্য অবদানের জন্য তাকে দাবির-উল-মালিকনাজিম-উদ-দৌলা উপাধি দেওয়া হয়।  তার সময়কালে ভারতবর্ষে মোঘল সাম্রাজ্য তার ঔজ্জ্বল্য হারায় এবং শেষে ১৮৫৭ সালের সিপাহীবিদ্রোহ এর মধ্য দিয়ে ব্রিটিশরা পুরোপুরিভাবে মোঘলদের ক্ষমতাচ্যুত করে সিংহাসন দখল করে, তিনি তার লেখায় এ ঘটনা বর্ণনা করেছেন।[]

মহাবিদ্রোহের সময়কার তার লেখা সেই দিনলিপির নাম দাস্তাম্বু। তিনি জীবনকালে বেশ কয়েকটি গজল রচনা করেছিলেন যা পরবর্তীতে বিভিন্ন জন বিভিন্ন আঙ্গিকে বিভিন্নভাবে বর্ণনা করেছেন ও গেয়েছেন। তাকে মোঘল সম্রাজ্যের সর্বশেষ কবি হিসেবে ও দক্ষিণ এশিয়ায় তাকে উর্দু ভাষার সবচেয়ে প্রভাবশালী কবি বলে মনে করা হয়। আজ শুধু ভারত বা পাকিস্তানে নয় সারা বিশ্বেই গালিবের জনপ্রিয়তা রয়েছে।[]

গালিব কখনো তার জীবিকার জন্য কাজ করেননি। সারা জীবনই তিনি হয় রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় অথবা ধার কর্য করে নতুবা কোনো বন্ধু উদারতায় জীবন যাপন করেন। তার খ্যাতি আসে তার মৃত্যুর পর। তিনি তার নিজের সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলেন যে, তিনি বেঁচে থাকতে তার গুণকে কেউ স্বীকৃতি না দিলেও, পরবর্তী প্রজন্ম তাকে স্বীকৃতি দিবে। ইতিহাস এর সত্যতা প্রমাণ করেছে। উর্দূ কবিদের মধ্যে তাকে নিয়েই সবচেয়ে বেশি লেখা হয়েছে।

ব্যক্তিগত জীবন

[সম্পাদনা]
মির্জা গালিবের পোশাক, গালিব জাদুঘর, নয়াদিল্লি
ভারতে গালিবের স্মরণে একটি বিশেষ স্মারক ডাক কভার প্রকাশিত হয়।

মির্জা গালিবের জন্ম ১৮৯৭ সালে কালা মহল, আগ্রার[] একটি মুঘল পরিবারে, যারা সেলজুক রাজাদের পতনের পরে সমরকন্দ এ (বর্তমান উজবেকিস্তান) চলে গিয়েছিল। তার পিতামহ মির্জা কোকান বেগ ছিলেন একজন সেলজুক তুর্ক এবং সুলতান বারকিয়ারুকের বংশধর[], যিনি আহমদ শাহের শাসনকালে (১৭৪৮-৫৪) সমরকন্দ থেকে ভারতে এসেছিলেন।[] তিনি লাহোর, দিল্লি এবং জয়পুরে,পাহাসু (বুলন্দশহর, ইউপি) এলাকার উপাধি লাভ করে,করেছিলেন এবং শেষ পর্যন্ত আগ্রায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেছিলেন। তার চার ছেলে এবং তিন মেয়ে ছিল[]।তার বিরাট পরিবারের মধ্যে তার দুই পুত্র আবদুল্লাহ বেগ খান ও নসরুল্লাহ বেগ খান তার পদাংক অনুসরণ করে সৈনিকের পেশা গ্রহণ করেছিলেন বিভিন্ন শাসকের অধীনে৷


মির্জা আবদুল্লাহ বেগ (গালিবের পিতা) ইজ্জত-উন-নিসা বেগমের,যিনি জাতিগতভাবে কাশ্মীরি[], সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন[৯], এবং তার শ্বশুর মির্জা গালিবের নানার বাড়িতে বসবাস করতে শুরু করেন। তিনি প্রথমে লখনউয়ের নবাব এবং পরে হায়দরাবাদের নিজামের অধীনে কর্মরত ছিলেন। ১৮০৩ সালে আলওয়ারে একটি যুদ্ধে তিনি মারা যান এবং রাজগড় (আলওয়ার, রাজস্থান) এ তাকে দাফন করা হয়[], তখন গালিবের বয়স ছিল পাঁচ বছরের কিছু বেশি। এরপর তিনি তার চাচা মির্জা নাসরুল্লাহ বেগ খানের কাছে বড় হন, কিন্তু ১৮০৬ সালে নাসরুল্লাহ একটি হাতির উপর থেকে পড়ে গিয়ে আহত হয়ে মারা যান।[১০]

১৮১০ সালে, তেরো বছর বয়সে, গালিব উমরাও বেগমের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। উমরাও বেগম ছিলেন নওয়াব ইলাহী বখশের (ফিরোজপুর ঝিরকা এবং লোহরুর নওয়াবের ভাই) কন্যা।[১১] শীঘ্রই তিনি তার ছোট ভাই মির্জা ইউসুফের সাথে দিল্লি চলে যান। মির্জা ইউসুফ অল্প বয়সেই সিজোফ্রেনিয়া রোগে আক্রান্ত হন এবং ১৮৫৭ সালের বিশৃঙ্খলার সময় দিল্লিতে মারা যান[]। তার সাত সন্তানের কেউই শৈশবকালের পরে বাঁচেনি। বিবাহের পর, তিনি দিল্লিতে স্থায়ী হন। তার একটি চিঠিতে, তিনি তার বিবাহকে দ্বিতীয় কারাবাস হিসেবে বর্ণনা করেছেন, প্রথম কারাবাস ছিল জীবন নিজেই। তার কবিতায় জীবনের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি এরকম যে জীবন নিজেই একটি ধারাবাহিক বেদনাদায়ক সংগ্রাম যা শুধুমাত্র জীবনের সমাপ্তিতেই শেষ হতে পারে, যা তাঁর সাহিত্যকর্মে বারবার ফিরে এসেছে। তার একটি শের এই ভাবনাকে সংক্ষেপে তুলে ধরেছে:[১২]


قید حیات و بند غم ، اصل میں دونوں ایک ہیں
موت سے پہلے آدمی غم سے نجات پائے کیوں؟

জীবনের কারাগার আর দুঃখের শৃঙ্খল এক ও অভিন্ন,
মৃত্যুর আগে মানুষ কেন দুঃখ থেকে মুক্তি পাবে?

তার স্ত্রীর সাথে তার সম্পর্ক নিয়ে বিভিন্ন মতামত রয়েছে। তার স্ত্রীকে ধার্মিক, রক্ষণশীল এবং আল্লাহভীরু মনে করা হত।


মামার বাড়িতেই গালিবের জন্ম এবং তুলনামূলকভাবে তিনি আরামদায়ক শৈশব কাটান, যা তার পিতা ও চাচার মৃত্যুর পরও ব্যাহত ছিল৷ কিন্তু পিতা ও চাচার অকাল মৃত্যুতে তার মধ্যে বঞ্চনার স্থায়ী প্রভাব হয়নি৷ তাছাড়াও বংশের ঐতিহ্যের কারণে অহংকারী গালিবের মধ্যে তার মায়ের পিতৃগৃহে অবস্থানের প্রভাব নেতিবাচক ছিল৷ কিন্তু সৌভাগ্যবশত: শৈশবে তার শিক্ষা এমন ছিল যে তার বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ ব্যাহত হয়নি৷ আগ্রার খ্যাতিমান পণ্ডিত শেখ মোয়াজ্জেম তার শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন৷ এছাড়া সম্ভবত: তিনি মীর আযম আলী পরিচালিত একটি মাদ্রাসায়ও যেতেন৷ তিনি যুক্তিবিদ্যা, জ্যোতির্বিদ্যা, চিকিত্‍সাশাস্ত্রঅধিবিদ্যা ছাড়াও অন্যান্য বিষয়ে পড়াশুনা করেন৷ কিন্তু তার ঝোঁক ছিল ভাষা ও সাহিত্যের প্রতি, এবং বিশেষত: ফার্সি ভাষার প্রতি৷ এসময়ে আরবি ও ফার্সি ভাষায় দক্ষ আবদুস সামাদ নামে এক জ্ঞানী ব্যক্তি আগ্রা সফর করেন৷ গালিব তার শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন৷ আবদুস সামাদ গালিবের মামার বাড়িতে দুই বছর অতিবাহিত করেন৷ গালিব কখনো কাউকে তার 'উস্তাদ' বলে স্বীকার না করলেও পরবর্তীকালে আবদুস সামাদের উল্লেখ করেছেন অত্যন্ত প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতার সাথে৷

সাহিত্য কর্মজীবন

[সম্পাদনা]

গালিব ১১ বছর বয়সে কবিতা রচনা শুরু করেন। তার প্রথম ভাষা ছিল উর্দু, তবে বাড়িতে ফারসি এবং তুর্কি ভাষাও বলা হতো। তিনি অল্প বয়সে ফারসি এবং আরবি ভাষায় শিক্ষা গ্রহণ করেন। গালিবের সময়কালে "হিন্দি" এবং "উর্দু" শব্দগুলি সমার্থক ছিল (দেখুন হিন্দি-উর্দু বিতর্ক)। গালিব ফারসি-আরবি লিপিতে লিখতেন যা আধুনিক উর্দু লেখার জন্য ব্যবহৃত হয়, কিন্তু প্রায়শই তার ভাষাকে "হিন্দি" বলতেন; তার একটি কাজের শিরোনাম ছিল "ওদ-ই-হিন্দি" (উর্দু: عود هندی, শাব্দিক অর্থে 'হিন্দির সুগন্ধি')।[১৩]

যখন গালিব ১৪ বছর বয়সে ছিলেন, তখন ইরান থেকে নতুন মুসলিম ধর্মান্তরিত একজন পর্যটক (আব্দুস সামাদ, মূল নাম হরমুজ, একজন জরথুস্ট্রিয়ান) আগ্রায় আসেন.[১৪] । তিনি গালিবের বাড়িতে দুই বছর অবস্থান করেন এবং তাকে ফারসি, আরবি, দর্শন এবং যুক্তিবিদ্যা শিখান।[১৫]


পুরো জীবন ধরে তিনি ফার্সিকে তার প্রথম প্রেম বলে বর্ণনা করেছেন৷ কিন্তু তিনি যে শৈশবেই উর্দুতে কবিতা লিখতেন তারও দৃষ্টান্ত রয়েছে৷ কবি আলতাফ হোসেন হালীর বর্ণনা অনুসারে কানাইয়া লাল নামে এক লোক গালিবের একটি মসনবী সংরক্ষণ করেছিলেন যা গালিবের আট বা নয় বছর বয়সে লিখা৷ এটির অস্তিত্ব গালিব বিস্মৃত হয়ে গিয়েছিলেন৷ কিন্তু পরে যখন তাকে এটি দেখানো হয় তখন তিনি অত্যন্ত ব্যগ্রতার সাথে সেটি পাঠ করেন৷

গালিবের কবিতা নস্তালিক লিপিতে

যদিও গালিব উর্দুর চেয়ে ফারসিকে বেশি মূল্য দিতেন[১৬], তার খ্যাতি উর্দু লেখার উপর ভিত্তি করে। গালিবের গজল সংকলনগুলির উপর অসংখ্য ভাষ্য উর্দু পণ্ডিতরা লিখেছেন। প্রথম এমন ব্যাখ্যা বা 'শরহ' হায়দরাবাদের আলী হায়দার নাজম তাবাতাবাই দ্বারা লেখা হয়েছিল। গালিবের আগে, গজল মূলত যন্ত্রণাদায়ক প্রেমের প্রকাশ ছিল; কিন্তু গালিব জীবন দর্শন, জীবনের কষ্ট এবং রহস্য প্রকাশ করেছেন এবং অনেক অন্যান্য বিষয়েও গজল লিখেছেন, যার ফলে গজলের পরিধি ব্যাপকভাবে প্রসারিত হয়েছে।

ধ্রুপদী গজলের রীতি অনুযায়ী, গালিবের অধিকাংশ শেরে, প্রিয়তমার পরিচয় এবং লিঙ্গ অনির্দিষ্ট। সমালোচক/কবি/লেখক শামসুর রহমান ফরুকি ব্যাখ্যা করেছেন যে প্রেমিক বা প্রিয়তমার "ধারণা" থাকার ঐতিহ্য বাস্তবতার দাবিগুলি থেকে কবি-প্রধান-প্রেমিককে মুক্তি দেয়।[১৭] উর্দু প্রেমের কবিতা সপ্তদশ শতাব্দীর শেষ চতুর্থাংশ থেকে "প্রেম সম্পর্কে কবিতা" এবং "প্রেমের কবিতা" এর মধ্যে পার্থক্য করে।

গালিবের গজলের প্রথম সম্পূর্ণ ইংরেজি অনুবাদ ছিল "লাভ সনেটস অফ গালিব", যা সরফরাজ কে. নিয়াজি লিখেছেন এবং এটি ভারতে রূপা অ্যান্ড কো এবং পাকিস্তানে ফেরোজসন্স দ্বারা প্রকাশিত হয়েছিল[১৮]। এতে সম্পূর্ণ রোমান লিপ্যন্তরণ, ব্যাখ্যা এবং একটি বিস্তৃত অভিধান অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।[১৯]

বলা হয়ে থাকে যে, আগ্রার এক অভিজাত ও কবি হোসাইন-উদ-দৌলা একবার কিছু তরুণ কবির কবিতা নিয়ে যান লক্ষ্ণৌর বিখ্যাত কবি মীর তকী মীরের কাছে৷ মীর তকী কবি খ্যাতির পাশাপাশি চড়া মেজাজের জন্যেও পরিচিত ছিলেন এবং ভালো কবিতা ছাড়া সবই বাতিল করে দিতেন৷ কেউ সাহস করে তাকে গালিবের কবিতা দেখায় এবং গালিবের মেধা সম্পর্কে অবহিত করে৷ গালিবের গজল পাঠ করে তিনি মন্তব্য করেন যে, কোন ভালো উস্তাদের তত্ত্বাবধানে ছেলেটি বিরাট কবি হতে পারবে৷

১৮১০ সালের ৮ আগস্ট তের বছরের কম বয়সে গালিব নওয়াব ইলাহী বখশ খানের কন্যা ওমরাও বেগমকে বিয়ে করেন এবং বিয়ের অল্প কিছুদিনের মধ্যেই আগ্রা থেকে দিল্লিতে চলে আসেন৷ সম্ভবত তা ১৮১১ সালে এবং পরবর্তী একান্ন বছর ধরে তিনি দিল্লিতেই বসবাস করেছেন৷ অবশ্য সাত বছর বয়স থেকেই তিনি দিল্লিতে আসতেন বলে নগরীটি তার কাছে নতুন ছিল না৷ তার শ্বশুর দিল্লির অভিজাতদের অন্যতম ছিলেন৷ 'মারুফ' ছদ্মনামে কবিতা লিখতেন তিনি৷ কবি হিসেবে খ্যাতি লাভের জন্যে আগ্রার চাইতে দিল্লির পরিবেশ অনুকূল ছিল ৷ অবশ্য অব্যাহত রাজনৈতিক সমস্যার কারণে তার পূর্বেকার কবি মীর তকী মীর ও সওদাকে দিল্লি ত্যাগ করতে হয়েছিল৷ কিন্তু ঊনবিংশ শতাব্দীর সূচনায় ব্রিটিশ উপনিবেশিক শক্তির উপস্থিতি দিল্লির রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে শান্ত রেখেছিল৷

দিল্লিতে আগমণের পর গালিব চাঁদনী চকের কাছে একটি প্রাসাদ ভাড়া নেন৷ শ্বশুরের প্রভাবের কারণে দিল্লির অভিজাত মহলের সাথে পরিচিত হতে তাকে বেগ পেতে হয়নি৷ কিন্তু তার কবি সূচনা খুব স্বচ্ছন্দ ছিল না৷ তার প্রথমদিকের কবিতা ফার্সি ঘেঁষা ছিল৷ উর্দু সাধারণ মানুষের ভাষায় পরিণত হওয়ায় সাহিত্যের মাধ্যম হিসেবেও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল৷ কিন্তু গালিবের ওপর ফার্সি কবি বুখারি, আসীর ও বেদীর প্রভাব ছিল৷ সমালোচকদের মতে গালিবের প্রথম জীবনের কবিতা তার ব্যক্তিগত জীবনের মতোই দুর্বোধ্য ও সামঞ্জস্যহীন ছিল৷ গালিব যদি কোন মুশায়রায় উপস্থিত থাকতেন, তাহলে খুব কমসংখ্যক কবিই অর্থহীন শব্দ সংবলিত কবিতা উপস্থাপন করতেন৷ একবার দিল্লির সুপরিচিত এক কবি হাকিম আগা খান একটি কবিতা আবৃত্তির সময় হাত-পা ছুঁড়ে হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, গালিবের কবিতা একমাত্র আল্লাহ এবং স্বয়ং গালিবের পক্ষেই বুঝা সম্ভব৷ অন্যেরাও কমবেশি একইভাবে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতেন৷ রামপুরের মৌলভি আবদুল কাদের একবার গালিবকে বলেন, 'আপনার উর্দু কবিতাগুলোর একটি আমি বুঝতে পারি না', এবং তিনি তখন একটি কবিতা রচনা করে তাকে শোনান,

"প্রথমে মোষের ডিম থেকে

গোলাপের নির্যাস নাও, এছাড়াও সেখানে অন্য যে সব ওষুধ আছে সেগুলোও

মোষের ডিম থেকে বের করে নাও"

গালিব চমকে উঠে বলেন, 'এটি অবশ্যই আমার কবিতা নয়৷' মৌলভি কাদের রসিকতা বজায় রেখে বলেন, 'আমি আপনার দিওয়ানেই এটি পেয়েছি৷ কপি থাকলে আনুন, আমি এখনই দেখিয়ে দিচ্ছি৷' অবশেষে গালিব উপলব্ধি করেন যে, তাকে পরোক্ষভাবে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে যে তার দিওয়ানে এ ধরনের অসঙ্গতিপূর্ণ কবিতার উপস্থিতি আছে৷ অবশ্য বিরূপ সমালোচনার জবাবও দিয়েছেন গালিব:

"আমি প্রশংসার কাঙ্গাল নই

পুরস্কারের জন্যে লালায়িত নই আমার কবিতার যদি কোন অর্থও না থাকে তা নিয়েও আমার তোয়াক্কা নেই৷"

আরেকটি কবিতায় তিনি ব্যঙ্গ করে লিখেন,

"ও, আমার হৃদয়, এটা তো সত্য যে

আমার কবিতা খুবই কঠিন! খ্যাতিমান ও সফল কবিরা আমার কবিতা শুনে সেগুলো সহজ করতে বলে৷ কিন্তু কঠিন ছাড়া কোন কবিতা

লিখা আমার জন্যেই কঠিন৷"

তা সত্ত্বেও গালিবের কবিতা অপূর্ব, ছন্দময় এবং সহজ ভাবসমৃদ্ধ৷ কিন্তু সমালোচনার প্রতি গালিবের অসহিষ্ঞুতাকে অনেকে পছন্দ করতে পারেননি৷ তার কবিতার শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে নিজের অহংকার এতো প্রচন্ড ছিল যে, তিনি মনে করতেন যে খুব কম লোকই তার কবিতাকে বিচার করতে সক্ষম৷

"আমার হৃদয়ের আগুন থেকেই

আলো দিচ্ছে আমার কবিতা, আমি যা লিখছি তাতে একটি

আঙ্গুল দেয়ার সাধ্য নেই কারো৷"

গালিব নিজেকে দিল্লির অভিজাতদের মধ্যে গণ্য করতেন এবং সেভাবে চলতে ফিরতে ও আচার আচরণে অভ্যস্ত ছিলেন৷ কবি আলতাফ হোসেন হালী লিখেছেন যে, গালিব কখনো পালকি ছাড়া কোথায়ও যেতেন না এবং যারা তার সাথে সাক্ষাতের জন্যে আসতেন, তিনিও শুধু তাদের কাছেই যেতেন৷

গালিব মদ্য পান করতেন এবং ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে তার নিষ্ঠা ছিল না৷ অতএব, সেজন্যেও তাকে তীব্রভাবে সমালোচিত হতে হয়েছে৷ তার কবিতায় ধর্মীয় শব্দাবলী উঠে এসেছে প্রতীকি অর্থে, যা অনিবার্যভাবে ধর্মের প্রতি তার বিরূপতা নাও হতে পারে৷

"কা'বা তওয়াফের প্রয়োজন নেই আমার

আমাকে জমজম কূপের কাছে থামতে হবে, কারণ আমার ইহরাম সুরায় ভিজে গেছে৷ গত রাতে আমি জমজমের পাশে বসে আকন্ঠ সুরা পান করেছি৷ প্রথম আলো ফুটতেই ইহরাম থেকে সুরার দাগ ধুয়ে ফেলতে হবে৷"

হালীর মতে গালিব মদ পান করার সময় লিখতেন এবং তা প্রায়ই সন্ধ্যায়৷ একা বসে একটি সুতা নিয়ে খেলতেন৷ কবিতার একটি লাইন লিখার পর সুতায় একটি গিট দিতেন৷ যখন শুতে যেতে তখন সুতায় অনেকগুলো গিট থাকতো৷ সকালে তিনি গিটগুলো খুলতেন৷ লাইনগুলো তিনি মুখস্থও বলতে পারতেন৷ তার সৃজনশীলতা ও কল্পনার ক্ষেত্রে মদিরা সহায়ক ছিলো বলে অনেকে অভিমত ব্যক্ত করেছেন৷ সুরার প্রতি আসক্তিকে গালিব মনে করতেন আশির্বাদ৷ তিনি লিখেছেন:

"ও আসাদ, সুরা পান করতে অস্বীকারকারী

পুরোপুরিই অজ্ঞ; তার বেহেশতের সাকীর

ভালোবাসা ছাড়া সুরা নিষিদ্ধ৷"

গালিবের আরেকটি দুর্বলতা ছিল জুয়া খেলার প্রতি৷ এ ব্যাপারে তার কোন রাখঢাক ছিল না৷ গ্রীষ্মের একদিন এবং তখন রমজান মাসও ছিল, গালিবের ঘনিষ্ঠ বন্ধু বিশিষ্ট কবি ও ইসলামী আইনে বিশেষজ্ঞ মুফতি সদরুদ্দিন আজুর্দা গালিবের সাথে সাক্ষাত্ করতে গিয়ে দেখতে পান যে তিনি জুয়া খেলছেন৷ ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি মন্তব্য করেন যে এখন তার সন্দেহ হচ্ছে যে, পবিত্র গ্রন্থাদিতে যে বলা হয়েছে রমজান মাসে শয়তান কারারুদ্ধ থাকে, তা সত্য৷ গালিব তাকে স্বাগত জানিয়ে উত্তর দেন, গ্রন্থের বক্তব্য যথার্থ, শয়তান যথার্থই কারারুদ্ধ এবং তা এই কক্ষেই৷

গালিব কখনো রোজা রাখেননি এবং তিনি তা স্বীকার করেছেন৷ অন্যান্য দোষও তিনি স্বীকার করতেন এবং ধর্মের বাণী প্রচারকারীদের বিদ্রূপ করতেন৷ আর্থিক অনটন গালিবের জীবনকে বেপরোয়া করে তুলেছিল এবং নিজ বাড়িতে বন্ধুদের আমন্ত্রণ জানাতেন জুয়া খেলতে৷ জুয়া খেলাকে নৈতিকভাবে অপরাধ মনে করতেন না তিনি৷ তখনকার ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ নৈতিকতার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছিল এবং জুয়া খেলাকে 'দেশীয়'দের বদভ্যাস বলে বিবেচনা করতো৷ জুয়াখেলার কারণে ১৮৪১ সালে গালিবকে সতর্ক করে দেয়া হয় এবং ১০০ রুপি জরিমানাও করা হয়৷ কিন্তু পরবর্তীতে দিল্লির কোতোয়াল ফৈয়াজ হাসান খান গালিবের বাড়িতে হানা দিয়ে জুয়া খেলারত অবস্থায় তাকে পাকড়াও করেন এবং বিচারে তাকে ছয় মাসের সশ্রম কারাদণ্ড ও দু'শ রুপি জরিমানা করা হয়৷ জরিমানা দেয়া না হলে কারা মেয়াদ বৃদ্ধি এবং অতিরিক্ত ৫০ রুপি দেয়া হলে সশ্রম কারাদন্ড বিনাশ্রম হওয়ার শর্ত ছিল৷

এই রায়ের বিরম্নদ্ধে প্রবল আপত্তি উঠে৷ তখনকার সংবাদপত্রগুলো প্রতিবাদে সোচ্চার হয়৷ মোগল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফর ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করার পরও সরকার অনড় ছিল৷ সম্রাটকে জানানো হয় যে বিচারাধীন বিষয়ে তার হস্তক্ষেপ না করাই ভালো৷

গালিবকে অবশ্য পুরো মেয়াদ কারাবাস করতে হয়নি৷ তিন মাস পরই তাকে মুক্তি দেয়া হয়৷ কারাগারে তাকে কোন শ্রম দিতে হয়নি৷ বাড়ি থেকে পাঠানো খাবার খেতে দেয়া হয়েছে এবং দর্শনার্থীদের সাথে সাক্ষাতও করতে দেয়া হয়েছে৷ অবশেষে দিল্লির সিভিল সার্জনের সুপারিশে মেয়াদ পূর্তির আগেই তাকে মুক্তি দেয়া হয়৷ কিন্তু গালিবের ওপর এই শাস্তির নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল৷ অভিজাত, বুদ্ধিজীবী এবং দুঃখ ও আনন্দে অতি স্পর্শকাতর কবি হিসেবে তার যে অহংকার ছিল তা গুঁড়িয়ে যায় তার সাথে সাধারণ অপরাধীর মতো আচরণ করায়৷ শাসকদের দৃষ্টিতে তার গুরুত্ব রয়েছে বলে ধারণা ধুলিসাত্ হয়ে যায় এবং নামসর্বস্ব মোগল সম্রাটের অক্ষমতাও তার কাছে স্পষ্ট হয়৷ তার বিপদে বন্ধুরাও তাকে পরিত্যাগ করেছিল৷ গালিবের ঘনিষ্ঠ বন্ধু আমিনুদ্দিন খান গালিবের সাথে তার সম্পর্কের বিষয় মুছে ফেলতে সংবাদপত্রে বিবৃতি পর্যন্ত দিয়েছেন৷ ব্যতিক্রম ছিলেন শুধু মোস্তফা খান শেফতা নামে এক বন্ধু, যিনি তার কারাদন্ড লাঘবের চেষ্টা এবং প্রতিদিন তার সাথে সাক্ষাত্ করেছেন৷ গালিব জীবনের অবশিষ্ট দিনগুলো পর্যন্ত তার প্রতি ঋণ স্বীকার করে গেছেন৷

ফার্সি ভাষায় লিখা এক চিঠিতে তিনি পৃথিবীতে আর না থাকার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন কারামুক্ত হয়ে৷ যদি বাঁচতেই হয় তাহলে হিন্দুস্থানে নয়, রুম, মিশর, ইরান, বাগদাদে এমনকি মক্কায় গিয়ে থাকতে চেয়েছেন৷ তার আগে সকল বন্ধন থেকে মুক্ত হতে চেয়েছেন তিনি৷

পেনশন এবং পৃষ্ঠপোষকতা

[সম্পাদনা]

গালিবকে বর্ণনা করা হয়েছে, তিনি সম্পত্তি অর্জন বা বাণিজ্যে নিযুক্ত হওয়ার চেয়ে পেনশন পাওয়া নিয়ে বেশি চিন্তিত ছিলেন।[১০] গালিব ১৮২৭ সাল পর্যন্ত তার চাচার সরকারি পেনশন থেকে প্রতি মাসে ৫২ রুপি এবং ৮ আনা বেতন পেতেন।[২০] তিনি কলকাতায় গিয়ে গভর্নর-জেনারেলকে একটি পিটিশন দাখিল করেন যাতে তিনি এই পেনশন থেকে টাকা পেতে পারেন।[২০]

গালিবের জীবনের অন্যতম লক্ষ্য ছিল রয়েল মুঘল দরবারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের উস্তাদ হওয়া।[১০] এই অবস্থান শুধু তার শৈল্পিক দক্ষতাই প্রমাণ করত না, বরং তাকে প্রতি মাসে ৪০০ রুপি বেতন দিত।[১০] রাজসভার আনুষ্ঠানিক কবি হওয়ার আগে, গালিবকে তৈমুর বংশের ইতিহাস নিয়ে লেখার জন্য প্রতি মাসে ৫০ রুপি বেতন দেওয়া হত।[১০]

গালিবের হাতে লেখা চিঠির একটি পাতা

মির্জা গালিব একজন প্রতিভাবান চিঠি লেখক ছিলেন[২১]। শুধু উর্দু কবিতা নয়, গদ্যও মির্জা গালিবের কাছে ঋণী। তার চিঠিগুলি সহজ এবং জনপ্রিয় উর্দুর ভিত্তি তৈরি করেছিল। গালিবের আগে, উর্দুতে চিঠি লেখা অত্যন্ত অলঙ্কৃত ছিল। তিনি এমন শব্দ এবং বাক্য ব্যবহার করে তার চিঠিগুলিকে "কথা" বানিয়েছিলেন যেন তিনি পাঠকের সাথে কথা বলছেন। গালিবের ভাষায়:

ہزار کوس سے بہ زبانِ قلم باتیں کرو
ہجر میں وصال کے مزے لیا کرو

হাজার মাইল দূর থেকেও কলমের ভাষায় কথা বলো,
বিচ্ছেদের মাঝেও মিলনের আনন্দ উপভোগ করো।


তার চিঠিগুলি খুব অনানুষ্ঠানিক ছিল; কখনও কখনও তিনি শুধু ব্যক্তির নাম লিখতেন এবং চিঠি শুরু করতেন। তিনি খুব হাস্যরসপূর্ণ ছিলেন এবং খুব আকর্ষণীয় চিঠি লিখতেন। এক চিঠিতে তিনি লিখেছিলেন, "ম্যায় কশিশ করতা হুঁ কা কোই আইসি বাত লিখোঁ জো পড়ে খুশ হো যায়ে'" (আমি এমন কথা লিখার চেষ্ঠা করি যা যে কেউ পড়বে এবং আনন্দিত হবে)। কিছু পণ্ডিত বলেছেন যে কেবল তার চিঠির ভিত্তিতে গালিবের উর্দু সাহিত্যে একই স্থান থাকবে। রালফ রাসেল তার চিঠিগুলিকে ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন দ্য অক্সফোর্ড গালিব-এ।

গালিব একটি অশান্ত সময়ের ইতিহাসবিদ ছিলেন। একের পর এক গালিব খাস বাজার, উর্দু বাজার, খারাম-কা বাজার এর মতো বাজারগুলি বিলীন হতে দেখেছিলেন, এবং পুরো মহল্লা (এলাকাগুলি) এবং কাত্রা (গলিগুলি) ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। তার বন্ধুদের হাভেলি (অট্টালিকা) ভেঙ্গে ফেলা হয়েছিল। গালিব লিখেছিলেন যে দিল্লি মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। পানির অভাব ছিল। দিল্লি ছিল "একটি সামরিক শিবির"। এটি ছিল ফিউডাল এলিটের শেষ সময় যার মধ্যে গালিব অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। তিনি লিখেছেন:

ہے موجزن اک قلزم خوں کاش یہی ہو
آتا ہے ابھی دیکھیے کیا کیا مرے آگے

একটি রক্তের মহাসাগর আমার চারপাশে ফুঁসছে - আফসোস! এটাই কি সব ছিল?
ভবিষ্যতই বলবে আমার সামনে আরও কি কি অপেক্ষা করছে।[২২]

ছদ্মনাম

[সম্পাদনা]

তার আসল তখাল্লুস (ছদ্ম নাম) ছিল আসাদ (যার অর্থ সিংহ), যা তার প্রদত্ত নাম আসাদুল্লাহ খান থেকে নেওয়া। তার কাব্যিক জীবনের প্রথম দিকেই তিনি 'গালিব' (যার অর্থ সর্বজয়ী, শ্রেষ্ঠ, সর্বোত্তম) নামটি গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেন।[২৩]

মির্জা গালিবের জীবনের গতিপথ পরিবর্তন

[সম্পাদনা]

গালিবের কবিতা বা শায়ারি দিল্লির মুঘল বাদশাহ বাহাদুর শাহ জাফরকে মুগ্ধ করেছিল। ব্রিটিশ শাসনের সময়, বাদশাহ ব্রিটিশ পেনশনভোগী হয়ে উঠেছিলেন। ব্রিটিশরা তাকে তার দর্শনার্থীদের সাথে, যাদের মধ্যে গালিবও ছিলেন, কঠোর নজরদারিতে রেখেছিল, কারণ তারা তার উপর সন্দেহ করছিল। গালিবের পেনশন ব্রিটিশরা স্থগিত করে দিয়েছিল। এটি গালিবকে তার পেনশন সম্পর্কে ব্রিটিশ গভর্নর জেনারেলের কাছে আপিল করার জন্য কলকাতায় একটি দীর্ঘ যাত্রা করতে বাধ্য করেছিল।

মির্জা গালিবের কলকাতায় ভ্রমণ, যা তখনকার ক্যালকাটা নামে পরিচিত ছিল, তার সাহিত্যিক জীবনে একটি বিশাল পরিবর্তন এনেছিল।[২৪] মির্জা গালিব আনন্দের শহরে (সিটি অব জয়) এসে এ শহরের প্রেমে পড়েন। কলকাতার প্রতি তার ভালোবাসা তার একটি রচনায়, 'সাফর-ই-কালকত্তাহ', স্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে। সেখানে তিনি তার সরল বাসস্থান, হাভেলি নং ১৩৩, যা সিমলা মার্কেট এলাকায় অবস্থিত ছিল, সম্পর্কে কথা বলেন। তিনি উর্দুতে কবিতা লিখতেন, কিন্তু এই ভ্রমণের পর থেকে তিনি ফারসিতে কবিতা লেখা শুরু করেন। তিনি বুঝতে পারেন যে কলকাতার সাহিত্যিক পরিবেশ তার পরিচিত জগতের থেকে অনেক ভিন্ন। কলকাতায় অবস্থানের সময় তিনি অনেক সাহিত্যিক সভায় অংশগ্রহণ করেন, যা দিল্লির মতো রাজকীয় ছিল না। এই সভাগুলি ছিল অনেক বেশি উদার এবং নমনীয়, যা যে কোনো সৃজনশীল মনের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

মির্জা গালিবের কলকাতায় অবস্থান তার সাহিত্যিক যাত্রার দিগন্তকে প্রসারিত করেছিল। তিনি নিজেকে কলকাতার অন্যতম বিখ্যাত কবি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন এবং শহরের আলোকিত দর্শকদের কাছ থেকে প্রশংসা ও সমালোচনা দুই-ই পান। এই সময়কালে, তিনি ফারসিতে দুটি মসনবি লিখেন, যেমন চিরাগ-এ দাইর (মন্দিরের প্রদীপ) এবং বাদ-এ মোকালিফ (বিপরীত বায়ু)। তার চিঠিগুলি তার কলকাতার প্রেমের কাহিনীকে সাক্ষ্য দেয়।

মির্জা আলি বখশ খানকে লেখা এক চিঠিতে তিনি জানান কিভাবে শহরটি তার হৃদয় চুরি করেছে এবং তাকে বিমোহিত করেছে। তিনি শহরটিকে এমন একটি জায়গা হিসেবে উল্লেখ করেছেন যা মৃত্যুর ছাড়া সব কিছুর প্রতিকার প্রদান করে এবং শহরের প্রতিভাবান মানুষদের প্রশংসা করেন।

মোগল প্রদত্ত উপাধি

[সম্পাদনা]

১৮৫০ সালে, সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফর মির্জা গালিবকে দবীর-উল-মুলক (ফার্সি: دبیر الملک, শাব্দিক অর্থে 'রাষ্ট্রের সচিব') উপাধিতে ভূষিত করেন। সম্রাট এর সাথে নজম-উদ-দৌলা (ফার্সি: نجم الدولہ, শাব্দিক অর্থে 'রাষ্ট্রের তারা') নামক একটি অতিরিক্ত উপাধিও যোগ করেন[]। এই উপাধিগুলির প্রদান মির্জা গালিবের দিল্লির অভিজাত সমাজে অন্তর্ভুক্তির প্রতীক ছিল। তিনি মির্জা নৌশা (ফার্সি: مرزا نوشہ) উপাধিও পান, যার ফলে তিনি তার নামের সাথে মির্জা যোগ করতে পারেন। তিনি সম্রাটের রাজকীয় দরবারের একজন গুরুত্বপূর্ণ সভাসদও ছিলেন। সম্রাট নিজেই একজন কবি ছিলেন বলে, মির্জা গালিবকে ১৮৫৪ সালে তার কবি শিক্ষক নিযুক্ত করেন। তাকে সম্রাটের বড় পুত্র ফখর-উদ-দিন মির্জার (মৃত্যু ১০ জুলাই ১৮৫৬) শিক্ষক হিসেবেও নিয়োগ দেওয়া হয়। এছাড়াও, মুঘল দরবারের রাজকীয় ইতিহাসবিদ হিসেবেও সম্রাট তাকে নিয়োগ দেন[]। তাকে তৈমুরের বংশের ইতিহাস লিখার দায়িত্ব ন্যস্ত করেন বার্ষিক ছয়শ' রুপি ভাতায়৷ এতে গালিব মানসিকভাবে কিছুটা স্থিতিশীল হন৷ কিন্তু ইতিহাস রচনার কাজে যে পড়াশুনা ও ধৈর্য্যের প্রয়োজন গালিবের তা ছিল না এবং দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম ছয় মাসে তিনি মোগল বংশের প্রতিষ্ঠাতা সম্রাট বাবরের চাইতে বেশি আর অগ্রসর হতে পারেননি৷ তার আর্থিক অবস্থা ছিল নাজুক এবং তাকে মাসিক ভিত্তিতে ভাতা দেয়ার জন্যে বাহাদুর শাহকে চিঠি লিখেন৷ বাহাদুর শাহ এতে অনুমোদন দেন, কিন্তু ১৮৫১ সালের মধ্যে সম্রাট হুমায়ুনের জীবনকাহিনীর চাইতে বেশি আর লিখতে পারেননি৷ অতএব, প্রকল্পটি ভেস্তে যায়৷ তিনি যতটুকু লিখেছিলেন তা 'মিহির-ই-নিমরোজ' নামে ১৮৫৪ সালে প্রকাশিত হয়৷

গালিবের কবি খ্যাতি আরো বৃদ্ধি পায়৷ গালিব একই সাথে অযোধ্যার নওয়াব ওয়াজিদ আলী শাহের ওপর তার প্রভাব সৃষ্টির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন৷ এক পর্যায়ে তিনি তাকে বার্ষিক পাঁচশ' রুপি ভাতা মঞ্জুর করেন৷ আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরে এলেও গালিবের স্বাস্থ্য ভেঙ্গে পড়ছিল৷ চোখে কম দেখছিলেন এবং কানেও কম শুনছিলেন৷ মোটামুটি এ সময়েই তার কবি বন্ধু মোমিন ও জওক এর মৃত্যু ঘটে এবং দু'জনের মৃত্যুতে তিনি ব্যথিত হন৷ ১৮৫৬ সালে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ অযোধ্যাকে ব্রিটিশ আওতায় নিয়ে আসে এবং একই বছরে পরবর্তী মোগল সম্রাট বলে নির্ধারিত মির্জা ফখরুদ্দিন মৃত্যুবরণ করেন৷ অতএব দুটি উৎস থেকেই গালিবের ভাতা প্রাপ্তি বন্ধ হয়ে যায়৷ কিন্তু এর চাইতে ভয়াবহ বিপর্যয় অপেক্ষা করছিল৷ তা ছিল ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহ, যার ফলে জীবনের পরিচিত সবকিছু তছনছ হয়ে যায় এবং বিদ্রোহের পর ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ যে ব্যবস্থা চালু করে তা ব্যক্তিজীবন, সামাজিক জীবনকে পুরোপুরি পাল্টে দেয়৷ মোগল বাদশাহ'র সময়ে তিনি যে ভাতা লাভ করতেন, তা ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ বাতিল করেন৷ ফলে মির্জা গালিবকে নতুন করে আর্থিক সংকটে পড়তে হয়৷[]

তার খ্যাতি তার মৃত্যুর পরে আসে। তিনি নিজেই জীবদ্দশায় মন্তব্য করেছিলেন যে পরবর্তী প্রজন্ম তাকে স্বীকৃতি দেবে।

গালিবের সমাধিক্ষেত্রের প্রবেশদ্বার
মির্জা গালিবের সমাধি, নিজামুদ্দিন বস্তি, দিল্লী

গালিব ও স্যার সৈয়দ আহমদ খান

[সম্পাদনা]

১৮৫৫ সালে, স্যার সৈয়দ আহমদ খান তার পাণ্ডিত্যপূর্ণ, সমৃদ্ধশালী গবেষণা এবং চিত্রিত সংস্করণ আবুল ফজলের আইন-ই আকবরীর কাজ সম্পন্ন করেন।[২৫][২৬] কাজটি নিজের সন্তুষ্টিতে শেষ করে, এবং বিশ্বাস করে যে মির্জা আসাদুল্লাহ খান গালিব তার পরিশ্রমের প্রশংসা করবেন, তিনি গালিবের কাছে একটি তক্রীজ (সেই সময়ের প্রচলন অনুযায়ী, প্রশংসাসূচক ভূমিকাস্বরূপ) লেখার জন্য অনুরোধ করেন। গালিব সম্মত হন, কিন্তু তিনি একটি ছোট ফারসি কবিতা রচনা করেন যা আইন-ই আকবরীর সমালোচনা করে এবং তার মাধ্যমে সম্রাটীয়, সমৃদ্ধ, বিদ্যাবুদ্ধিসম্পন্ন মুঘল সংস্কৃতিরও নিন্দা করে, যা এই বইটির উৎপত্তি ছিল[২৭]। সবচেয়ে কম যা বলা যায় তা হলো এই বইটির কোনো মূল্য ছিল না এমনকি একটি প্রাচীন দলিল হিসেবেও। গালিব খানকে প্রায় তিরস্কার করেন তার প্রতিভা এবং সময়কে মৃত জিনিসের উপর ব্যয় করার জন্য।[২৮]আরও খারাপ যা হলো, তিনি "ইংরেজ সাহেবদের" অত্যন্ত প্রশংসা করেন, যারা তখন পৃথিবীর সমস্ত আইনগুলির চাবিকাঠি ধারণ করতেন।[২৯]

এই কবিতা অপ্রত্যাশিত ছিল, কিন্তু এটি এমন সময়ে আসে যখন খানের চিন্তা এবং অনুভূতি পরিবর্তনের দিকে ঝুঁকছিল। গালিব ইউরোপীয় (ইংরেজি) পৃষ্ঠপোষকতায় বিশ্বের রাজনীতিতে, বিশেষ করে ভারতীয় রাজনীতিতে পরিবর্তনের বিষয়ে খুবই সচেতন ছিলেন। সৈয়দ আহমদ খান গালিবের উপদেশে হতাশ হতে পারেন, কিন্তু তিনি নিশ্চয়ই বুঝতে পারেন যে গালিবের পরিস্থিতির বিশ্লেষণ, যদিও পর্যাপ্ত পরিমাণে সূক্ষ্ম নয়, মূলত সঠিক ছিল। খান হয়তো অনুভব করেছিলেন যে, ইংরেজ এবং বাইরের বিশ্বের বিষয়ে আরও ভালভাবে অবহিত হওয়ায়, তার নিজেরই পরিবর্তনটি দেখতে পাওয়া উচিত ছিল যা তখন তার আশেপাশেই মনে হচ্ছিল।[২৭]

স্যার খান আর কখনও আইন-ই আকবরীর প্রশংসায় একটি শব্দও লেখেননি এবং প্রকৃত অর্থেই তিনি ইতিহাস এবং পুরাতত্ত্বে তার আগ্রহ ত্যাগ করেন এবং একজন সমাজ সংস্কারক হয়ে ওঠেন।[৩০]

ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি

[সম্পাদনা]

গালিব ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের চেয়ে আল্লাহ।সৃষ্টিকর্তাকে খুঁজে পাওয়ার ওপর বেশি জোর দিয়েছেন। যদিও তিনি শিয়া মতবাদ অনুসরণ করতেন এবং আলি ইবনে আবি তালিবের প্রশংসায় অনেক কবিতা লিখেছেন[৩১][৩২][৩৩]। গালিব লিখেছেন:


ہے پرے سرحد ادراک سے اپنا مسجود
قبلے کو اہل نظر قبلہ نما کہتے ہیں

আমার ইবাদতে বিষয় উপলব্ধির সীমানার বাইরে;

দূর দৃষ্টি সম্পন্ন মানুষদের কাছে কিবলা কেবল একটি দিকনির্দেশক চুম্বকই।"[৩৪]:৭৯

অনেক উর্দু কবির মতো, গালিব গভীর ধর্মীয় কবিতা লিখতে পারতেন, তবে কিছু ধর্মীয় নেতার কর্তৃক ইসলামিক শাস্ত্রের কিছু ব্যাখ্যা সম্পর্কে তিনি সংশয়ী ছিলেন। স্বর্গের ধারণা নিয়ে, তিনি তার ফারসি মসনভি "আব্র-ই-গোহর বার"-এ লিখেছিলেন[৩৪]:৪১:

তিনি কিছু উলামার অভ্যাসকে তীব্রভাবে অবজ্ঞা করতেন, যারা তার কবিতায় সংকীর্ণমনা এবং ভণ্ডামির প্রতীক হিসেবে উপস্থিত। একটি কবিতায় তিনি বলেন: [৩৪]:৪১

کہاں مے خانہ کا دروازہ غالبؔ اور کہاں واعظ،
پر اتنا جانتے ہیں کل وہ جاتا تھا کہ ہم نکلے

পীর আর মদের দোকানের সম্পর্ক কী?
কিন্তু বিশ্বাস করো, গালিব,
আমি নিশ্চিত, আমি যখন বেরিয়ে আসছিলাম,
তাকে দেখেছিলাম, নিঃশব্দে ঢুকতে।[৩৪]:৪১

আরেকটি কবিতায়, কিছু মৌলবির (ধর্মগুরু) প্রতি ইঙ্গিত করে, তিনি তাদের অজ্ঞতা এবং অহংকারের সমালোচনা করেন: "আরও গভীরভাবে দেখুন, একমাত্র আপনিই তার গোপন সঙ্গীত শুনতে পাচ্ছেন না।" তার চিঠিতে, গালিব প্রায়ই উলামার সংকীর্ণ আইনশাস্ত্রের সাথে "বানিয়াদের এবং বাচ্চাদের শেখানোর এবং ঋতুচক্র এবং ঋতুকালীন রক্তপাতের সমস্যায় ডুবে থাকার" তুলনা করতেন এবং প্রকৃত আধ্যাত্মিকতার জন্য "মনীষীদের কাজ অধ্যয়ন করতে এবং সৃষ্টিকর্তার বাস্তবতার মৌলিক সত্যটি হৃদয়ে গ্রহণ করতে হবে।"[৩৪]:৮০

১৮৫৭ সালের ৫ অক্টোবর দিল্লিতে ব্রিটিশ বিরোধী বিদ্রোহের সময়, ব্রিটিশ সৈন্যরা কাশ্মীরি গেট দিয়ে প্রবেশের তিন সপ্তাহ পর, কিছু সৈন্য গালিবের পাড়ায় এসে তাকে কমান্ডিং অফিসার কর্নেল ব্রাউনের কাছে নিয়ে যায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য[৩৬] for questioning.[৩৪]:৪১। গালিব কেন্দ্রীয় এশীয় তুর্কি শৈলীর টুপি পরে কর্নেলের সামনে উপস্থিত হন। কর্নেল তার উপস্থিতিতে মজার মনে করে ভাঙা উর্দুতে জিজ্ঞাসা করেন, "ওয়েল? ইউ মুসলিম?", যার উত্তরে গালিব ব্যঙ্গাত্মকভাবে বলেন, "হাফ?" কর্নেল জিজ্ঞাসা করেন, "এটা কী মানে?" উত্তরে গালিব বলেন, "আমি মদ পান করি, কিন্তু শূকর খাই না।"[৩৪]:৪১

গালিবের নাত

[সম্পাদনা]

গালিবের কবিতার একটি বড় অংশ হযরত মুহাম্মদ (স.) এর প্রশংসায় লেখা নাত নিয়ে। এটি প্রমাণ করে যে গালিব ছিলেন একজন ধার্মিক মুসলমান[৩৭] । গালিব তার "আব্র-ই-গুহর বার" (উর্দু: ابر گہر بار, 'মণি-বহনকারী মেঘ') নাত কবিতা হিসেবে লিখেছিলেন। গালিব ১০১টি শ্লোকের একটি কাসিদাও লিখেছিলেন নাতের জন্য উৎসর্গ করে।[৩৮] [৩৭]গালিব নিজেকে একজন পাপী হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন, যার হযরত মুহাম্মদ (স.) এর সম্মুখে নীরব থাকা উচিত, কারণ তিনি তাকে সম্বোধন করার যোগ্য ছিলেন না, যিনি আল্লাহর দ্বারা প্রশংসিত।[৩৭]

হিন্দুস্তানের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি

[সম্পাদনা]

তার ফারসি কবিতা "চিরাগ-ই-দাইর" (উর্দু: چراغ دیر, মন্দিরের প্রদীপ), যা ১৮২৭ সালের বসন্তে বেনারসে তার ভ্রমণের সময় রচিত হয়েছিল, গালিব হিন্দুস্তানের (ভারত) ভূমি এবং প্রচুর সংঘাত সত্ত্বেও কিয়ামাত (প্রলয়) কেন আসেনি তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করেছিলেন।[৩৯]

মৃত্যু

[সম্পাদনা]

১৮৬৯ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি মহান কবি গালিব মৃত্যুবরণ করেন এবং তাকে দিল্লীর নিজামউদ্দিন আউলিয়ার মাজারের কাছে পারিবারিক গোরস্তানে দাফন করা হয়৷ বর্তমানে গালিবের সমাধিক্ষেত্র টি চরম অবহেলায় পর্যবসিত।[১০]

সম্মাননা

[সম্পাদনা]

তার ২২০ তম জন্মদিনে (২০১৭) গুগল ডুডল তৈরি করে তাকে সম্মান প্রদর্শন করে।[৪১]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Pavan K. Varma (১৯৮৯)। Ghalib, The Man, The Times। New Delhi: Penguin Books। পৃষ্ঠা 86আইএসবিএন 0-14-011664-8 
  2. Nicole Dastur (১২ মে ২০০৭)। "Remembering 1857 in 2007"The Times of India 
  3. Ras H. Siddiqui (২৭ জুলাই ২০০৩)। "Ghalib in California"। Dawn। ৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ মে ২০১৩ 
  4. "No memorial for Ghalib at his birthplace, Agra"IBNLive। ২৭ ডিসেম্বর ২০১৩। ১ জানুয়ারি ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  5. Faruqi, Nisar Ahmed, সম্পাদক (১৯৯৭)। غالب کی آپ بیتی [The Autobiography of Ghalib] (Urdu ভাষায়)। New Delhi: Ghalib Institute। পৃষ্ঠা 13। 
  6. "Aḥmad Shah | Mughal emperor"Encyclopædia Britannica (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২৮ জুন ২০১৯ 
  7. Imam, Mir Jaffar; Imam (২০০৩)। Mirza Ghalib and the Mirs of Gujarat (ইংরেজি ভাষায়)। Gujarat, India: Rupa Publications। আইএসবিএন 978-81-291-0057-3 
  8. Mirza Asadullah Khan Ghalib (২০০০)। Persian poetry of Mirza Ghalib। Pen Productions। পৃষ্ঠা 7। আইএসবিএন 978-81-87581-00-0 
  9. "Mirza Ghalib"। Megajoin.com। ৩ নভেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ মে ২০১৩ 
  10. Spear, Percival (১৯৭২)। "Ghalib's Delhi" (পিডিএফ)columbia.edu। সংগ্রহের তারিখ ২৫ অক্টোবর ২০১৯  উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; আলাদা বিষয়বস্তুর সঙ্গে ":0" নামটি একাধিক বার সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে
  11. Berkı, Kamıl Eşfak (১৯৯৬)। GĀLİB MİRZA ESEDULLAH - an article published in İslâm Ansiklopedisi (তুর্কি ভাষায়)। 13 (Fikih – Gelenek)। Istanbul: Türkiye Diyanet Vakf। পৃষ্ঠা 328–329। আইএসবিএন 9789753894401 
  12. Byjameela Siddiqi। "Mirza Ghalib: The "Godless" Lover by Byjameela Siddiqi"। Sufism.ru। ১৮ মে ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ মে ২০১৩ 
  13. Omkar Nath Koul (২০০৮)। Modern Hindi Grammar। Dunwoody। পৃষ্ঠা 3। আইএসবিএন 978-1-931546-06-5 
  14. Pavan K. Varma (২০০৮)। Ghalib। Penguin Books India। পৃষ্ঠা 96–। আইএসবিএন 978-0-14306-481-7 
  15. "Mirza Ghalib."। Megajoin.com। ৩ নভেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ মে ২০১৩ 
  16. Wheeler McIntosh Thackston (১৯৯৪)। A Millennium of Classical Persian Poetry: A Guide to the Reading & Understanding of Persian Poetry from the Tenth to the Twentieth Century। Ibex Publishers, Inc.। পৃষ্ঠা 98। আইএসবিএন 978-0-936347-50-9 
  17. "Shamsur Rahman Faruqui explains" (পিডিএফ)। Columbia University। 
  18. "Dr. Sarfaraz K. Niazi"। niazi.com। 
  19. Roman transliterations with English translation of uncommon words
  20. Naim, C.M. (সেপ্টেম্বর ২০০১)। "Ghalib's Delhi: A Shamelessly Revisionist Look at Two Popular Metaphors" (পিডিএফ) 
  21. Ali Asghar (৬ মে ২০০৩)। "Ghalib's letters"The Hindu। Archived from the original on ৭ জুন ২০১১। সংগ্রহের তারিখ ২০ মে ২০১৩ 
  22. G. S. Amur (১৯৯২)। Creations & Transcreations। Calcutta: Writers Workshop। পৃষ্ঠা 83–84। আইএসবিএন 8171893910। সংগ্রহের তারিখ ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭ 
  23. Pauwels, Heidi R.M. (২০০৭)। Indian Literature and Popular Cinema: Recasting Classics 》 From ghazal to film musicRoutledge। পৃষ্ঠা 153। আইএসবিএন 978-11-34-06255-3 
  24. AFSHAN FAROOQI, MEHR (২৪ জানুয়ারি ২০২১)। "Calcutta changed Ghalib forever — from humiliation and grammar errors to his pension plea"theprint.in। theprint। 
  25. "THE AIN I AKBARI OF ABUL FAZL 'ALLAMI (5-VOLUME SET)"[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ],"Gorgias Press"
  26. "Ain-E Akbari, 1855, Urdu by Sir Syed Ahmed","Sir Syed Today"
  27. Shamsur Rahman Faruqi (2006). Chapter 15: From Antiquary to Social Revolutionary: Sir Syed Ahmad Khan and Colonial Experience in Sir Syed Ahmed Khan : Memorial Lectures. Viva Books. আইএসবিএন ৯৩৮৬৩৮৫৪৪৯
  28. Hayat-i-Javed (A Biography of Sir Sayyid) by Altaf Husain Hali (1901), translated by David J. Matthews (New Delhi: Rupa and Company, 1994),
  29. The word a’in can mean all or any of the following: character, convention, temperament, habit, rule, path, law (ecclesiastical or secular), creed, praxis, quality, intention, organization, management, system, decoration, beauty. (Lughat Nama-e Dehkhoda). There are about eighty meanings in all, which seem to have developed over the centuries. Most were available to Abul Fazl; all were available to Ghalib.
  30. He did edit another two historical texts over the next few years, but neither of them was anything like the Ai’n-e Akbari.
  31. Sabri, Zahra (২০১৬-১২-০৩)। "Three Shi'a Poets: Sect-Related Themes in Pre-Modern Urdu Poetry"Indian Ocean World Centre Working Paper Series (ইংরেজি ভাষায়) (2)। আইএসএসএন 2371-5111 
  32. "Mirza Ghalib: A Liberal Poet"Pixstory (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১১-১৭ 
  33. "Appendix 2. Ghalib Concordance, with Standard Divan Numbers", Ghalib, Columbia University Press, পৃষ্ঠা 115–120, ২০১৭-১২-৩১, আইএসবিএন 9780231544009, ডিওআই:10.7312/ghal18206-008অবাধে প্রবেশযোগ্য 
  34. William Dalrymple (২০০৯)। The Last Mughal: The Fall of a Dynasty, Delhi, 1857। Bloomsbury। আইএসবিএন 978-1-4088-0092-8 
  35. Ralph Russell, "Ghalib: The Poet and His Age" (1997), p.81.
  36. Altaf Hussain Haali (1897) Yaadgaar e Haali. p. 39
  37. Annemarie Schimmel (১৯৮৫)। And Muhammad is His Messenger – The Veneration of the Prophet in Islamic Piety। University of North Carolina Press। পৃষ্ঠা 115। আইএসবিএন 9780807841280 
  38. Annemarie Schimmel (১৯৮৫)। And Muhammad is His Messenger – The Veneration of the Prophet in Islamic Piety। University of North Carolina Press। পৃষ্ঠা 81। আইএসবিএন 9780807841280 
  39. Ralph Russell; Khurshidul Islam (১৯৯৪)। "Ch. 7"। Ghalib 1797–1869: Life and Letters। Oxford University Press India। আইএসবিএন 978-0-19-563506-5 
  40. Ramachandra Guha (২০১১)। "Prologue"। India After Gandhi: The History of the World's Largest Democracy। Pan Macmillan। আইএসবিএন 978-0-330-54020-9 
  41. "কবি মির্জা গালিবকে গুগল ডুডলের শ্রদ্ধা"সময় নিউজ। ২৭ ডিসেম্বর ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ২৭ ডিসেম্বর ২০১৭