মিলিসেকেন্ড পালসার (এমএসপি) হলো এক প্রকার পালসার যা প্রায় ১-১০ মিলিসেকেন্ডের মধ্যে একটি ঘূর্ণন সম্পূর্ণ করে। মিলিসেকেন্ড পালসারগুলিকে তড়িৎচৌম্বক বর্ণালীর রেডিও, এক্স-রে এবং গামা রশ্মিতে সনাক্ত করা হয়েছে। মিলিসেকেন্ড পালসারের উৎসের প্রধান তত্ত্বটি হলো, এরা পুরানো, দ্রুত ঘূর্ণয়মান নিউট্রন তারা, যা বাইনারি সিস্টেমের কোনও নিকটবর্তী সহচর তারার কাছ থেকে বিবৃদ্ধির মাধ্যমে পদার্থের সংশ্লেষের কারণে কর্তিত বা "পূণরাবরতীত" হয়েছে। এই কারণে, মিলিসেকেন্ড পালসারকে কখনও কখনও "রিসাইকেল্ড পালসার"(পূণরাবরতীত পালসার) বলা হয়।[১][২]
মিলিসেকেন্ড পালসার, কম-ভর সম্পন্ন এক্স-রে বাইনারি সিস্টেমের সাথে সম্পর্কিত বলে মনে করা হয়। ধারণা করা হয় যে, এই ধরনের বাইনারি সিস্টেমের এক্স-রে কোনও নিউট্রন তারার বিবৃদ্ধি চাকতি কর্তৃক নির্গত হয় যা তার রোচে লোবে উপচে ফেলা সহচর তারার বহি স্তর কর্তৃক উৎপাদিত হয়। তাত্ত্বিকভাবে, এই বিবৃদ্ধির ঘটনায় কৌণিক ভরবেগের স্থানান্তর, পালসারের ঘূর্ণন হার প্রতি সেকেন্ডে কয়েকশো গুণ বাড়িয়ে তুলতে পারে, যেমনটি মিলিসেকেন্ড পালসারে দেখা যায়।
তবে সাম্প্রতিক প্রমাণ পাওয়া গেছে যে আদর্শ বিবর্তনীয় মডেল তুলনামূলকভাবে উচ্চ চৌম্বক ক্ষেত্র সম্পন্ন মিলিসেকেন্ড পালসার, বিশেষত নতুন মিলিসেকেন্ড পালসারগুলির বিবর্তন ব্যাখ্যা করতে পারে না। (উদাহরণস্বরুপ পিএসআর বি১৯৩৭+২১)। বুল্যান্ট কিজিল্টান এবং এস ই থরসেট দেখিয়েছেন যে ভিন্ন ভিন্ন মিলিসেকেন্ড পালসার অবশ্যই কমপক্ষে দুটি স্বতন্ত্র প্রক্রিয়ায় গঠিত হওয়া উচিত।[৩] তবে অন্যান্য প্রক্রিয়ার প্রকৃতি একটি রহস্যই থেকে যায়।[৪]
গোলাকৃতি তারা গুচ্ছে অনেক মিলিসেকেন্ড পালসার পাওয়া যায়। এটি তাদের সৃজনের সময় ঘূর্ণন বৃদ্ধির তত্ত্বের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, কারণ এই তারা গুচ্ছগুলির উচ্চ নাক্ষত্রিক ঘনত্ব, কোনো পালসারের একটি সহচর তারা থাকার (বা ধরার) সম্ভাবনা অনেক বৃদ্ধি করে। বর্তমানে গোলাকৃতি তারা গুচ্ছগুলিতে প্রায় ১৩০ টি মিলিসেকেন্ড পালসার রয়েছে বলে জানা যায়।[৫] এর মধ্যে টারযান ৫ গোলাকৃতি তারা গুচ্ছে রয়েছে ৩৭ টি, ৪৭ টুকেনে-তে ২২ টি এবং এম২৮ ও এম১৫ তে ৮ টি করে পালসার রয়েছে।
মিলিসেকেন্ড পালসারগুলি সুবিধানুযায়ী খুবই নির্ভুলভাবে হতে পারে, এটমিক ক্লক ভিত্তিক সময়ের মানদন্ডের সাথে তুলনায় এদের একটি স্থায়িত্ব থাকে যখন দশকেরও বেশি সময় ধরে গড় করা হয়।[৬][৭] এটি এদের চারপাশের পরিবেশের রহস্য উদ্ঘাটনে অত্যন্ত সংবেদনশীল। উদাহরণস্বরূপ, এদের কক্ষপথে স্থাপিত যে কোনও বস্তুই পৃথিবীতে স্পন্দনের আগমনের সময়ে পর্যায়ক্রমিক ডপলার ক্রিয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায় যা সহচরের উপস্থিতি প্রমাণের জন্য বিশ্লেষণ করা যেতে পারে। এমনকি পর্যাপ্ত তথ্য এর কক্ষপথ এবং বস্তুর ভরের সঠিক পরিমাপও সরবরাহ করে। কৌশলটি এতই সংবেদনশীল যে, গ্রহাণুর মতো ছোট ছোট বস্তুও যদি মিলিসেকেন্ড পালসারকে প্রদক্ষিণ করতে থাকে তবে তা সনাক্ত করা যায়। প্রথম আবিষ্কৃত বহির্গ্রহগুলি, "স্বাভাবিক" সৌর-সদৃশ নক্ষত্রগুলিকে কেন্দ্র করে ঘূর্ণয়মান বহির্গ্রহগুলি সনাক্তকরণেরও বেশ কয়েক বছর আগে পিএসআর বি১২৫৭+১২ নামক মিলিসেকেন্ড পালসারের কক্ষপথে আবিষ্কৃত হয়। এই গ্রহগুলি বহু বছর ধরে সৌরজগতের বাইরে জ্ঞাত একমাত্র পৃথিবর ভর সম্পন্ন বস্তু ছিল। এদের মধ্যে, পিএসআর বি১২৫৭+১২ডি এর ভর আরও কম যা আমাদের চাঁদের তুলনাযোগ্য এবং এটিই এখন পর্যন্ত সৌরজগতের বাইরে জানা ক্ষুদ্রতম ভর বিশিষ্ট বস্তু।[৮]
প্রথম মিলিসেকেন্ড পালসার, পিএসআর বি১৯৩৭+২১, ১৯৮২ সালে ব্যাকার এট এল আবিষ্কার করেন।[৯] প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৬৪১ বার আবর্তীত হওয়া এই পালসার, এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত ২০০ টি পালসারের মধ্যে আবর্তনের দিক থেকে দ্বিতীয়।[১০] ২০০৫ সালে আবিষ্কৃত, পালসার পিএসআর জে১৭৪৮-২৪৪৬এডি, ২০১২ সালের হিসাব অনুযায়ী এখন পর্যন্ত জানা সবচেয়ে দ্রুত ঘূর্ণয়মান পালসার যা প্রতি সেকেন্ডে ৭১৬ বার আবর্তিত হয়।[১১][১২]
নিউট্রন তারার কাঠামো এবং বিবর্তনের বর্তমান তত্ত্বগুলি পূর্বাভাস দেয় যে কোনো পালসার যদি প্রতি সেকেন্ডে সি এর বেগে আবর্তিত হয় তবে তা ভেঙ্গে আলাদা হয়ে যাবে। ১৫০০ বার বা এর বেশি হারে এবং প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ১০০০ এর উপরে আবর্তনের ফলে তারা মহাকর্ষীয় বিকিরণের মাধ্যমে বিবৃদ্ধি প্রক্রীয়ায় আবর্তনের গতি বাড়িয়ে তোলার চেয়েও দ্রুত শক্তি হারাবে।[১৩][১৪][১৫]
তবে, ২০০৭ সালের গোড়ার দিকে রসি এক্স-রে টাইমিং এক্সপ্লোরার এবং ইন্টেগ্রাল মহাকাশযান কর্তৃক আবিষ্কৃত একটি নিউট্রন তারা, এক্সটিই জে১৭৩৯-২৮৫ ১১২২ হার্জে আবর্তীত হয় (যদিও পরবর্তী গবেষণায় একই ফলাফল পাওয়া যায়নি।[১৬] মনে করা হয়, এটি একটি কোয়ার্ক তারা)।[১৭] ফলাফলটি তাৎপর্য স্তরের ৩ সিগমার হওয়ায় পরিসংখ্যানগতভাবে তাৎপর্যপূর্ণ নয়। সুতরাং, এটি আরও পর্যবেক্ষণের জন্য একটি আকর্ষণীয় প্রার্থী হলেও বর্তমান ফলাফলটি অমীমাংসিত। তথাপি, এটি বিশ্বাস করা হয় যে মহাকর্ষীয় বিকিরণ ঘূর্ণন হার হ্রাস করতে ভূমিকা রাখে। তদুপরি, একটি এক্স-রে পালসার, আইজিআর জে০০২৯১+৫৯৩৪ যা প্রতি সেকেন্ডে ৫৯৯ বার আবর্তীত হয়। ভবিষ্যতে এই জাতীয় তরঙ্গ শনাক্তকরণে সহায়তা করার ক্ষেত্রে পালসারটি প্রধান প্রার্থী হিসেবে বিবেচিত (বেশিরভাগ এক্স-রে পালসার প্রতি সেকেন্ডে কেবল ৩০০ বার আবর্তীত হয়)।