মিসুজু কানেকো | |
---|---|
金子 みすゞ | |
জন্ম | তেরু কানেকো ১১ এপ্রিল ১৯০৩ |
মৃত্যু | ১০ মার্চ ১৯৩০ | (বয়স ২৬)
পেশা | কবি, গীতিকার |
মিসুজু কানেকো (金子 みすゞ, এপ্রিল ১১, ১৯০৩ – মার্চ ১০, ১৯৩০) একজন জাপানি কবি এবং গীতিকার ছিলেন। তার জন্মগত নাম তেরু কানেকো (金子 テル)। জাপানের সেনজাকি-মুরায় (বর্তমানে ইয়ামাগুচি প্রশাসনিক অঞ্চলের নাগাতো প্রদেশের অংশ) তিনি জন্মগ্রহণ করেন।
সেনজাকি গ্রামটি মৎস্য-শিকার, বিশেষত জাপানী সার্ডিন মাছ শিকারের ওপর নির্ভরশীল ছিল। তার কবিতায় মাছ ধরা এবং সমুদ্রের বিভিন্ন দৃশ্য প্রায়ই আবির্ভূত হয়।
কানেকোকে ক্রিস্টিনা রোসেট্টির সাথে তুলনা করা হয়েছে।[১] তার কবিতা এগারোটি ভাষায় অনুবাদিত হয়েছে।[২]
শিশুদের জন্য কবিতা লেখক হিসেবে মিসুজু কানেকোর কর্মজীবন শুরু হয় বিশ বছর বয়সে, যখন তিনি হোনশুর দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত শিমোনোসেকির একটি ছোট বইয়ের দোকানের পরিচালিকা এবং একক কর্মচারী নিযুক্ত হন।
তিন বছর বয়সে তার বাবা মারা যাওয়ার পর কানেকোর মা একাই তাকে বড় করেন। কানেকোর মা একটি বইয়ের দোকান চালাতেন এবং পড়াশোনা ও শিক্ষার ব্যাপারে দৃঢ়চেতা ছিলেন। যদিও সে সময়ের অধিকাংশ জাপানি মেয়ে শুধুমাত্র ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষা গ্রহণ করতো, তবুও কানেকো সতের বছর বয়স পর্যন্ত তার পড়াশোনা অব্যাহত রাখেন। অন্যরা তাকে নম্র, উৎফুল্ল, একজন চমৎকার ছাত্রী[১] এবং প্রকৃতি সম্পর্কে তীব্র কৌতূহলসম্পন্ন পাঠক হিসেবে বর্ণনা করেছে।
বইয়ের দোকানে কানেকো একগুচ্ছ ম্যাগাজিন আবিষ্কার করেন যা শিশুতোষ সাহিত্যের জোয়ারে আরোহণ করছিলো এবং এগুলো তাদের পাঠকদের কাছ থেকে গল্প এবং কবিতা সংগ্রহ করতো। কানেকো সেগুলোতে বেশ কিছু কবিতা পাঠান, যার মধ্যে পাঁচটি কবিতা ("দা ফিশ" অন্যতম) চারটি ম্যাগাজিনের সেপ্টেম্বর ১৯২৩ সংখ্যায় প্রকাশনার জন্য গৃহীত হয়।[৩] শীঘ্রই, তার কবিতা সারা দেশ জুড়ে বিভিন্ন ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হতে শুরু করে এবং তিনি একজন বিখ্যাত সাহিত্যিক হয়ে ওঠেন। পরবর্তী পাঁচ বছরে তিনি আরও ৫১টি পদ্য প্রকাশ করেছিলেন।
তবে ব্যক্তিগত জীবনে কানেকো ততটা সৌভাগ্যবতী ছিলেন না। তার স্বামী, তার পারিবারিক বইয়ের দোকানেরই একজন কেরানি। লোকটি পরকীয়ায় লিপ্ত হয় এবং একটি যৌনরোগে আক্রান্ত হয়, যা পরবর্তীতে কানেকোকেও সংক্রামিত করে ও আজীবন এর জন্য তাকে শারীরিক যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়। তার স্বামী তাকে লেখা বন্ধ করতেও বাধ্য করে। অবশেষে তিনি তার স্বামীর সাথে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটান, কিন্তু তার স্বামীর কাছে তার মেয়ের হেফাজত হারান। তৎকালীন জাপানি আইন স্বয়ংক্রিয়ভাবে পিতাকে সন্তানের হেফাজত প্রদান করে। এতে কানেকো আরও হতাশায় ডুবে যান।
কানেকো ১৯৩০ সালে, তার ২৭ তম জন্মদিনের কিছুক্ষণ আগে আত্মহত্যা করেন। তার মেয়েকে স্নান করিয়ে একসাথে একটি সাকুরামোচি (জাপানী মিষ্টান্ন) খাওয়ার পর, কানেকো তার স্বামীকে একটি চিঠি লেখেন, যাতে তার মায়ের তত্ত্বাবধানে মেয়েটিকে বড় করতে দেয়ার জন্য তার স্বামীকে অনুরোধ করেন, এবং এরপর আত্মহত্যা করেন। পরিশেষে মেয়েটি তার নানীর কাছেই বড় হয়।[৪]
যদিও কানেকো তার জীবদ্দশায় প্রকাশিত কবিতার জন্য প্রশংসা লাভ করেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কানেকোর লেখা দুষ্পাঠ্য হয়ে দাঁড়ায়।[১] ১৯৬৬ সালে সেতসুও ইয়াজাকি নামের ১৯ বছর বয়সী এক উচ্চাকাঙ্ক্ষী জাপানী কবি একটি দুষ্পাঠ্য বইয়ে তার "বিগ ক্যাচ" কবিতাটি আবিষ্কার করে। লেখক সম্পর্কে আরো জানতে আগ্রহী হয়ে, তাকে খুঁজে বের করার জন্য সে ষোল বছর অতিবাহিত করে। ১৯৮২ সালে সে কানেকোর ৭৭ বছর বয়স্ক ছোট ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করতে সক্ষম হয়, যার কাছে তখনও সেই ডায়েরিগুলো ছিলো যাতে কানেকো কবিতা লিখতেন।[৪]
এরপর পুরো সংগ্রহটি জুলা পাবলিশিং ব্যুরো ছয় খণ্ডে প্রকাশ করেছে এবং ২০১৬ সালে, তার কাব্যের ইংরেজি সংস্করণ আর ইউ অ্যান একো? দা লস্ট পোয়েট্রি অফ মিসুজু কানেকো, স্বাধীন বই প্রকাশকারী প্রতিষ্ঠান, চিন মিউজিক প্রেস কর্তৃক প্রকাশিত হয়। বইটি ২০১৬ সালের ফ্রিম্যান অ্যাওয়ার্ডসে সম্মানসূচক উল্লেখ (অনারেবল মেনশন) লাভ করে।
২০১১ টোহুকু ভূমিকম্প ও সুনামির পর উদ্ধারকার্যে নিয়োজিত স্বেচ্ছাসেবকদের উৎসাহিত করার জন্য, জনসেবামূলক ঘোষণা হিসেবে টেলিভিশন চ্যানেলগুলোয় কানেকোর কবিতা, "আর ইউ অ্যান একো?" বাজানো হয়।