মিস্টার অ্যান্ড মিসেস আইয়ার | |
---|---|
![]() প্রচার পোস্টার | |
পরিচালক | অপর্ণা সেন |
প্রযোজক | এন. ভেঙ্কটেসান রূপালী মেহতা |
রচয়িতা | অপর্ণা সেন |
শ্রেষ্ঠাংশে | রাহুল বোস কঙ্কনা সেন শর্মা ভীষ্ম সাহানী সুরেখা সিক্রি সুনীল মুখার্জী অঞ্জন দত্ত এসা চৌহান বিজয় সুব্রামানিয়াম এ. ভি. আয়াঙ্গার নীহারিকা সেঠ |
সুরকার | জাকির হুসেন |
চিত্রগ্রাহক | গৌতম ঘোষ |
সম্পাদক | রবিরঞ্জন মৈত্র |
পরিবেশক | এমজি ডিস্ট্রিবিউসন[১] টিপস এক্সপোর্টস[২] |
মুক্তি |
|
স্থিতিকাল | ১২০ মিনিট |
দেশ | ভারত |
ভাষা | ইংরাজী |
নির্মাণব্যয় | ₹ ১ কোটি (ইউএস$ ১,২২,২৩৩)[৩] |
আয় | ₹ ১.৪ কোটি (ইউএস$ ১,৭১,১২৬.২)[৪] |
মিস্টার অ্যান্ড মিসেস আইয়ার ২০০২ সালের একটি ভারতীয় কাহিনী চলচ্চিত্র। অপর্ণা সেন রচিত ও পরিচালিত এবং এন. ভেঙ্কটেসান প্রযোজিত এই ছবিতে অপর্ণা সেনের কন্যা কঙ্কনা সেন শর্মা মীনাক্ষী আইয়ার চরিত্রে অভিনয় করেছেন যিনি একজন তামিল আইয়ার ব্রাহ্মণ হিন্দু চরিত্র। রাহুল বোস রাজা চৌধুরীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন যিনি এক জন বাঙালি মুসলিম বন্যজীবনের ফটোগ্রাফার। গল্পটি ভারতে সাম্প্রদায়িক দ্বন্দ্বে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের মধ্যে একটি দুর্ভাগ্যজনক বাস যাত্রা চলাকালীন এই দুই প্রধান চরিত্রের চারদিকে ঘোরাফেরা করে। ভারতীয় তবলা বাদ্যে মহান সঙ্গীত স্রষ্টা জাকির হুসেন চলচ্চিত্রটির ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর এবং সংগীত রচনা করেছেন এবং সিনেম্যাটোগ্রাফারের দায়িত্বে আছেন গৌতম ঘোষ যিনি নিজেই একজন চলচ্চিত্র পরিচালক।
মিস্টার অ্যান্ড মিসেস আইয়ার এর প্রিমিয়ার হয়েছিল সুইজারল্যান্ড এর লোকার্ণো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব এ এবং আরও অন্যান্য বিশিষ্ট চলচ্চিত্র উৎসব এ প্রদর্শিত হয়েছিল। ছবিটি ১৯ জুলাই ২০০২ তারিখে ভারতীয় দর্শকদের জন্য মুক্তি পেয়েছিল। মুক্তির পর সমালোচকদের প্রশংসা লাভ করে এবং হাওয়াই আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব এ গোল্ডেন ম্যাইলে পুরস্কার ও জাতীয় সংহতি রক্ষায় সেরা কাহিনী চিত্রের জন্য নার্গিস দত্ত পুরস্কার সহ বেশ কয়েকটি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করে। ছবিটি ডিভিডি হিসাবে প্রকাশিত হয়েছিল। সিনেমাটিতে হিন্দি, তামিল এবং বাংলা ভাষার বিক্ষিপ্ত ব্যবহারের সহ ইংরেজিকে প্রধান ভাষা হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে।
মীনাক্ষী আইয়ার (কঙ্কনা সেন শর্মা) এবং তাঁর শিশু পুত্র সান্থানাম তাঁর বাবা-মার সাথে দেখা করার পরে বাড়ী ফিরতে বাসে যাত্রা শুরু করেন। বাস স্টেশনে মীনাক্ষীর সাথে রাজা চৌধুরীর (রাহুল বোস) পরিচয় করিয়ে দেন তাঁদের একজন সাধারণ বন্ধু। বন্যজীবনের ফটোগ্রাফার রাজাকে মীনাক্ষীর বাবা-মা ভ্রমণের সময় তাঁদের মেয়ে এবং নাতির দেখাশোনার জন্য অনুরোধ করেন। বাসের যাত্রীদের মধ্যে অল্প বয়স্ক যুবক, দু'জন শিখ পুরুষ, এক বয়স্ক মুসলিম দম্পতি, এক প্রবল রোম্যান্স-সম্পন্ন নব্য দম্পতি, একটি মানসিক প্রতিবন্ধী ছেলে এবং তার মা এবং কিছু তাস খেলুড়ে ব্যক্তি রয়েছেন। বাসটি একটি সড়ক অবরোধের মুখোমুখি হয় এবং বাসচালক ঘুরপথে এগোনোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু কাছাকাছি অঞ্চলে হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে সাম্প্রদায়িক হিংসার কারণে ট্র্যাফিক জ্যামে রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে।
মীনাক্ষীর কাছে রাজা তাঁর মুসলিম পরিচয় প্রকাশ করেন। উচ্চ বর্ণ এবং রক্ষণশীল হিন্দু ব্রাহ্মণ পরিবার থেকে আগত মীনাক্ষী এতে হঠাৎ বিস্মিত হন যে যাত্রাপথে তাঁকে দেওয়া যে জল তিনি পান করেছিলেন তা এক মুসলমানের এগিয়ে দেওয়া! হতবাক তিনি রাজাকে স্পর্শ না করতে বলেন। রাজা বাস ত্যাগ করে যাওয়ার কথা ভাবতে থাকেন। কিন্তু টহলরত পুলিশ তাঁকে বাসের ভিতরে থাকতে বাধ্য করেন। কেন না দাঙ্গার কারণে কারফিউ ঘোষণা করা হয়েছিল। অন্যান্য অঞ্চলে স্কাউটের উদ্দেশ্যে পুলিশ রওনা হওয়ার পরে একদল দাঙ্গাবাজ হিন্দু জনতা এসে জোর করে বাসে ঢুকে পড়ে। তারা যাত্রীদের ধর্মীয় পরিচয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে এবং সন্দেহ হলে তারা এমনকি ব্যক্তির সুন্নত আছে কিনা তা পরীক্ষা করে নিতে শুরু করে। [৫]
নিজেকে রক্ষা করার তাগিদে যাত্রীদের মধ্যে এক ইহুদি যাঁর খতনা করা ছিল তিনি এক বৃদ্ধ মুসলিম দম্পতির দিকে হামলাকারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে ইঙ্গিত করেন। তাদের নেতা বৃদ্ধ দম্পতিকে বাস থেকে টেনে নামায়। কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে একজন এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করে উঠলে হামলাকারীরা তাকে লাঞ্ছিত করে। রাজা প্রতিরোধ করতে উঠে দাঁড়াতে উদ্যত হলে মীনাক্ষী তাঁর কোলে সান্থানামকে বসিয়ে দিয়ে বাচ্চাকে ধরার নির্দেশ দেন যাতে রাজার মুসলিম পরিচয় প্রকাশ্যে না আসে। হামলাকারীরা তাঁদের পরিচয় জিজ্ঞাসা করলে মীনাক্ষী তাদের নেতাকে বলেন যে তিনি হলেন মিসেস আইয়ার এবং রাজা তাঁর স্বামী। এই ঘটনার মুখোমুখি হওয়ার পরে যাত্রীরা রাত্রে বাসেই কাটান।
সকালে যাত্রীরা আশেপাশের গ্রামে সাময়িক আবাসন খোঁজা শুরু করেন। রাজা এবং মীনাক্ষী নিজেদের মিস্টার এবং মিসেস আইয়ার হিসাবে চিহ্নিত করেও কোনও আবাসন পেতে ব্যর্থ হন। তবে আগের সন্ধ্যার টহলদার পুলিশ অফিসার একটি পরিত্যক্ত বন বাংলোয় আশ্রয় দিয়ে তাঁদেরকে জামিনে ছাড়িয়ে দেন। বাংলোতে কেবল একটিই ব্যবহারযোগ্য বেডরুম উপলব্ধ আছে। মীনাক্ষী রাজার সাথে ঘর ভাগ করতে অস্বীকার করেন এবং অপরিচিত ব্যক্তির সাথে আসার জন্য নিজেকে অভিশাপ দেন। বর্ণ ও ধর্ম সম্পর্কে তাঁর পুরানো সংস্কারের মুখোমুখি হতে হয় রাজাকে। একটি সংক্ষিপ্ত ঝগড়ার পরে রাজা তাঁকে শোবার ঘরে আরাম করার অনুমতি দিয়ে বাইরে ঘুমোতে চলে যান। পরেরদিন সকালে মীনাক্ষী যখন রাজাকে খুঁজে পান না তখন তিনি সান্থানাম ও তাঁকে কেন এমন জায়গায় রেখে গেলেন তা নিয়ে চিন্তিত ও ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠেন। তবে শীঘ্রই বাইরে রাজাকে ঘুমোতে দেখতে পেয়ে স্বস্তি বোধ করেন। তাঁরা কাছের গ্রামের একটি রেস্তোঁরা পৌঁছানোর পরে সেখানে বাসের কিশোরীদের সাথে দেখা হয়। তারা মীনাক্ষী এবং রাজার প্রেমের গল্পটি জানার জন্য খুবই উৎসুক ছিল। তাদের প্রহসনকে টিকিয়ে রেখে দুজনেই তাঁদের মধুচন্দ্রিমায় যাওয়ার আগে সেখান তাঁরা কীভাবে মিলিত হয়েছিলেন সে সব নিয়ে একটি তাৎক্ষণিক গল্প ফেঁদে ফেলেন। বাংলোয় অবস্থানকালে তাঁরা একে অপরের বিশ্বাস এবং ধর্মকে আবিষ্কার করেন। সেই রাতে হামলাকারীদের একজনের দ্বারা এক ভয়াবহ হত্যা প্রত্যক্ষ করলে মীনাাক্ষীকে হতবাক করে দিয়ে রাজা স্বস্তি দিতে এগিয়ে আসেন।
পরের দিন তাঁরা সেনাবাহিনীর সহায়তায় একটি রেলস্টেশনে পৌঁছোন। সেখানে তাঁরা ট্রেনে চড়ে তাঁদের গন্তব্যের দিকে রওনা হন। তাঁদের গন্তব্য স্টেশন কলকাতা। মীনাক্ষীর স্বামী মিঃ আইয়ার তাঁকে এবং সান্থানামকে দেখতে আসেন। মীনাক্ষী রাজার সাথে তাঁর স্বামীর পরিচয় করিয়ে বলেন যে ভদ্রলোকের নাম জাহাঙ্গীর চৌধুরী এবং এই মুসলিম ভদ্রলোক কারফিউয়ের সময় তাঁকে (হিন্দু মহিলা) সহায়তা করেছিলেন। রাজা একটি ক্যামেরা রোল মীনাক্ষীর কাছে হস্তান্তর করেন যাতে তাঁদের ভ্রমণের ছবিগুলি রয়েছে। তারপর তাঁরা একে অপরকে মর্মস্পর্শী বিদায় জানিয়ে চলে যান।
the killers identify Muslims by stripping them to check if they are circumcised. Muslims are traditionally circumcised as part of the religion and Hindus are not.