হিন্দু ধর্মগ্রন্থ |
---|
আনুষঙ্গিক ধর্মগ্রন্থ |
মুদ্গলপুরাণ (সংস্কৃত:मुद्गल पुराणम्) হল একটি হিন্দু ধর্মগ্রন্থ। এটি একটি উপপুরাণ। এই পুরাণে হিন্দু দেবতা গণেশকে কেন্দ্র করে প্রচলিত অনেক পৌরাণিক উপাখ্যান ও ক্রিয়াকাণ্ড-সংক্রান্ত বিষয় লিপিবদ্ধ রয়েছে। গণেশপুরাণ ও মুদ্গলপুরাণ গ্রন্থদুটি হিন্দুধর্মের গাণ্যপত্য নামক গণেশ ভক্ত সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মগ্রন্থ। এই দুটি পুরাণই কেবলমাত্র সম্পূর্ণ গণেশকে কেন্দ্র করে রচিত।[১]
মুদ্গলপুরাণ গ্রন্থের রচনাকাল নিয়ে গবেষকদের মধ্যে মতৈক্য খুবই কম। ফিলিপ গ্র্যানোফ এই পুরাণের অন্তর্বর্তী প্রমাণগুলি পরীক্ষা করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, মুদ্গলপুরাণ গণেশ-সংক্রান্ত সর্বশেষ দর্শন শাস্ত্র।[২] আর. সি. হাজরার মতে, মুদ্গলপুরাণ গ্রন্থটি গণেশপুরাণ গ্রন্থের পূর্বে রচিত। উল্লেখ্য, তিনি বলেছেন খ্রিস্টীয় ১১০০ থেকে ১৪০০ অব্দের মধ্যবর্তী সময়ে গণেশপুরাণ রচিত হয়।[৩] গ্র্যানোফ এই আপেক্ষিক সময়-নির্ধারণের সমস্যাটির কথা তুলে ধরেছেন। তিনি দেখিয়েছেন, মুদ্গলপুরাণ গ্রন্থে গণেশ-সংক্রান্ত চারটি পুরাণের উল্লেখ রয়েছে। এগুলি হল: ব্রহ্মপুরাণ, ব্রহ্মাণ্ডপুরাণ, গণেশপুরাণ ও মুদ্গলপুরাণ। কোর্টরাইট বলেছেন, মুদ্গলপুরাণ গ্রন্থের রচনাকাল খ্রিস্টীয় ১৬শ থেকে ১৭শ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়। কিন্তু তিনি তাঁর এই তথ্যের সপক্ষে কোনো যুক্তি দেননি।[৪] থাপান গণেশপুরাণ ও মুদ্গলপুরাণ গ্রন্থদ্বয়ের সময়-নিরূপণ নিয়ে বিভিন্ন মতামত পর্যালোচনা করে বলেছেন যে, অন্যান্য পুরাণগুলির মতো মুদ্গলপুরাণ গ্রন্থটিও একটি বহুস্তরবিশিষ্ট গ্রন্থ। তিনি বলেন, এই পুরাণের আদি অংশটি অবশ্যই প্রাচীন। ১৭শ ও ১৮শ শতাব্দীতে কোনো কোনো অঞ্চলে গণেশ পূজা অধিকতর গুরুত্ব অর্জন করা পর্যন্ত এই পুরাণে মধ্যে অনেকগুলি অংশ প্রক্ষিপ্ত রূপে সংযোজিত হয়েছিল।[১]
২০০৭ সাল পর্যন্ত মুদ্গলপুরাণ গ্রন্থের কোনো ‘সমালোচনামূলক সংস্করণ’ প্রকাশিত হয়নি। একটি পুরাণের ‘সমালোচনামূলক সংস্করণ’ হল গবেষণার মাধ্যমে বিভিন্ন পাণ্ডুলিপি পর্যবেক্ষণ ও একত্র করে একটি সর্বজনগ্রাহ্য গ্রন্থ প্রণয়নের উদ্দেশ্যে প্রকাশিত একটি বিশেষ ধরনের গবেষণামূলক সংস্করণ। কোনো পুরাণের সমালোচনামূলক সংস্করণ না থাকার অর্থ, বিভিন্ন সংস্করণে বিষয়বস্তু ও শ্লোক সংখ্যায় গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য লক্ষিত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। মুদ্গলপুরাণ গ্রন্থের ক্ষেত্রেও ঠিক তাই হয়েছে। সেই কারণে এই পুরাণের বিভিন্ন সংস্করণই পর্যালোচনা করে দেখা হয়, কোন কোন ক্ষেত্রে এগুলির মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য রয়েছে।
এই পুরাণের বহুল-প্রচলিত সংস্করণটি সংস্কৃত ও প্রাকৃত ভাষায় সম্পাদনা করেন অধ্যাপক সীতারাম গণেশ দেসাই। এটি মুম্বইয়ের দাদারের মুদ্গলপুরাণ প্রকাশন মণ্ডল থেকে প্রকাশিত। কর্ণাটকের গণেশযোগী মহারাজ কর্তৃক প্রকাশিত একটি সংস্কৃত সংস্করণও প্রকাশিত আছে।
গণেশপুরাণ গ্রন্থের মতো মুদ্গলপুরাণ গ্রন্থেও গণেশকে সর্বোচ্চ সত্য রূপে দর্শানো হয়েছে। এই পুরাণে বলা হয়েছে, গণেশের অসংখ্য রূপভেদ রয়েছে। তবে তাঁর আটটি অবতার সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। এই পুরাণেই (১। ১৭। ২৪-২৮) এই আটটি অবতারের উল্লেখ আছে। অধিকন্তু গ্রন্থটি প্রত্যেকটি অবতাএর বিবরণের ভিত্তিতে বিভিন্ন অংশে বিন্যস্ত হয়েছে।[৫][৬] গণেশপুরাণ গ্রন্থে গণেশের যে চারটি অবতারের উল্লেখ করা হয়েছে, এগুলি তার অনুরূপ নয়।
পুরাণের বর্ণনা অনুসারে, গণেশ বিবিন্ন পৌরাণিক যুগে অবতীর্ণ করেছিলেন। এই পুরাণে জগৎ সৃষ্টি-সংক্রান্ত বিভিন্ন জটিল দার্শনিক তত্ত্ব উক্ত অবতারগুলি বর্ণনা করা হয়েছে। প্রত্যেকটি অবতার সর্বোচ্চ সত্যের এক একটি স্তর। এই স্তরগুলি সৃষ্টির মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। গ্র্যানোফ এই পুরাণে বর্ণিত প্রত্যেকটি অবতারের দার্শনিক অর্থের একটি সারসংক্ষেপ বর্ণনা করেছেন। [২] দর্শনতত্ত্বের সঙ্গে সঙ্গে দানবদের সঙ্গে যুদ্ধের উপাখ্যানগুলির মতো সাধারণ পৌরাণিক বৈশিষ্ট্যগুলিও এই পুরাণে লক্ষিত হয়েছে। মুদ্গলপুরাণ গ্রন্থে বর্ণিত গণেশের আটটি প্রধান অবতার হল: