ইসলাম ও ঈমান |
---|
ধারাবাহিকের একটি অংশ |
ব্যক্তি |
|
গোষ্ঠী |
|
পরিভাষা |
|
মুমিন একটি আরবি শব্দ, যা মূলত আরবি ঈমান শব্দটি থেকে এসেছে।[১] এর শাব্দিক অর্থ "বিশ্বাসী" এবং এর দ্বারা একজন কঠোরভাবে অনুগত মুসলিমকে বুঝায়, যে অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে ইসলামকে নিজের অভ্যন্তরের এবং বাহিরের সকল কর্মকাণ্ডে ধারণ করে এবং আল্লাহর ইচ্ছার কাছে নিজেকে পূর্ণরুপে সমর্পণ করে। নারীদের ক্ষেত্রে মুমিনা শব্দটি ব্যবহৃত হয়।
কুরআনে মুমিনের পরিচয় বলা হয়েছেঃ-
ذين يومنون بالغيب ويقيمون الصلاة ومما رزقناهم ينفقون والذين يومنون بما انزل اليك وما انزل من قبلك وبالاخرة هم يوقنون.اولأك علي هدي من ربهم واولأك هم المفلحون-
।
মুসলিম হল ইসলাম ধর্মকে নিজ ধর্ম বলে বিশ্বাস ও স্বীকার করে এমন ব্যক্তি। অপরদিকে, মুমিন হল ইসলাম ধর্মকে নিজ ধর্ম বলে বিশ্বাস ও স্বীকার করার পাশাপাশি তা নিজের ভেতরে ও বাহিরে ধারণ করে এবং সাথে-সাথে কঠোরভাবে এর নির্দেশাবলী মেনে চলে এমন ব্যক্তি। অর্থাৎ, বলা যায়, সকল মুমিন মুসলিম, কিন্তু সকল মুসলিম মুমিন নয়।[২]
ইমান অর্থ বিশ্বাস। মুমিন মানে বিশ্বাসী। তাওহিদ, রিসালাত ও আখিরাতে বিশ্বাসীকে মুমিন বলা হয়। ইসলাম মানে আনুগত্য, মুসলিম অর্থ অনুগত ব্যক্তি, যিনি ইমানের সঙ্গে নামাজ, রোজা, হজ ও জাকাত এবং আল্লাহ ও রাসুল-এর যাবতীয় আদেশ-নিষেধ মেনে চলেন। মুমিন ও মুসলিম জন্মগত ও বংশীয় পরিচয় নয়, বিশ্বাস ও কর্মে তা অর্জন করতে হয়।
কোরআন ও হাদিসে প্রকৃত মুমিনের পরিচয় ও সফল মুমিনের গুণাবলি নিয়ে বিস্তারিত বর্ণিত হয়েছে। নিম্নে তা সংক্ষেপে বর্ণনা দেয়া হলো:
ইমান, ইয়াকিন, ইখলাস, তাকওয়া, তাজকিয়া ও ইহসান অর্জনের মাধ্যমে ইসলাম বা আত্মসমর্পণ সফল মুমিনের গুণাবলি। আল–কোরআনের শুরুতেই বিবৃত হয়েছে, ‘আলিফ লাম মিম! এই সেই মহাগ্রন্থ, যাতে সন্দেহের বিন্দুমাত্র অবকাশ নেই, এটি মুত্তাকিনদের জন্য পথনির্দেশ। যারা অদৃশ্যে বিশ্বাস স্থাপন করে, সালাত কায়েম করে, আমি তাদের যে রিজিক-দৌলত দিয়েছি তা হতে তারা ব্যয় করে। আর যারা বিশ্বাস করে তারা আপনার প্রতি, অবতীর্ণ কিতাবের প্রতি আর যা অবতীর্ণ হয়েছে আপনার পূর্বে এবং তারা পরকালের প্রতি একিন তথা দৃঢ় বিশ্বাস রাখে। এরা এদের রবের পক্ষ থেকে হেদায়েতের ওপরে রয়েছে এবং এরাই সফলকাম।’ (সুরা–২ বাকারা, আয়াত: ১-৫, পারা: ১, পৃষ্ঠা ১)।
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কোরআন মজিদে তাঁর প্রিয় বান্দাদের পরিচয় উল্লেখ করে বলেন, ‘দয়াময় আল্লাহর প্রকৃত বান্দা তারাই যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং তাদের যখন অজ্ঞ লোকে মূর্খতাসুলভ সম্বোধন করে তখনো তারা সালাম ও শান্তির বাণী বলে। তারা রাত্রি যাপন করে তাদের প্রতিপালকের উদ্দেশে সেজদায় অবনত হয়ে ও দাঁড়িয়ে ইবাদত–বন্দেগির মাধ্যমে এবং তারা বলে, “হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের হতে জাহান্নামের শাস্তি বিদূরিত করুন; উহার শাস্তি তো নিশ্চিত বিনাশ! নিশ্চয়ই তা অস্থায়ী ও স্থায়ী আবাস হিসেবে নিকৃষ্ট!” আর যখন তারা ব্যয় করে তখন অপচয় করে না এবং কার্পণ্যও করে না; বরং তারা মধ্যপন্থায় থাকে। তারা আল্লাহর সঙ্গে অন্য কোনো ইলাহ বা মাবুদকে ডাকে না। আল্লাহ যার হত্যা নিষেধ করেছেন যথার্থ কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না।
বস্তুত,যারা এসব করে তারা শাস্তি ভোগ করবে, কিয়ামতের দিন তাদের শাস্তি দ্বিগুণ করা হবে এবং সেখানে তারা হীনাবস্থায় স্থিত হবে। তবে তারা নয়, যারা তওবা করে ইমান আনে ও সৎকর্ম করে। আল্লাহ এদের পাপ পুণ্যের দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন; আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। যারা তওবা করে ও সৎকর্ম করে, তারা সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর অভিমুখী হয়। আর যারা মিথ্যা সাক্ষ্য দেয় না এবং অসার ক্রিয়াকলাপের সম্মুখীন হলে স্বীয় মর্যাদার সহিত তা উপেক্ষা করে চলে। আর যারা তাদের প্রতিপালকের নিদর্শন স্মরণ করিয়ে দিলে তার প্রতি অন্ধ ও বধিরের মতো আচরণ করে না এবং যারা প্রার্থনা করে,“হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের জন্য এমন স্ত্রী ও সন্তানসন্ততি দান করুন যারা আমাদের জন্য নয়ন প্রীতিকর হবে এবং আমাদের মুত্তাকিদের ইমাম বানিয়ে দিন।” এদের প্রতিদান হিসেবে দেওয়া হবে জান্নাতের সুউচ্চ স্থান, যেহেতু তারা ছিল ধৈর্যশীল। তাদের সেখানে অভ্যর্থনা জানানো হবে অভিবাদন ও সালাম সম্ভাষণসহকারে; সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে। আশ্রয়স্থল ও আবাসন হিসেবে তা কতই উৎকৃষ্ট!’ (সুরা-২৫ ফুরকান, আয়াত: ৬৩-৭৬)।
পবিত্র জীবনযাপনই সফলতার চাবিকাঠি। কোরআন মজিদের বাণী, ‘সফল হলো তারা যারা আত্মশুদ্ধি অর্জন করল, আর ব্যর্থ মনোরথ হলো তারা যারা নিজেকে কলুষ আচ্ছন্ন করল।’ (সুরা-৯১ শামস, আয়াত: ৯-১০)। ‘সাবধান! একমাত্র বিশুদ্ধ ধর্মকর্মই আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য।’(সুরা-৩৯ জুমার,আয়াত:৩)।
তাকওয়া বা পরহেজগারি বেশি আমল করাকে বলে না; বরং বদ আমল বা মন্দ কাজ পরিহার করে চলাই হলো তাকওয়া। প্রিয় নবীজি (সা.) বলেন, ‘তুমি এভাবে আল্লাহর ইবাদত করো যেন তুমি তাঁকে দেখছ, যদি তুমি তাঁকে দেখতে না–ও পাও; তবে অবশ্যই তিনি তোমাকে দেখছেন।’(বুখারি,হাদিস: ৪৮)।
অন্তরের বিশ্বাসের প্রতিফলনই হলো সব ক্রিয়াকলাপ। একমাত্র চিত্তশুদ্ধির মাধ্যমেই সফলতা তথা ইহজগতে শান্তি ও পরজগতে মুক্তি লাভ সম্ভব। এই জন্য ধর্মাচার, অনুশাসন, বিধিবিধান ও ইবাদত অনুশীলন একান্ত কর্তব্য।