শিহাবুদ্দিন গাজী | |||||
---|---|---|---|---|---|
মালিকুল মুযাফফর | |||||
জাযিরার আমির | |||||
রাজত্ব | ১২২০–১২৪৭ | ||||
পূর্বসূরি | আশরাফ মুসা | ||||
উত্তরসূরি | কামিল মুহাম্মাদ | ||||
মৃত্যু | ১২৪৭ মায়াফারিকিন | ||||
| |||||
রাজবংশ | আইয়ুবীয় | ||||
পিতা | প্রথম আদিল | ||||
ধর্ম | সুন্নি ইসলাম |
মালিকুল মুযাফফর শিহাবুদ্দিন গাজী ইবনে আদিল আবু বকর ইবনে নাজমুদ্দিন আইয়ুব ছিলেন মায়াফারিকিন (১২২০-১২৪৭) এর আইয়ুবীয় শাসক। মুযাফফর গাজী ছিলেন সুলতান আদিলের অন্যতম পুত্র, যিনি মধ্যপ্রাচ্যের ছোট আইয়ুবীয় রাজ্য শাসন করেছিলেন, যখন তার পিতা মিশরে রাজত্ব করেছিলেন।[১]
১২১১ (৬০৮ হিজরি) সালে তার পিতা তাকে এডেসা এবং সরুজের দায়িত্ব প্রদান করেন এবং পরবর্তী কয়েক বছরর তিনি এডেসার জন্য একটি দুর্দান্ত নতুন দরজা তৈরি করেন। ১২২০-২১ (৬১৭) সালে তিনি তার ভাই আশরাফের সাথে এই শহরগুলো বিনিময় করেন, এবং এর পরিবর্তে মায়াফারিকিন এবং আখলাত গ্রহণ করেন। এই ভাইয়েরা এতটাই ঘনিষ্ঠ ছিলেন যে আশরাফের কোনও সন্তান না থাকায় মুযাফফর গাজীকে তার নিজের রাজ্যে তার সহ-শাসক এবং উত্তরাধিকারী বানিয়েছিলেন।[২]
এই বিনিময়ের পরের বছর তাদের পিতা আদিল মিশরে ক্রুসেডার আক্রমণের সময়ে মারা যান এবং তার জ্যেষ্ঠ পুত্র প্রথম কামিল তার স্থলাভিষিক্ত হন। আশরাফ ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে অভিযানে তার ভাইকে সমর্থন করার জন্য দক্ষিণে গিয়েছিলেন এবং তার অনুপস্থিতিতে মুযাফফর গাজী তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন। শাস্তিতে তিনি আশরাফের রাজত্বের উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হন এবং তার নিজের মায়াফারিকিনে নামিয়ে দেওয়া হয়। তবে দেখা যাচ্ছে যে এই ঘটনার পরও ভাইরা অন্যথায় ঘনিষ্ঠ মিত্র ছিলেন।[৩]
এরপর মুযাফফর গাজী অন্যান্য স্থানীয় শাসকদের বিরুদ্ধে তার আত্মীয়দের সাথে বেশ কয়েকটি অভিযানে অনুগতভাবে অংশ নিয়েছিলেন। আর এভাবে আইয়ুবীয়দের রাজত্ব দক্ষিণ-পূর্ব আনাতোলিয়ার পার্বত্য অঞ্চলে আরও বিস্তৃত করেছিলেন। এর মধ্যে একটি অভিযান ছিল ১২৩০ সালে। যেটি শেষ খওয়ারেজমশাহ জালালুদ্দিন মিংবার্নুর বিরুদ্ধে ছিল। তার সেনাবাহিনী আখলাতের আইয়ুবীয় শহর দখল করেছিল। মুযাফফর গাজী আইয়ুবীয় সৈন্যদের একটি সম্মিলিত সেনাবাহিনী সেলজুক শাসক আলাউদ্দিন কায়কোবাদের সেনাবাহিনীতে যোগদানের জন্য বাহিনী নিয়ে আসেন, তারা খওয়ারেজমীয় হুমকির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলেন। ৯ আগস্ট ১২৩০ (২৫ রমজান ৬২৭) ইয়াসি-চিমেনের যুদ্ধে খওয়ারেজমীয় বাহিনী পরাজিত হয় এবং আইয়ুবীয়রা আখলাত পুনরুদ্ধার করে।[৪]
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ আইয়ুবীয়দের অভিযান ছিল আমির মাসউদের বিরুদ্ধে, যিনি কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ দুটি শহর আমিদা এবং হিসনে কাইফা দখল করে নিয়েছিলেন। সমস্ত আইয়ুবীয় আমিরাতের বাহিনী নিয়ে একটি বৃহৎ সম্মিলিত সেনাবাহিনীকে একত্রিত করার পরোয়ানা দেওয়ার জন্য এগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেওয়া যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ছিল। মায়াফারিকিন থেকে মুযাফফরের বাহিনী কামিলের মিশরীয় সেনাবাহিনী এবং আশরাফের সিরিয়ান সেনাবাহিনীর সাথে যোগ দেয় এবং তারা উত্তরে দিয়ারবাকিরের দিকে অগ্রসর হয়।[৫] তারা ৫ অক্টোবর ১২৩২ (২০ যিলহজ্ব ৬২৯) আমিদা অবরোধ কএএন এবং মাত্র তেরো দিন পর মাসুদ শহরটি আত্মসমর্পণ করে। কামিল মুযাফফর গাজীকে আশরাফের সাথে মাসুদের অন্য দখলে থাকা হিসনে কাইফা শহরে যেতে এবং মাসুদকে তাদের সাথে কঠোর প্রহরায় নিয়ে আত্মসমর্পণ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।[৬] হিসনে কাইফার গ্যারিসন ১২৩২ সালের নভেম্বর পর্যন্ত (সফর ৬৩০) শহর প্রতিরক্ষা করতে থাকে এবং এরপর পদানত হয়। মুযাফফর গাজী এই অভিযান থেকে লাভবান হননি, কারণ দুটি বিজিত শহর সুলতানের পুত্র সালিহ আইয়ুবকে দেওয়া হয়েছিল।
মুযাফফর গাজী মায়াফারিকীনে দীর্ঘ ও শান্তিপূর্ণ রাজত্ব উপভোগ করেছিলেন এবং তিনি মাদ্রাসা নির্মাণ করেছিলেন, মসজিদকে প্রসারিত করেছিলেন এবং দুর্গের উন্নতি করেছিলেন। মায়াফারিকিন আইয়ুবীয়দের রাজত্বের বাইরের প্রান্তে ছিল এবং মুযাফফর গাজী এবং তার পুত্র কামিল মুহাম্মাদের রাজত্বকালে, যিনি ১২৪৭ (৬৪৫) সালে তাঁর উত্তরাধিকারী হন, শহরটি সেলজুক এবং মঙ্গোলদের কাছ থেকে ক্রমাগত হুমকির মধ্যে ছিল।[৭] সবচেয়ে গুরুতর হুমকির মধ্যে একটি ১২৪০-৪১ (৬৩৮) এ আসে যখন একটি মঙ্গোল দূতাবাস এসে শহরের আত্মসমর্পণের দাবি জানায়। কোনোভাবে মুযাফফর গাজী ঘুষ দিতে বা তাদের চলে যেতে রাজি করাতে সক্ষম হন। তিনি ১২৪৭ সালে মারা যান এবং তার পুত্র কামিল মুহাম্মদ তার স্থলাভিষিক্ত হন।