লক্ষ্য | আঘাত |
---|---|
কঠোরতা | সম্পূর্ণ সংস্পর্শ |
উৎপত্তির দেশ | ভারত |
পরবর্তী আর্ট | লাথি তমই মুই বোরান মুই লাও প্রাদাল সেরাই মুই থাই |
অলিম্পিক খেলা | না |
মুষ্টিযুদ্ধ[১] (সংস্কৃত এবং হিন্দি: मुष्टि युद्ध, প্রতিবর্ণীকৃত: মুষ্টি ইয়ুদ্ধ ; উর্দু: مُشٹی یُدّھاَ, প্রতিবর্ণী. মুশ্তি য়ুদ্ধা) হচ্ছে ভারতীয় উপমহাদেশে[২] প্রচলিত একটি ঐতিহ্যবাহী শারীরিক সংঘাতমূলক ক্রীড়া। এই খেলার নামটি এসেছে সংস্কৃত শব্দ মুষ্টি এবং যুদ্ধ (যুদ্ধ, লড়াই, সংঘর্ষ) থেকে। ব্যুৎপত্তিগতভাবে যদিও মুষ্টিযুদ্ধ দ্বারা যেকোন ধরনের বক্সিংকেই বোঝানো যেতে পারে, বর্তমানকালে মুষ্টিযুদ্ধ শব্দটি দ্বারা মূলত বেনারসের মুকি বক্সিং-কেই নির্দেশ করা হয়ে থাকে, যেটা এখন পর্যন্ত টিকে থাকা নিরস্ত্র লড়াই রীতি। পাঞ্জাবে যদিও লোহমুষ্টি নামক একটি সশস্ত্র লড়াইয়ের প্রথা চালু আছে, যেখানে যোদ্ধারা এক হাতে লোহার আংটি পরেন; তবে এখন আর সেটা লড়াইয়ে ব্যবহৃত হয় না।
আগ্রহী যোদ্ধারা বছরের পর বছর ধরে প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে যান, পাথর ও অন্যান্য শক্ত পৃষ্ঠে পরখ করে নিজেদের মুষ্ঠি শক্ত করেন, যতদিন না পর্যন্ত তারা খালি হাতে আঘাৎ করে নারকেল এবং পাথর ভেঙে ফেলতে সক্ষম হন। কুঁচকি ব্যতীত দেহের যে কোন অংশ লক্ষ্য করেই আঘাত করা যেতে পারে, তবে মাথা এবং বক্ষ-ই মূল লক্ষ্য থাকে। লড়াইয়ের কৌশলের মধ্যে ঘুষি, লাথি, কনুই মারা, হাঁটু মারা এবং আঁকড়ে ধরা অন্তর্ভুক্ত। মুষ্টিযোদ্ধারা কোন ধরনের প্রতিরক্ষামূলক বর্ম পরেন না এবং খালি হাতেই লড়াই করেন। একক, একক বনাম দল, কিংবা দল বনাম দল পদ্ধতিতে খেলা হতে পারে। নক-আউট, রিং-আউট, কিংবা নতি স্বীকার (সাবমিশন) পদ্ধতিতে বিজয়ী নির্ধারণ করা হয়।
এই ধরনের মার্শাল আর্টের সাথে বৃহত্তর ভারতের অন্যান্য স্থানে প্রচলিত মার্শাল আর্ট, যেমন- থাইল্যান্ডের মুই থাই (Muay Thai), লাওস এর মুই লাও (Muay Laos), কম্বোডিয়ার প্রাদাল সেরাই (Pradal Serey), এবং মায়ানমারের লাথি (Lethwei) সম্পর্ক রয়েছে।[৩]
প্রাচীন ভারতে নানাবিধ ধরনের মুষ্টিযুদ্ধের প্রচলন ছিল। মুষ্টিযুদ্ধের প্রাচীনতম উল্লেখ পাওয়া যায় প্রাচীন ভারতীয় মহাকাব্য, যেমন- রামায়ণ এবং ঋগ্বেদ এ। মহাভারতে, দুজন যোদ্ধার মুষ্টিবদ্ধ হাতে লড়াইয়ের কথা উল্লেখ রয়েছে, যেখানে লাথি, অঙ্গুলি-আঘাত, হাঁটুতে আঘাত এবং মাথা দিয়ে গুঁতা মারার বর্ণনা রয়েছে।[৪] দ্বন্দ্বযুদ্ধ বা দ্বৈত লড়াই (নিয়ুদ্ধাম) অনেক ক্ষেত্রেই এক পক্ষের মৃত্যু অবধি চলত।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] শত্রপ বংশের শাসনামলে শাসক রুদ্রদমন, যিনি "মহা বিজ্ঞান"-এ পারদর্শিতা ছিল (যার মধ্যে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত, সংস্কৃত ব্যাকরণ, এবং যুক্তিবিদ্যা অন্তর্ভুক্ত), তিনি চমৎকার অশ্বারোহী, গজারোহী, রথ-চালক, অসিযোদ্ধা এবং মুষ্টিযোদ্ধা ছিলেন বলে প্রচলিত রয়েছে।[৫] গুর্বিলাস শেমি নামক অষ্টাদশ শতকের একটি শিখ নথির অনেক জায়গায় মুষ্টিযুদ্ধের উল্লেখ পাওয়া যায়।
উনবিংশ শতকের শুরুর দিকে, লাহোর সেনাবাহিনী কর্তৃক চর্চিত মুষ্টিযুদ্ধ সম্পর্কে ফরাসি জেনারেল অ্যালার্ড মন্তব্য করেন, "রঞ্জিত সিং এর সেনাদলে দ্বন্দ্বযুদ্ধ অজানা। সৈন্যরা তাদের বিবাদ মীমাংসা করে মুষ্টির মাধ্যমে; মতপার্থক্য মীমাংসার একটি নিষ্ঠুর, এবং সমানভাবে অ-খ্রিস্টীয় পদ্ধতি।"[৬] তিনি মুষ্টিযুদ্ধের যে ধরনের কথা উল্লেখ করেছেন, সেটি ছিল লোহ্-মুষ্টি (লৌহমুষ্টি), যেটা প্রধানত উত্তর-পূর্বাঞ্চলে চর্চা করা হত।
ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনামলে, ১৮৯০ এর দিকে পশ্চিমা মুষ্টিযুদ্ধের প্রচলনের ফলস্বরূপ স্থানীয় মুষ্টিযুদ্ধ চর্চায় ভাটা পড়ে, শেষ পর্যন্ত শুধু বেনারসের মুকি মুষ্টিযুদ্ধ টিকে ছিল। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে পবিত্র বলে বিবেচিত এই শহরে, প্রায় ৩০০ বছরের পুরনো মুষ্টিযুদ্ধ উৎসবের চল রয়েছে। এখানে চোটের ঘটনা অনেক বেশি এবং অনেক ক্ষেত্রেই গুরুতর। মুষ্টিযুদ্ধের এই শেষ আশ্রয়ে ঔপনিবেশিক সরকার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল, কিন্তু পরে একজন ইউরোপীয় পুলিশ কমিশনার মুখোমুখি একক লড়াইয়ের পুনঃপ্রবর্তন করেন। স্বাধীনতা-পরবর্তী প্রসিদ্ধ যোদ্ধাদের মধ্যে নারায়ণগুরু বালাম্ভাট দেওধর এবং লক্ষণগুরু বালাম্ভাট দেওধর উল্লেখযোগ্য, কথিত আছে যে, তারা দুজনেরই একসাথে বারোজন যোদ্ধাকে পরাজিত করার ক্ষমতা ছিল। কালের পরিক্রমায় মুষ্টিযুদ্ধ একপ্রকার বিরল হয়ে ওঠে এবং ১৯৬০ এর দশকের মধ্যে এক প্রকার গোপন কার্যকলাপেই পরিণত হয়। বর্তমানকালে, কলকাতায় অবৈধভাবে খেলার আয়োজন করা হয়, অনেক ক্ষেত্রেই জুয়াড়ীদের দ্বারা।
[Rudradaman] was also a fine swordsman and boxer, and excellent horseman, charioteer and elephant-rider ... and far-famed for his knowledge of grammar, music, logic and 'other great sciences'.