মুসলিম তেলি হল তেলি জাতির অন্তর্ভুক্ত এক সম্প্রদায় যারা সুন্নি ইসলাম ধর্ম অনুসরণ করে। ভারত ও পাকিস্তানে এরা বসবাস করে। [১]
মুসলিম তেলির ঘাঞ্চি সম্প্রদায়ের সাথে সম্পর্কিত। ঘাঞ্চিরা গুজরাতের একটি সম্প্রদায়। এরা প্রধানত রান্নার তেল তৈরির পেশার সাথে জড়িত। এই অঞ্চলগুলিতে লুহার জাতিরও বসবাস। সেখানে কিছু তেল শোধনাগারকে সৌদি আরবের (ইউএই) তেলিস হিসাবে বিবেচনা করা হয়। তেলিস শব্দটির সাথে তেলি শব্দের বিশেষ মিল আছে।
তেলি শব্দটি সংস্কৃত শব্দ তৈলিকা বা তৈল থেকে এসেছে, যার অর্থ সরিষা বা তিল থেকে প্রস্তুত তেল। এই সম্প্রদায়ের লোকেরা এইভাবে সরিষা বা তিলের তেল প্রস্তুত করে জীবিকা নির্বাহ করে। তারা ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত কারিগর শ্রেনীর একটি অংশ। তারা এমন কিছু উপাধি ব্যবহার করে যা সাধারণত হিন্দু সম্প্রদায়ে লোকেরা ব্যবহার করে। উত্তর ভারতে তারা উর্দুতে কথা বলে এবং এর সাথে আওয়াধি এবং খারি বলি উপভাষা ব্যবহার করে। পাকিস্তানে এই সম্প্রদায় পাঞ্জাবি ভাষায় কথা বলে। [২]
ভারতে তারা উত্তর প্রদেশ এবং বিহার রাজ্যেসহ উত্তর ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে বসবাস করেন। এই জনগোষ্ঠী পেশার জন্য জমির ওপর নির্ভরশীল। তেল প্রস্তুত করা তাদের ঐতিহ্যবাহী পেশা। এখন অর্থকরী ফসল চাষ এবং অন্যান্য ব্যবসার সাথেও তারা যুক্ত। অনেকেই এখন সফল ব্যবসায়ী। এই সম্প্রদায়ের লোকেরা নিজেকে শেখ মর্যাদাসম্পন্ন বলে মনে করে, কারণ তারা বৈশ্য বর্ণ থেকে ধর্মান্তরিত। [৩]
উত্তরপ্রদেশে বেশিরভাগ তেলি জনগন ছোট এবং মাঝারি আকারের কৃষক। ভারতের স্বাধীনতার সময় সম্পাদিত ভূমি সংস্কার থেকে তারা অনেকেই উপকৃত হয়েছেন। তখন তাদের চাষ করা জমির মালিকানা দেওয়া হয়েছিল। উত্তরপ্রদেশের তেলিরা কঠোরভাবে অন্তঃবিবাহী প্রথায় বিশ্বাসী। তারা আরও চারটি অন্তঃবিবাহিত গোষ্ঠীতে বিভক্ত। সেই চারটি ভাগ হল, তুর্কিয়া, ইকাসনা, দোসনা এবং দেশ। তুর্কিয়ারা প্রধানত আওধ এবং বারাণসীতে থাকে। ইকাস্না এবং দোসনারা পশ্চিম উত্তর প্রদেশে থাকেন। তারা উর্দু, সেইসাথে হিন্দির উপভাষায় কথা বলে এবং সুন্নি সম্প্রদায়কে অনুসরণ করে। তেলিরা বহু-বর্ণের গ্রামে বাস করে, কিন্তু তাদের নিজস্ব স্বতন্ত্র পরিচয় বজায় রাখে। [৪]
পাকিস্তানে, তিনটি স্বতন্ত্র সম্প্রদায় রয়েছে যারা তেলি সম্প্রদায়ের অংশ। তারা হল করাচীর উর্দুভাষী সম্প্রদায়, পাঞ্জাবের তেলি মালিক এবং তেলি রংহার রাজপুত।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]